হুজুর আকরম (সঃ) এর পবিত্র পদবিক্ষেপ সম্পর্কে হজরত আলী মুর্তজা (রাঃ) এর বর্ণিত হাদীছ এরকম – নবী করীম (সঃ) যখন হাঁটতেন তখন ঝুঁকে ঝুঁকে হাঁটতেন, যেনো তিনি উপর থেকে নীচের দিকে নামছেন। সামনের দিকে ঝুঁকে হাঁটা, যেমন ফুলবিশিষ্ট বোঁটা ফুলের ভারে ঝুঁকে পড়ে। কদম মুবারক নেহায়েত নিপুণতা, দৃঢ়তা ও দ্রুততার সাথে উঠাতেন। বাযযার হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রসূল (সঃ) হাঁটার সময় যমীনে পুরা কদম ফেলে হাঁটতেন। অন্য এক হাদীছে এসেছে, তাঁর চলার গতি ছিলো শক্তিতে ভরপুর যাতে কোনোরূপ শৈথিল্য, আলস্য, বা স্থবিরতা ছিলো না। হজরত আলী মূর্তজা (রাঃ) থেকে অন্য এক হাদীছে বর্ণিত আছে, তিনি যখন হাঁটতেন তখন যমীন থেকে পা মুবারক পুরাপুরি উঠাতেন এবং পা বেশ ফাঁক রাখতেন, এরপর সহজভাবে কিন্তু দ্রুততার সাথে কোনোরূপ নড়াচড়া বা স্পন্দন ব্যতীত পা ফেলতেন । তিনি বলেছেন, যেনো উঁচুস্থান থেকে নীচুস্থানের দিকে অবতরণ করছেন।
[আরবী] 'সব্ব' বা [আরবী] ‘সবুব' নীচু যমীনকে বলা হয় ৷ [আরবী] ‘ইয়ানহাতু মিন সাবাবিন' এর অর্থ হচ্ছে উঁচু যমীন থেকে নীচু যমীনের দিকে অবতরণ করা। কদম মুবারক উঠানোর দৃঢ়তাকে বুঝানোর জন্য এ উপমাটি পেশ করা হয়েছে। হাঁটার সময় যে হরকত বা স্পন্দন হয় তা বুঝানোর জন্য নয় ।
হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাস্তায় রসূল করীম (সঃ) এর চাইতে অধিকতর দ্রুত চলতে কাউকে আর দেখিনি। মনে হতো তাঁর কদম মুবারকের নীচে যমীন বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আর আমরা তাঁর সঙ্গে চলতে গেলে ক্লান্ত হয়ে পড়তাম এবং শান্তি অনুভব করতাম। তাঁর সঙ্গে হাঁটতে যেয়ে আমাদেরকে রীতিমতো দৌড় দিতে হতো এবং আমাদের নিঃশ্বাস ফুলে উঠতো। কিন্তু তাঁর কাছে কোনো কষ্ট অনুভূত হতো না । তিনি স্বাভাবিক অভ্যাসমতোই কোনোরূপ কৃত্রিমতা ছাড়াই হেঁটে চলে যেতেন । কোনোরূপ দোদুল্যমানতা বা কম্পন পরিলক্ষিত হতো না। এ ধরনের চলন প্রত্যয়, সৎ সাহস এবং বীরত্বের নিদর্শন। এ ধরনের হাঁটার মধ্যে গতি, দৃঢ়তা এবং ভারসাম্যতা বিদ্যমান থাকে, যার ফলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গে প্রশান্তি ও আরাম পাওয়া যায়। তিনি কখনও জুতা মুবারক পরিধান করে হাঁটতেন । আবার কখনও খালি পায়ে হাঁটতেন। কখনও পদব্রজে হাঁটতেন আবার কখনও বাহনে করে চলতেন। বিশেষ করে যুদ্ধক্ষেত্রে। যেমন কবির ভাষায়ঃ
سروپیاده خوش اندر چمن نباز - انسي
من پیاده خوش است وسؤا رخوش
তিনি যখন সাহাবীগণকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটতেন তখন সাহাবীগণকে আগে রাখতেন এবং তিনি পিছনে পিছনে হাঁটতেন। ঐ সময় তিনি এরশাদ করতেন “আমার পিঠকে (পশ্চাত দিককে) ফেরেশতাগণের জন্য মুক্ত রাখো”। হাদীছ শরীফে এরকম বর্ণনা এসেছে, হাঁটার সময় তিনি সাহাবীগণকে আগে রাখতেন। [আরবী] ‘সওক' শব্দের অর্থ আরোহনের প্রাণীকে পিছনের দিক থেকে খেদিয়ে নিয়ে যাওয়া। আর [আরবী] 'কাউদ' শব্দের অর্থ প্রাণীকে সামনের দিক থেকে টেনে টেনে নিয়ে যাওয়া । কোথাও সফরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে নবী করীম (সঃ) সমস্ত সাহাবীগণকে পাঠিয়ে দেয়ার পর নিজে রওয়ানা হতেন। চলার পথে দুর্বল ও কমজোর লোকদেরকে ধরে ধরে নিয়ে যেতেন। আর যারা যেতে অক্ষম হতো তাদেরকে তিনি নিজের সঙ্গে সওয়ারীতে আরোহন করিয়ে নিয়ে যেতেন। তাদেরকে নিজের পিছনে বসাতেন।
হাঁটার প্রকার দশটি,
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৩১) পবিত্র শরীরের রঙ | (০৩৩) পবিত্র স্বেদ ও দেহবর্জ্য সমূহের সুঘ্রাণ |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |