আকিদা ও আমল বিশুদ্ধ করার পর ‘এখলাছ’ বা ‘বিশুদ্ধতা' অর্জন করার কাজটি অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এ কাজটি বিভিন্ন তরিকার সুফী পীর আউলিয়াগণের দায়িত্বের অন্তর্ভূত। তাঁদের তালিম-তরবিয়ত এবং সংসর্গ ছাড়া প্রকৃত এখলাছ অর্জন সম্ভব নয়। অতীত বর্তমানের সকল কামেল বুজর্গানে দ্বীনের জীবনযাপন- ইতিহাসই এর প্রমাণ। কিন্তু এ পথে আসলের সঙ্গে নকলবাজরাও তরিকার নামে তাদের পার্থিব ব্যবসা বিস্তার করতে প্রয়াস পায়। তাছাড়া নাকেস (আধ্যাত্মিকতায় অপূর্ণ) ব্যক্তিও পীরের আসনে আসীন হয়ে এখলাছ অর্জনের মূল সাধনায় বহুরকম বিকৃতির অনুপ্রবেশ ঘটাতে থাকে। সুতরাং তরিকা গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য যেমন জানা থাকা উচিত, তেমনি উচিত বিশুদ্ধ তরিকত চর্চার পূর্ণ ও স্বচ্ছ জ্ঞান ।
হজরত মোজাদ্দেদে আলফে সানি র. বলেন “বিশ্বাস ও আমলের দুই বাহু অর্জনের পর আল্লাহ্তায়ালার অনুগ্রহ সহায় হলে সুফীগণের তরিকা গ্রহণ করতে হবে। তরিকা গ্রহণের উদ্দেশ্য এই নয় যে, এর ফলে আকিদা ও আমল ব্যতীত অন্য কোনো অতিরিক্ত বস্তু লাভ করা যায়। অথবা নতুন কিছু হস্তগত হয়। বরং উদ্দেশ্য এই যে, শরিয়তের বিশ্বাস্য বস্তুসমূহের প্ৰতি দৃঢ় বিশ্বাস লাভ হয় এবং কলবের সালামতি (প্রশান্তি) হাসিল হয়, যা কোনো প্রবঞ্চকের প্রবঞ্চনা ও কুমন্ত্রণায় নষ্ট হয় না। কেননা, দলিল-প্রমাণাদি কাঠনির্মিত পায়ের মতো এবং নিরেট দলিল উপস্থাপনকারীরা আন্ত রিক স্থিরতাশূন্য (সালিম কলবহীন)। ‘সাবধান হও! আল্লাহর জিকিরেই অন্তর প্রশান্ত হয়'। সূরা রা'দ ২৮ আয়াত। মোটকথা, আমলে সরলতা লাভ হয় এবং আলস্য ও আদেশ অমান্য করার কুপ্রবৃত্তি দূর হয়ে যায়। সুফীগণের তরিকায় সুলুক করার উদ্দেশ্য এ-ও নয় যে, অদৃশ্য আকৃতি প্রকৃতি ইত্যাদি দর্শন করে, অথবা বিভিন্ন নূর, রঙ ইত্যাদি দ্যাখে। এসকল কিছুও খেলতামাশার অন্তর্ভূত। প্রকাশ্য নূর (সূর্য, চন্দ্র) এবং দৃষ্টিগ্রাহ্য সকল আকার আকৃতি কি অন্যায় করলো যে, এ গুলোকে ফেলে কঠোর সাধনার মাধ্যমে অদৃশ্য নূর ও আকার-আকৃতি দর্শনের অভিলাষী হতে হবে। যেহেতু, দৃশ্য-অদৃশ্য সকল জ্যোতি ও আকার আকৃতি— সবই আল্লাহ্তায়ালা সৃষ্ট বস্তু এবং তাঁর পবিত্র জাতের প্রতি নিদর্শন মাত্র ।
সুফীগণের মধ্যে প্রচলিত সকল তরিকার মধ্যে নকশবন্দিয়া তরিকা গ্রহণ করাই অধিক উপযোগী ও শ্রেয়। এই তরিকার বুজর্গগণ দৃঢ়তার সঙ্গে সুন্নতের পাবন্দী করেন এবং বেদাত থেকে বিরত থাকেন । তাঁরা যদি সুন্নতরূপ সম্পদ লাভ করার পর আত্মিক অবস্থা (রূহানী হাল) কিছুই লাভ না করেন, তবুও সন্তুষ্ট থাকেন। পক্ষান্তরে, আত্মিক অবস্থা বর্তমান থাকা সত্ত্বেও যদি দেখেন সুন্নত প্রতিপালনে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে, তবে অসন্তুষ্ট হন' ।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(৩১) আমলঃ নামাজ প্রসঙ্গ | (৩৩) তরিকা প্রসঙ্গঃ জিকির ও অন্যান্য বিষয় |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |