হযরত যয়নাব (রাঃ) ভাতিজা হযরত আলী আকবর (রাঃ) এর লাশের পাশে দাঁড়িয়ে আহাজারি করতেছিলেন। হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) বোনের হাত ধরে তাঁবুর অভ্যন্তরে নিয়ে গিয়ে বললেন,
বোন! ছবর করো, আল্লাহ তায়ালা ছবরকারীদের সাথে আছেন। ছবর এবং ধৈর্যের আঁচল হাতছাড়া করো না। যা কিছু হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা’র পক্ষ থেকে হচ্ছে। আমাদের ছবর ও ধৈর্যের মাধ্যমে কামিয়াবী হাছিল করতে হবে। এটা আল্লাহ তায়ালা’র পক্ষ থেকে মহাপরীক্ষা।
বোনকে নিয়ে যখন তাঁবুর অভ্যন্তরে গেলেন, তখন হযরত শহরবানু (রাঃ) হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) উনার সামনে এসে বললেন,
আপনার ছেলে আলী আছগর পানির তৃষ্ণায় কেমন যেন করছে, গিয়ে দেখুন। পানির তৃষ্ণায় তাঁর অবস্থা খুবই সঙ্গীন হয়ে গেছে। কোন রকম নড়াচড়া করতে পারছে না। কাঁদছে কিন্তু চোখে পানি আসছে না। মুখ হা করে আছে, কোন আওয়াজ বেরুচ্ছে না। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে গেছে। শুনুন, যালিমেরা হয়তো জানে না যে, আমাদের সাথে ছোট ছোট শিশুরাও রয়েছেন। আমার মনে হয়, এ ছোট শিশুকে কোলে করে আপনি ওদের সামনে নিয়ে গেলে নিশ্চয় ওদের দিলে রহম হতে পারে। কারণ এ রকম শিশু ওদের ঘরেও রয়েছে। তাই আপনি এ শিশুকে কোলে করে ওদের সামনে নিয়ে যান এবং বলুন, আমাকে পানি দিও না, তোমাদের হাতে কয়েক ফোঁটা পানি এ শিশুর মুখে দাও। তাহলে তারা নিশ্চয় দিবে।
হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম বললেন,
শহরবানু! তোমার যদি এটা আরজু এবং ইচ্ছা হয়ে থাকে, তাহলে তোমার এ ইচ্ছা পূর্ণ করতে আমি রাজি আছি। কিন্তু ঐ বদবখ্তদের প্রতি আমার আদৌ আস্থা নেই।
যা হোক, হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) ছয় মাসের দুগ্ধপোষ্য শিশুকে কোলে নিয়ে ইয়াযীদ বাহিনীর সামনে গিয়ে বললেন,
দেখ! এ ছয় মাসের দুগ্ধপোষ্য শিশু। এ আমার ছেলে আলী আছগর। এ তোমাদের সেই নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশধর, তোমরা যার কলিমা পাঠ করো। শোন! আমি তোমাদের কোন ক্ষতি করে থাকলে, আমার থেকে তোমরা এর বদলা নেবে। কিন্তু এ মাছূম শিশুতো তোমাদের কোন ক্ষতি করেনি। এ শিশু পানির তৃষ্ণায় ছটফট করছে, কিন্তু সেটা দেখা যাচ্ছে না। শোন! আমার হাতে কোন পানির পেয়ালা দিও না, তোমাদের হাতে এ শিশুর মুখে কয়েক ফোঁটা পানি দাও। আর এ শিশু পানি পান করার পর তলোয়ার হাতে নিয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে লড়বে না। তাই এর তৃষ্ণাটা নিবারণ করো। তাঁবুর পর্দানশীন মহিলাদের কাকুতি-মিনতিতে টিকতে না পেরে আমি একে নিয়ে এসেছি।
তিনি (রাঃ) এ করুণ বর্ণনা দিচ্ছিলেন, আর এদিকে আলী আছগর (রাঃ)কে লক্ষ্য করে ‘হরমিলা বিন্ কাহিল’ নামক এক বদবখত্ যালিম তীর নিক্ষেপ করলো এবং সেই তীর এসে আলী আছগর (রাঃ)-এর গলায় বিধল। হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) দেখলেন, শিশুটি একটু গা-নাড়া দিয়ে চিরদিনের জন্য নিশ্চুপ হয়ে গেল। হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলেন, বলতে লাগলেন,
ওহে যালিমেরা! তোমরাতো তোমাদের নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতিও কোন সমীহ করলে না। তোমাদের মনতো কাফিরদের থেকেও কঠোর। শিশুদের প্রতি কাফিরেরাও সহানুভূতি দেখায়। তোমরাতো নিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবি করো।
তিনি (রাঃ) ছেলের গলা থেকে তীর বের করলেন এবং নিথর দেহ মুবারক মাটিতে রেখে বললেন,
মাওলা! এ লোকেরা যা কিছু করছে, এর জন্য আমি আপনাকে সাক্ষ্য করছি।
দেহ মুবারক কাঁধে করে তাঁবুর কাছে নিয়ে এসে হযরত আলী আকবর (রাঃ) এর পাশে রেখে ডাক দিয়ে বললেন,
ওহে শহরবানু! ওহে যয়নাব! আলী আছগর আর ছটফট করবেন না এবং তৃষ্ণার কারণে হাত পা নড়াচড়া করবেন না। উনার তৃষ্ণার্ত অবস্থা থেকে তোমাদের অস্থিরতা আর বৃদ্ধি পাবে না। সে জান্নাতুল ফিরদাউসে গিয়ে দাদীজান (রাঃ)এর কোলে বসে হাউজে কাওছারের পানি পান করছে।
আহ ! কারবালার মাঠে হযরত ফাতেমাতুয যুহরা (রাঃ) এর বাগানের ফুল ছিন্ন ভিন্ন হয়ে পড়ে রয়েছ । কোন জায়গায় আব্বাস (রাঃ) পড়ে রয়েছে, কোন জায়গায় কাসেম (রাঃ) পড়ে রয়েছে, কোন জায়গায় আলী আকবর (রাঃ) পড়ে রয়েছে, কোন জায়গায় আলী আসগর পড়ে রয়েছে ।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(২১) হযরত আলী আকবর (রাঃ) এর শাহাদাত | (২৩) হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর শেষ উপদেশ ও যুদ্ধের ময়দানে গমন |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |