✦ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ ফরমান-
لِيَغْفِرَ لَكَ اللَّهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ
-‘‘যাতে আল্লাহ তা’আলা আপনার আগে পরে গুনাহ মাফ করে।’’
¶ সূূরা ফাতহ, আয়াত নং-২।
এতে বোঝা গেল তিনি পাপী ছিলেন। হুযূর (ﷺ)ও প্রায় সময় তাঁর নিজের জন্য মাগফিরাতের দুআ করতেন। যদি তিনি গুনাহগার না হতেন, তাহলে এ মাগফিরাত কি জন্য কামনা করতেন?
এ আয়াতের কয়েকটি উত্তর রয়েছে-
المراد بالمغفرة الحفظ والعصمة ازلا وابدا فيكون المعنى ليحفظك الله ويعصمك من الذنب المتقدم والمتأخر
¶ ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, ৯/৯
তিন, এ আয়াতের ব্যাখ্যা অন্য আয়াতে করা হয়েছে, যেমন
وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَحِيمًا
¶ সূরা নিসা, আয়াত নং-৭৪।
কোন সময় অপরাধের কথা অপরাধীকে লক্ষ্য করে বলা হয়, আবার কোন সময় অপরাধীর জিম্মাদারকে লক্ষ্য করে বলা হয়, যেমন মামলায় কোন সময় অপরাধী, আবার কোন সময় উকীলকে লক্ষ্য করে অপরাধের কথা বলা হয়। উকীল বলে থাকে এটা আমার মামলা, আমি এর জিম্মাদার। এখানেও সেই দ্বিতীয় অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে- আপনার উম্মতের গুনাহ, যার শাফায়াতের জিম্মাদার হলেন আপনি।
আল্লাহ তা’আলা হুযূর (ﷺ)কে লক্ষ্য করে ইরশাদ ফরমান:
وَلَوْلَا أَنْ ثَبَّتْنَاكَ لَقَدْ كِدْتَ تَرْكَنُ إِلَيْهِمْ شَيْئًا قَلِيلًا
-‘‘যদি আমি আপনাকে অটল না রাখতাম, তাহলে কাফিরদের প্রতি কিছুটা ঝুঁকে পড়ার সম্ভাবনা ছিল।’’
¶ সূূরা বানী ইসরাঈল, আয়াত নং-৭৪।
এর দ্বারা বোঝা গেল যে হুযূর (ﷺ) কাফিরদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু আল্লাহ তা’আলা প্রতিরোধ করেছেন। আর কাফিরদের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ারও গুনাহ।
এর কয়েকটি উত্তর রয়েছে।
قُلْ إِنْ كَانَ لِلرَّحْمَنِ وَلَدٌ فَأَنَا أَوَّلُ الْعَابِدِينَ
-‘‘যদি আল্লাহর কোন ছেলে হতো, আমি এর প্রথম পূজারী হতাম।’’
¶ সূূরা যুখরূফ, আয়াত নং-৮১।
কিন্তু না খোদার ছেলে হওয়া সম্ভব, এবং না নবী (ﷺ) কর্তৃক এর পূজা করা সম্ভব। উপরোক্ত আয়াতেও আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক হুযূর আলাইহিস সালামের হিফাজত না করা যেমন অকল্পনীয়, তেমন হুযূর আলাইহিস সালাম কর্তৃক ওদের প্রতি ঝুঁকে পড়াটাও অকল্পনীয়।
قال بعض الكبار انما سماه قليلا لان روحانية النبي عليه السلام كانت فى اصل الخلقة غالبة على بشريته إذ لم يكن حينئذ لروحه شىء يحجب عن الله فالمعنى لولا التثبيت وقوة النبوة ونور الهداية واثر نظر العناية لقد كدت تركن
¶ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, ৫/১৯০
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান-
مَا كُنْتَ تَدْرِي مَا الْكِتَابُ وَلَا الْإِيمَانُ
-‘‘‘হে নবী (ﷺ) আপনি জানতেন না কিতাব কি জিনিস এবং ঈমান কি’।’’
¶ সূরা আশ্-শূরা, আয়াত নং-৫২।
এতে প্রমাণিত হয় হুযূর (ﷺ) জন্মগত আরিফ বিল্লাহ ছিলেন না। কেননা তাঁর কাছে ঈমানের খবরও ছিল না।
এর কয়েকটি উত্তর রয়েছে।
وَكَذَلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ رُوحًا مِنْ أَمْرِنَا مَا كُنْتَ تَدْرِي مَا الْكِتَابُ
-‘‘অর্থাৎ আমি আপনার প্রতি স্বীয় মেহরবানীতে কুরআন অবতীর্ণ করেছি। আপনি নিজে জানতেন না। অর্থাৎ আপনার এ জ্ঞানের উৎস হচ্ছে খোদার ওহী, নিছক মনগড়া ও অনুমান ভিত্তিক জ্ঞান নয়।
¶ সূরা আশ্-শূরা, আয়াত নং-৫২।
كُنْتُ نَبِيًّا وَآدَمُ بَيْنَ الْمَاءِ
-‘‘আমি ওই সময় নবী ছিলাম, যখন আদম (عليه السلام) মাটি-পানিতে মিশ্রিত ছিলেন।’’
¶ এ বিষয়ে আমার লিখিত “প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন” ১ম খণ্ডের ......... পৃষ্ঠায় দেখুন।
اى الايمان بتفاصيل ما فى تضاعيف الكتاب
¶ ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-৩৪৭, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
আরও উল্লেখিত আছে-
لانه عليه السلام أفضل من يحيى وعيسى عليهما السلام وقد اوتى كل الحكم والعلم صبيا
-‘‘নবী (ﷺ) ইয়াহিয়া (عليه السلام) ও ঈসা (عليه السلام) থেকে আফযল এবং তাঁদেরকেতো শৈশবাবস্থায় ইলম ও হিকমত দান করা হয়েছিল। তাহলে এটা কিভাবে বলা যায় যে তিনি (ﷺ) শৈশবাবস্থায় জ্ঞান শূন্য ছিলেন?
¶ ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-৩৪৭, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ ফরমান-
فَأَزَلَّهُمَا الشَّيْطَانُ
-‘‘শয়তান হযরত আদম ও হাওয়া (عليه السلام)কে প্রতারিত করেছে।’’
¶ সূূরা বাক্বারা, আয়াত নং-৩৬।
এতে বোঝা গেল শয়তানের চালবাজি নবীদের সাথেও চলে। তাহলে এটা কিভাবে বলা সম্ভব যে শয়তান তাঁদের কাছে পৌঁছতে পারে না?
আমি বলেছি যে শয়তান তাঁদেরকে গুমরাহ করতে পারে না এবং তাঁদের দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে কবীরা গুনাহ করাতে পারে না। শয়তান নিজেই বলেছিল-
وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ (৩৯) إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ
-‘‘আমি ওদের সবাইকে বিপথগামী করব, তবে ওদের মধ্যে তোমার নির্বাচিত বান্দাদেরকে নয়।’’
¶ সূূরা হিজর, আয়াত নং-৩৯-৪০।
এ আয়াতে উল্লেখিত আছে فَأَزَلَّهُمَا الشَّيْطَانُ সুতরাং গুমরাহী এক জিনিস আর প্রতারণা করা অন্য জিনিস।
হযরত ইউসুফ (عليه السلام) এর ভাইদেরকে অনেকে নবী মনে করেন। অথচ তাঁরা বড় গুনাহ করেছেন। যেমন নিরাপরাধ ভাইকে বিক্রি করে মূল্য ভোগ করা এবং আপন পিতার কাছে মিথ্যা বলে তাঁকে চলিশ বছর পর্যন্ত কাঁদানো জঘন্য অপরাধ নয় কি? তবু তাঁরা নবী হয়েছেন। তাই বোঝা গেল যে নবীগণ নিষ্পাপ হওয়া আবশ্যক নয়।
জমহুর উলামায়ে কিরাম তাঁদেরকে নবী মনে করেন না। অবশ্য আলিমদের একটি গ্র“প কিছু দুর্বল প্রমাণাদি দ্বারা তাঁদের নবুয়াত প্রাপ্তি সম্পর্কে ধারণা করে থাকেন। এ জন্য আমি সূচনায় উল্লেখ করেছি যে, নবুয়াতের আগে আম্বিয়া কিরাম বদআকীদা থেকে পবিত্র হওয়া সম্পর্কে সর্বসম্মত অভিমত রয়েছে এবং কবীরা গুনাহ থেকে পবিত্র হওয়াটাও জমহুর উলামাদের অভিমত। নবুয়াতের পরেও কবীরা গুনাহ থেকে পাক হওয়া সম্পর্কে সর্বসম্মত অভিমত রয়েছে। তাঁদের নবুয়াত সম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট আয়াত বা সাহাবায়ে কিরামের উক্তি পাওয়া যায় না।
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান
وَيُتِمُّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكَ وَعَلَى آلِ يَعْقُوبَ
¶ সূরা ইউসুফ, আয়াত নং-৬।
এ আয়াতে নিয়ামত দ্বারা নুবয়াত বোঝানো হয়নি এবং আলে ইয়াকুব দ্বারা তাঁর ঔরশজাত সকল সন্তানকেও বোঝানো হয়নি।
আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদেরকে লক্ষ্য করে বলছেন-
وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي
¶ সূূরা মায়েদা, আয়াত নং-৩।
কেউ কেউ বলেছেন যে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমায়েছেন
وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْنَا وَمَا أُنْزِلَ إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ
¶ সূরা বাক্বারা, আয়াত নং-১৩৬।
ইয়াকুব (عليه السلام) এর বার জন ছেলে ছিলেন। এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, সবাই ওহী প্রাপ্ত ছিলেন। কিন্তু এটাও দুর্বল অভিমত। কেননা أُنْزِلَ ক্রিয়া দ্বারা বিনা মাধ্যম ওহী প্রাপ্তির কথা বোঝায় না আর أَسْبَاطِ শব্দ ইয়াকুব (عليه السلام) এর সন্তানদের উপাধি বলে কোন প্রমাণ নেই।
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান
قُلْ آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنْزِلَ عَلَيْنَا وَمَا أُنْزِلَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ
¶ সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং-৮৪।
এর ভাবার্থ এ নয় যে আমাদের সবার প্রতি ওহী নাযিল হয়েছে এবং আমরা সবাই নবী আর أَسْبَاطِ হচ্ছে নবী ঈস্রাইলের চারটি গোত্রের গোত্রীয় নাম এবং বাস্তবিকই তাঁদের মধ্যে নবীর আবির্ভাবও ঘটেছে।
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান
وَقَطَّعْنَاهُمُ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ أَسْبَاطًا أُمَمًا
¶ সূরা আ‘রাফ, আয়াত নং-১৬০।
তাফসীরে রূহুল মায়ানীতে
إِنَّ الشَّيْطَانَ لِلْإِنْسَانِ عَدُوٌّ مُبِينٌ
¶ সূরা ইউসুফ, আয়াত নং-৫।
এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে
فالذي عليه الأكثرون سلفا وخلفا أنهم لم يكونوا أنبياء أصلا، أما السلف فلم ينقل عن الصحابة منهم أنه قال بنبوتهم
¶ ইমাম মাহমুদ আলূসী বাগদাদী, তাফসিরে রুহুল মা‘য়ানী, ৬/৩৭৫ পৃ:
অনুরূপ তাফসীরে রুহুল বয়ান ও অন্যান্য তাফসীরে তাঁদের নবুয়াত প্রাপ্তিকে অপ্রমাণ করা হয়েছে। অবশ্য তওবার পর তাঁরা আল্লাহর ওলী বরং নবীর সাহাবার পদমর্যাদা লাভ করেছেন। হযরত ইউসুফ (عليه السلام) স্বপ্নে তাঁদেরকে তারকারাজির মত দেখেছেন। কেননা তাঁরা নবীর সাহাবী ছিলেন। হুযূর (ﷺ) ইরশাদ ফরমান-
أَصْحَابِي كَالنُّجُومِ بِأَيِّهِمُ اقْتَدَيْتُمُ اهْتَدَيْتُمْ
আমার সাহাবীগণ তারকারাজির মত।’’
¶ খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৬৯৬ পৃ: হা/৬০১৮, পরিচ্ছেদ: بَاب مَنَاقِب الصَّحَابَة , ইমাম ইবনুল আব্দুল বার, জামিউল বায়ানুল ইলমি ওয়া ফাদ্বলিহী, হা/, এ হাদিসের বিষয়ে বিস্তারিত বাতিলদের জবাব জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ১ম খন্ডের......পৃষ্ঠায় দেখুন।
অধিকন্তু তাঁদের ওসব পাপ কেবল ইয়াকুব (عليه السلام) এর স্নেহ লাভের জন্যই করা হয়েছিল। পরে তাঁরা ইয়াকুব (عليه السلام) ও ইউসুফ (عليه السلام) থেকে মাফ চেয়ে নিয়েছিলেন। আর তাঁরা উভয়ে ওদের ক্ষমা প্রাপ্তির জন্য দুআ করেছিলেন। সুতরাং তাঁরা সবাই ক্ষমাপ্রাপ্ত। তাঁদের শানে বেআদবী করা বড় পাপ। কাবিল জনৈক মহিলার সাথে প্রেম নিবেদন করে অপরাধ করেছিল। পরে এর জন্য আদম (عليه السلام) থেকে ক্ষমা লাভ করেনি, যার ফলে সে বেঈমানই রয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাঁরা ঈমানদার ছিলেন।
কুরআন করীম থেকে প্রমাণিত আছে যে জুলেখা যেনার মনস্থ করেছিলেন, যা বড় অপরাধ। অথচ আপনি বলেছেন যে নবীর স্ত্রী ব্যভিচারিনী হয় না। তাহলে জুলেখা কিভাবে ইউসুফ (عليه السلام) এর স্ত্রী হতে পারে? কেননা সে ব্যভিচারিনী ছিল। সুতরাং মানতেই হবে যে হয়তো তাঁর বিবাহ হয়নি বা এ নীতি ভুল।
বিঃ দ্রঃ গুজরাটের কতেক মূর্খ দেওবন্দী জুলেখাকে হযরত ইউসুফ (عليه السلام) এর স্ত্রী হিসেবে অস্বীকার করে তাঁর শানে যা- তা মন্তব্য করেছে।
হযরত জুলেখা ইউসুফ (عليه السلام) এর সম্মানিতা স্ত্রী। তাঁর স্ত্রী হওয়া সম্পর্কে মুসলিম ও বুখারী শরীফের হাদীছ এবং প্রায় তাফসীর থেকে প্রমাণিত আছে। তাঁর থেকে ইউসুফ (عليه السلام) এর সন্তানাদিও জন্ম হয়েছে। তাফসীরে খাযেন, তাফসীরে কবীর মাদারেক, মায়ালেমুত্তানযীল ইত্যাদিতে এর বিশ্লেষণ রয়েছে। জুলেখা কখনও ব্যভিচারিনী ছিল না। এবং যেনার মত কোন গুনাহও তাঁর থেকে প্রকাশ পায়নি। হযরত ইউসুফের প্রেমে বিভোর অবস্থায় জুলেখার মনে সহবাসের ধারণা জেগে ছিল। হযরত ইউসুফের সৌন্দর্য তাঁকে পাগল করেছিল এবং সেই অবস্থায় এ রকম ধারণা করেছিলেন। যদি মিসরের মহিলারা ক্ষণিকের জন্য তাঁর অপূর্ব সুন্দর আকৃতি দেখে বিভোর হয়ে নিজেদের হাত কেটে ফেলতে পারে, তাহলে তাঁর সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে জুলেখার ধৈর্যচ্যুতি ঘটার মধ্যে আশ্চর্যের কি আছে? অবশ্য পরে সে সব গুনাহ থেকে তওবাও করেছেন। এটাও লক্ষণীয় যে জুলেখা কেবল ইউসুফ (عليه السلام) এর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন, অন্য কারো প্রতি নয়। আল্লাহ তা’আলা তাঁকে সার্বিকভাবে নিরাপদ রেখেছিলেন। আমি নবীগণের স্ত্রীদেরকে যেনা ও অন্যান্য অশ্লীলতা থেকে মুক্ত বলেছি কিন্তু নিষ্পাপ বলিনি। জুলেখা ও পাপের জন্য তওবা করেছিলেন।এবং আরয করেছিলেন-
الْآنَ حَصْحَصَ الْحَقُّ أَنَا رَاوَدْتُهُ عَنْ نَفْسِهِ
জুলেখা নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করলো এবং অপরাধ স্বীকার মানে তওবা করা।
¶ সূরা ইউসুফ, আয়াত নং-৫১।
এ জন্য আল্লাহ তা’আলা তাঁর গুনাহের কথা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু এর জন্য অসন্তোষ কিংবা শাস্তির কথা কিছু উল্লেখ করেননি। যাতে বোঝা যায় যে তাঁর গুনাহ মাফ করা হয়েছে। এখন তাঁর গুনাহকে অশোভনীয়ভাবে উল্লেখ করাটা জঘন্য পাপ। তাঁর থেকে যেনা বা অশ্লীলতা কখনও প্রকাশ পায়নি। জানিনা দেওবন্দীরা কোন শয়তানের ধোঁকায় পড়েছে যে তারা প্রায় সময় আম্বিয়া কিরামের মান সম্মানের প্রতি আঘাত হানে। জুলেখা হচ্ছেন ইউসুফ (عليه السلام) এর ঘরণী। তাঁর অপবাদ মানে নবীরই অপবাদ। আল্লাহ তাদেরকে শুভবুদ্ধি দান করুক।
উপসংহারঃ স্মরণ রাখা দরকার যে খোদা তা’আলা নবীদের সৃষ্টিকর্তা। তাঁরা হচ্ছেন তাঁর প্রিয় বান্দা। আল্লাহ তা’আলা যে ভাবে ইচ্ছে তাঁদের দোষ গুনাহ বর্ণনা করুক এবং তাঁরাও যেভাবে পছন্দ সে ভাবে স্বীয় প্রার্থনা বা বন্দেগী প্রকাশ করুক, কিন্তু তাতে আমাদের নাক গলানোর কোন অধিকার নেই। তাঁদের দোষ তালাশ করে বা তাঁদের শানে বেআদবী করে নিজের আমলকে মলিন করতে যাব কেন? আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকেতো তাঁদের ইয্যত সম্মান করার নির্দেশ দিয়েছেন। দেখুন,
ইউসুফ (عليه السلام) মিসরের বাজারে বাহ্যতঃ বিক্রি হয়েছিলেন, যার জন্য মিসরবাসী তাকে আযীয মিসিরের কেনা গোলাম মনে করতেন। আল্লাহ তা’আলা এ কালিমাকে দূরীভূত করার জন্য সাত বছর মেয়াদী দুর্ভিক্ষ দিয়ে ছিলেন। প্রথম বছর সবাই তাঁর কাছে টাকা পয়সা দিয়ে খাদ্য শস্য ক্রয় করেছিল, দ্বিতীয় বছর সোনা চাঁদি দিয়ে, তৃতীয় বছর গরু-ছাগল দিয়ে, চতুর্থ বছর নিজেদের দাসদাসী দিয়ে, পঞ্চম বছর নিজেদের ঘর-বাড়ী ও জায়গা জমি দিয়ে, ষষ্ঠ বছর নিজেদের ছেলে-মেয়ে দিয়ে তাঁর থেকে খাদ্য শস্য সংগ্রহ করেছিলেন। সপ্তম বছর মিসরবাসী নিজেরাই ইউছুফ (عليه السلام) এর কাছে বিক্রি হয়েছে এবং আরয করেছে- আমরা আপনার দাসদাসীতে পরিণত হলাম, আপনি আমাদেরকে খাদ্য শস্য প্রদান করুন। তখন তিনি তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখালেন। (মাদারেক, রূহুল বয়ান ইত্যাদি দ্রষ্টব্য)
এ রকম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি কেবল এ জন্যই করা হলো যে, যখন সমগ্র মিসরবাসী ইউসুফ (عليه السلام) এর দাসে পরিণত হলো, তখন তাঁকে কে বলবে ‘কেনা গোলাম’? এতে বোঝা গেল যে একজন নবীর মান সম্মান অটল রাখার জন্য সমগ্র জগত বাসীকে মছিবতে ফেলতে পারে। হযরত উমর (رضي الله عنه) এর যুগে জনৈক ইমাম সব সময় নামাযে সূরা আবাসা পাঠ করতো। (সুরাটিতে বাহ্যতঃ হুযূর (ﷺ)কে ভর্ৎসনা করা হয়েছে মনে হয়।) যখন তিনি জানতে পারলেন, তখন ওকে হত্যা করালেন। (তাফসীরে রূহুল বয়ানে সূরা আবাসার তাফসীর দেখুন।)
আমার রচিত ‘শানে হাবিবুর রহমান’ কিতাবে এ সূরার সুন্দর তাফসীর করা হয়েছে, যেথায় প্রমাণ করা হয়েছে যে ওটা আসলে প্রশংসাগীতি। আল্লাহ তা’আলা দেওবন্দীদের হিদায়েত করুক। ওরা নবীদের শানে বেআদবী করার দুঃসাহস দেখিয়েছে।
وَصَلَّى اَللهُ تَعَالٰى عَلٰى خَيْرِ خَلْقِهِ وَنُوْرِ عَرْشِهِ سَيْدِنَا وَمَوْلَنَا مُحَمَّدٍ وَعَلٰى اٰلِهِ وَاَصْحَابِهِ اَجْمَعِيْنَ