ইবলীস, ফিরআউন, দাজ্জালের মত আল্লাহর দুশমনদের থেকে যেসব অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, সেসব না মু'জিযা আর না কারামত। সেগুলো তাদের কার্য সম্পাদনের বেলায় প্রয়োজন হয়েছিল বিধায় আল্লাহ্ তা'আলা তাদের দিয়েছেন। কেননা এ পার্থিব জীবনে আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর অপার করুণায় ও অসীম দয়ায় স্বীয় সৃষ্টির প্রয়োজন পূরণের জন্য এমনকি তাঁর দুশমনদেরও আবশ্যকীয় উপকরণ সরবরাহ করেন। এতে দুনিয়ায় তাদের সময় দেওয়া হয় এবং কিয়ামতে শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়। সূরা ৭ আল-আ'রাফের ১৮২-১৮৩ আয়াতে বলা হয়েছেঃ
যারা আমার নিদর্শন সমূহ প্রত্যাখ্যান করে, আমি তাদের এমনভাবে ক্রমে ক্রমে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবার জন্য ধরব যে, তারা জানতেও পারবে না। আমি তাদের সময় দিয়ে থাকি, আমার কৌশল অত্যন্ত দৃঢ়।
আলে ইমরানের ১৭৮ আয়াতে বর্ণিত হয়েছেঃ
মনে করে না যেন তারা যারা কুফরী করেছে যে, আমি অবকাশ দেই তাদের মঙ্গলের জন্য ; আমি তো অবকাশ দেই যাতে তারা আরো পাপ বৃদ্ধি করে। তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
সূরা ৬৮ আল-কালামের ৪৪-৪৫ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে :
যারা আমাকে ও এ বাণীকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে, তাদের ছেড়ে দাও আমার হাতে, তাদের আমি ক্রমে ক্রমে এমনভাবে ধরব যে, তারা জানতে পারবে না। আমি তো তাদের অবকাশ দেই। আর আমার কৌশল অত্যন্ত মযবুত ।
হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেনঃ যখন তুমি দেখবে যে, আল্লাহ্ কোন বান্দাকে সে যা ভালবাসে সে নিয়ামত দান করেন, অথচ সে পাপী, তখন জেনে রেখো, এরূপ হলো তাকে অবকাশ দেয়ার জন্য । তারপর তিনি তিলাওয়াত করলেন সূরা আল-আন'আমের ৪৪ আয়াতঃ
যখন তারা ভুলে গেল যে উপদেশ তাদের দেয়া হয়েছিল তা, তখন আমি উন্মুক্ত করে দিলাম তাদের জন্য সবকিছুর দ্বার। অবশেষে যখন তারা উল্লসিত হয়ে পড়ল যা তাদের দেয়া হয়েছে তাতে, তখন পাকড়াও করলাম তাদের অকস্মাৎ, ফলে তারা হয়ে পড়ল হতবাক নিরাশ ।
আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর অবাধ্য বান্দাদেরও তাদের পার্থিব জীবনের আকাঙ্খা পূরণে নিরাশ করেন না। তাদের তিনি তাদের কামনা ও বাসনা অনুযায়ী দিয়ে থাকেন। এ তাঁর শাশ্বত নীতি। এর ফলে তারা সাময়িকভাবে চমক সৃষ্টি করতে সমর্থ হয় । পরিণামে তারা হয় ব্যর্থকাম, নিরাশ। এতে তাদের ঔদ্ধত্য আরো বৃদ্ধি পায়। ইতিহাসে এর প্রচুর বৃত্তান্ত রয়েছে। যেমন ইবলীসের প্রার্থনাঃ হে আমার রব! আমাকে অবকাশ দিন পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। জবাবে আল্লাহ বললেনঃ
অবশ্যই তুমি তাদের শামিল, যাদের অবকাশ দেওয়া হয়েছে অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত। অবকাশ প্রাপ্তির পর সে বলল : হে আমার রব! আপনি যে আমাকে বিপথগামী করলেন সেজন্য আমি পৃথিবীতে মানুষের কাছে পাপ কাজকে শোভন করে তুলব এবং তাদের সবাইকে বিপথগামী করব, তবে তাদের মধ্যে তোমার সেসব বান্দাদের নয়, যারা বিশুদ্ধ চিত্ত নিষ্ঠাবান।
(১৫ঃ ৩৬-৪০)
ফিরআউনের অলৌকিক ঘটনার মধ্যে অন্যতম হলো যে, যখন সে ঘোড়ায় আরোহিত অবস্থায় তার বালাখানায় নামতে অথবা উঠতে চাইতো, তখন তার ঘোড়ার পা প্রয়োজন অনুযায়ী লম্বা ও খাটো হতো। এছাড়া তার নির্দেশে নীলনদ প্রবাহিত হত, যেমন আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছেঃ
ফিরআউন তার লোকদের ডেকে বলল, হে আমার কওম! নয় কি মিসর রাজ্য আর এসব নদ-নদী যা প্রবাহিত হয় আমার পাদদেশে? তোমরা কি দেখ না ? আর নই কি আমি শ্রেষ্ঠ ঐ লোকটির চাইতে, যে হীন, নীচ এবং স্পষ্ট করে কথাও বলতে পারে না ?
(৪৩ঃ ৫১, ৫২)
ফিরআউন সম্পর্কে হযরত জিবরাঈল (আ) রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে বলেনঃ আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আমি দু'জনকে সবচাইতে দুশমন জানি। জিনদের মধ্যে ইবলীস, কারণ সে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে আদম (আ)-কে সিজদা করেনি। আর মানুষের মধ্যে ফিরআউন, কারণ সে দাবি করেছিল, “আমি তোমাদের শ্রেষ্ঠ প্রতিপালক।” (৭৯ : ২৪) ফিরআউন ইবলীসের চাইতেও নিকৃষ্ট। ফিরআউন মানব সন্তান, তারপক্ষে অবাধ্যতা স্বাভাবিক নয়। কিন্তু ইবলীস জিন সন্তান, অবাধ্যতা তো তার স্বভাব। তাছাড়া ইবলীস মানুষকে সিজদা করতে অস্বীকার করে অবাধ্য হয়েছে, আর ফিরআউন অহংকার বশে স্বীয় স্রষ্টাকে অস্বীকার করে নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করেছে।
কিয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল পৃথিবীতে অনেক বিপর্যয় ঘটাবে। সে অনেক অলৌকিক ঘটনাও সংঘটিত করবে। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, দাজ্জাল কোন ব্যক্তিকে হত্যা করবে, আবার তাকে জেন্দা করবে। এসব সম্ভব এবং আল্লাহর ইচ্ছায় হবে।