খাজা আবদুল মোত্তালিব তাঁর মৃত্যুকালে বড় পুত্র আবু তালেবকে ডেকে নবী করিম (দঃ)-এর লালন-পালনের দায়িত্ব তার হাতে অর্পণ করেন। সেসময় থেকে ২৫ বৎসর বয়সকাল পর্যন্ত নবী করিম (দঃ) ১৭ বছর আপন চাচার সরাসরি তত্ত্বাবধানে থাকেন। এ সময়ের মধ্যেই নবী করিম (দঃ)-এর মানবীয় ও সামাজিক গুণাবলী প্রকাশ পেতে শুরু করে এবং সামাজিক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে তিনি সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও আমানতদারীর গুণাবলী প্রদর্শন করে "আল-আমীন" খেতাবে ভূষিত হন। আবু তালেব আপন ভাতিজাকে নিজের সন্তানের চেয়ে বেশী স্নেহ করতেন। নবী করিম (দঃ) কে ছাড়া তিনি কখনও আহার করতেননা। সকালের নাস্তা করার জন্য আবু তালেবের অন্যান্য সন্তানগণসহ একত্রে নাস্তা করতে বসলে বালকদের স্বভাব-সুলভ খানা নিয়ে কাড়াকাড়ি করার ঘটনা ঘটে যেত। নবী করিম (দঃ) তখন হাত গুটিয়ে বসে থাকতেন। কাড়াকাড়িতে অংশ নিতেন না। এই ছিল নবী করিম (দঃ)-এর আদর্শ আচরণ। এ অবস্থা দেখে চাচা তাঁর নাস্তা পৃথক করে দিতেন। নবী করিম (দঃ) যখন তাদের সাথে খানা খেতেন, তখন সকলেই তৃপ্ত হতেন। এটা ছিল নবী করিম (দঃ)-এর কিশোরকালের বরকত।
যখন নবী করিম (দঃ)-এর বয়স ১২/১৪ বৎসর-তখন তিনি পিতৃব্য আবু তালেবের সাথে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে বাণিজ্য কাফেলায় শরীক হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করলে খাজা আবু তালেব তাঁকে সফরসঙ্গী করে নেন। পথিমধ্যে বোছরা নামক স্থানে বোহায়রা নামক এক খৃষ্টান পাদ্রীর গির্জার নিকট দিয়ে বাণিজ্য কাফেলা গমনকালে বোহায়রা পাদ্রী কিছু আশ্চর্য্যজনক ঘটনা প্রত্যক্ষ করে ঐ কাফেলার সকলকে তাঁর গির্জায় দাওয়াত করেন। তাদের জন্য তিনি খানাও তৈরী করেন। সবাই উক্ত যিয়াফতে যোগদান করে। কিন্তু নবী করিম (দঃ) কে মাল সামানার পাহাবায় রেখে যায়। বোহ।য়রা পাদ্রী রাসূলুল্লাহ (দঃ) কে উক্ত খানার মজলিসে শামিল করতে নির্দেশ দিলে হুযুর (দঃ) কে আনা হলো। বোহায়রা পাদ্রী নবী করিম (দঃ)-এর আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে বললো- "লাত ওজজার কসম দিয়ে আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই-সঠিক উত্তর দেবেন"।
নবী করিম (দঃ) প্রতিবাদ করে বললেন- লাত উজজার শপথ করে আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করবেন না। তখন বোহায়রা পাদ্রী আল্লাহর শপথ দিয়ে নবী করিম (দঃ)-এর নিদ্রা, দৈনন্দিন কার্যাদি সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করেন। নবী করিম (দঃ) নিজ অবস্থা বর্ণনা করেন। তখন বোহায়রা পাদ্রী নবী করিম (দঃ)-এর হাত ধরে বলে উঠলেন, "ইনি সাইয়েদুল আলামীন, রাসুলু রাব্বিল আলামীন, রাহমাতুল্লীল আলামীন" (বায়হাকী)।
তাঁর এই মন্তব্যের কারণ সম্পর্কে কোরেশগণ জিজ্ঞেস করলে পাদ্রী বললেন, "আপনারা যখন গিরিপথ পার হয়ে আসছিলেন, তখন আমি দেখতে পেলাম-প্রতিটি পাথর ও বৃক্ষ এই বালককে সম্মানসূচক সিজদা করছে। নবী ব্যতীত অন্য কাউকে পাথর ও বৃক্ষরাজি সিজদা করেনা"। আমি আরও লক্ষ্য করেছি-আপনাদের কাফেলার উপর একখন্ড মেঘমালা এই বালকের মাথার উপর ছায়া দিচ্ছে। এতেই আমি প্রমাণ পেয়েছি যে, ইনিই শেষ যুগের নবী"। আবু তালেবকে লক্ষ্য করে পাদ্রী বললেন, "আপনি এখান থেকেই বেচাকেনা সেরে আপন ভাতিজাকে নিয়ে মক্কায় ফিরে যান। কেননা, সামনে ইহুদী শত্রুরা তাঁকে শহীদ করে দিতে পারে- (বেদায়া ও নেহায়া)। এভাবেই নবুয়তের পূর্বাভাস প্রকাশ পেতে শুরু করলো। ইহাকে ইহাছাত বা পূর্বাভাস বলা হয়।