কিয়ামতের দিন কোন কোন মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে, তাঁরা তাঁদের রবের দিকে তাকিয়ে থাকবে।
(সূরা আল কিয়ামা ৭৫ : ২২, ২৩)
এ আয়াতে বিহিশতবাসী মু'মিনদের কথা বলা হয়েছে। সূরা আল-মুতাফ্ফিফীন এর ১৫ ও ১৬ আয়াতে বলা হয়েছেঃ
যারা আখিরাতকে অস্বীকার করে, তারা কক্ষনো আল্লাহর দিকে তাকাতে পারবে না, তারা তো সেদিন তাদের রবের থেকে পর্দার অন্তরালে থাকবে, অবশেষে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
মু'মিনদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেনঃ
তোমরা অবশ্যই তোমাদের রবকে দেখবে, যেমন তোমরা পূর্ণিমার রাতে পূর্ণচন্দ্র দেখে থাক। এ হাদীসটি ২১জন প্রবীণ সাহাবা রিওয়ায়াত করেছেন এবং বুখারী ও মুসলিমে উদ্ধৃত হয়েছে।
সূরা ইউনুস ১০, আয়াত ২৬-এ বলা হয়েছেঃ
যারা নেক কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে মঙ্গল এবং আরো কিছু বেশি। কখনো আচ্ছন্ন করবে না তাদের মুখমণ্ডলকে কালিমা ও হীনতা। তাঁরাই জান্নাতের অধিবাসী, তাঁরা সেথায় চিরস্থায়ীভাবে থাকবে ।
এখানে ‘যিয়াদা’ বা ‘আরো কিছু বেশি’ দ্বারা বিহিশতে মু'মিনদের আল্লাহর দর্শন বুঝান হয়েছে। এ সম্পর্কে সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছেঃ
আহলে জান্নাত যখন জান্নাতে দাখিল হবে তখন আল্লাহ্ বলবেন, তোমরা কিছু চাও আমি বাড়িয়ে দিব। তাঁরা বলবে, আপনি কি আমাদের চেহারা উজ্জ্বল করেননি ? আমাদের বিহিশতে দাখিল করাননি ? আমাদের দোযখ থেকে নাজাত দেননি ? তখন তিনি তাঁদের থেকে পর্দা তুলে নেবেন এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার চেহারার দিকে তাঁরা তাকাবেন। তাঁদের এ যাবত যা কিছু প্রদান করা হয়েছে তার কোন কিছুই তাঁদের কাছে এ দর্শণের চাইতে অধিক প্রিয় হবে না ।
জান্নাতে আল্লাহ্কে প্রত্যক্ষভাবে দেখার ধরণ কি হবে, তা নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। ইমাম আ'যমের মতে তাঁকে দেখা যাবে, তবে সে দেখা পার্থিব দেখার মত নয়। দুনিয়ায় কোনকিছু দেখার জন্য দুটি দিক রয়েছে--দর্শক ও দৃশ্য। এ দু'টির জন্য প্রয়োজন দর্শকের ও দৃশ্যের মধ্যে স্থান, কাল ও আকৃতির বিদ্যমানতা । জান্নাতে এ দু'দিক থাকবে। তবে দৃশ্যের আকৃতি, প্রকৃতি ও ধরন কি হবে, তা জানা নেই । এবং দরশনের কালে দর্শন ও দৃষ্টের মাঝে দূরত্বের প্রশ্নও থাকবে না। তাই জান্নাতে আল্লাহকে দর্শনের আকীদা পার্থিব দর্শনের সাথে যে কোন প্রকার তুলনা থেকে মুক্ত ও পবিত্র। সূরা আল-আন'আমের ১০৩ আয়াতে বর্ণিত হয়েছেঃ
আয়ত্তে আনতে পারে না আল্লাহকে দৃষ্টিশক্তি, তবে তিনি আয়ত্তে রেখেছেন দৃষ্টিশক্তি। তিনি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক পরিজ্ঞাত।
এ আয়াতে ‘দৃষ্টিশক্তির আয়ত্তে আনাকে' নিষেধ করা হয়েছে । কিন্তু ‘দেখা’ কে নিষেধ করা হয়নি। ادراك ও روية এক নয় । তাই ইবরাহীম (আ) ও মূসা (আ) আল্লাহর কাছে দেখতে চাইলে কেউই ادراك শব্দ ব্যবহার করেননি। ইবরাহীম (আ) বলেছিলেনঃ
হে আমার রব! তুমি আমাকে দেখাও কিভাবে মৃতকে জীবিত কর। আল্লাহ্ বললেন : তবে কি তুমি বিশ্বাস কর না ? ইবরাহীম বললেনঃ অবশ্যই বিশ্বাস করি, তবে কেবল আমার চিত্ত প্রশান্তির জন্য এরূপ চাই।
(২ঃ ২৬০)
মূসা (আ) বলেছিলেনঃ
হে আমার রব! তুমি আমাকে দেখাও, আমি তোমাকে দেখব। আল্লাহ বললেন, কখনো তুমি আমাকে দেখতে পাবে না।
(৭ : ১৪৩)
মোটকথা কুরআন ও হাদীসে এ সম্পর্কে যে বর্ণনা রয়েছে, তা-ই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদা ৷ ইমাম আবূ মানসূর আল-মাতুরীদী এ সম্পর্কে বলেনঃ আমরা এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসের প্রমাণের ওপর বিশ্বাসী।