তারাবীহর নামায বিশ রাকাত পড়া সুন্নাত; আট রাকাত পড়া সুন্নাতের বরখেলাপ। আমি কুরআন শরীফের বিন্যাস, বিশুদ্ধ হাদীছ, উলামায়ে কিরামের উক্তি ও আকলী দলীল সমূহ দ্বারা এর প্রমাণ দিচ্ছি।
আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে-
فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ
-‘‘তোমাদের জন্য আমার সুন্নাতও খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত পালনীয়।’’
¶ সুুনানে আবি দাউদ, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-২০০, হাদিস-৪৬০৭, সুনানে তিরমিযি, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৯২, সুনানে ইবনে মাযাহ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৫-১৬, হাদিস-৪২-৪৩।
যা হোক আমরা বিশ রাকাতের সমর্থনে সাহাবায়ে কিরামের আমল পেশ করলাম। দেখি, লা মযহাবীরা তাদের আট রাকাত তারাবীহের সমর্থনে এমন কোন সহীহ মরফু হাদীছ পেশ করতে পারে কিনা, যদ্দারা আট রাকাত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। ইনশা আল্লাহ কখনও পারবে না। আমাদের দাবীর সমর্থনে উত্থাপিত হাদীছ সমূহ নিম্নে পেশ করা হলো-
عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ: كُنَّا نَقُومُ فِي زَمَانِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ بِعِشْرِينَ رَكْعَةً وَالْوِتْرِ
¶ -‘‘তিনি বলেন, আমরা হযরত উমরের যামানায় ২০ রাক‘আত তারাবীহ পড়তাম।’’
মুয়াত্তায়ে মালেক, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১১৫, হাদিস-২৫২, ইমাম বায়হাকী, আল-মা‘রিফাতুল সুনানি ওয়াল আছার, ৪/৪২পৃ: হা/৫৪০৯, এবং আস্-সুনানিল সুগড়া, ১/২৯৭পৃ: হা/৮২১
فَصَلِّى بِهِمْ عِشْرِينَ رَكْعَةً
¶ -‘‘তিনি (উবাই ইবনে কা‘ব) লোকদেরকে নিয়ে ২০ রাক‘আত নামায আদায় করতেন।’’
তবে এ কিতাবটি আমার হাতের নাগালে নেই।
حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ حَسَنِ بْنِ صَالِحٍ، عَنْ عَمْرِو بْنِ قَيْسٍ، عَنِ ابْنِ أَبِي الْحَسْنَاءِ، أَنَّ عَلِيًّا أَمَرَ رَجُلًا يُصَلِّي بِهِمْ فِي رَمَضَانَ عِشْرِينَ رَكْعَةً
¶ -‘‘আমাকে ইমাম ওয়াকী বলেছেন, তাকে হাসান বিন সালেহ তাকে আমর বিন কায়েস তিনি তাবেয়ী ইবনে আবিল হাসনা (رحمة الله) হতে তিনি বলেন, নিশ্চয় আলী (رضي الله عنه) এক ব্যক্তিকে এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, সে যেন লোকদেরকে নিয়ে রামাযান মাসে ২০ রাক‘আত তারাবীহ পড়ায়।’’
ইমাম ইবনে আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ২/১৬৩পৃ: হা/৭৬৮১,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُصَلِّي فِي رَمَضَانَ عِشْرِينَ رَكْعَةً وَالْوِتْرَ
¶ -‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) রমযান মাসে জামাত ব্যতীত ২০ রাকাত নামায পড়তেন এবং বিতির পড়তেন।’’
ইমাম আবি শায়বাহঃ আল মুসান্নাফঃ ২/১৬৪ পৃঃ ২২৭ নং অধ্যায় হাদিস নং- ৭৬৯২, মাকতুবাতুর রাশাদ, রিয়াদ, সৌদি আরব, ইমাম তাবরানীঃ মু‘জামুল কবীরঃ ১১/৩৯৩ পৃ: হাদিসঃ ১২১০২, ইমাম হুমাইদীঃ আল মুন্তাখাবুল মিনাল মুসনাদঃ পৃ: ৬৫৩,বায়হাকীঃ সুনানে কোবরাঃ ২/৪৯৫ পৃ,ঃ হাদিসঃ ৪৩৯২,খতিবে বাগদাদীঃ আল মাওয়াযিঈঃ ১/৩৮৭পৃ:, ইমাম আদিঃ আল কামিলঃ ১/২৪০ পৃ: ইবনে হাজার হায়সামীঃ মাযমাউদ যাওয়ায়েদঃ ৩/১৭২ পৃ: যাহাবীঃ যাওয়ায়েদুল মাআয়ামিনঃ ১/১০৯ পৃ: আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানীঃ ফতহুল বারী শরহে বুখারীঃ ৪/২৫৪ পৃ: হাদিসঃ ২১৩, মানাবীঃ আল মুন্তাখাবুল মিনাল ফাওয়াইদঃ ২/২৬৮, তাবরানীঃ মু’জামুল আওসাতঃ ১/২৪৩ পৃ: হাদিসঃ ৭৯৮,আবুল হাসান নুআলীঃ হাদিসাহঃ ১/১২৭ পৃ: আলবানীঃ সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বঈফাঃ ২/৩৫ পৃ: হাদিসঃ ৫৬০, ইমাম তাবরানীঃ মু’জামুল আওসাতঃ ৫/৪২৪ পৃ: হাদিসঃ ৫৪৪০,ইমাম খতিবে বাগদাদঃ তারিখে বাগদাদঃ ৬/১১৩ পৃ:ইমাম ইবনুল আব্দুল বারঃ আত-তামহীদঃ ৮/১১৫ পৃ:আসকালানীঃ ফতহুল বারীঃ ১/২০৩ পৃ: হাদিসঃ ২৫৭,সুয়ূতিঃ তানভীরুল হাওয়ালিকঃ ১/১০৮ পৃ: হাদিসঃ ২৬৩, যাহাবীঃ মিযানুল ই’তিদালঃ ১/১৭০ পৃ: রাভীঃ ৯৮৫৫, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম সান-আনীঃ সবলুস-সালামঃ ২/১০ পৃ: মিয্যীঃ তাহযীবুল কামালঃ ২/১৪৯ পৃ: যায়লাঈঃ নাসবুর রাইয়্যাহঃ ২/১৫৩পৃ: ইমাম যুরকানীঃ শরহে আলা মুয়াত্তাঃ ১/৩৪২পৃ: ও ১/৩৫১পৃ:, আযীমাবাদীঃ আওনুল মা’বুদঃ ৪/১৫৩ পৃ: মোবারকপুরীঃ তুহফাতুল আহওয়াজীঃ ৩/৪৪৫ পৃ:,আসকালানীঃ লিসানুল মিযানঃ ৩/২৪২পৃ: ইমাম আদিঃ আল-কামিলঃ ১/২৪০ পৃ: এ হাদিসের বিষয়ে বিস্তারিত বাতিলদের জবাব জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ২য় খন্ডের ৬৯১-৬৯৮ পৃষ্ঠায় দেখুন।
এ হাদীছ থেকে বোঝা যায় যে, স্বয়ং হুযূর (ﷺ) বিশ রাকাত তারাবীহের নামায পড়তেন।
৫। ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) সংকলন করেন-
عَنْ شُتَيْرِ بْنِ شَكَلٍ وَكَانَ مِنْ أَصْحَابِ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ كَانَ يَؤُمُّهُمْ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ بِعِشْرِينَ رَكْعَةً وَيُوتِرُ بِثَلَاثٍ
¶ -‘‘সুতাইর ইবনে শাকাল (رحمة الله) হতে বর্ণিত, হযরত আলী (رضي الله عنه)-এর সাথীরা ২০ রাক‘আত তারাবীহ পড়তেন। এবং তিনি তাদের সাথীদের সাথে ৩ রাক‘আত বিতর পড়তেন।’’
বায়হাকী, ফাযায়েলুল আওকাত, ১/২৭৬পৃ: হা/১২৭
أَخْبَرَنَا أَبُو الْحُسَيْنِ بْنُ الْفَضْلِ الْقَطَّانُ بِبَغْدَادَ أنبأ مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ عِيسَى بْنِ عَبْدَكَ الرَّازِيُّ، ثنا أَبُو عَامِرٍ عَمْرُو بْنُ تَمِيمٍ، ثنا أَحْمَدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ يُونُسَ، ثنا حَمَّادُ بْنُ شُعَيْبٍ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ، عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ السُّلَمِيِّ، عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: دَعَا الْقُرَّاءَ فِي رَمَضَانَ فَأَمَرَ مِنْهُمْ رَجُلًا يُصَلِّي بِالنَّاسِ عِشْرِينَ رَكْعَةً قَالَ: وَكَانَ عَلِيٌّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ يُوتِرُ بِهِمْ
¶ -‘‘ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) যথাক্রমে..তাবেয়ী আতা ইবনু সায়িব থেকে তিনি তাবেয়ী আবি আব্দুর রাহমান সুলাইমী (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রমযান মাসে মাওলা আলী (رضي الله عنه) ক্বারীগণকে আহবান করলেন। অতঃপর তাঁদের মধ্যে হতে একজনকে নির্দেশ দান করলেন, বর্ণনাকারী বলেন, মাওলা আলী (رضي الله عنه)যেন লোকদেরকে ২০ রাক‘আত নামায পড়ান। বর্ণনাকারী বলেন, হযরত আলী (رضي الله عنه) শুধু তাদের সাথে শুধু বিতর পড়তেন।’’
বায়হাকী, আস্-সুনানিল কোবরা, ২/৬৯৯পৃ: হা/৪২৯১
أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللهِ الْحُسَيْنُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ الْحُسَيْنِ بْنِ فَنْجَوَيْهِ الدَّيْنَوَرِيُّ بِالدَّامَغَانِ، ثنا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَاقَ السُّنِّيُّ، أنبأ عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ الْبَغَوِيُّ، ثنا عَلِيُّ بْنُ الْجَعْدِ، أنبأ ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ خُصَيْفَةَ، عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ: كَانُوا يَقُومُونَ عَلَى عَهْدِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ بِعِشْرِينَ رَكْعَةً
¶ -‘‘হযরত ইয়াযিদ ইবনে খুছাইফা (رحمة الله) তিনি হজরত সাইব ইবনে ইয়াযিদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রমযানে হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (رضي الله عنه) জামানায় লোকেরা ২০ রাকাত তারাবীহ পড়তেন।’’
ইমাম বায়হাক্বী, আস্-সুনানিল কোবরা, ২য় খন্ড, ৬৯৮ পৃ:হা/৪২৮৮, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন। ইমাম নিমবী, আছারুছ ছুনান, ২৪৫ পৃ:; যায়লাঈ, নাছবুর রায়া, ২য় খন্ড, ইমাম সুয়ূতী, আল-হাবী লিল ফাতওয়া, ১ম খন্ড, ৪১৫ পৃ:; ইবনে হাজার আসকালানী, ফাতহুল বারী শরহে বূখারী, ৪র্থ খন্ড, ৩১৬ পৃ:; মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৩য় খন্ড, ৩৪৫ পৃ:হা/।
(সহীহুল বিহারীর كَمْ يَقْرَانِى التَّرَوِيْح শীর্ষক অধ্যায়ে এর বিশ্লেষণ দেখুন) উপরোক্ত রেওয়ায়েত থেকে প্রতিভাত হলো যে স্বয়ং (ﷺ) তারাবীহর নামায বিশ রাকাত পড়তেন এবং হযরত উমর ফারুকের খিলাফতের সময় এ বিশ রাকাতের উপর যথাযথ আমল করার সূচনা হয়েছিল। হযরত ইবনে আব্বাস, আলি, আবি ইবনে কাব, উমর, সায়েব ইবনে ইয়াযিদ প্রমুখ সাহাবায়ে কিরাম এর উপর আমল করেছিলেন।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৫৩/৪) নবীগণের নিষ্পাপ হওয়া সম্পর্কে উত্থাপিত আপত্তি সমূহ এবং এসবের জবাব | (০৫৫) উলামায়ে উম্মতের অভিমত |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |