পেশাবের জন্য একটি কুলুখ (মাটির ঢেলা, সুতী কাপড়ের টুকরা অথবা টয়লেট পেপার) বদনা ও গামছা বা তোয়ালে নিন।
মাথা টুপি অথবা অন্য কিছু দিয়ে ঢেকে রাখুন। (ছুন্নাত) কিছু না থাকলে ডান হাত মাথায় রাখুন। খালি মাথায় ও খালি পায়ে কখনো পেশাব পায়খানা করবেন না। করা মাকরুহ।
পেশাবখানা অথবা আড়ালযুক্ত জায়গায় প্রথমে বাম পা তারপর ডান পা রাখুন। (ছুন্নাত)
অর্থঃ হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে শয়তান ও দুষ্টু জেন হতে পানাহ চাইতেছি। (ছুন্নাত)
গণপেশাবখানা হলে আগে কিছু পানি ঢেলে দিন। গণরিয়ার জীবানু থাকলে সরে যাবে। গণরিয়ার জীবানু দেড় দুফুট পর্যন্ত লাফিয়ে উঠে অঙ্গে ঢুকে যায় ।
বসার সময় উত্তর দক্ষিন মুখ করে বসুন। (ছুন্নাত) কেবলার দিকে মুখ করে অথবা কেবলাকে পিছনে রেখে বসবেন না। বসা মাকরুহ।
বসার আগে কাপড় উচা করবেন না। করা মাকরুহ। কেবল মাত্র সামনের কাপড় উচা করুন।
দু’হাটু ঢেকে বসুন। (ফরজ)
পেশাবের ছিটা না লাগে সে দিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখুন। পেশাবের নাপাকী পরহেজ না করলে হাদীছ অনুযায়ী কবরের আযাব হবে।
পেশাব শেষে বাম হাত দিয়ে কুলুখ নিন।
উঠে দাড়ান।
তোয়ালে বা গামছার এক মাথা ঘাড়ে ও আর এক মাথা হাটুর নিচ পর্যন্ত ছেড়ে দিন। চলাফেরা করুন। এমনভাবে চলুন যেন লোকের নজরে দৃষ্টিকটু বা বেহায়া মনে না হয়।
পেশাব সমপূর্ন বের না হওয়া পর্যন্ত হাটুন।
প্রয়োজনে উঠ্ বস বা গলা খাকরাইতে পারেন।
দৃষ্টিকটু না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
বিশেষভাবে খেয়াল রাখুনঃ
পুরুষ অঙ্গের পেঁচের মধ্যে যে পেশাব থাকে তা বের করে ফেলা ফরজ। (পুরুষাঙ্গের মধ্যে ১৮টি পেঁচ আছে। এ জন্য শেষ দিকের পেশাব একেবারে বের হয় না। বরং ফোঁটা ফোঁটা আসে। উক্ত পেশাব পু রুষাঙ্গের মাথায় জমে থাকলে তা থেকেই ৮০প্রকার মেহ রোগ হয়। যাঁরা নিয়মিত পেশাবে কুলুখ ব্যবহার করেন আল্লাহ তাঁদের এ রোগ থেকে হেফাজাত করেন।)
পেশাবখানায় যেয়ে বসুন।
কুলুখ এমন স্থানে ফেলুন যেন পেশাব আটকে দূর্গন্ধ না হয়।
ডান হাতে বদনা ধরুন।
বাম হাতের উপর পানি ঢালুন এবং অঙ্গ ধৌত করুন।
ধোয়ার সময় বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখুনঃ
ক) পেশাব যদি এক দেরহাম অর্থাৎ হাতের তালু সোজা রাখলে যে পরিমান পানি থাকে সে পরিমানের বেশী অঙ্গে লেগে যায় তবে পানি দিয়ে ধোয়া ফরজ।
খ) এক দেরহাম পরিমান লাগলে ধোয়া ওয়াজিব।
গ) এক দেরহাম পরিমানের কম লাগলে ধোয়া ছুন্নাত।
ঘ) ছিদ্রের বাইরে না লাগলে ধোয়া মোস্তাহাব।
বাম হাত ভালভাবে ধুয়ে ফেলুন।
এবার উঠুন। উঠার সময় কাপড় ছেড়ে দিয়ে উঠুন। উঠে কাপড় ছাড়বেন না।
পেশাবখানা হতে বের হতে প্রথমে ডান পা দিন।
পড়ুনঃ
আলহামদু লিল্লাহি আখরাজা আননি মা ইউজিনী অ আবক্বা মা তানফাআনী।
অর্থঃ আল্লাহ তাআ’লার সকল প্রশংসা যিনি আমার শরীর থেকে ক্ষতিকারক জিনিষ বের করে দিয়েছেন এবং উপকারী জিনিষ বাকী রেখেছেন।
খালি মাথায়, আলগা শরীর ও খালি পায়ে কখনো পেশাব করবেন না। করা মাকরুহ।
পেশাবখানা অথবা চারিদিকে আড়ালযুক্ত উচু জায়গায় পেশাব করতে হবে। নীচু জায়গায়, ময়লা ফেলা বা ছাই রাখা জায়গায় পেশাব করা মাকরুহ।
কোন গর্তের মুখে কখনো পেশাব করবেন না।
দুধ খাওয়া ছেলে মেয়ের মা হলে বুকের জামা ও কাপড়ের উপরে গামছা বা তোয়ালে দিয়ে স্তন দুটো এমনভাবে ঢেকে দিন যেন পেশাব পায়খানার ভাপ না লাগে। পেশাব পায়খানার ভাপ লেগে দুধ শুকিয়ে গেলে শত চেষ্টা তদবীরে আগের মত দুধ ফিরে আসেনা।
পেশাব খানায় ঢুকতে প্রথমে বাম পা দিন, তারপর ডান পা রাখুন। (ছুন্নাত)
কেবলার দিকে মুখ অথবা পিঠ ফিরিয়ে বসবেন না। বসা মাকরুহ।
বসার আগে কাপড় উঠাবেন না। উঠান মাকরুহ।
দু’হাটু ঢেকে বসুন। ঢেকে রাখা ফরজ। (মেয়েদের পেশাব পায়খানার সময় মলদ্বার ও পেশাবের জায়গা ব্যতীত মাথা, বুক, পিঠ, হাটুসহ ঢেকে রাখা ফরজ)।
বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখুনঃ
ক) পেশাবের ছিটা কাপড়ে বা শরীরে না লাগে সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখুন। পেশাবের ছিটা থেকে পরহেজ না করার কারণে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম কবরের আযাব হতে দেখেছেন।
খ) পেশাব শেষে বাম পা সামনে এগিয়ে দিন। এরপর ডান পা এগিয়ে দিন। এবার বাম পা পিছিয়ে পেশাবের বসার জায়গায় রাখুন। এরপর ডান পা পিছিয়ে নিয়ে বসুন।(স্ত্রী অঙ্গের ভিতরে ভাঁজ থাকায় সেখানে পেশাব থেকে যায়) । এ নিয়মে এগিয়ে পিছিয়ে বসে এ পেশাব বের করে ফেলা ফরজ। এরূপ না করলে অজু ও নামাজ শুদ্ধ হবে না।
এরপর ডান হাতে বদনা ধরুন।
বাম হাতে পানি ঢালুন।
বাহির ও ভিতরের অঙ্গ ভালভাবে ধুয়ে ফেলুন। ভিতর অঙ্গ পানি দিয়ে না ধুলে নাপাকী দূর হয়না।
হাত ভালভাবে ধুয়ে নিন।
এবার উঠে দাড়ান।
দাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কাপড় ছেড়ে দিন। (ছুন্নাত) দাড়ানোর পরে কাপড় ছাড়বেন না। (ছাড়া মাকরুহ)
আগে ডান পা বের করুন। এরপর বাম পা বের করুন। (ছুন্নাত)
দোয়া পড়ুনঃ
আল হামদু লিল্লাহিল লাজী আখরাজা আননী মা ইউজীনী অআবক্বা মা তানফাআনী।
অর্থঃ আল্লাহ তাআ’লার সকল প্রশংসা যিনি আমার শরীর থেকে ক্ষতিকারক জিনিষ বের করে দিয়েছেন এবং উপকারী জিনিষ বাকী রেখেছেন।
পেশাবের সময় পেশাবের দিকে নজর করবেন না, দৃষ্টি শক্তি কমে যাবে। এদিক ওদিক তাকাবেন না, আকাশ, চন্দ্র, সূর্য্যরে দিকেও লক্ষ্য করবেন না।
প্রয়োজন ছাড়া লিঙ্গের দিকে তাকাবেন না। তাকালে দৃষ্টি শক্তি কমে যায়।
থুথু ফেলবেন না, নাক ঝাড়বেন না, গলা খাকরাবেন না। এগুলো করলে পেটের রোগ হয়।
ছালাম করবেন না, ছালামের জবাব দিবেন না বা কারো সঙ্গে কথা বলবেন না। শরীয়তে এগুলি করা মাকরুহ।
গোছলের সময় পানিতে নেমে কখনো পেশাব করবেন না। (করা হারাম) এতে মুত্র পাথরী রোগ হয়।
পেশাবের মাকরুহঃ
প্রবাহিত বা বদ্ধ পানিতে, খালে, কুপে, ফলযুক্ত গাছের নিচে, লোকের ছায়ায় বসার স্থানে, মসজিদে, ঈদগাহে, কবর স্থানে, কিংবা রাস্তায় চলাচলের স্থানে পেশাব পায়খানা করা মাকরুহ।