আল-কুরআনে আল্লাহ্ তা'আলা যেভাবে নিজেকে এক ব্যক্ত করেছেন, যে সব সিফাত নিজের জন্য ব্যবহার করেছেন, সে সবের আলোকে মানুষ তার সীমিত শক্তিতে ত যতটুকু সম্ভব ততটুকুই তাঁকে জানে। প্রকৃত সত্তা ও তাঁর যাত কি, তা তিনি ছাড়া কেউ জানে না। আল-কুরআনে বলা হয়েছেঃ
আল্লাহ্ জানেন যা কিছু আছে তাদের সামনে এবং যা কিছু রয়েছে তাদের পেছনে, কিন্তু তারা তাঁকে জ্ঞান দ্বারা আয়ত্তে আনতে পারে না। (২০ঃ ১১০)
হযরত জুনায়েদ (র) কে তওহীদ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তরে বলেনঃ তিনি কাদীম, নিত্য, শাশ্বত, অবিনশ্বর, তিনি ছাড়া সবকিছু অনিত্য, নশ্বর। আল্লাহর যাত ও সিফাতের সঙ্গে কোনক্রমেই সৃষ্টির কোন তুলনা, সাদৃশ্য করা যাবে না । কেননা আল্লাহ্ তা'আলা বলেছেনঃ
কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা (৪২ঃ ১১)
তবে যে সব সিফাত সাধারণ অর্থে মানুষের জন্য প্রযোজ্য, তা যখন আল্লাহর জন্য ব্যবহৃত হয়, তখন সেখানে শুধু শাব্দিক সাযুজ্যতাই মনে করতে হবে, তার ঊর্ধ্বে কিছু নয়। যেমন শ্রোতা, দ্রষ্টা, শক্তিশালী, দয়ালু ইত্যাদি। হযরত আলী (রা)-কে তওহীদ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাব দিয়েছিলেনঃ তুমি জেনে রেখো যে, যা কিছু তোমার মনে উদয় হয় অথবা তোমার খেয়ালে যা তুমি ভাবো, অথবা যে কোন অবস্থায় যা তুমি কল্পনা কর, আল্লাহ্ এসবের পেছনে আছেন।
যেমন কোন বান্দা আল্লাহকে নিজের ক্ষমতানুযায়ী জানে, ঠিক তেমনি সে তার সাধ্যানুযায়ী তাঁর নির্দেশ পালন করে তাঁর ইবাদত করে। যেভাবে তাঁর ইবাদত করা উচিত এবং যে ইবাদতের তিনি হকদার, বান্দা কখনো তা করতে পারে না, করার শক্তি রাখে না। এজন্যই তাফসীরকাররা বলেন যে, আলে ইমরানের ১০২ আয়াতে বর্ণিতঃ “হে মু'মিনরা! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় করবে এবং কক্ষোনো মরবে না মুসলিম না হয়ে”, মনসূখ হয়েছে সূরা তাগাবুনের ১৬ আয়াত দ্বারা। সে আয়াতে বলা হয়েছেঃ
তোমরা ভয় কর আল্লাহকে যথাসাধ্য।
আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। আল্লাহ্ যেসব নিয়ামত মানুষকে দান করেছেন তার জন্য তাঁর শুকরিয়া আদায় করা, তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী আমল করা, এক কথায় তাঁর যথাযথ ইবাদত করা বান্দার পক্ষে অসম্ভব।
এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে আল কুরআনেঃ
তিনিই আল্লাহ্, যিনি সৃষ্টি করেছেন আসমান ও যমীন, যিনি আসমান থেকে পানি বর্ষণ করে তা দিয়ে তোমাদের জীবিকার জন্য ফল-মূল উৎপাদন করেন, যিনি তোমাদের আয়ত্তাধীন করে দিয়েছেন নৌ-যান, যাতে তাঁর বিধানে সাগরে বিচরণ করে এবং যিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন নদ-নদী। তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন চাঁদ-সুরুজ যা তাঁর নির্দেশের অবিরাম অনুবর্তী এবং তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রাত ও দিন। এবং তিনি তোমাদের দিয়েছেন যা তোমরা চেয়েছো তা। যদি তোমরা আল্লাহর নিয়ামত গণনা কর তাহলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। অবশ্য মানুষ অতিমাত্রায় সীমালংঘনকারী, অকৃতজ্ঞ। (১৪ঃ ৩২-৩৪)
এখানে আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর কয়েকটি নিয়ামতের উল্লেখ করে বলেছেন যে, অগণিত নিয়ামত যা তাঁর বান্দাদের প্রদান করা হয়েছে তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং সে অনুযায়ী ইবাদত করা তো দূরের কথা, তারা যদি তাদেরকে দেয়া নিয়ামত গণনা করতে চায়, তবে গণনা করে তা শেষ করতে পারবে না। অতএব বান্দা শুধু তার সাধ্যানুযায়ী শুকরিয়া আদায় করার নিমিত্ত তাঁর ইবাদত করবে। এ দিকেই আল-কুরআনে ইঙ্গিত করা হয়েছেঃ
কেউ উপদেশ গ্রহণ করতে পারে না যদি আল্লাহ্ ইচ্ছা না করেন, একমাত্র তিনিই তাকওয়া প্রাপ্তির যোগ্য এবং তিনিই ক্ষমা করার মালিক (৭৪ঃ ৫৬)
বান্দা শুধু আল্লাহকেই ভয় করবে। তাঁর ইবাদত করবে। তবে যদি কোন বান্দার কসূর হয়ে যায়, যথাসাধ্য ইবাদত করতে না পারে, তবে তিনি তো ক্ষমার মালিক। তাকে মাফ করতে পারেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) কোন ইবাদত থেকে মুক্ত হওয়ার পর সদা ইস্তিগফার করতেন। এতে এদিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে, ইবাদতের যে হক ছিল সে হক হয়তো আদায় হয়নি, তাই আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করে নিতেন। আল-কুরআনে এর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছেঃ
কিছুতেই মানুষ পরিপূর্ণ করতে পারে না তা, যা তাকে তাঁর রব নির্দেশ দিয়েছেন। (৮০ঃ ২৩)
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(৩৫) ২৯. দীন | (৩৭) ৩১. আহলে ইসলাম মুকাল্লাফ হিসাবে সমান |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |