وَأَكْثَرُ أَهْلِ العِلْمِ عَلَى مَا رُوِيَ عَنْ عُمَرَ، وَعَلِيٍّ، وَغَيْرِهِمَا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِشْرِينَ رَكْعَةً، وَهُوَ قَوْلُ الثَّوْرِيِّ، وَابْنِ الْمُبَارَكِ، وَالشَّافِعِيِّ. وقَالَ الشَّافِعِيُّ: وَهَكَذَا أَدْرَكْتُ بِبَلَدِنَا بِمَكَّةَ يُصَلُّونَ عِشْرِينَ رَكْعَةً.
-‘‘অধিকাংশ আহলে ইলিমগণ হযরত আলী (رضي الله عنه) ও হযরত উমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত রেওয়াত দ্বারা ২০ রাক‘আাত তারাবীহ পড়তেন। আর এই অভিমত হচ্ছে, সুফিয়ান ছাওরী (رحمة الله), ইমাম ইবনে মুবারক (رحمة الله) ও ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) এর। ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) বলেছেন: আমি মক্বায় লোকদেরকে ২০ রাকা‘আত তারাবীহ পড়তে দেখেছি।’’
¶ ইমাম তিরমিযি, আস্-সুনান, ২/১৬২পৃ: হা/৮০, পরিচ্ছেদ: بَابُ مَا جَاءَ فِي قِيَامِ شَهْرِ رَمَضَانَ
حَدَّثَنَا ابْنُ نُمَيْرٍ، عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ، عَنْ عَطَاءٍ، قَالَ: أَدْرَكْتُ النَّاسَ وَهُمْ يُصَلُّونَ ثَلَاثًا وَعِشْرِينَ رَكْعَةً بِالْوِتْرِ وفى الباب اثار كثيرة اخرجها ابن ابى شيبة وغيره وقال ابن قدامة وَهَذَا كَالْإِجْمَاعِ
-‘‘ইবনে নুমাইর তিনি আব্দিল মালেক হতে তিনি তাবেয়ী হযরত আত্বা ইবনে সায়িব হতে, তিনি বলেন, আমি লোকদেরকে (সাহাবীদেরকে এবং উচ্চ পর্যায়ের তাবেয়ীদেরকে) বিতির সহ ২৩ রাকাত তারাবীহ এর নামায পড়তে দেখেছি।
¶ মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, ২য় খন্ড, ১৬৩ পৃ:হা/৭৬৮৮; ফাতহুল বারী শরহে বূখারী, ৪র্থ খন্ড, ৩১৬ পৃ:; আছারুছ ছুনান, ২৪৭ পৃ:)।
এ বিষয়ে আরও অনেক হাদিসে পাক বর্ণিত আছে যেমন ইবনে আবি শায়বাহসহ আরও অনেকে সংকলন করেছেন। ইমাম ইবনে কুদামা (رحمة الله) বলেছেন, "এটি ইজমার ন্যায়।’’ (ইমাম ইবনে কুদামা, আল-মুগনী, ২/১২৩ পৃ:)
এতে বোঝা গেল, বিশ রাকাতের উপর মুসলমানদের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
وروى الْحَارِث بن عبد الرَّحْمَن بن أبي ذُبَاب عَن السَّائِب بن يزِيد، قَالَ: كَانَ الْقيام على عهد عمر بِثَلَاث وَعشْرين رَكْعَة. قَالَ ابْن عبد الْبر: هَذَا مَحْمُول على أَن الثَّلَاث للوتر
-‘‘হারেস ইবনে আব্দুর রাহমান বিন আবি যুবাব তিনি সাহাবী সায়িব ইবনে ইয়াযিদ (رضي الله عنه) হকে বর্ণনা করেন, আমরা হযরত উমরের যুগে ২৩ রাক‘আত নামায পড়তাম। ইমাম ইবনে আব্দুল র্বা (رحمة الله) বলেন, এ হাদিসে ৩ রাক‘আত বিতর উদ্দেশ্য।’’
¶ আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ১১/১২৭ পৃ:, দারু ইহ্ইয়াউত তুরাশুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন।
এর থেকে জানা গেল যে, সাহাবায়ে কিরামের যুগে বিশ রাকাত তারাবীহ ও তিন রাকাত বিতর পড়া হতো।
أخبرنَا يحيى بن يحيى أخبرنَا حَفْص بن غياث عَن الْأَعْمَش عَن زيد بن وهب، قَالَ: (كَانَ عبد الله بن مَسْعُود يُصَلِّي لنا فِي شهر رَمَضَان) فَيَنْصَرِف وَعَلِيهِ ليل، قَالَ الْأَعْمَش: كَانَ يُصَلِّي عشْرين رَكْعَة ويوتر بِثَلَاث
-‘‘তাবেয়ী হযরত যায়েদ ইবনে ওহ্হাব (رحمة الله) বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) রমজান মাসে আমাদেরকে নিয়ে নামাজ আদায় করতেন। তাবেয়ী আ’মাশ (رحمة الله) বলেন, তিনি (ইবনে মাসউদ) বিশ রাকাত তারাবীহ ও তিন রাকাত বিতির পড়তেন।’’
¶ ইবন নছর, কিয়ামুল লাইল, ২২১ পৃ:, হাদিস একাডিমী, ফয়সালাবা, পাকিস্তান, প্রথম প্রকাশ. ১৪০৮ হিঃ; ইমাম তাবারানী, মু‘জামুল কাবীর, ৯/৩১৭ পৃ: হাদিস নং ৯৫৮৮, ইমাম হাইছামী, মাযমাউয জাওয়াইদ, ৩/১৭২ পৃ:হা/৫০১৯, ইমাম বদরুদ্দীন আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ১১/১২৭পৃ:হা/১১০১
وَقَالَ ابْن عبد الْبر: وَهُوَ قَول جُمْهُور الْعلمَاء، وَبِه قَالَ الْكُوفِيُّونَ وَالشَّافِعِيّ وَأكْثر الْفُقَهَاء، وَهُوَ الصَّحِيح عَن أبي بن كَعْب من غير خلاف من الصَّحَابَة.
-‘‘ইমাম ইবনে আব্দুর র্বা (رحمة الله) বলেন, ২০ রাকাত তারাবীহ এর বিষয়টি অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মত। আর এটি কূফাবাসী আলিমগণ ও ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) এবং অধিকাংশ ফোকাহায়ে কেরামের অভিমত বা আমল। আর সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে এখতেলাফ ছাড়াই ইহা হযরত উবাই ইবনে কাব (رضي الله عنه) থেকে ইহা বিশুদ্ধ ভাবে প্রমাণিত।’’
¶ আইনী, উমদাতুল ক্বারী শরহে বূখারী, ৫/৩৫৫ পৃ:, ইমাম ইবনুল বার, আল-ইস্তেযকার, ২/৭০পৃ:
فَصَارَ اِجْمَاعًا لَمَّا روى البيهقى باسناد صحيح أَنَّهُمْ كَانُوا يَقُومُونَ عَلَى عَهْدِ عُمَرَ بِعِشْرِينَ رَكْعَةً وَعَلٰى عَهْدِ عُثْمَان وَ عَلِىُّ
-সাহাবায়ে কিরাম হযরত উমর, উছমান ও আলী (رضي الله عنه) এর শাসনামলে বিশ রাকাত তারাবীহর নামায পড়তেন। সুতরাং এ বিষয়ে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
¶ মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৩/৯৭১ পৃ: হা/১৩০২ এর আলোচনায় আংশিক।
إجْمَاعُ الصَّحَابَةِ عَلَى اَنَّ التَّرَاوِيحَ عِشْرِينَ رَكْعَةً
অর্থাৎ বিশ রাকাত তারাবীহের উপর সাহাবায়ে কিরামের ঐক্যমত রয়েছে।
وَأما الْقَائِلُونَ بِهِ من التَّابِعين: فشتير بن شكل، وَابْن أبي مليكَة والْحَارث الْهَمدَانِي وَعَطَاء بن أبي رَبَاح، وَأَبُو البحتري وَسَعِيد بن أبي الْحسن الْبَصْرِيّ أَخُو الْحسن وَعبد الرَّحْمَن ابْن أبي بكر وَعمْرَان الْعَبْدي
¶ আইনী, উমদাতুল ক্বারী শরহে বূখারী, ১১/১২৭ পৃ:
এ ইবারত থেকে পরিষ্কার বোঝা গেল যে বিশ রাকাত তারাবীহ প্রসঙ্গে সাহাবায়ে কিরাম, তাবেঈন, ফকীহ ও মুহাদ্দিছীনে কিরাম একমত। তাঁদের মধ্যে কেউ আট রাকাত তারাবীহ পড়েননি এবং পড়ার নির্দেশও দেননি।
একটি মর্মকথাঃ লা-মযহাবীরা আসলে আপন প্রবৃত্তির অনুসারী। এ জন্য তাদেরকে আহলে হাওয়া অর্থাৎ সুবিধাবাদী বলা হয়। যেটায় আত্মার আরাম মিলে, সেটাই তাদের মযহাব। আমি তাদের আরাম-দায়ক মযহাবের কয়েকটি মাসায়েল নিম্নে উল্লেখ করলাম, যাতে মুসলমানেরা প্রত্যক্ষ করেন এবং ইবরত হাসিল করেন।
আর একটি সূক্ষ্ম বিষয়ঃ মুসলিম শরীফের কিতাবুত তালাকে বর্ণিত আছে যে হুযূর (ﷺ) ও আবু বকর সিদ্দীক (رضي الله عنه) এর যুগে এক সঙ্গে তিন তালাক দিলে এক তালাকই ধরা হতো। হযরত উমর ফারুক (رضي الله عنه) বললেন- লোকেরা এতে বেশ তৎপর হলেন। তাই এর দ্বারা তিন তালাক প্রযোজ্য হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু আরাম প্রিয় লা-মযহাবীরা এক সঙ্গে তিন তালাক দিলেও এক তালাক প্রযোজ্য হওয়ার কথা বলে বেড়াচ্ছে। এ সব আল্লাহর বান্দারা এটা চিন্তা করলো না যে উমর (رضي الله عنه) কি সুন্নাতের বিপরীত নির্দেশ দিতে পারেন? আরও লক্ষণীয় যে, তিনি এ নতুন বিধান জারী করলেন কিন্তু কোন সাহাবী বিরোধিতা করলেন না। আসল কথা হলো হুযূর (ﷺ) যুগের কতেক লোক এরকম বলতেন তোমাকে তালাক দিলাম, তালাক তালাক। শেষের তালাক শব্দদ্বয় প্রথম তালাকের প্রতি জোর দেয়ার জন্য বলা হতো। যেমন আমরা বলে থাকি আমি কালকে যাব, কালকে, কালকেই; আমি রুটি খাব, রুটি রুটিই। এখনও যদি কেউ সেই নিয়তে এ রকম বলে, তাহলে এক তালাকই প্রযোজ্য হবে। হযরত উমর ফারুক (رضي الله عنه) এর যুগে লোকেরা যেহেতু তিন তালাকই দেওয়া আরম্ভ করেছিল, সেহেতু আমল পরিবর্তনের সাথে সাথে হুক্মও বদলে গেল। তাই তিনি এ নির্দেশ জারী করলেন। এ মাসাআলার সূ² বিশ্লেষণ আমার রচিত তফসীরে নঈমীর দ্বিতীয় খণ্ডে الطلاق مرتان আয়াতের তফসীরে দেখুন, যেথায় অনেক হাদীছ দ্বারা প্রমাণ করা হয়েছে যে এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই কার্যকরী হয়।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৫৪) তারাবীহের নামায বিশ রাকাত হওয়ার প্রমাণ | (০৫৬) বিশ রাকাত তারাবীহ প্রসঙ্গে আপত্তির জবাব |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |