দেওবন্দী আকীদা | ইসলামী আকীদা |
১) আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারে। (মাসায়েলে ইম্কানে কিয্ব’) মওলভী খলিল আহমদ সাহেব আম্বেঢী রচিত ‘বারাহিনূল কাতিয়া’ ও মওলভী মাহমুদুল হাসান সাহেব রচিত ‘জাহদুল মকিল’ দ্রষ্টব্য। |
১) চুরি করা, যেনা করা ইত্যাদির মত মিথ্যা বলা দোষ। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক দোষ থেকে পবিত্র।
(কুরআন) অধিকন্তু আল্লাহর গুণাবলী হচ্ছে অব্যশম্ভাবী, সম্ভাব্য নয়। সুতরাং আল্লাহর বেলায় “সম্ভব” বলাটা ধর্মহীনতার পরিচায়ক। |
২) আল্লাহর শান হচ্ছে-যখনই ইচ্ছে করে, অদৃশ্য জ্ঞান জেনে নেয়। কোন ওলী, নবী, জ্বীন, ভুত, ফিরিশ্তাকে আল্লাহ তা’য়ালা এ ক্ষমতা দেননি। (মওলভী ইসমাইল সাহেব দেহলবী রচিত ‘তক্বিয়াতুল ঈমান। | ২) আল্লাহ তা’আলা সবসময়ের জন্য অদৃশ্য জ্ঞানী। এ অদৃশ্য জ্ঞানটা হচ্ছে তাঁর অন্যতম বৈশিষ্ট্য, যা অবশ্যম্ভাবী। যখন ইচ্ছা পোষণ করে, তখন জেনে নেয়- এর অর্থ হচ্ছে যখন তিনি ইচ্ছে করেন না, তখন এ ব্যাপারে অজ্ঞ থাকেন। এ ধরনের ধারণা কুফরী। অধিকন্তু আল্লাহ তা’আলা স্বীয় প্রিয় জনদেরকেও গায়বী ইলম দান করেছেন। (কুরআন করীম) |
৩) আল্লাহ্ তা'আলাকে স্থান, কাল, গঠন ও আকৃতি থেকে পবিত্র মনে করা বিদআত। (মৌলবী ইসমাইল রচিত ইজাউল হক দ্রষ্টব্য) | ৩) খোদায়ে কুদ্দুস স্থান, কাল, গঠন ও আকৃতি থেকে পবিত্র । তিনি কোন জায়গার সাথে সংশ্লিষ্ট নন, তাঁর আয়ুষ্কাল বলতে কিছু নেই । তিনি কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা গঠিত নন। দেওবন্দীরাও বেমালুম একে কুফরী বলেছে । (ইলমুল কালামের কিতাবসমূহ দ্রষ্টব্য) |
৪) বান্দাদের কাজসমূহের বেলায় আল্লাহ তা’আলা আগে থেকে অবগত থাকেন না। বান্দা ভালমন্দ কাজ যখনই করে ফেলে, তখনই জানা হয়ে যায়। মওলবী রশিদ আহমদ সাহেবের শিষ্য মওলবী হোসাইন আলী সাহেব রচিত ‘বুলগাতুল হয়রান’ কিতাবের ৫৭ পৃষ্ঠায় إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُبِينٍ এ সূরা হুদের ৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য) | ৪) আল্লাহ তাআলা সবসময়ের জন্য সব কিছুর ব্যাপারে জ্ঞাত। তার জ্ঞান হচ্ছে অবশ্যম্ভাবী ও স্থায়ী। যে কোন কিছুর ক্ষেত্রে একমুহূর্তের জন্যও যদি তাকে অজ্ঞ মনে করা হয়, তা ধর্মদ্রোহিতার সামিল। (আকায়েদের কিতাব দ্রষ্টব্য) দেওবন্দীরা যেখানে খোদার গায়বী ইলমকে অস্বীকার করে, সেখানে হুযূর আলাইহিস সালামের ইলমে গায়বকে অস্বীকার করলে, আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। |
৫) ‘খাতিমুন নবীয়ীন’ এর অর্থ হুযূর (ﷺ)কে শেষ নবী মনে করাটা ভুল। আসলে, এর অর্থ হচ্ছে তিনি (ﷺ) আসল নবী এবং অন্যান্য নবীগণ হচ্ছেন আরেযী (মূল নবীর ভূমিকা অনুসরণকারী) নবী সুতরাং হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের পরে অন্য কোন নবী এসে গেলেও হুযূরের শেষ নবী হওয়ার ক্ষেত্রে এর কোন প্রভাব পড়বে না। (দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মৌলভী কাসেম রচিত “তাহযিরুন নাস” কিতাব দ্রষ্টব্য) | ৫) খাতিমুন নবীয়ীন এর অর্থ হচ্ছে হুযূর (ﷺ) শেষ নবী। তার প্রকাশ্য যুগে বা পরে কোন আসলী, নকলী, অস্থায়ী ক্ষণস্থায়ী কোন রকমের নবীর আগমন একেবারে অসম্ভব। এ অর্থে মুসলমানদের ঐক্যমত রয়েছে এবং হাদীছেও এ অর্থ প্রকাশ পায়। যে এ অর্থের অস্বীকার করে, সে ধর্মদ্রোহী হিসেবে গণ্য যেমন কাদিয়ানী ও দেওবন্দীরা। |
৬) আমলসমূহের বেলায় বাহ্যতঃ উম্মত নবীর বরাবর হয়ে যায়। এবং অনেক সময় অতিক্রমও করে যায়। (তাহযিরুন নাস’ দ্রষ্টব্য)। | ৬) নবী ভিন্ন অন্য কেউ, তিনি ওলী হোক বা গাউছ বা সাহাবা, ইলম ও আমলের ক্ষেত্রে নবীর বরাবর হতে পারে না। এমনকি, সাহাবী নয় এমন কেউ সাহাবীর বরাবর হতে পারেন না। সাহাবীর যৎসামান্য গম খয়রাত আমাদের শত শত মণ স্বর্ণ খয়রাত থেকেও অনেক উত্তম। |
৭) হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের তুলনা ও দৃষ্টান্ত সম্ভব। মৌলভী ইসমাইল দেহলবী রচিত يكروزي গ্রন্থের ১৪৪ পৃষ্ঠা) | ৭) আল্লাহ তা’আলা অতুলনীয় সৃষ্টিকর্তা আর তাঁর মাহবুব অতুলনীয় বান্দা। তিনি (ﷺ) সমস্ত জগতের জন্য রহমত ও গুণাহগারদের সুপারিশকারী। এ সব গুণাবলীর জন্য তার তুলনা সত্ত্বাগতভাবে অসম্ভব। (মৌলানা ফজলুল হক খায়রাবাদী রচিত রেসালা امتناع النظير দেখুন) |
৮) হুযূর (ﷺ)কে ভাই বলা জায়েয, কেননা তিনিও মানুষ। (মৌলভী খলিল আহমদ সাহেব রচিত বারাহিনুল কাতিয়া ও মৌলভী ইসমাঈল সাহেব রচিত ‘তক্বিয়াতুল ঈমান’ দ্রষ্টব্য। |
৮) হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লা)কে সাধারণ শব্দসমূহ দ্বারা ডাকা হারাম আর তা যদি অবজ্ঞার নিয়তে হয়, তাহলে কুফরী (আল:কুরআন)। হুযূর (ﷺ)কে ইয়া রাসুলাল্লাহ ইয়া হাবিবাল্লাহ বলা প্রয়োজন।
|
৯) শয়তান ও মৃত্যুর ফিরিশতার জ্ঞান হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম থেকে বেশী (মৌলভী খলিল আহমদ রচিত ‘বারাহিনুল কাতিয়া’) | ৯) যেই ব্যক্তি সৃষ্টিকুলের কাউকে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম থেকে বেশী জ্ঞানী মনে করে, সে কাফির (শেফা শরীফ দেখুন) খোদার সমস্ত সৃষ্ট জীবের মধ্যে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের সব চেয়ে বড় জ্ঞানী। |
১০) হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের জ্ঞান শিশু, পাগল ও পশুদের জ্ঞানের মত বা ওদের সমতুল্য (মৌলভী আশরাফ আলী সাহেব রচিত ‘হিফজুল ঈমান’ দেখুন) | ১০) হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের কোন পবিত্র বৈশিষ্ট্যকে সাধারণ জিনিসের সাথে তুলনা করা বা ওসবের বরা বর বলা সুস্পষ্ট মানহানিকর এবং এটা কুফরী। |
১১) হুযূর (ﷺ) উর্দ্দু বলাটা দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে শিখেছেন (মৌলভী খলিল আহমদ সাহেবের “বারাহিনুল কাতিয়া”)। | ১১) আল্লাহ তাআলা হযরত আদম (عليه السلام)কে সমস্ত ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন। আর হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের জ্ঞান হযরত আদম থেকে অনেক গুণ বেশী। তাই যারা বলে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের এ ভাষা জ্ঞান অমুক মাদ্রাসা থেকে অর্জন করেছে, তারা ধর্মদ্রোহী। |
১২) প্রত্যেক ছোট বড় মখলুক (নবী ও গায়র নবী) আল্লাহর শান মানের সামনে চামার থেকে নিকৃষ্ট (মৌলভী ইসমাঈল রচিত “তাক্বিয়া তুল ঈমান” দ্রষ্টব্য) |
১২) আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান,
আরও ইরশাদ করেন
খোদার সামনে যে নবীকে নিকৃষ্ট মনে করে, সে নিজেই চামার থেকে নিকৃষ্ট। |
১৩) নামাযে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে স্মরণ করা, স্বীয় গরু গাধার ধ্যানে মগ্ন থাকার চেয়েও নিকৃষ্ট। (মৌলভী ইসমাইল দেহলবী রচিত “সিরাতুল মুস্তাকীম” দ্রষ্টব্য) | ১৩) যে নামাযে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের শ্রেষ্ঠতার কথা মনে পড়বে না, সে নামাযই অগ্রাহ্য হবে। এ জন তাশাহুদে হুযূর (ﷺ)কে সালাম করা হয়। এ তাশাহুদ ছাড়া নামায হতে পারে না। (হাযির নাযির আলোচনা দেখুন।) |
১৪) আমি হুযূর আলাইহিস সালামকে স্বপ্নে দেখলাম যে তিনি আমাকে পুলসিরাতে নিয়ে গেলেন। কিছু দূর অগ্রসর হয়ে দেখলাম তিনি (ﷺ) পড়ে যাচ্ছিলেন, তখন আমি তাকে (ﷺ) ধরে ফেললাম। (মৌলবী রশিদ আহমদ ছাহেবের শিষ্য মৌলভী হোসাইন আলী রচিত بلغة الحيران গ্রন্থ দ্রষ্টব্য। | ১৪) হুযূর আলাইহিস সালামের কতেক গোলাম পুলসিরাতের উপর দিয়ে বিদ্যুত বেগে চলে যাবে। আবার পুল সিরাতের উপর পিচ্ছিল খাওয়া অনেক লোক হুযূরের বদৌলতে রক্ষা পাবে। তিনি (ﷺ) আল্লাহর দরবারে দুআ করবেন, ربى سلم (আল-হাদীছ)। যে বলে আমি হুযূর (ﷺ)কে পুলসিরাতে পড়ে যাবার থেকে রক্ষা করেছি, সে বেঈমান। |
১৫) মৌলবী আশরাফ আলী ছাহেব বৃদ্ধকালে তার অল্পবয়স্কা এক মহিলা মুরীদকে বিবাহ করেন। এ বিবাহের আগে তার কোন এক মুরীদ স্বপ্নে দেখেছিলেন যে মৌলবী আশরাফ আলীর ঘরে হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) তশরীফ এনেছেন। এর তাবীর প্রসঙ্গে মৌলভী আশরাফ আলী সাহেব বলেন- কোন অল্পবয়স্কা মহিলা আমার হাতে আসবে। কেননা হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম সাথে হযরত আয়েশা সিদ্দীকার যখন বিবাহ হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল সাত বছর মাত্র। এ স্বপ্নে সেই ইঙ্গিতই রয়েছে যে আমি হলাম বৃদ্ধ এবং বিবি সাহেবা হচ্ছে বালিকা। (মৌলভী আশরাফ আলী রচিত রিসালাতুল ইমদাদ দ্রষ্টব্য) | ১৫) হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম সমস্ত বিবি সাহেবান মুসলমানদের জন্য মায়ের মত (আল-কুরআন)। বিশেষ করে হযরত আয়েশা সিদ্দীকাতুল কুবরা (رضي الله عنه) এর সেই উচ্চ মর্যাদা রয়েছে যে, সারা বিশ্বের মায়েরা তার পবিত্র চরণে উৎসর্গীত। কোন মূর্খ ব্যক্তিও মা কে স্বপ্নে দেখে স্ত্রী হিসেবে তাবীর করবে না। তাই এটা হযরত সিদ্দীকা (رضي الله عنه) এর প্রতি অবমাননা কর বরং তার শানে সুস্পষ্ট বেআদবী বোঝা যায়। মাকে স্ত্রী হিসেবে তাবীর করার চেয়ে জঘন্য বেআদবী আর কি হতে পারে? |
এ হলো দেওবন্দী আকীদার কিছু নমুনা। যদি তাদের সমস্ত আকীদা বর্ণনা করতে যাই, তাহলে এর জন্য বিরাট দফতরের প্রয়োজন হবে। আসল কথা হলো রাফেজীরা ও খারেজীরা কেবল সাহাবায়ে কিরাম বা আহলে বাইতে এজামের সমালোচনা করেছে। কিন্তু দেওবন্দীদের কলমের খোঁচা থেকে আল্লাহর জাতে পাক, রসুল করীম (ﷺ), সাহাবায়ে কিরাম, হুযূরের পবিত্র স্ত্রীগণ কেউ রক্ষা পাননি; সবারই সমালোচনা করা হয়েছে। কেউ কোন ভদ্র লোককে যদি বলে যে, সে ওনার মাকে স্বপ্ন দেখেছে এবং স্ত্রী হিসেবে এর তাবীর করে, তখন সেই ভদ্র লোক কিছুতেই সহ্য করবেন না। কিন্তু আমরা আমাদের মা হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) এর বেলায় এ ধরনের উক্তি কিভাবে সহ্য করি! হাতে কলম ব্যতীত আর কিছু নেই, তাই এ কলমের সাহায্যে মুসলমানদেরকে সজাগ করে দিচ্ছি। যেন তাদের থেকে দূরে থাকেন বা তারা (দেওবন্দীরা) সে সব আকীদা থেকে যেন তওবা করে।
আমার প্রাণ প্রিয় ও স্নেহ ভাজন শাগরীদ মৌলবী সৈয়দ মাহমুদ শাহ খুবই আগ্রহ করেছিল, আমি যেন “ইমকানে কিযব” ও “ইমকানে নযির” সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করি। কিন্তু নানা ব্যস্ততার কারণে কেবল দেওবন্দী আকীদার কিছু নমুনা পেশ করলাম। ইন্শাআল্লাহ, এ কিতাবের পরবর্তী খণ্ডে উপরোক্ত বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তখন দেওবন্দীদের যুক্তি বিদ্যার দৌড় কতটুকু, তা জানা যাবে এবং মৌলভী হোসাইন আহমদ ছাহেব ও মৌলভী মরতুজা হোসেন ছাহেব যে সব বিশ্লেষণ দিয়েছেন, সে সবের অন্তঃসার শূন্যতাও প্রমাণিত হবে। আমাদের সুন্নীদের প্রতি অপবাদ দেয়া হয় যে আমরা পীর পূজারী। নবী (ﷺ) ও নিজেদের পীরদেরকে খোদার মত মনে করি। তাই আমরা নাকি মুশরীক। আমি এখন দেখাচ্ছি স্বয়ং দেওবন্দীরা কতটুকু পীর পূজারী এবং পীরদেরকে কি করেন।
মৌলভী মাহমুদুল হাসান ছাহেব স্বীয় শেখ মৌলভী রশীদ আহমদ ছাহেব গাঙ্গুহী সম্পর্কে রচিত শোক-গাথায় লিখেছেন-
تمهارى تربت انور كودے كرطور سے تشبيه
كهوں هوں بار بار آرنى مرى ديكهى بهى ناداں
অর্থাৎ তোমার মাযারকে তুর পাহাড়ের সাথে তুলনা করা যায় আর আমি হযরত মুসা (عليه السلام) এর মত ارنى বলে তোমার সাক্ষাৎ কামনা করছি।
দেখুন, এখানে মৌলভী রশীদ আহমদের কবরকে তুর পাহাড় বলা হয়েছে আর মৌলভী মাহমুদুল হাসান হয়েছেন হযরত মুসা (عليه السلام) এর অভিনয়কারী। তাহলে নিশ্চয়ই মৌলভী রশীদ আহমদ ছাহেবকে খোদা কল্পনা করেছেন।
একই শোক গাথায় আরও বলেছেন-
زباں پر اهل اهواكى هے كيوں اعل هبل شايد
اٹها دنيا سے كوئى بانى اسلام كاثانى
অর্থাৎ যে মুহূর্তে প্রকৃতি পূজারীদের মুখে উলূ হুবল মূর্তির শ্লোগান, সে মুহূর্তে ইসলামের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাতার আবির্ভাব হয়েছিল।
এ পংক্তিতে মৌলভী রশীদ আহমদ ছাহেবকে ইসলামের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাতা অর্থাৎ ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মুহাম্মদ রসুলুল্লাহ আলাইহিস সালামের মত আর একজন বলেছেন।
আরও বলেছেন-
وه تهے صديق اور فاروق پهر گهئے عجب كيائے
شهادت نے تهجد ميں قدم بوسى كى گرٹهانى
অর্থাৎ তাকে হয়ত সিদ্দীকে আকবর ও ফারুকে আযমের মত বল্লেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
এখানে তাকে সিদ্দীকে আকবর ও ফারুকে আযম বানিয়ে ছেড়েছেন।
এরপর লিখেছেন-
قبوليت اسے كهتے هيں مقبول ايسے هوتے هيں
عبيد سود كا ان كے لقب هے يوسف ثانى
অর্থাৎ একেই বলে স্বার্থকতা যে কালো বান্দাকে দ্বিতীয় ইউসুফের লকবে ভূষিত করা হয়েছে।
এখানে মৌলবী রশীদ আহমদকে হযরত ইউসুফ (عليه السلام) এর সাথে তুলনা করেছেন। পাঠক বৃন্দ লক্ষ্য করুন, আল্লাহ থেকে শুরু করে ফারুকে আযম পর্যন্ত কোন পদমর্যাদা বাদ দেয়া হয়নি, যা মৌলভী রশীদ আহমদ ছাহেবকে দেয়া হয়নি। সম্পূর্ণ শোকগাথাটা দেখার মত বিষয়।
উক্ত শোক গাথায় এ পংক্তিটাও স্থান পেয়েছে-
مردو كو زنده كيا زندو كو مرنے نه ديا
اس مسيحائى كو ديكهيں ذرا ابن مريم
অর্থাৎ ওহে ইব্নে মরিয়ম (হযরত ঈসা আঃ) আপনিতো কেবল মৃতকে জীবিত করেছেন কিন্তু আমার মুর্শেদ মৌলভী রশীদ আহমদ মৃতকে জীবিতও করেছেন এবং জীবিতকে মরতেও দেননি।
এখানে মৌলভী রশীদ আহমদকে হযরত ঈসা (عليه السلام) থেকে আফজল বলেছেন।
মৌলভী আশরাফ আলী ছাহেবের এক শাগ্রীদ তাঁকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন যে আমি স্বপ্নে-
لَا إِِلَهَ إِلَّا اَللهُ، اَشْرَفْ عَلِى رَسُوْلُ اَلله
(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আশরাফ আলী রসুলুল্লাহ)
এ ধরনের কলেমা পড়তে দেখলাম। শুদ্ধভাবে পড়তে চেষ্টা করলাম। কিন্তু মুখ থেকে এ রকমই বের হচ্ছিল। অতঃপর ঘুম ভেঙে যায়। এবং পুনরায় দরূদ শরীফ পড়লাম। তখনও মুখ থেকে-
اللهم صَلِّى عَلٰى سَيِّدِنَا وَنَبِيِّنَا وَمَوْلَانَا اَشْرَفْ عَلِى
বের হয়েছে। অথচ আমি জাগ্রত কিন্তু মন আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এর উত্তরে মৌলবী আশরাফ আলী ছাহেব লিখেছেন যে এ ঘটনার মধ্যে সান্ত্বনা রয়েছে। তুমি যে দিকে ধাবিত হও না কেন, তাতে সুন্নাতের অনুসরণই প্রকাশ পাবে (রেসালাতুল এমদাদ” এর ৩৫ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।)
মনোযোগ দেয়ার বিষয় যে আশরাফ আলী ছাহেবের কলেমা পড়ুন এবং তার নামে দরূদ পাঠ করুন। অতঃপর মুখের উপর অনিয়ন্ত্রণের অজুহাত পেশ করুন, তাতে সব জায়েয হয়ে যাবে। কেউ নিজের স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিল এবং পরে বললো মুখ নিয়ন্ত্রনের বাইরে ছিল। এ বাহানা যথার্থ নয়; তালাক হয়ে যাবে। অথচ এ ক্ষেত্রে যথার্থ মনে করা হয়েছে এবং এতে পীরের অনুগত্য প্রকাশ পাওয়ার সুন্নাতব বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
“তাজকেরাতুর রশীদ” গ্রন্থের ৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে, হাজী ইমদাদুল্লাহ ছাহেব স্বপ্ন দেখলেন যে তাঁর ভাবী তাঁর মেহমানদের জন্য খাবার তৈরী করছিল। তথায় রসুল মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তশরীফ আনলেন এবং ওকে বললেন, “তুমি সরে যাও, ইমদাদুল্লাহর মেহমানের খাবার তৈরী করার উপযুক্ততা তোমার নেই। তাঁর মেহমান হচ্ছে (দেওবন্দী) উলামায়ে কিরাম, আমি ওসব মেহমানদের খাদ্য রান্না করবো” (নিলর্জ্জ কোথাকার)
মৌলভী ইসমাইল ছাহেব দেহলবী “সিরাতুল মুস্তাকিম” এর শেষে স্বীয় মুর্শিদ সৈয়দ আহমদ ছাহেবের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন- একদিন আল্লাহ তাআলা, ওর ডান হাত তাঁর খাস কুদরতী হাতের মধ্যে ধারণ করে খোদার কুদরতী কার্যাবলীর অনেক দুর্লভ জিনিস তার সামনে উপস্থাপন করেছেন অতঃপর বলেন ‘আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে সৈয়দ আহমদকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, : যে সব ব্যক্তি তোমার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে, যদিওবা তারা লক্ষাধিক হোক না কেন, আমি প্রত্যেককে সন্তুষ্ট করবো “একই সিরাতুল মুস্তাকিমে আওলিয়া কিরাম প্রসঙ্গে বলেছেন, আম্বিয়া কিরামের সাথে তাদের ওই রকম সম্পর্ক, যে রকম ছোট ভাইদের সাথে বড় ভাইদের সম্পর্ক রয়েছে। কেননা আউলিয়া কিরামের মধ্যেও নবুয়াতের বৈশিষ্ট্য মওজুদ রয়েছে। (মাআজাল্লা) বলুন আজ পর্যন্ত কোন মুরিদ স্বীয় পীরের এরকম প্রশংসা করেছে কি? কিন্তু এ সব মহারথীদের বেলায় র্শিকের ফত্ওয়া বা কুফরীর অভিযোগ উত্থাপন করা হয় না এবং তাদেরকে পীর পূজারীও বলা হয় না।
যা কিছু আরয করা হয়েছে, তা দ্বারা নিজের জ্ঞান বা যোগ্যতা প্রদর্শন করা উদ্দেশ্য নয়। আর আমার জ্ঞান বা যোগ্যতাওবা কি আছে। যৎসামান্য যা কিছু লিখেছি, তা হচ্ছে আমার মুর্শেদ ও উস্তাদ মাওলানা সৈয়দ নঈম উদ্দিন ছাহেব মুরাদাবাদী (رحمة الله) এর সদ্কা। এ কিতাব লিখার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলমানেরা যেন শত্রু মিত্র চিনতে পারে, অমূল্য ঈমান যেন ধর্মীয় ডাকাতদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে এবং দুনিয়া থেকে যাতে ঈমান সালামতে যেতে পারে। কেউ এর দ্বারা উপকৃত হলে, এ অধমের জন্য যেন দুআ করেন। খোদা! ইসলামকে উজ্জীবিত করুন, মুসলমানদেরকে সৎপথে অটল রাখুন এবং অধমের এ সামান্য শ্রম গ্রহণ করুন, ইয়া রাব্বুল আলামীন।
অধম আহমদ ইয়ার খান আশরাফী, উজানবী, বদাউনী,
শিক্ষক, মাদ্রাসা-এ-খুদ্দামুর রসুল, গুজরাট।
এ কিতাবটি লিখার কাজ সমাপ্ত করার পর হুযূর আমীরে মিল্লাত, কিব্লায়ে আলম, মুহাদ্দেছ আলীপুরী (দামত জিলেহুম) এর এক মূল্যবান চিঠি হস্তগত হয়। উক্ত চিঠিতে তিনি এক ঈশান উদ্দীপক খুবই সূক্ষ্ম জ্ঞানগর্ব উক্তি করেছেন এবং তা কিতাবে উল্লেখ করার জন্য বলেছেন। অতএব, তা আমি গর্বসহকারে পাঠকদের সমীপে পেশ করছি। তিনি লিখেছেন, যারা হুযূর (ﷺ)কে নিজেদের মত মানুষ বলে, তারা ঈমানী নুর থেকে বঞ্চিত। হুযূর (ﷺ) এর শান বর্ণনাতীত। যেখানে কোন জিনিস সে জাতে পাক (ﷺ) এর সাথে সম্পর্কিত হওয়ার কারণে অতুলনীয় হয়ে যায়, সেখানে তার সাথে তুলনা কিভাবে সম্ভব?
কুরআন করীম ইরশাদ ফরমান-
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ
-‘‘ওহে নবীর স্ত্রীগণ, তোমরা অন্যান্য মহিলাদের মত নয়।’’
¶ সূরা আহযাব, আয়াত নং-৩২।
এতে বোঝা যায় যে হুযূরের পবিত্র স্ত্রীগণ অতুলনীয়।
كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ
-‘‘হে মুসলমানগণ, তোমরা হলে সর্বোৎকৃষ্ট উম্মত।’’
¶ সূরা আলে-ইমরান, আয়াত, ১১০
এতে প্রমাণিত হলো যে, উম্মতে মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম অতুলনীয় উম্মত। মদীনা মনোয়ারা অতুলনীয় শহর, রওযা পাকের যমীন অতুলনীয়, যে অশ্রু হুযূর (ﷺ) এর পবিত্র চক্ষুদ্বয় থেকে বের হয়েছে, তা অতুলনীয়, হুযূর (ﷺ) এর ঘাম অতুলনীয়। মোট কথা হলো হুযূরের সাথে যেটা সম্পর্কিত হয়েছে, সেটা অতুলনীয় ও অদ্বিতীয় হয়ে গেছে। তাহলে, যার বদৌলতে এত কিছু অতুলনীয় হতে পারে, তিনি স্বয়ং কেন অতুলনীয় হবেন না?
ডঃ আল্লামা ইকবাল খুবই সুন্দর বলেছেন-
مريم از يك نسبت عيسى عزيز-ازسه نسبت حضرت زهرا عزيز
نور چسم رحمة للعالمين - آں امام اولين وآخرين
بانوئے آں تاجدار هل اتى- مرتضى مشكل كشاشير خدا
ما در آں مركز ركار عشق- مادر آں قافله سالار عشق!
رشته آئين حق زنجير پاست- پاس فرمان جناب مصطفى است
ورنه گردتربتش گرديد مے- سجدها برخاك دے پاشيد مے
অর্থাৎ ফাতেমা যুহরা (رضي الله عنه) এ জন্যেই শ্রেষ্ঠ যে তিনি নবীর দুলালী, আলীর স্ত্রী ও শহীদদের মাতা।
আলা হযরত (রহঃ) বলেছেন-
الله كى سرتا بقدم شان هيں يه- ان سانهي انساں وه انسان هيں يه
قرآن تو ايمان بتاتاهے انهيں- ايمان يه كهتاهى مرى جان هيں يه
অর্থাৎ তাঁর (ﷺ) পবিত্র আপাদমস্তকে খোদার শানই প্রকাশ পায়। কোন মানুষ তাঁর মত হতে পারে না। কুরআন তাঁকে ঈমান বলে আর ঈমান বলে তাঁকে জানের জান-
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৪৭) একটি সূক্ষ্ম মন্তব্য | (০৪৯) নবীরা নিষ্পাপ- যে অস্বীকার করে, খোদার গজব- জেনো তার উপরে |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |