ছাহাবায়ে কেরাম দিনের বেলা সাংসারিক ও ব্যবসায়িক কাজ কর্মে ব্যস্ত থাকার কারণে জোহরের নামাজে কম হাজির হতেন। জোহরের জামাতে রাছুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছল্লামের পিছনে এক কাতার বা দু’কাতার লোক হতো। নামাজী কম হওয়ার কারণে রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বললেন লোকেরা জামাতে যোগ দেবে, তা না হলে আমি তাদের বাড়ী ঘর জালিয়ে দেব। তখন এ আয়াত নাজিল হয়-
حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَىٰ وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ
(২৩৮) তোমরা নামাজের প্রতি যত্নবান হবে, বিশেষকরে মধ্যবর্তী নামাজের অর্থাৎ জোহরের নামাজের। আল্লাহর সামনে তোমরা বিনীতভাবে দাড়াবে।
— ছূরা বাকারাহ
কুনুত শব্দের অর্থ বিনীত হওয়া, অবনত হওয়া, নজর নীচের দিকে রাখা, মাথা অবনত করে রাখা।
এ আয়াত নাজিল হওয়ার পর নামাজীদের অবস্থা এমন হল যে, তারা নামাজের মধ্যে এদিক সেদিক খেয়াল করতেন না, পাথর সরাতেন না এমনকি মনে মনে কোন কিছু ধারনা বা চিন্তা ভাবনা করতেন না।
— মাজহারী ১ম খন্ড - ৩৩৭ পৃঃ
عائشة رضي الله عنها قالت : سألت رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الالتفات في الصلاة فقال : " هو اختلاس يختلسه الشيطان من صلاة العبد
হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা বলেন, একবার আমি রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লামকে নামাজের মধ্যে এদিক সেদিক খেয়াল সম্মন্ধে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন- এ হল শয়তানের ছো মারা। শয়তান ছো মেরে নামাজীর নামাজের কিছু অংশ নিয়ে যায়। (বুখারী, মুছলিম, মেশকাত - ৯১৯)
রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বলেছেন- আল্লাহ তাআ’লা তার বান্দার দিকে তাকিয়ে থাকেন যতক্ষন বান্দা নামাজে রত থাকে আর এদিক সেদিক খেয়াল না করে। যখন সে এদিক সেদিক খেয়াল করে তখন আল্লাহ তাআ’লা তার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেন।
— আহমাদ, আবু দাউদ, নাছায়ী, দারেমী মেশকাত - ৯৯৫
وروي عن جابر رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم إذا قام الرجل في الصلاة أقبل الله عليه بوجهه فإذا التفت قال يا ابن آدم إلى من تلتفت إلى من هو خير لك مني أقبل إلي فإذا التفت الثانية قال مثل ذلك فإذا التفت الثالثة صرف الله تبارك وتعالى وجهه عنه
অন্য হাদীছে আছে, বান্দা যখন নামাজের মধ্যে এদিক সেদিক খেয়াল করে, তখন আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান তুমি কোন দিকে খেয়াল করছ ? তুমি যা খেয়াল করছ তা কি আমার চেয়ে ভাল? তুমি আমার দিকে খেয়াল কর। যদি বান্দা দ্বিতীয় বার খেয়াল করে, আল্লাহ তাআ’লা অনুরূপ বলেন। বান্দা যখন তৃতীয়বার খেয়াল করে, আল্লাহ তাআ’লা তাঁর নিজের চেহারা সেখান থেকে উঠিয়ে নেন।
— আততারগীব ১ম খন্ড; হাদীছ নং- ৭৮৯, পৃষ্ঠা- ২০৯
عن أبي هريرة قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : الشيطان فإذا تثاءب أحدكم فليكظم ما الصلاة من التثاؤب في
استطاع " . رواه الترمذي وفي أخرى له ولابن ماجه : " فليضع يده على فيه
রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বলেন, নামাজের মধ্যে হাই উঠা শয়তানের পক্ষ থেকে। সুতরাং যখন কারো হাই আসে তখন সে যেন তা সাধ্য অনুযায়ী বন্ধ করার চেষ্টা করে।
— তিরমিজি মেশকাত - ৯৯৩
রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বলেছেন, নামাজের মধ্যে হাচি, তন্দ্রা, হাই আসা, বমি আসা নাক হতে রক্তপড়া এসব শয়তানের পক্ষ হতে। অর্থাৎ শয়তান এসব কাজ করে খুশী হয়।
— তিরমিজি, মেশকাত - ৯৩৪
উপরের আয়াত নাজিল হওয়ার পর মুছল্লির নামাজের মধ্যে উপরের বর্ণিত বিষয়গুলি পরহেজ করে চললে তা কুনুতের নামাজ হবে।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০১৮) নামাজের দ্বিতীয় অবস্থা | (০২০) নামাজের চতুর্থ অবস্থা |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |