…يَا أَيُّهَا الذِينَ آمَنُوا لا تَقْرَبُوا الصَّلوةَ وَانْتُمْ سُكَرى
হে ঈমানদারগণ তোমরা যখন নেশাগ্রস্থ থাক, তখন নামাজের নিকটে যেওনা। তোমরা যে সব কথা বলছ তা যতক্ষন নিজে বুঝতে না পার। আর ফরজ গোছলের প্রয়োজনে যতক্ষন গোছল করে না নাও।
— ছুরা নিছা - আয়াত ৪৩
স্বপ্নদোষ অথবা স্বামী-স্ত্রীর মিলনে শরীর বেশী পরিমান ক্ষয় হয়। (পানিতে প্রত্যেক বস্তুর উপাদান থাকার কারণে পানিতে গোছল করলে সঙ্গে সঙ্গে উক্ত ক্ষয় পূরণ হয়ে শরীর সুস্থ হয়)। শরীয়তে স্বপ্নদোষ অথবা মিলনের পরে গোছল করা ফরজ করা হয়েছে।
হযরত খাজা মঈন উদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন - আমি আমার মোরশেদ হযরত খাজা ওছমান হারুনী কুদ্দিছা ছেররুহুর মুখে শুনেছি যে, হযরত আদম আলাইহিছ্ ছালামকে অপবিত্রতার কারণে জান্নাত হতে দুনিয়ায় আসতে হয়েছে। দুনিয়ায় তার তওবাহ কবুল হওয়ার পর যখন তিনি বিবি হাওয়া আলাইহিছ ছালামের সঙ্গে মিলন নেন তখন হযরত জিবরিল আলাইহিছ ছালাম হাজির হয়ে তাকে গোছল করার নিয়ম কানুন বলে দেন। হযরত আদম আলাইহিছ ছালাম গোছল করার পর তৃপ্তি পেলেন। তখন তিনি বললেন ভাই জিবরাইল ! এ গোছলের অন্য কোন ফায়দা বখশিশ আছে কি ? উত্তরে জিবরাইল আলাইহিছ ছালাম বললেন এর বিনিময়ে অনেক নেকী আছে। প্রথম আপনার শরীরে যত পশম আছে, এর প্রত্যেক পশমের বদলে এক বছরের নেকী পাবেন। দ্বিতীয় ফরজ গোছলের কারণে তার প্রতি ফোটা পানি হতে আল্লাহ তাআ’লা এক একজন ফেরেশতা সৃষ্টি করবেন, যারা কেয়ামত পর্যন্ত জীবিত থেকে ইবাদাত বন্দেগীতে মশগুল থাকবে, আর আপনি ঐ সব ফেরেশতাগনের ইবাদাত বন্দেগীর নেকী পেতে থাকবেন।
এরপর আদম আলাইহিছ ছালাম জিজ্ঞেস করলেন ভাই জিবরাইল! এ পুরস্কার কি আল্লাহ তাআ’লা বিশেষভাবে আমার জন্যে নির্দিষ্ট করেছেন, না আমার সন্তানগণও এ পুরস্কার এভাবেই পেতে থাকবে ? জিবরাইল আলাইহিছ ছালাম উত্তরে বললেন আপনার সন্তান গণের মধ্যে ঈমানদার মুছলিমগণ যদি এ নিয়মে ফরজ গোছল আদায় করে তারাও এভাবেই পাবে যেভাবে আপনাকে দেয়া হলো।
এ শ্রেষ্ট নিয়ামত কেবল মাত্র তাদের জন্য যারা সঠিকভাবে ফরজ গোছল আদায় করে। কিন্তু এমন একটি দল আছে যারা এ বিশিষ্ট নিয়ামত হতে বঞ্চিত। কেননা তাদের গোছল প্রায় হারাম মিলনে ঘটে। আরও একটি দল আছে, যাদের হালাল মিলনের গোছল ও পরিপুর্নভাবে আদায় না করার কারণে গোছল বাতিল হয়ে যায়।
যখন কেউ হারাম মিলন নিয়ে গোছল করে তখন আল্লাহ তাআ’লা তার আমল নামায় এক বছরের গোনাহ লিখে দেন এবং তার হারাম গোছলের প্রতি ফোটা পানি হতে এক একটি দৈত্য দানব সৃষ্টি করেন, যারা কিয়ামত পর্যন্ত জীবিত থেকে যে সকল পাপ কাজ করবে তার সকল পাপই তার আমল নামায় লেখা হবে। (দলিলুল আরেফীন ২য় মজলিস)
মিলনের পরপরই ফরজ গোছল আদায় করলে ক্ষয় পুরন হয়ে শরীর সুস্থ হয়ে যায়। গোছল আদায় না করে তার পরিবর্তে ক্ষয় পুরনের জন্যে ঔষধ খেলে ও সে ক্ষয় কখনো পুরন হয় না। গোছলের জন্যে পানি না পেলে অথবা অন্য কোন অসুবিধা থাকলে অতি অবশ্য অজু করে নিবে।
এখানে (নিচে) যেমন ধারাবাহিকভাবে নিয়ম-কানুন লেখা হয়েছে তা একের পর এক আমল করার চেষ্টা করুন। আগে পিছে করবেন না।
পড়ুনঃ নাওয়াইতু আন আগছালা লিরাফয়িল জানাবাত।
অর্থাৎঃ আমি নাপাকী দূর করার জন্য গোছল করছি।
গোছলের নিয়ম নিচে দেখুন-
উপরের লেখা কাজগুলি সেরে নিন।
মনে রাখুনঃ
বগল ও নাভীর নীচের লোমরাজি ৪০ দিনের বেশী সময় রাখা মাকরুহ তাহরীমী। এ সময়ের আগেই সাফ করুন। (ছুন্নাত)
বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখুনঃ
১। গড়গড়া করে কুলি করা
২। নাকের শক্ত হাড় পর্যন্ত পানি পৌঁছান
৩। মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমপূর্ন শরীর পানি দিয়ে একবার ধুয়ে ফেলা।
১। মেয়েলোকের চুল খোলা থাকলেও চুলের গোড়ায় পানি প্রবেশ করানো।
২। বেণী বাধা থাকলে উহার মধ্যে পানি প্রবেশ করানো।
৩। চুলে গাঢ় কিছু লাগানো থাকলে তা তুলে পানি প্রবেশ করানো। না তুললে যদি পানি প্রবেশ করে তবে তোলার দরকার নেই।
৪। নাকফুল বা আংটি ঢিলা না থাকলে তার মধ্যে পানি প্রবেশ করানো।
৫। স্ত্রী অঙ্গের বাহির অংশে পানি পৌছানো।
মেয়েরা বিশেষভাবে মনে রাখুনঃ
সকালের দিকে গোছল করলে শরীর ও মন সুস্থ থাকে। রোগ পীড়া কম হয়। বিকালের দিকে গোছল করলে চুল ভিজা থাকে, চুল শুকায়না। ভিজা অবস্থায় চুল বাধলে চুলের ভিজা মাথায় বসে যায় ও ঠান্ডা লেগে সর্দ্দি হয়, মাথা ধরে, মাথার যন্ত্রনা হয়। অল্প দিনে হাঁচি ও মাথার রোগে আক্রান্ত হয়। হাজার হাজার টাকা ব্যয় করেও তখন রোগ নিরাময় হয়না। মেয়েরা প্রতিদিন গোছলের পরে অবশ্য চুল শুকিয়ে নিয়ে চুল বাধবে। গোছলের পর চুল শুকিয়ে নেয়া যায় এমন সময় গোছল করবে। তা হলে মাথার রোগ যন্ত্রনা থেকে বাচতে পারবে।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৩৭) নাজাছাতে খফীফা | (০৩৯) পেশাব |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |