বিরোধিতাকারীগণ জানাযার সাথে আল্লাহর যিকরকে তো বিদআত ও হারাম বলে থাকে। কিন্তু কথা বলা, কোন মাসায়েল বর্ণনা করাকে কোন সময় শিরক ও বিদআত বলে না এবং জনগণের মধ্যে পরস্পর হাসিঠাট্টা করাকে নিষেধও করে না এবং খারাপও বলে না। অথচ ফকীহগণ একেবারে নিশ্চুপ থাকার কথাই বলেছেন, যেমন উপরোক্ত আপত্তিতে উদ্ধৃত ইবারত সমূহ থেকে তাই বোঝা গেছে। গংগা উলটো দিকে কেন প্রবাহিত হচ্ছে? কালাম-সালাম, হাসি উপহাস, ওয়াজ ফাতওয়া সবই জায়েয; কেবল যিকর ইলাহী বুঝি হারাম? হে আল্লাহ, তাদেরকে বোধ শক্তি দিন।
বিঃদ্রঃ সম্ভবতঃ কেউ যদি বলে ইসলামী আহকাম তো পরিবর্তন হয় না কিন্তু এখানে পরিবর্তন কেন? এর জবাব আমি প্রথমেই দিয়েছি যে, যেসব আহকাম কোন ইলতের পরিপ্রেক্ষিতে দেয়া হয়, ইলতের পরিবর্তনের সাথে সে সব আহকামও পরিবর্তন হয়ে যায়। যেমন প্রথম যুগে নামায পড়ান, কুরআন শিক্ষা ইত্যাদির জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করা হারাম ছিল। কিন্তু এখন জায়েয। অনুরূপ আওলিয়া কিরামের কবরসমূহের উপর চাদর ছড়ানো বর্তমান যুগের পরিপ্রেক্ষিতে জায়েয। তদ্রুপ রমযান মাসে খতমে কুরআনের পর দুআ প্রার্থনা করাকে জায়েয বলা হয়েছে। কুরআন শরীফে আয়াত, রূকু সূরা সমূহের নাম প্রথম যুগে ছিল না। কিন্তু সাধারণ লোকের উপকারের কথা চিন্তা করে পরবর্তীতে জায়েয বলা হয়েছে।
ফতওয়ায়ে আলমগীরী কিতাবুল কারাহিয়াত اداب المصحف শীর্ষক অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে।
لَا بَأْسَ بِكِتَابَةِ أَسَامِي السُّوَرِ وَعَدَدِ الْآيِ وَهُوَ وَإِنْ كَانَ إحْدَاثًا فَهُوَ بِدْعَةٌ حَسَنَةٌ، وَكَمْ مِنْ شَيْءٍ كَانَ إحْدَاثًا وَهُوَ بِدْعَةٌ حَسَنَةٌ، وَكَمْ مِنْ شَيْءٍ يَخْتَلِفُ بِاخْتِلَافِ الزَّمَانِ وَالْمَكَانِ، كَذَا فِي جَوَاهِرِ الْأَخْلَاطِيِّ
-অর্থাৎ সূরাসমূহের নাম, আয়াতসমূহের সংখ্যা লেখার মধ্যে কোন ক্ষতি নেই, যদি ও বা এটা বিদআত কিন্তু বিদআতে হাসনাই বটে। এ রকম অনেক ভাল বিদআতে প্রচলিত আছে। অনেক কিছু যুগ ও স্থান পরিবর্তনের ফলে পরিবর্তিত হয়ে যায়।’’
¶ নিযামুদ্দীন বলখী, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-৩২৩।
এর দীর্ঘ বিশ্লেষণ আমি প্রথম অধ্যায়ে করছি।
যেমন দুর্রুল মুখতারের دفن الميت শীর্ষক আলোচনায় উল্লেখিত আছে:
وَلَا بَأْسَ بِنَقْلِهِ قَبْلَ دَفْنِهِ وَبِالْإِعْلَامِ بِمَوْتِهِ وَبِإِرْثَائِهِ بِشَعْرٍ أَوْ غَيْرِهِ
-মইয়তের দাফন করার আগে স্থানান্তরিত করা, এর জানাযার প্রচার করা, মইয়তের শোকগাথা পদ্যে হোক বা অন্যভাবে পাঠ করা জায়েয।’’
¶ হাসকাফী, দুররুল মুখতার, পৃষ্ঠা-১১৫, ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৩৯
ফতওয়ায়ে শামীতে এর ব্যাখ্যা করা হয়েছে:
أَيْ إعْلَامِ بَعْضِهِمْ بَعْضًا لِيَقْضُوا حَقَّهُ هِدَايَةٌ. وَكَرِهَ بَعْضُهُمْ أَنْ يُنَادَى عَلَيْهِ فِي الْأَزِقَّةِ وَالْأَسْوَاقِ لِأَنَّهُ يُشْبِهُ نَعْيَ الْجَاهِلِيَّةِ وَالْأَصَحُّ أَنَّهُ لَا يُكْرَهُ إذَا لَمْ يَكُنْ مَعَهُ تَنْوِيهٌ بِذِكْرِهِ
অর্থাৎ একে অপরকে খবর দেয়া, যাতে লোকেরা মইয়তের হক আদায় করতে পারে, তা জায়েয। কতেক লোক অলি-গলি এবং বাজারে প্রচার করাকে মাকরুহ মনে করে। কিন্তু বিশুদ্ধ অভিমত হলো: এ ধরনের প্রচার মাকরুহ নয়, যদি উক্ত প্রচারে মইয়তের অতিরিক্ত প্রশংসা করা না হয়।’’
¶ ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৩৯
যখন জানাযার প্রচারের উদ্দেম্যে শোক-গাথা পাঠ বা মইয়তের নাম প্রচার করা জায়েয তখন জানাযার প্রচারের নিয়তে নাত শরীফ বা কলেমা তৈয়্যবা উচ্চস্বরে পাঠ করা কেন হারাম হবে? এতে প্রচারও হগচ্ছে, হুযুর আলাইহিস সালামের নাতও হচ্ছে। এর থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ফকীহগণ যা নিষেধ করেন, তা হচ্ছে বে-ফায়দা যিকর। কিন্তু এতে যদি বিশেষ ফায়দা থাকে, তাহলে জায়েয।
এ জন্য আল্লামা শামী সেই একই আলোচনায় “তাতার খানিয়া” থেকে উদ্বৃত্ত করে বলেছেন:
زَادَ فِي التَّتَارْخَانِيَّة: وَأَمَّا رَفْعُ الصَّوْتِ عِنْدَ الْجَنَائِزِ فَيُحْتَمَلُ أَنَّ الْمُرَادَ مِنْهُ النَّوْحُ أَوْ الدُّعَاءُ لِلْمَيِّتِ بَعْدَمَا افْتَتَحَ النَّاسُ الصَّلَاةَ أَوْ الْإِفْرَاطُ فِي مَدْحِهِ كَعَادَةِ الْجَاهِلِيَّةِ مِمَّا هُوَ شَبِيهُ الْمُحَالِ، وَأَمَّا أَصْلُ الثَّنَاءِ عَلَيْهِ فَغَيْرُ مَكْرُوهٍ
-‘‘কিন্তু মইয়তের পাশে উচ্চ আওয়াজ করা মানে হয়তো এর দ্বারা বিলাপ করাকে বোঝানো হয়েছে বা মইয়তের নামায হয়ে যাবার পর দুআ করানো বোঝানো হয়েছে অথবা মইয়তের অতিরিক্ত প্রশংসা করাকে বোঝানো হয়েছে। যেমন জাহেলিয়াত যুগে এ ধরনের প্রচলন ছিল। কিন্তু মইয়তের প্রশংসা করা মাকরুহ নয়।’’
¶ ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৩৯৮
মোট কথা হলো বেফায়দা উচ্চ আওয়াজ করা নিষেধ। কিন্তু ফলপ্রসুু উচ্চ আওয়াজ বিনা মাকরুহ জায়েয। বর্তমান যুগে এতে অনেক উপকার রয়েছে, যা ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
চতুর্থতঃ উচ্চস্বরে যিকরের নিষেধাজ্ঞা বিশেষ জ্ঞানী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; সাধারণ লোকেরা উচ্চ স্বরে যিকর করলে তাদেরকে বারণ করা অনুচিত। ফকীহগণ বলেন, সাধারণ লোকদেরকে যিকরে ইলাহী থেকে বাধা দিও না, কেন না তারা এমনিতে যিকর ইলাহীর ব্যাপারে অনাগ্রহী। এখন যে পরিমাণ যিকর করতে চায়, করতে দাও।
দুর্রুল মুখতারে صلوة العيدين অধ্যায়ে বর্ণিত আছে:
(وَلَا يُكَبِّرُ فِي طَرِيقِهَا وَلَا يَتَنَفَّلُ قَبْلَهَا مُطْلَقًا) (وَكَذَا) لَا يَتَنَفَّلُ (بَعْدَهَا فِي مُصَلَّاهَا) فَإِنَّهُ مَكْرُوهٌ عِنْدَ الْعَامَّةِ
-‘‘ঈদগাহের পথে তকবীর বলো না। ঈদের নামাযের আগে নফল নামায পড়ো না এবং ঈদের নামাযের পর ঈদগাহে নফল নামায পড়ো না। কেননা এটা অধিকাংশ ফকীহগণের মতে মাকরুহ।’’
¶ হাসকাফী, দুররুল মুখতার, পৃষ্ঠা-১১৫, ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১৬৯-১৭০
পুনরায় বলেন:
وَهَذَا لِلْخَوَاصِّ أَمَّا الْعَوَامُّ فَلَا يُمْنَعُونَ مِنْ تَكْبِيرٍ وَلَا تَنَفُّلٍ أَصْلًا لِقِلَّةِ رَغْبَتِهِمْ فِي الْخَيْرَاتِ
-‘‘এ হুকুম বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য, সাধারণ লোকদেরকে এর থেকে নিষেধ করা যাবে না। তকবীর বলা এবং নফল ইবাদত কোনটার থেকে নয়। কেননা ভাল কাজে ওদের আকর্ষণ কম।’’
¶ হাসকাফী, দুররুল মুখতার, পৃষ্ঠা-১১৫, ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১৭১
এ প্রসঙ্গে ফতওয়ায়ে শামীতে বর্ণিত আছে:
أَيْ لَا سِرًّا وَلَا جَهْرًا فِي التَّكْبِيرِ
অর্থাৎ ওদেরকে নিম্নস্বরে বা উচ্চস্বরে তকবীর বলা থেকে বাধা দেবে না।’’
¶ ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১৭১
অধিকন্তু আমি উচ্চস্বরে যিকর শীর্ষক আলোচনায় ফতওয়ায়ে শামীর ঈদাইন অধ্যায়ের বরাত দিয়ে উল্লেখ করেছি যে, কোন এক ব্যক্তি ইমাম আবু হানিফা (رضي الله عنه) এর কাছে জানতে চেয়েছিল: লোকেরা বাজার সমুহে যে উচ্চস্বরে তকবীর বলে, তাদেরকে নিষেধ করা যাবে কিনা।
তিনি উত্তরে, ‘না’ বলেছিলেন। উপরোক্ত ইবারত সমূহ থেকে বোঝা গেল যে, কোন কোন অবস্থায় বিশেষ ব্যক্তিদেরকে কোন বিশেষ যিকর থেকে বারণ করা হয়, কিন্তু সাধারণ লোকদেরকে নিষেধ করা হয়নি। এ জন্যেই ফকীহগণ জানাযার আগে উচ্চস্বরে যিকর করো না’ বলেছেন, কিন্তু যিকরকারীদেরকে এর থেকে বাধা দাও বলেননি।
এ জবাবের সারকথা হচ্ছেঃ
জানাযার আগে উচ্চস্বরে যিকর করার মধ্যে হিন্দুদের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে। কেননা ওরা রাম রাম হরি রাম বলে চিৎকার করে যায় এবং আপনারাও হৈ-হল্লা করে যান। কাফিকরদের সাথে সাদৃশ্য নাজায়েয। সুতরাং এটাও নাজায়েয।
কাফিরগণ মুর্তিদের নাম নেয় আর আমরা খোদায়ে কুদ্দসের যিকর করি। তাহলে সাদৃশ্য কোথায় রইলো? কাফিরগণ দেবতার নামে আর আমরা খোদার নামে পশু যবেহ করি। কাফিরগণ গংগানদী থেকে গংগার পানিআনে আর আমরা মক্কা মুয়াজ্জমা থেকে যমযমের পানি আনি। এটাকে সাদৃশ্য বলা হয় না। যে সব কাজ কাফিরদের জাতীয় বা সাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে, এগুলোর সাথেই কেবল সাদৃশ্য নিষেধ, অন্যান্য বিষয়ে নয়। যদি কাফিরগণও তাদের জানাযার আগে কলেমা পাঠ করতে থাকে, আপনারাও সানন্দে পড়–ন। কেনটা এটা ভাল কাজ আর ভাল কাজের সাদৃশ্য দূষণীয় হতে পারে না।
রাস্তায় উচ্চস্বরে কলেমা তৈয়্যবা পড়া বেআদবী কেননা তথায় ময়লা আবর্জনা থাকে। সুতরাং তা নিষেধ।
এ আপত্তিটা নিছক গলাবাজি বৈ কিছু নয়। ফকীহগণের অভিমত হলো, রাস্তা দিয়ে চলার সময় যিকর জায়েয। তবে ময়লা আবর্জনা ফেলার নির্ধারিত জায়গায় উচ্চস্বরে যিকর নিষেধ, যেমন পায়খানা, ময়লাখানা ইত্যাদি জায়গায়।
ফতওয়ায়ে শামীতে قرأت عند الموت শীর্ষক আলোচনায় উল্লেখিত আছে।
وَفِي الْقُنْيَةِ لَا بَأْسَ بِالْقِرَاءَةِ رَاكِبًا أَوْ مَاشِيًا إذَا لَمْ يَكُنْ ذَلِكَ الْمَوْضِعُ مُعَدًّا لِلنَّجَاسَةِ
-‘‘কোন কিছুতে আরোহণ করে বা পায়ে হেঁটে চলার সময় কুরআন তিলাওয়াতে কোন অসুবিধা নেই, যদি ওই জায়গাটা ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য তৈরি করা না হয়।’’
¶ ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১৯৪
কুরআন বগলে নিয়ে রাস্তায় চলাফেরা করা জায়েয। কিন্তু পায়খানায় নিয়ে যাওয়া নিষেধ। আরও লক্ষ্যণীয় যে, কুরবানী ঈদের দিন নির্দেশ আছে যে, ঈদগাহে যাওয়ার সময় রাস্তায় যেন উচ্চস্বরে তকবীরে তশরীক বলা হয়।
দুর্রুল মুখতারে: صلوة العيدين অধ্যায়ে বর্ণিত আছে:
(وَيُكَبِّرُ جَهْرًا) اتِّفَاقًا (فِي الطَّرِيقِ)
-‘‘রাস্তাতে যেন উচ্চস্বরে তকবীর বলা হয়।’’
¶ ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১৭৬
অথচ রাস্তায় ময়লা ইত্যাদি থাকে। ফকীহগণ আরও বলেন যে, স্নানাগারে তসবীহ তাহলীল উচ্চস্বরে পাঠ করা জায়েয। অথচ ওখানে প্রায় সময় ময়লা থাকে।
ফতওয়ায়ে আলমগীরী কিতাবুল কারাহিয়াতের الصلوة والتسبيح অধ্যায়ে, উমদাতুল আবরার, মরমাউল নাওয়াযেল, খানিয়া, সিরাজিয়া ইত্যাদি কিতাবে বর্ণিত আছে:
وَأَمَّا التَّسْبِيحِ وَالتَّهْلِيلِ لَا بَأْسَ بِذَلِكَ، وَإِنْ رَفَعَ صَوْتَهُ، كَذَا فِي الْفَتَاوَى الْكُبْرَى.
অর্থাৎ স্নানাগারে উচ্চস্বরেও তসবীহ তাহলীল পড়া জায়েয।’’
¶ নিযামুদ্দীন বলখী, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-৩১৬।
জানাযার আগে উচ্চস্বরে যিকরের দ্বারা ঘরের মহিলা ও শিশুরা ভয় পেয়ে যায়। কেননা এর দ্বারা ওদের মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়, যার ফলে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। সুতরাং চিকিৎসাশাস্ত্র অনুসারেও তা নিষেধ হওয়া বাঞ্ছনীয়।
কুরআন করীম ইরশাদ ফরমান:
أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
অর্থাৎ আল্লাহর যিকর দ্বারা আত্মা শান্তি লাভ করে।’’
¶ সূরা রা’দ, আয়াত নং-২৮।
মুসলমানেরাতো এর থেকে শান্তি ও তৃপ্তি লাভ করেন। তবে হ্যাঁ, কাফিরগণ ভয় পেতে পারে। তাদের ভয় পাওয়া দরকার। তারাতো আযানকে ভয় করে। তাই বলে কি আযান নিষেধ করে দিতে হবে? আর যদি কোন বিখ্যাত চিকিৎসক লিখে থাকেন যে কলেমা তৈয়্যবার আওয়াজ মহামারীর অন্যতম কারণ, তাহলে প্রমাণ পেশ করা হোক। অবশ্য সেই ডাক্তার নিশ্চয়ই মুসলমান ও প্রসিদ্ধ হতে হবে; কোন দেওবন্দী বা হাতুড়ে ডাক্তার হলে চলবে না। কারণ মনগড়া কথার কোন মূল্য নেই। যা’হোক, প্রমাণিত হলো যে, মইয়তের আগে উচ্চস্বরে যিকর করা অনেক উত্তম এবং বরকতময়। বিরোধীতাকারীদের কাছে ভুল ধারণা ব্যতীত অন্য কোন উল্লেখযোগ্য আপত্তি নেই।
والحمد لله على ذالك
খোদার শুকর, যে সব মাসায়েল নিয়ে দেওবন্দীরা ভিন্নমত পোষণ করে, সে সবের মোটামুটি বিশ্লেষণ করা হলো। অবশ্য সে সব মাসায়েলের মধ্যে অনেক মাসায়েল এ রকমও আছে, যে গুলো ঈমানের জন্য হুমকী নয়, কেবল মুস্তাহাব বা মাকরূহ নিয়ে মাতপার্থক্য। তবে এমন অনেক মাসায়েলও রয়েছে, যার জন্য আরব আযমের প্রখ্যাত উলামায়ে কিরাম দেওবন্দীদেরকে কাফির ফত্ওয়া দিয়েছেন এবং তাদের আকীদাকে ইসলামী আকীদার বিপরীত প্রমাণ করেছেন। মুসলমানদের অবগতির জন্য আমি তাদের বাতিল আকীদার একটি তালিকা নিম্নে পেশ করলাম। পাশাপাশি সঠিক ইসলামী আকীদাও তুলে ধরলাম। তাদের এ সব আকীদা তাদের প্রকাশিত কিতাব সমূহে মওজুদ আছে। কেউ ভুল প্রমাণ করতে পারলে পুরস্কৃত করা হবে। বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে কেউ কেউ এ সব বাতিল আকীদাকে সাথে সাথে খণ্ডন করে দেয়ার কথাও বলেছিলেন। কিন্তু সম্প্রদায়ে নানা কারণে এখানে তা করতে পারলাম না। ইন্শা আল্লাহ, আমি এ কিতাবের দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ করবো; তখন ওসব আকীদার ব্যাপক বিশ্লেষণ করা হবে। তাই এখন কেবল আকীদাটা পেশ করলাম।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৪৬) এ মাসআলা প্রসঙ্গে উত্থাপিত আপত্তিসমূহ ও এসবের জবাব | (০৪৮) দেওবন্দী আকীদা বনাম ইসলামী আকীদা |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |