তাকলীদ বিরোধিতাকারীদের উত্থাপিত আপত্তিসমূহ দু’ধরনের। কতগুলো হচ্ছে অবান্তর, বাজে সমালোচনামূলক কিংবা বিদ্রুপাত্মক। এগুলোর উত্তরের প্রয়োজন নেই। আর কতগুলো হচ্ছে প্রতারণামূলক প্রশ্ন উত্থাপন করে গায়র মুকালিদগণ মাযহাবের অনুসারীগণকে ধোঁকা দিয়ে থাকে এবং সাধারণ মুকালিদগণ তাদের প্রতারণা শিকার হয়ে পড়ে। এ শেষোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর নিম্নে পেশ করা হলো।
তাকলীদ যদি একান্ত প্রয়োজন হতো, তাহলে সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) কেন কারও তাকলীদ করেন নি?
সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) এর কারো তাকলীদ করার প্রয়োজন ছিল না। তাঁরা হুজুর (ﷺ) এর সাহচর্য প্রাপ্ত হওয়ায় সমস্ত মুসলমানদের ধর্মীয় নেতা বা ইমাম হিসেবে গণ্য। ফলস্বরূপ ইমাম আবু হানীফা (رحمة الله), শাফি’ঈ (رحمة الله) প্রমুখ ধর্মীয় ইমামগণ তাঁদেরই অনুসরণ করেছিলেন।
اَصْحَابِىْ كَالنُّجُوْمِ بِاَيِّهِمْ اِقْتَدَ يْتُمْ اِهْتَدَيْتُمْ.
-‘‘আমার সাহাবীগণ তারকারাজির মত। তোমরা যে কারো অনুসরণ করো না কেন, সঠিক পথের সন্ধান পাবে।’’
❏ হযরত এরবাদ ইবনে সারিয়া (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত,
عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِىْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ.
-‘‘তোমরা আমার ও আমার খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাতকে আকড়ে ধর।’’
উত্থাপিত আপত্তিটায় দৃষ্টান্ত হলো, যেমন কেউ বলতে পারে ‘আমরা কারো উম্মত নই। কেননা আমাদের নবী (ﷺ) কারো উম্মত ছিলেন না। সুতরাং, উম্মত না হওয়াটা রসূল (ﷺ)-এর সুন্নত।’ এর উত্তরে বলতে হবে, হুজুর (ﷺ) নিজেই নবী, সবাই তাঁর উম্মত। অতএব, তিনি কার উম্মত হবেন? তদ্রূপ সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) হলেন সবার ইমাম। সুতরাং, তাঁদের ইমাম আবার কে হবে?
ঐ শস্য ক্ষেতেই নদী-নালা থেকে পানি সরবরাহ করা হয়, যার অবস্থান সাগর থেকে অনেক দূরে। মুকাব্বিরের তাকবীর শুনে ঐ সকল মুক্তাদীরাই নামায পড়েন, যারা ইমাম থেকে দূরে থাকেন। সাগর পাড়ের নিকটে অবস্থিত শস্য ক্ষেতের জন্য নদী-নালার পানির প্রয়োজন হয় না। আর প্রথম কাতারের মুক্তাদীগণের জন্য মুকাব্বিরের প্রয়োজন পড়ে না। সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) হচ্ছেন প্রথম কাতারের মুক্তাদী। তাঁরা কোন মাধ্যম ব্যতিরেকে সরাসরি হুজুর (ﷺ) এর পত্রি সিনা মুবারক থেকে ফয়েয প্রাপ্ত। আমরা যেহেতু ঐ সাগর (হুযুরের সিনা মুবারক) থেকে হাজার হাজার নদীর উৎপত্তি হয়, সেগুলোতে একই সাগরের পানি প্রবাহিত হয় বটে, কিন্তু নাম ও গতিপথ ভিন্ন ভিন্ন। কোনটাকে গংগা, কোনটাকে যমুনা বলা হয়। অনুরূপ, হুজুর (ﷺ) হলেন রহমতের সাগর। তাঁর সিনা মুবারক থেকে যে নদী উৎপত্তি হয়ে ইমাম আবু হানীফা (رحمة الله) এর পবিত্র বক্ষ মুবারক দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, উহাকে হানাফী নামকরণ করা হয়েছে, আর যেটি ইমাম মালিক (رحمة الله) এর সিনা মুবারক দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, উহাকে মালিকী মাযহাব বলা হয়েছে। সব নদীর পানি এক ও অভিন্ন, কেবল নাম ভিন্ন ভিন্ন। ঐ সব নদীর পানির প্রয়োজন হয়েছে আমাদের, সাহাবায়ে কিরামের নয়। যেমন হাদীছের সনদ বা সূত্রের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয় আমাদের নিকট; সাহাবায়ে কিরামের নিকট উহার আদৌ প্রয়োজন নেই।
সঠিক পথের সন্ধানের জন্য কুরআন ও হাদীছই যথেষ্ট। কুরআন হাদীছে এমন কি বিষয় নেই, যার জন্য ফিকহের সাহায্য নিতে হবে?
কুরআনেই ইরশাদ করা হয়েছে,
وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُبِينٍ
-‘‘আর্দ্র বা শুষ্ক এমন কোন কিছু বাকী নেই, যা’ ঐশী নূরে আলোকিত কুরআনের মধ্যে লিপিবদ্ধ হয়নি।’’
- সূরাঃ আনআম, আয়াতঃ ৫৯
আরও বলা হয়েছে,
وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ
-‘‘আমি কুরআনকে শেখার বা স্মরণ রাখার বা মুখস্থ করার সুবিধার্থে সহজ করে দিয়েছি। স্মরণ করার কেউ আছে কি?
- সূরাঃ ক্বামারঃ আয়াতঃ ১৭, পারাঃ ২৭
এ আয়াত সমূহ থেকে বোঝা গেল, কুরআনের মধ্যে সব কিছু আছে এবং কুরআন প্রত্যেকের জন্য সহজ। তাই মুজতাহিদের নিকট যেতে হবে কি জন্য?
হিদায়তের জন্য কুরআন ও হাদীছ নিঃসন্দেহে যথেষ্ট। এও ঠিক যে কুরআন-হাদীছের মধ্যে সব কিছু আছে। কিন্তু এ থেকে মাসাইল বের করার উপযুক্ততা থাকা চাই। সমুদ্রে অনেক মণিমুক্তা রয়েছে। এগুলো খুঁজে আনার জন্য ডুবুরীর প্রয়োজন। ইমামগণ হলেন সমুদ্রের ডুবুরীর মত। চিকিৎসা শাস্ত্রের গ্রন্থাবলীতে সব কিছুর উল্লেখ আছে, তবুও আমাদেরকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়, ব্যবস্থাপত্র নিতে হয়। ধর্মীয় ইমামগণই হলেন আমাদের ডাক্তার সদৃশ।
আল কুরআনের আয়াত, وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْاَنَ এ বলা হয়েছে কুরআনকে স্মরণ রাখার জন্য বা হিফ্জ করার জন্য সহজ করে দেয়া হয়েছে;
মাসাইল বের করার ক্ষেত্রে সহজ করে দেয়া হয়নি। যদি মাসাইল বের করা এতো সহজ হয়, তা’হলে হাদীছের কি প্রয়োজন থাকতে পারে। কুরআন সবকিছু আছে আর কুরআন সহজও। তবুও কুরআন শিক্ষা দেওয়ার জন্য নবী (ﷺ) কেন এলেন? কুরআনেই আছে,
وَيُعَلِّمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ
অর্থাৎ "সেই নবী তাদেরকে আল্লাহর কালাম ও জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা দেন।"
- সূরাঃ বাক্বারা, আয়াতঃ ১২৯, পারাঃ ১
কুরআন ও হাদীছ হলো রূহানী ঔষধ, আর ইমাম হালেন রূহানী ডাক্তার।
কুরআন শরীফে মাযহাবের অনুগামীদের নিন্দা করা হয়েছে। বলা হয়েছে,
اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ
-‘‘ওরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের পাদরী ও ঋষিদেরকে খোদা মেনে নিয়েছে।’’
{সূরাঃ তাওবাহ, আয়াত নংঃ ৩১}
আরও বলা হয়েছে,
فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ
-‘‘যদি তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে ঝগড়া-ঝাটি হয়, সেটার মীমাংসার জন্য আল্লাহ ও রাসূল (عليه السلام) এর শরণাপন্ন হও।’’
- সূরাঃ নিসা, আয়াতঃ ৫৯, পারাঃ ৫
আরোও ইরশাদ করা হয়েছে,
وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ
-‘‘এটাই হলো আমার সরল পথ। এ পথেই চলো। অন্যান্য পথে চলিও না, অন্যান্য পথে গেলে এ সরল পথ থেতে বিচ্যুত হয়ে পড়বে।’’
- সূরাঃ আনআম, আয়াতঃ ১৫৩, পারাঃ ৮
আরও ইরশাদ করা হয়েছে,
قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا
-‘‘তারা বলে, আমরাতো ওই পথেই চলবো, যে পথে আমাদের বাপ-দাদাদেরকে চলতে দেখেছি।’’
- সূরাঃ বাক্বারা, আয়াতঃ ১৭০, পারাঃ ২
এ সমস্ত আয়াত ও এ ধরনের অন্যান্য আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশের সামনে ইমামগণের নির্দেশ অনুযায়ী চলা কাফিরদেরই অনুসৃত পন্থা। সহজ সরল পথ একটিই। শাফেঈ, হানাফী, ইত্যাদি পথ চতুষ্টয় হলো বাঁকা পথ।
কুরআন করীম যে তাকলীদের নিন্দা করেছে, সেই সম্পর্কে আমি এ গ্রন্থের ১ম অধ্যায়ে আলোচনা করেছি। কুরআনের আয়াত وُلَاتَتَّبِعُوْا السُّبُلُ (অন্যান্য পথে চলিও না) দ্বারা ইহুদীবাদ, খৃষ্টাবাদ, ইত্যাদি ইসলাম বিরোধী মতাদর্শকে বোঝানো হয়েছে। আর হানাফী, শাফে’ঈ ইত্যাদি কয়েকটি পথ নয়, বরং একই স্টেশনগামী চারটি সড়ক বা একই নদী হতে উৎপন্ন চারটি খাল। তা না হলে গায়র মুকালিদদের মধ্যে ‘ছানয়ী’ ও ‘গযনবী’ নামে যে দু’টো দল রয়েছে, সে সম্পর্কে কি বলা হবে? ভিন্ন ভিন্ন পথের প্রশ্ন একমাত্র ‘আকাইদ বা বিশ্বাসের বিষয়বস্তু সমূহের পরিবর্তনের সহিত সম্পৃক্ত। চার মাযহাবের আকীদাহ এক। আমলের ক্ষেত্রে মতানৈক্যের ব্যাপারটিও গৌণ। এ ধরনের মতভেদ স্বয়ং সাহাবায়ে কিরামের মধ্যেও বিরাজমান ছিল।
এ আপত্তিটা নিম্নে উল্লেখিত চার পংক্তি বিশিষ্ট কবিতায় ব্যক্ত করা হয়েছে,
هوتے هوئے مصطفے كى گفتار – مت مان كسى كاقول وكردار،
دين حق راچار مذهب ساختند – فتنه دردين نبى اند اختند،
অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (ﷺ)-এর নির্দেশাবলী যখন আছে, অন্য কারো উক্তি বা কর্মকে গ্রহণ করো না। ধর্মীয় ইমামগণ সত্য ধর্ম ইসলামে চারটি মাযহাব সৃষ্টি করে প্রিয় নবী (ﷺ)-এর ধর্মে এক নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রয়াস পেয়েছেন।
পথভ্রষ্ট চকড়ালবীদের রচিত কবিতার সাহায্যে উক্ত আপত্তি খন্ডন করা হল। কবিতাটি নিম্নে উল্লেখিত হলো,
هوتے هوئے كبرياكى گفتار – مت مان بنى كلقول وكردار
অর্থাৎ আল্লাহর বাণী কুরআন যখন আছে, তাই নবীর (ﷺ) এর কথা ও কর্ম অনুযায়ী চলো না। চকড়ালবীদের এ অবান্তর কথা যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি লা-মাযহাবীদের কথাও বর্জনীয়।
উপরের প্রশ্নে উল্লেখিত কবিতার ২য় লাইনের সহিত সঙ্গতপূর্ণ আর এক লাইন এভাবে রচিত হলোঃ
مسجد دوخشت عليحده ساختند – فتنه دردين بنى اندا ختند
অর্থাৎ (লা-মাযহাবীগণ) দু’ইটের মসজিদে পৃথকভাবে নির্মাণ করে নবী (عليه السلام) এর ধর্মের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।
মাযহাব চারটি হওয়ার রহস্য আমি স্বরচিত কাব্য গ্রন্থে (দ্বীওয়ানে সালিক) নিম্নে বর্ণিত কবিতায় দু’টো লাইনে এভাবে উদঘাটন করার প্রয়াস পেয়েছিঃ
چاررسل فرشتے چارچار كتب هيں ديں چار
سلسلے دونوں چار چار لطف عجب هےچار ميں
آتش وآب وخاك وباد سب كا انهى سے هےثبات
چار کاسارا ماجر اختم هے چار يار هيں
অর্থাৎ চারজন রাসূল, চারজন ফিরিশ্তা, চারটি কিতাব, চারটি ধর্ম, শরীয়ত ও তরীকতের মধ্যে যথাক্রমে চারটি মাযহাব ও তারীকা। চার সংখ্যাটি সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। চারের মধ্যে এক অপূর্ব মাধুর্য ও তৃপ্তিবোধ রয়েছে। আগুন, পানি, মাটি, বাতাস- এ চার উপাদানের বদৌলতে সবকিছু অস্তিত্ববান হয়েছে। ‘চার’ সংখ্যাটির বিশেষত্ব চারজন অন্তরঙ্গ বন্ধুর (চার আসহাব) মধ্যেও পরিপূর্ণতা লাভ করেছে।
চার সংখ্যাটি খোদার কাছে অতীব পছন্দনীয়। তিনি আসমানী কিতাব নাযিল করেছেন চারটি, ঐশী ধর্মও সৃষ্টি করেছেন চারটি, মানুষকেও চারটি উপদানের সমন্বয়ে সুন্দর আকৃতি দিয়েছেন, ইত্যাদি ........। মানযিলে মাকসুদে পৌঁছার পথ চতুষ্টয় যদি বিলীন হয়ে যায়, তা’হলে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছা অসম্ভব হয়ে পড়ে। কেননা, পথ চারটিই হতে পারে। কা’বা ঘরের চার দিক থেকে নামায পড়া হয়। কিন্তু সবার সৃষ্টি কা’বার দিকেই নিবদ্ধ থাকে। অনুরূপ হুজুর (ﷺ) হলেন ঈমানের কা’বা। মাযহাব চারটি উক্ত কাবাগামী পথ চারটিকে বেষ্টন করে রয়েছে। এমতাবস্থায় আপনারা (চারটি পথই রুদ্ধ বিধায়) কোন্ রাস্তা দিয়ে সেখানে পৌঁছবেন?
কোন এক কবি সুন্দর বলেছেন,
مذهب چارچوں چهار راه اند – بهر منت جو جاده پيمائى
خود يكے بينى ازچهار طرف – كعبه راچوں تو سجده بنمائ
অর্থাৎ চার মাযহাবই যখন চারটি পথ হিসেবে চিহ্নিত হল, কাজেই অনুগ্রহ লাভের জন্য যে কোন একটি পথ অবলম্বন কর। চতুর্দিক থেকে সিজদা দিলেও একটি মাত্র কা’বাই দৃশ্যমান হবে।
কুরআন থাকা সত্ত্বেও যেমন হাদীসের প্রয়োজন হয়, তদ্রূপ হাদীছ থাকা সত্ত্বেও ফিকহের প্রয়োজনীয়তা থাকে। ফিকহ হলো কুরআন হাদীছের তাফসীর। যেই বিধি-বিধান আমরা কুরআন হাদীছে পাই না, ফিকহ শাস্ত্রই উহাকে পরিস্ফুষ্ট করে তোলে।
তাকলীদে খোদা ভিন্ন অন্যকে নির্দেশ প্রদানকারী মানা হয়, ইহা শির্ক। সুতরাং ব্যক্তি বিশেষের তাকলীদও শির্ক। মহান প্রভু আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান,
اِنِ الْحُكْمُ اِلاَّ الِلَّهِ
আল্লাহ ছাড়া কারো হুকুম নেই অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কেউ হুকুম করার অধিকারী নয়।
- সূরাঃ ইউসূফ, আয়াত নংঃ ৪০
যদি খোদা ভিন্ন অন্যকে বিচারক বা ফায়সালা করার অধিকারী নিযুক্ত করা শির্ক হয়, তাহলে হাদীছ মান্য করাও শিরকে পরিণত হল। অধিকন্তু, সমস্ত হাদীছবেত্তা, তাফসীরকারকগণও মুশরিক সাব্যস্ত হয়ে গেলেন, কেননা ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) আবু দাউদ (رحمة الله), মুসলিম (رحمة الله) প্রমুখ মুহাদ্দিছগণও মুকালিদ ছিলেন। আর ইমাম বুখারী (رحمة الله) প্রমুখ হাদীছ বিশোরদগণও মুকালিদ মুহাদ্দিছগণের শিষ্য ছিলেন।
(আইনী শরহে বুখারী দেখুন) আমি আমার রচিত দীওয়ানে সালেকে’ এর উত্তর এভাবে দিয়েছি,
جوتيرى تقليد شرك هوتى محدثىن سارے هوتے مشرك
بخارى مسلم ابن ماجه امام اعظم ابو حنيفه،
كه جتنے فقهاء محدثين هيں تمهارے خرمن سے خوشه چين هيں،
هوں واسطے سے كه بے وسيله امام اعطم ابوخنيفه.
অর্থাৎ- হে ইমাম আবু হানীফা (رحمة الله) যদি আপনার তাকলীদ বা অনুসরণ করা শির্ক হতো, তাহলে ইমাম বুখারী (رحمة الله), মুসলিম (رحمة الله) ও ইবনে মাজা (رحمة الله) মুশরিক বলে গণ্য হবেন। যত ফিকহ বিশারদ ও হাদীছ বেত্তা আছেন, সবাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবেই আপনারই সঞ্চিত স্তুপীকৃত জ্ঞান ভান্ডার হতে জ্ঞানরূপ সম্পদ আহরণ করে ধন্য হয়েছেন।
যে রিওয়ায়াতে (বা হাদীছ বর্ণনায়) একজন ফাসিক রাবী বা বর্ণনাকারীর উল্লেখ থাকে; সেই রিওয়ায়াত যাঈফ (দুর্বল) বা মাওযু (বানোয়াট) বলে গণ্য হয়। এমতাবস্থায় যে রিওয়ায়াত কোন মুকালিদ থাকে, সে রিওয়ায়াত মুশরিক (?) বর্ণনাকারীর সংশিষ্টতার জন্য বাতিল (?) বলে গণ্য হবে। যেহেতু ইমাম তিরমিযী ও আবু দাউদ (رحمة الله) মুকালিদ বিধায় মুশরিক (?) হয়ে গেলেন, সেহেতু তাঁদের রিওয়ায়াত সমূহ গ্রহণযোগ্য হবার কোন প্রশ্নই উঠে না। ইমাম বুখারী ও অন্যান্য মুহাদ্দিছগণ আগেই বাদ পড়ে গেলেন, কেননা তাঁরা মুকালিদের তথা মুশরিখদের শিষ্য (?) এখন হাদীছ কোথায় হতে সংগ্রহ করবেন?
কুরআন পাক ইরশাদ করছে,
وَاِنْ خِفْقُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُوْا حَكَمًا مِنْ اَهْلِهِ وَحَكَمًا مِنْ اَهْلِهَا.
অর্থাৎ- যদি তোমরা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদের আশংকা কর, তাহলে পুরুষের পক্ষে একজন ও মেয়ের পক্ষের একজন শালিসকার নিযুক্ত করে পাঠাও।
- সূরাঃ নিসা, আয়াতঃ ৩৫, পারাঃ ৫
সিফ্ফীনের যুদ্ধে হযরত ‘আলী (رضي الله عنه) ও হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) শালিসকার নিয়োগ করেছিলেন। হুজুর (ﷺ) নিজেই বনী কুরায়জার ঘটনায় হযরত সা’দ ইবন মু’আয (رضي الله عنه) কে বিচারক নিযুক্ত করেছিলেন। উল্লেখিত আয়াত, اِنِ الْحُكْمَ اِلاَّالِلَّهِ এর অর্থ হলো আসল হুকুম আল্লাহরই। খোদা ভিন্ন অন্যান্য যে সব ব্যক্তিবর্গের নির্দেশাবলী রয়েছে, যেমন ‘উলামা, ফিক্হবিদ ও মাশায়িখের নির্দেশাবলী; এরূপ হাদীছের নির্দেশামালা সবগুলোই পরোক্ষভাবে খোদার হুকুমে অন্তভুর্ক্ত। যদি উক্ত আয়াত দ্বারা খোদা ব্যতীত অন্যের হুকুম মানা শির্ক বলে গণ্য করি, তাহলে বর্তমানে সারা দুনিয়ার লোক, যারা কোর্ট-কাচারীতে দায়েরকৃত মামলা মুকাদ্দামায় বিচারকের রায়কে মেনে চলছেন, সবাইতো, মুশরিক হয়ে গেলেন।
মুজতাহিদের কিয়াস হচ্ছে এক প্রকারের ধারণা। ধারণা করাটা পাপ। কুরআন শরীফে ধারণা করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। যেমনঃ কুরআন ইরশাদ করছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا
-‘‘হে ইমানদারগণ অনেক ধরনের ধারণা থেকে বিরত থাকো। নিশ্চয় কোন কোন ধারণা পাপ হিসেবে গণ্য হয় এবং কারো দোষত্রুটি তালাশ করো না। এবং একে অপরের গীবত বা নিন্দা করো না।’’
- সূরাঃ হুজরাত, আয়াতঃ ১২, পারাঃ ২৬
সুতরাং, ধর্মের ব্যাপারে কেবল কুরআন সুন্নাহ মুতাবিক ‘আমল করা চাই’; অন্য কাউকে অনুসরণ করার কোন প্রয়োজন নেই। যেমনঃ নিম্নে উল্লেখিত কবিতার একটি লাইনে ব্যক্ত হয়েছে,
اصل دين آمد كتاب الله مقدم دشتن
پس حديث مصطفے ازجان مسلم داشت
-‘‘ধর্মের মূল কথা হলো আল্লাহর কিতাবকে সর্বাগ্রে স্থান দেয়া, এরপর হাদীছকে প্রাণপণে আঁকড়ে ধরা।
এ প্রশ্নের উত্তর এ অধ্যায়ের শেষে সংযোজিত পরিশিষ্টে প্রদান করা হবে, যেখানে ‘কিয়াস’ কাকে বলে, এর বৈশিষ্টসমূহ কি কি, সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
ইমাম আবু হানীফা (رحمة الله) বলেছেন, যদি কোন হাদীছ সহীহ প্রমাণিত হয়, তখন সেটাই হবে আমার মাযহাব। অতএব আমরা যারা তাকলীদের সমর্থক নই ইমাম আবু হানীফার (رحمة الله) উক্তিকে হাদীছের বিপরীত পাওয়ায় বর্জন করেছি। এগুলোই হলো গায়র মুকালিদদের উপস্থাপিত দলীল প্রমাণ। এর অতিরিক্ত আর কোন প্রমাণ তারা দিতে পারেন না। এগুলোকেই সাজিয়ে গুজিয়ে বাড়িয়ে কমিয়ে বারবার বর্ণনা করে থাকেন।
এ কথা সত্য যে, ইমাম সাহেব (رحمة الله) বলেছেন যদি আমার উক্তি কোন সহীহ হাদীছের পরিপন্থী প্রমাণিত হয়, তাহলে হাদীছ অনুযায়ী আমল করাটাই হবে আমার মাযহাব। এটি ইমাম সাহেবের (رحمة الله) চূড়ান্ত পর্যায়ের খোদা ভীতির ইঙ্গিত প্রদান করে। এও ঠিক যে, মুজতাহিদের কিয়াস বা রায় ওখানেই প্রযোজ্য, যেখানে কোন ‘নস’ (সুস্পস্ট আয়াত, হাদীছ ইত্যাদি) বিদ্যমান নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এ যুগে সারা পৃথিবীতে এমন কোন মুহাদ্দিছ কি পাওয়া যাবে, যিনি সনদ সহ সমস্ত হাদীছ সম্পর্কে সম্যকভাবে অবগত আছেন, যিনি বলতে পারেন যে ইমাম আ’জম (رحمة الله) কোন্ হাদীছ থেকে কোন নির্দেশটি গ্রহণ করেছেন? আমাদের দৃষ্টি হাদীছের সুপ্রসিদ্ধ ৬টি গ্রন্থ ‘সিহাহ সিত্তাহ’ এর সীমা পর্যন্ত প্রসারিত, এর বাইরে আমাদের দৃষ্টি পৌঁছায় না। তাই আমরা কিভাবে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, ইমাম সাহেবের এ নির্দেশ / উক্তি কোন এক হাদীছ থেকে গৃহীত হয়নি?
হাদীছ শরীফেই তো বলা হয়েছে,
اِذَا بَلَغَكُمْ مِنِّى حَدِيْثٌُ فَاْعِرضُوْهُ عَلَى كِنَابِ اللهِ فَاِنْ وَافَقَهُ فَاقْبِلْوْهُ وَاِلًّا فَرَدُّوْاهُ .(مقدمه تفسيرات احمديه ص৪)
-‘‘(নবী করীম (ﷺ) ইরশাদ দকরেন যখন তোমাদের কাছে আমার কোন হাদীছ বর্ণিত হয়, তবে উহাকে আল্লাহর কালামের সহিত মিলিয়ে দেখো। যদি কুরআনের সহিত সঙ্গতিপূর্ণ হয়, তাহলে গ্রহণ করো; অন্যথায় বর্জন করো।’’
(তাফসীরে আহমদীয়্যাহ, মুকাদ্দমার ৪র্থ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)
এ হাদীছকে সামনে রেখে কোন চকড়ালভী মতাবলম্বী যদি বলে যে অনেক হাদীছ যেহেতু কুরআনের বিপরীত পাওয়া যায়, সেহেতু আমরা হাদীছকে বর্জন করে থাকি। যেমন, কুরআনে নির্দেশ আছে, মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদ ওয়ারিশগনের মধ্যে বন্টন কর। আর হাদীছে আছে, নবীর পরিত্যক্ত সম্পদ ওয়ারিশদের মধ্যে বন্টন হয় না। চকড়ালভীদের এ বক্তব্য যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, (হে গায়র মুকালিদগণ) আপনাদের বক্তব্যও তেমনি অগ্রাহ্য।
ইমাম আ’জম (رحمة الله) এর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হাদীছ জানা ছিল না। এজন্যইতো তাঁর রিওয়ায়াতসমূহ খুব কমই দৃষ্টিগোচর হয়; যে কয়টি আছে, সেগুলোও দ্বঈফ বা দুর্বল।
ইমাম আ’জম (رحمة الله) খুব উঁচুস্তরের মুহাদ্দিছ ছিলেন হাদীছ সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলে এতগুলো মাসাইল বের করতে পারলেন কি করে? তাঁর সংকলিত হাদীছ গ্রন্থ ‘মসনদে ইমাম আবু হানীফা’ ও ইমাম মুহাম্মদ (رحمة الله) এর সংকলিত হাদীছ গ্রন্থ ‘মুওয়াত্তায়ে ইমাম মুহাম্মদ’ থেকে তাঁর হাদীছ সম্পর্কিত অনন্য সাধারণ জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়। হযরত সিদ্দীক আকবরের (رضي الله عنه) রিওয়ায়াত খুব কমই দেখা যায়। তাই বলে কি তিনি মুহাদ্দিছ ছিলেন না? অতিমাত্রায় সতর্কতা অবলম্বনের কারণে রিওয়ায়াত স্বল্পতা পরিলক্ষিত হয়েছে। ইমাম সাহেব (رحمة الله) এর সমস্ত রিওয়ায়াতই বিশুদ্ধ। কেননা তাঁর জীবনকাল ছিল হুজুর (ﷺ) এর ইহকালীন জীবনের খুবই নিকটবর্তী। পরবর্তীকালে কোন কোন রিওয়ায়াতে দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়েছে। এতে ইমাম সাহেবের (رحمة الله) কিছু আসে যায় না। সনদ বা সূত্র যতই দীর্ঘতর হয়েছে, ততই দুর্বলতার মাত্রাও বেড়েছে।
কেউ কেউ এও প্রশ্ন করে যে, আপনাদের কথা মতো চার মাযহাবই সঠিক, এটা কিরূপে হতে পারে? যে কোন একটিই হক বা সঠিক হবে। যেমন ইমাম আবু হানীফা (رحمة الله) বলেন, ‘ইমামের পেছনে নামায পড়ার সময় সূরা ফাতিহা পড়া মাকরূহ তাহরীমী; আর ইমাম শাফি’ঈ (رحمة الله) বলেন, ওটা ওয়াজিব। হয় ওয়াজিব হবে, না হয় মাকরূহ হবে, দুটোই কি করে সঠিক হতে পারে?
এখানে ‘হক’ বা সঠিক বলতে যথার্থ বা প্রকৃত সত্য অর্থে বুঝানো হয়নি। ‘হক’ বলতে যা বুঝানো হয়েছে, তা হলো চার মাযহাবের যে কোন একটি অনুসরণ করলে খোদার কাছে জওয়াবদিহি করতে হবে না কেননা মুজতাহিদের ভুলত্রুটিও ক্ষমাযোগ্য। এক দিকে আমির মুআবিয়া (رضي الله عنه) ও মওলা ‘আলী (رضي الله عنه) এর মধ্যে, অপর দিকে হযরত ‘আয়েশা সিদ্দীকা (رحمة الله) ও হযরত আলী (رضي الله عنه) এর মধ্যে গৃহযুদ্ধও হয়েছে। ন্যায় ও প্রকৃত সত্যের উপর যে কোন একজনই প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। ‘কিন্তু উভয়কে ‘হকের’ উপর প্রতিষ্ঠিত বলা হয়- এ অর্থে যে আল্লাহর কাছে কাউকে তজ্জন্য জওয়াবদিহি করতে হবে না। গভীর জংগলের মধ্যে এক ব্যক্তি কিবলার দিক নির্ণয় করতে পারছে না। সে নিজের ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী চার রাকআত চার দিকে মুখ করে আদায় করেছে। কেননা যখনই তার ধারণা পাল্টে যায়, তখনই সে অন্য দিকে মুখ ফিরাতে থাকে। কিবলা নিশ্চয় এক দিকেই ছিল, চতুর্দিকে ছিল না। তথাপি তার নামায শুদ্ধ হয়েছে, চতুর্দিকেই তার কিবলা ঠিক হয়েছে। মুজতাহিদের ইজতিহাদ প্রয়োগের ক্ষেত্রে এতটুকু বলা হয়েছে যে, মুজতাহিদ ভুল করলেও একটি ছওয়াব পান। কুরআন করীম ইজতিহাদ প্রয়োগে হযরত দাউদ (عليه السلام) এর ভুল এবং হযরত সোলায়মান (عليه السلام) এর সঠিক রায়ের কথা বর্ণনা করেছে। কিন্তু কারো উপর যৎসামান্য দোষারোপও করা হয়নি।
বরং ইরশাদ করা হয়েছে,
كُلاَّ اَتَيْنَا حُكْمًا وَّعِلْمًا
অর্থাৎ- তাঁদের প্রত্যেককে আমি বিচার বিশেষণের ক্ষমতা ও জ্ঞান দান করেছি।
মিশকাত শরীফের ‘ইমারত’ শীর্ষক আলোচনায় ‘আল-আমিন ফিল কাযা’ অধ্যায়ে হযরত আবু হুরায়রা ও আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে,
إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ فَأَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ فَأَخْطَأَ فلهُ أجرٌ واحدٌ
-‘‘যখন বিচারক চিন্তাভাবনা করে রায় দেন, এবং রায়টা সঠিক হয়, তখন তিনি দু’টো ছওয়াব পাবেন! পক্ষান্তরে, বিচারক যখন সঠিক রায়ের জন্য চিন্তাভাবনা করেন কিন্তু সঠিক রায়টা অনুধাবন করতে ভুল করে ফেলেন, তখনও তিনি একটি ছওয়াবের ভাগীদার হবেন।"
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নোক্ত আপত্তিটা উত্থাপনের আর অবকাশ রইল না। আপত্তিটা হচ্ছে কোন শাফে’ঈ মতাবলম্বী কর্ণমূল পর্যন্ত দুহাত উঠালে (নামাযের সময়) সঠিক বিবেচিত হয় কিন্তু কোন লা-মাযহাবী হাত উঠালে দূষণীয় হয়। এর পেছনে কি যুক্তি থাকতে পারে? এর উত্তর হলো শাফে’ঈ মতাবলম্বী শরীয়তের হাকিম তথা মুজতাহিদ দ্বারা ফায়সালা করিয়ে হাত উঠায়। মুজতাহিদ ভুল করলেও তা ক্ষমাযোগ্য। অপরদিকে লা-মাযহাবী যেহেতু কোন মুজতাহিদের মতামত নেয়নি, সেহেতু সে সঠিক কাজ করলেও দোষী সাব্যস্ত হবে।
যেমন বিচারকের রায় ব্যতিরেকে নিজের হাতে আইনকে তুলে নিয়ে কোন কাজ করলে সেটা অপরাধ। কিন্তু কোর্ট থেকে বিচারকের রায় নিয়ে ঐ একই কাজ করলে কোন অপরাধ হয় না। বিচারকই এক্ষেত্রে দায়ী থাকেন, বিচারক ন্যায় বদরের যুদ্ধবন্দীদের নিকট থেকে কিয়াস বা যুক্তি ভিত্তিতে ফিদ্য়া (মুক্তিপণ) আদায় করেছিলেন, পরে এর বিপরীত কুরআনের আয়াত নাযিল হয়। এতে বোঝা গেল, হুজুর (ﷺ) এর স্বীয় যুক্তিগ্রাহ্য এ কাজে আল্লাহ তা’আলা সন্তুষ্ট ছিলেন না। কিন্তু তাঁ সত্ত্বেও মুক্তপণ ফেরৎ দেওয়ার কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি।
বরং ইরশাদ করেন,
فَكُلُوْا مِمَّا غَنِمْتُمْ حَلاَلاً طَيِّبًا.
-‘‘এ সব মালামাল তোমরা ভোগ কর। এগুলো হালাল ও পবিত্র।’’
- সূরাঃ আ’রাফ, আয়াতঃ ৬৯, পারাঃ ১০
বোঝা গেল ইজতিহাদ প্রয়োগে ভুল হলে, সে ভুলের জন্য কোন কৈফিয়ত দিতে হয় না।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(১১) ব্যক্তিগত তাকলীদের বর্ণনা | (১৩) ‘কিয়াস’ সম্পর্কিত বিষয়ের আলোচনা |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |