ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল (র.) প্রসিদ্ধ চার ইমামের একজন। তাঁর নাম আহমাদ, উপনাম আবূ আবদুল্লাহ্, পিতার নাম মুহাম্মদ, পিতামহ হাম্বল ইব্ন্ হিলাল। বংশ তালিকা আবূ আবদুল্লাহ্ আহমাদ ইব্ন মুহম্মদ ইব্ন আযাদ ইব্ন ইদ্রীস (র.)।
ইমাম আহমাদ হাম্বল (র.) ১১৬ হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসে বাগদাদে জন্মগ্রহন করেন। এবং সেখানেই লালিত-পালিত হন। তাঁর বয়স যখন তিন বছর তখন তাঁর পিতা ইন্তিকাল করেন। এরপর তাঁর মাতা সাদিয়া বিন্তি মায়মুনা এর হাতে তিনি প্রতিপালিত হন এবং তাঁর তত্ত্বাবধানে মকতবের শিক্ষা সমাপণ করেন। ১৬ বছর বয়সে তিনি ইমাম আবু হানীফা (র.)-এর খিদমতে হাযির হয়ে ইলমে হাদীস অধায়নে মনোনিবেশ করেন। এ ছাড়া বাগদাদের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফহীহগণ থেকে শিক্ষা লাভ করার পর কৃষ্ণা, বসরা, মক্কা. মদীনা, ইয়ামান, সিরিয়া, জর্জিয়া ইত্যাদি স্থানের বিভিন্ন মুহাদ্দিস ও ফকীহগণ থেকে হাদীস ফিকহ্-এর জ্ঞান হাসিল করেন। এরপর তিনি হাদীস সংকলনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল (র.) সে যুগের একজন প্রসিদ্ধ ফকীহ্ ও মুহাদ্দিস হিসাবে সর্বজন কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করেন। বর্ণিত রয়েছে যে, তিনি শাফি'য়ী (র.) নিকট থেকে তিনি ইমে
১. আসুন্নাতু ও মাকানাতুহা ফিত্ তাশরী'ঈল ইসলামী: ড. মুস্তাফা হুসনী আস সুবাঈ, ৪৪০ পৃষ্ঠা। ২. আইম্মা আরবাআহ : কার্যী আতহার হোসাইন, ২২২ পৃষ্ঠা। ৩. আসসুন্নাতু ও মাকানাতুহা ফিত্ তাশরী'ঈল ইসলামী, ৪৪২পৃষ্ঠা।
দাউদ সিজিস্তানি, আবুল কাসিম বাগাবী (র.) প্রমূখ।১
ইমাম আহমাদ ইব্ন হাম্বল (র.) তাওয়া পরহেযগারী ও হকের উপর অটল অবিচল এবং দুনিয়ার প্রতি ছিলেন নিরাসক্ত। 'খালকে কুরআনের' বিষয়ে তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে মু'তাযিলাদের মুকাবিলা করেন। তিনি খলীফা মা'মুনের খিলাফত কাল ওয়াক্কিল পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার হন। তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়, দৈহিকভাবে 127/523 ষব
নির্যাতন চালানো হয়। তিনি এসব যুলুম ও নির্যাতন অত্যন্ত ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার পদে বরদাশত করে যান। খালকে কুরআনের ভ্রান্ত মতবাদ খন্ডনের ক্ষেত্রে ইমাম আমাদের কৃতিত্বপূর্ণ ভূমিকা মুসলমানদেরকে যুগ যুগ ধরে সত্যের উপর অটলও অবিচল থাকার অনুপ্রেরণা যোগাবে। এ ধরণের পরীক্ষায় দৃঢ়, অটল ও অবিচল থাকার কারণে মুসলমানদের নিকট তাঁর মর্যাদা এত বৃদ্ধি পেয়েছিল যে উম্মতে মুসলিমার নিকট সর্বসম্মত তিনি সে যুগের মুজাদ্দিদ হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেন। ইমাম শাফি'য়ী (র.) তাঁর সম্পর্কে বলেন, আমি বাগদাদে আহমাদ ইবন হাম্বল (র.)-এর চেয়ে অধিক মুত্তাকী, দুনিয়ার নিরাসক্ত এবং যোগ্যতর আলিম দ্বিতীয় আর কাউকে দেখিনি। তিনি ২৪১ হিজরী সনে বাগদাদে ইন্তিকাল করেন।
ইমাম আহমাদ ইব্ন হাম্বল (র.) পাঁচটি মূলনীতির ভিত্তিতে ফাওয়া প্রদান করতেন।
হাদীস সংকলনের ক্ষেত্রে 'মুসনাদে আহম্মাদ' ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল (র.)-এর অমর অবদান। উক্ত 'মুসনাদে' তিনি তাঁর সংগৃহীত ও মুখস্থ সাত লক্ষ পঞ্চাশ হাজার হাদীস থেকে বাছাই ও নির্বাচন করে চল্লিশ হাজার হাদীস বাছাই ও নির্বাচন করে সংকলন করেন। এই 'মুসনাদে' সংকলন ও বিন্যাসে তিনি তাঁর পূর্ববর্তীদের নীতি অনুসরণ করেছিলেন। অর্থাৎ
১. আইম্মা আরবাআহ্: কাযী আতহার হোসাইন, ২১২ পৃষ্ঠা ও হুসনুত্ তাকাযীঃ যাহিদ কাওসারী, ৭ পৃষ্ঠা।
নির্দিষ্ট একজন সাহাবী হতে বর্ণিত হাদীস এক জায়গায় একত্রিত করেছিলেন। চাই সে হাদীসের বিষয়বস্তু যতই ভিন্ন হোক না কেন। যেমন তিনি হযরত আবূ বকর (রা.) হতে বর্ণিত সমস্ত হাদীস একই অধ্যায় একত্র করেছেন। যদি সে সব হাদীসের বিষয়াবলী বিভিন্ন ছিল। অর্থাৎ নামায, যাকাত ইত্যাদি বিষয়ের সমস্ত একই অধ্যায় একত্র করেছেন।
ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল (র.)-এর শাগরিদগণকে তাঁর নিজস্ব অভিমত সমূহ লিখতে নিষেধ করতেন। এমন কি কেউ তা লিখলে তিনি অত্যন্ত রাগ করতেন। যার ফলে তাঁর ইন্তিকালের পর তাঁর শাগরিদগণ তাঁর আকওয়াল একত্রিত করেন। তাই ফিকহ্ হাম্বলী নামে পরিচিত।১ 128/523
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৫৫) ইমাম শাফি'য়ী (র.) | |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |