হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) ইয়াযীদী বাহিনীর সামনে গিয়ে বললেন,
দেখ, আমি কে? আমি হলাম জান্নাতের যুবকদের সাইয়্যিদ। আমি ঐ হুসাইন, যাঁকে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুমু দিতেন এবং বলতেন, এটা আমার ফুল। আমি ঐ হুসাইন যাঁর মা ফাতিমাতুয্ যাহরা (রাঃ)। আমি ঐ হুসাইন যাঁর পিতা হযরত আলী মর্তূজা (রাঃ), যিনি খাইবর বিজয়ী। আমি ঐ হুসাইন, যার নানা আল্লাহর নবী খাতেমুল আম্বিয়া হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা (সঃ) । আমি ঐ হুসাইন, যখন আল্লাহর নবী (সঃ) সিজদারত অবস্থায় থাকতেন, আমি পিঠ মুবারকের উপর সওয়ার হয়ে যেতাম আর তখন উনি সিজদাকে দীর্ঘায়িত করতেন। ওহে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘর উচ্ছেদকারীরা! ওহে হযরত ফাতিমাতুয্ যাহরা (রাঃ) বাগানের ফুলকে ছিঁড়ে ছিন্ন-ভিন্ন করে কারবালার উত্তপ্ত বালিতে নিক্ষেপকারীরা! এসো, আমার রক্তের দ্বারাও তোমাদের হাতকে রঞ্জিত করো। কি দেখছ ? আমার পিছনে আর কেউ নেই। একমাত্র আমিই রয়েছি। এগিয়ে এসো।
তখন ওরা তলোয়ার খাপ থেকে বের করে তীর উত্তোলন করে এগিয়ে আসলো। কিন্তু হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) যখন খাপ থেকে তলোয়ার বের করে ওদের উপর আক্রমণ করলেন, তখন ওরা মেষের পালের মত পালাতে লাগলো। হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) এমন বিদ্যুৎ বেগে ওদের উপর তলোয়ার চালাতে লাগলেন যে ওদের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে এমনভাবে পতিত হতে লাগলো যেমন শীতকালে বৃক্ষের পাতা ঝরে পড়ে। হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) অল্প সময়ের মধ্যে লাশের স্তূপ করে ফেললেন। তিনি (রাঃ) নিজে তীরের আঘাতে জর্জরিত এবং তিনদিনের তৃষ্ণায় কাতর হওয়া সত্ত্বেও তাঁর তলোয়ার ‘যুলফিকার’ তখনও সেই নৈপুণ্য দেখিয়ে যাচ্ছিল, যেভাবে বদরের যুদ্ধে দেখিয়েছিল। বদরের যুদ্ধে এ তলোয়ার যখন শেরে খোদা হযরত আলী (রাঃ) এর হাতে ছিল এবং চালানো হচ্ছিল, তখন অদৃশ্য থেকে আওয়াজ আসছিল-
লা ফাতা ইল্লা আলী, লা সাইফা ইল্লা যুল্ফিকার
অর্থাৎ ‘ হযরত আলী (রাঃ) এর মত যেমন কোন জওয়ান নেই, তেমনি ‘যুলফিকার’-এর মত কোন তলোয়ার নেই।
এখনও সেই তলোয়ার সেই নৈপুণ্য দেখাচ্ছিল। মোট কথা, হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) লাশের স্তুপ করে ফেলেছেন। ইয়াযীদী বাহিনীকে কেটে কেটে মাটি রঞ্জিত করে ফেললেন। একদিকে তিনি যেমন অনেক ইয়াযীদী সৈন্যকে কচুকাটা করলেন, অন্যদিকে ওরাও তাঁকে আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করে ফেললো।