ইমাম আ'যম (র) বলেন : মোজার ওপর মসেহ করা জায়িয, মুকীমের জন্য একদিন ও একরাত, আর মুসাফিরের জন্য তিন দিন ও তিন রাত। হাদীসে মুতাওয়াতির দ্বারা একথা প্রতিষ্ঠিত। সফরের সময় কিংবা ভয়ের সময় চার রাক'আত নামায দু' রাকা'আত কসর রূপে আদায় করা এবং অসুস্থ অবস্থায় কিংবা সফরের সময় রোযা না রেখে পরে ক্বাযা আদায় করার যে অনুমতি রয়েছে, তা কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। নামায কসরের নির্দেশ সূরা ৪, নিসার ১০১ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে : যখন তোমরা দেশ-বিদেশে সফর করবে তখন তোমাদের কোন দোষ নেই নামায সংক্ষিপ্ত (কসর) করলে, যদি তোমরা ভয় কর যে, কাফিররা তোমাদের জন্য ফিৎনা সৃষ্টি করবে, কাফিররা তো তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন। এখানে যে কসরের অনুমতি দেয়া হয়েছে তা অবশ্য করণীয়। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন : এ হলো ছদকা, আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদের এ ছদকা দান করেছেন ৷ তাই তোমরা তাঁর ছদকা কবুল করো। এজন্য যদি কোন মুসাফির চার রাকা'আত আদায় করে তবে সে গুনাহগার হবে। কিন্তু সফরে ইফ্ফ্ফারের যে হুকুম সূরা ২, আল বাকারার ১৮৪ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে তা ইফতারের বৈধতা বর্ণনার জন্য, অবশ্য পালনীয় অর্থে নয়। কেউ সফরে রোযা রাখলে রোযা আদায় হয়ে যাবে, তাকে কাযা করতে হবে না, আর সে এজন্য গুনাহগারও হবে না । রমযান মাসের তারাবীর নামাযও রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর আমল দ্বারা সুন্নাতে রাসূল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। উম্মতের ওপর দয়া পরবশ হয়ে তিনি এক সময় এ নামায এজন্য তরক করেছিলেন, যাতে পাছে তারা তারাবীর নামায ওয়াজিব বলে মনে করে না বসে। হযরত আবূ বকর (রা) ও উমর (রা) তাঁদের যামানায় নিয়মিত এ নামায আদায় করতেন।
একজন ইমাম যিনি মু'মিন, হোক নেককার কিংবা বদকার, তার পেছনে নামায আদায় করা জায়িয। অধিকাংশ ইমামদের মতে বদকার ইমামের পেছনে জুমআর নামায কিংবা জামাতের নামায তরক করা বিদ্আত । ইবন মাসউদ (রা) অলীদ ইবন উকবা ইবন আবী মুইতের মত লোকের পেছনেও জামাতে নামায আদায় করেছেন। এ ব্যাপারে ইমাম আ'যম (র)-কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিলেন : তোমরা শায়খাইন-আবূ বকর (রা) ও উমর (রা)-কে শ্রেষ্ঠত্ব দিবে, দু' জামাতাকে উসমান (রা) ও আলী (রা)-কে ভালবাসবে, মোজার ওপর মসেহ করাকে বৈধ মনে করবে এবং নেককার কিংবা বদকার মু'মিন ইমামের পেছনে নামায আদায় করবে। তিনি তাঁর 'আল অসিয়াত' গ্রন্থে লিখেছেন : আমরা বিশ্বাস করি যে, এ উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর পর হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা), তাঁরপর হযরত উমর (রা), তাঁর পর হযরত উসমান (রা) এবং তাঁরপর হযরত আলী (রা)। এদের মধ্যে যিনি খিলাফতের দিক দিয়ে অগ্রগামী, তিনি শ্রেষ্ঠত্বের দিক দিয়েও অগ্রগামী । প্রত্যেক মুত্তাকী মু'মিন তাঁদের ভালবাসেন আর যারা তাঁদের সম্বন্ধে বিদ্বেষ পোষণ করে তারা তো বদবখত মুনাফিক ।