হাদিস শরীফে এসেছে
আমার শাফায়াত আমার উম্মতের বড় বড় পাপীদের জন্য
আরও এরশাদ হয়েছে
আমার উম্মত রহমতপ্রাপ্ত উম্মত। পরকালে তাদের কোনো শাস্তি নেই ।
শাফায়াতের (সুপারিশের) দরোজা প্রথম উন্মুক্ত করবেন রসুলে আকরম স.। আর এর ফলে তিনি আল্লাহ্পাকের দরবারে কতো উচ্চ মর্যাদার অধিকারী, তাসুষ্পষ্ট হয়ে পড়বে। হাশরের ময়দানের আতঙ্কিত ও অস্থির জনতা সুপারিশের আবেদন নিয়ে প্রথমে যাবে হজরত আদম আ. এর কাছে। বলবে, আপনি মানব সম্প্রদায়ের পিতা । আল্লাহ্পাক আপনাকে নিজ কুদরতে সৃষ্টি করেছেন। বেহেশতে স্থান দিয়েছেন। ফেরেশতারা আপনাকে সেজদা করে সম্মানিত করেছে। সকল জিনিসের নাম আপনার জানা । এই কঠিন দিনে আপনি আমাদের জন্য শাফায়াত করুন। হজরত আদম আ. বলবেন ‘রব্বুল আলামীনের কাছে কিছু বলা আমার শক্তির বাইরে। নিষিদ্ধ বৃক্ষের কাছে যাওয়া এবং গন্দম খাওয়ার ব্যাপারে এখনও আমি লজ্জিত। তোমাদের কাজ হয়তো নূহের দ্বারা হতে পারে’ ।
হজরত নূহ আ.ও অপারগতা প্রকাশ করবেন। এভাবে অপারগতা প্রকাশ করবেন হজরত ইব্রাহিম আ. হজরত মুসা আ. হজরত ইসা আ. সবাই। এরপর সবাই একত্রিত হবেন রসুলে আকরম স. এর নিকটে। তিনি উঠবেন এবং প্রচন্ড উদ্দীপনা নিয়ে আল্লাহ্তায়ালার নিকটে সুপারিশের উদ্দেশ্যে সেজদাবনত হবেন।হুকুম হবে, মাথা ওঠান। আপনি যা কিছু চান, সবই পূর্ণ করা হবে। যা কিছু দাবী জানাবেন, মেনে নেয়া হবে’।
রসুলে আকরম স. সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে গোনাহ্গারদের মাগফিরাতের সুপারিশ করবেন। পুনরায় সেজদায় পড়ে দ্বিতীয় প্রকার পাপীদের জন্য শাফায়াত করবেন। এরপর তৃতীয়বারে সেজদা থেকে মাথা ওঠাবেন তখন, যখন সকলপ্রকার গোনাহ্গারকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। তখন কোরআনপাকে উলেখিত আল্লাহ্তায়ালার অস্তিত্ব অস্বীকারকারী কাফের-মুশরিক-মুনাফিক ছাড়া আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।
কোরআনপাকে এরশাদ হয়েছে
হে আমার মাহবুব! হে আমার খাস বান্দা! আমি আপনাকে এতো বিপুল নেয়ামত দান করবো, এতো অসংখ্য রহমত বখশিষকরবো যে, আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন। আপনার কোনো আশা অপূর্ণ থাকবে না।হে মোহাম্মদ! সবাই আমার সন্তুষ্টির তালাশ করে, আর আমি আপনার সন্তুষ্টির অভিলাষী।
সূরা দ্বুহা।
নবী পাক স. বলবেন ‘একজন উম্মতও বিনা ক্ষমায় থাকা পর্যন্ত আমি সন্তুষ্ট হবো না’। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে এই- দয়ার অসীম সমুদ্র আল্লাহ্তায়ালার রহমতই গোনাহ্গারদের আসল আশা-ভরসা। যেমন তিনি রব্বুল আলামীন (বিশ্বসমূহের প্রতিপালক), তেমনি তাঁর হাবীব রহমাতুলিল আ’লামীন (বিশ্বসমূহের রহমত)।
শায়েখ আবদুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী র. বলেন
তুমি তাঁর প্রকৃত উম্মত হও।তাঁর কাছে পূর্ণসমর্পিত হও। সমস্ত বাধাবিঘ্ন দূর হয়ে যাবে। অসুবিধা যদি দ্যাখো তবে বুঝবে, এখনো তাঁর সঙ্গে তোমার পূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয়নি। সম্পর্ক অটুট হলেকোনো অসুবিধাই থাকবে না। অসংখ্য গোনাহ্ ইমানের নিকট কিছুই নয়। ইমানের নূর গোনাহর অন্ধকারে ঢাকা পড়ে না। যার ইমানী চিন্তা আছে, তার অন্য কোনো চিন্তা নেই।
হজরত সুফিয়ান সওরী র.কে সারা রাত্রি জেগে থাকতে দেখা যেতো। মানুষেরা বলতো ‘কাঁদেন কেনো ? প্রফুল্লচিত্ত থাকুন’। তিনি জবাব দিতেন ‘গোনাহ্ যদি পর্বত-পরিমাণও হয়, তবুও আল্লাহ্তায়ালার রহমতের সামনে তা অস্তিত্বহীন। আমিতো এজন্য কাঁদি যে, সঠিক ইমান নিয়ে পৃথিবী ত্যাগ করতে পারবো কিনা’।
রসুলে আকরম স. কিয়ামত সম্পর্কে যা কিছু বিবরণ দিয়েছেন, তার সবকিছুকেই সত্য বলে বিশ্বাস করতে হবে। যেমন, পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া, তওবার দরোজা বন্ধ হয়ে যাওয়া, দাজ্জালের আবির্ভাব, হজরত ইসা আ.এর আকাশ থেকে অবতরণ, ইমাম মেহেদী আ. এর আবির্ভাব ইত্যাদি। তাঁর জানিয়ে দেওয়া সকল হুকুম এবং সংবাদের উপর আস্থা স্থাপন করা অত্যাবশ্যক।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(১৯) পুলসিরাত | (২১) বেহেশত ও দোজখ |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |