আল্লাহ তাআ’লা কোরআন মাজীদে এরশাদ করেছেন-
إِنَّ عَرَضْنَا الأَمَانَةَ عَلَى السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَالْجِبَالِ فَأَبَيْنَ أَنْ يَحْمِلْنَهَا وَأَشْفَقْنَ مِنْهَا وَحَمَلَهَا الْإِنْسَانُ إِنَّهُ كَانَ ظَلُومًا جَهُوْلا
নিশ্চয়ই আমি আমার আমানাতকে আছমান জমীন এবং পাহাড় সমুহের সামনে পেশ করেছিলাম। তারা একে গ্রহন করতে অস্বীকার করল এবং এ প্রস্তাবে ভীত হল কিন্তু মানুষ তা গ্রহন করল। নিশ্চয় সে (আমানাত গ্রহনের ব্যাপারে) নিজের উপর জুলুমকারী ও (আমানাত প্রতিপালনের ব্যাপারে) অজ্ঞ মুর্খ।
— ছুরা আহযাব-৭২
রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বলেন -
كُنتُ كَنْزًا مُخْفِيًا - فَاَحْبَبْتُ أَنْ أَعْرَفَهُ – فَخَلَقْتُ الْخَلْقَ لِأُعْرَفَ
আল্লাহ তাআ’লা বলেন-আমি গুপ্ত ভান্ডার ছিলাম। আমি নিজের পরিচয় দেয়াকে ভালবাসলাম। এরপর আমি আমার পরিচয় দানের উদ্দেশ্যে সৃষ্ট (নুরে মুহাম্মাদী)-কে সৃষ্টি করলাম
— হাদীছে কুদছী
আল্লাহ তাআ’লা এরশাদ করেন-
وَمَا خَلَقْتُ الجنَّ وَالإِنْسَ إِلا لِيَعْبُدُونَ -
আমি জ্বীন ও মানবজাতিকে আমার পরিচয় গ্রহনের জন্যে সৃষ্টি করেছি।
— ছুরা যারিয়াত-৫৬
তাফসীরবিদগণ ইবাদাতের অর্থ পরিচয় গ্রহন লিখেছেন (তাফছীরে মাজহারী)। আল্লাহ তাআ’লা বলেছেন-
[আরবী]
আল্লাহ তাআ’লা ইনছানদের ভালবাসেন আর ইনছানও আল্লাহকে ভালবাসে।
দুনিয়ায় স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বিয়ের আগে তারা নিজ নিজ বাপ-মায়ের পরিবেশে মানুষ হয়। বাপ-মায়ের চাল-চলন, কথা-বার্তা, আদব-আখলাক, রুচি-অরুচি এক কথায় বাপ-মায়ের গুন গ্রহন করে সেই গুনে গুণান্বিত হয়। প্রত্যেক পরিবারের পরিবেশ হয় ভিন্ন। পৃথিবীতে এই দুই ভিন্ন পরিবেশের ছেলে-মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পর দেখা যায় একজন মাছ, দুধ, টক বেশী পছন্দ করে, অন্যজন গোশ্ত, ঝাল, মিষ্টি। একজন সকাল ৮টায় খায়, অন্যজন ১০টায়। একজন রাত ৮টায় শোয়, অন্যজন ১১টায়। স্বামী, স্ত্রীর জন্যে সালোয়ার কামিছ পরা পছন্দ করে, স্ত্রী চায় শাড়ী। এ অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী প্রত্যেকে যদি তার বাপ-মায়ের পরিবেশ ঠিক রাখতে জেদ ধরে তবে তাদের সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয়ে সংসার ভেঙ্গে যায়। এ জন্যে সংসারে শান্তির জন্যে দুজনেই একে অপরের পরিচয় গ্রহন করতে থাকে। স্ত্রী লক্ষ্য করে স্বামী তার চলা-ফেরা, খাওয়া-পরা, শোয়া, কথা-বার্তা কোনগুলি বেশী পছন্দ করে। স্ত্রীর সেগুলো অপছন্দ হলেও স্বামীকে ভালবাসার কারণে স্ত্রী আস্তে আস্তে স্বামীর পছন্দনীয় জিনিষগুলি গ্রহন করতে থাকে এবং নিজের পছন্দের জিনিষ থেকে দুরে সরে আসে। অন্যদিকে স্বামী ও স্ত্রীর চালচলন, খাওয়া-পেওয়া, শোয়া, কথা-বার্তা,পোশাক-পরিচ্ছদের মধ্যে কোনগুলি বেশী পছন্দ করে তা’ লক্ষ্য করে। স্বামীর এগুলি পছন্দ না হলেও স্ত্রীকে ভালবাসার কারণে নিজের পছন্দ থেকে সরে এসে স্ত্রীর পছন্দ গ্রহন করতে থাকে। ফলে দেখা যায় স্বামী বাজার করার সময় স্ত্রীর পছন্দনীয় জিনিষ কিনে আনে। আর স্ত্রীও বাজার করতে গেলে স্বামীর রুচি ও পছন্দের জিনিষগুলি কিনে নিয়ে আসে।
স্ত্রীর মধ্যে যদি নোংরা বা অপরিস্কার থাকে তবে স্বামী তাকে সাবান ব্যবহার করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে শিক্ষা দেয়। এরপর স্বামীর পছন্দ অনুযায়ী আতর-সুগন্ধি কিনে দিয়ে তা মেখে স্বামীর সামনে আসতে বলে যেন নোংরা ও অপরিচ্ছন্নতা দূর করে সুগন্ধিতে মোহনীয় হয়ে আসে এবং স্বামীর চোখে মোহনীয় হয়ে ওঠে।
এর বিপরীতে স্বামী নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন থাকলে স্ত্রীও স্বামীকে সাবান দিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে আতর গোলাপ মাখিয়ে নিজের কাছে মোহনীয় করে তোলে। অশালীন আলাপ বা আচরণ থাকলে তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে তা দূর করে ভাল আচার আচরণে অভ্যস্ত করে তোলে। স্ত্রীর সামনে স্বামীর যত ভাল গুন প্রকাশ পায় স্ত্রীও তত বেশী স্বামীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে স্বামীকে ভালবাসে। আর স্বামীর সামনে স্ত্রীর যত ভালগুন প্রকাশ পায় স্বামীও তত বেশী স্ত্রীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে স্ত্রীকে ভালবাসে। স্বামী-স্ত্রী যত বেশী পরস্পরের পরিচয় গ্রহন করতে থাকে তত বেশী তাদের মধ্যে প্রেম-মহব্বত সৃষ্টি হয় এবং সে প্রেম গাঢ় ও গভীর হতে থাকে। আপনি আপনার ছোট মেয়েকে বেশী ভালবাসেন। সে প্রায় সময়ই আপনার কোলে থাকে। আপনি আত্মীয় বাড়ী যাওয়ার জন্যে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পরে রওনা দিচ্ছেন। ছোট মেয়ে নিজে পেশাব-পায়খানা করে গায়ে মাখল। এরপর আপনার কোলে উঠার জন্যে কান্না শুরু করে দিল। আপনি কি ঐ অবস্থায় তাকে কোলে উঠাবেন? যার সামান্য কান্নাকাটি আপনি সহ্য করতে পারেন না, কান্নার সাথে সাথে কোলে উঠান। আর এখন তাকে কোলে উঠালে শুধু কাপড়-চোপড় নোংরা হবে, দূগন্ধ ছুটবে এজন্যে যতক্ষন তাকে সাবান দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার করে না দিবে ততক্ষন আপনি তাকে কোলে নেবেন না। আপনি যে পেশাব-পায়খানাকে ঘৃনা করছেন বর্তমানে ঐরূপ পেশাব-পায়খানা আপনার পেটের মধ্যেও আছে। যা আপনার মধ্যে আছে সেই একই ধরনের দূর্গন্ধ আর একজনের মধ্যে থাকায় আপনি তাকে এমন ঘৃনা করছেন।
আপনি চিন্তা করুন, যার মধ্যে কোন দূর্গন্ধ নেই, কোন দূর্গন্ধও যিনি সহ্য করতে পারেন না, তার কাছে নোংরা দূর্গন্ধ নিয়ে হাজির হলে তিনি কি তাকে সহ্য করে কাছে উঠিয়ে নেবেন ?
আল্লাহ তাআ’লা পবিত্র। পবিত্র ছাড়া কোন অপবিত্র ও দূর্গন্ধ যুক্ত জিনিষ তিনি সহ্য করতে পারেন না। তিনি সকল মাখলুককে সৃষ্টি করেছেন। সকলকে রিজিক দেন, সকলকে প্রতিপালন করেন। তিনি নিজের পরিচয় দানের জন্য মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানব জাতিকে ভালবাসেন আর মানবজাতিও তাকে ভালবাসে।
দুনিয়ার মানুষ একে অপরকে হিংসা, ঘৃনা, বিদ্বেষ, মিথ্যা, জুলুম, অন্যায়-অত্যাচার করে নিজেকে নোংরা কলুষিত ও দূগন্ধযুক্ত করে ফেলে। আল্লাহ তাআ’লা মানবের উক্ত দূগন্ধ পাপরাশি পরিস্কারের জন্য সাবান হিসেবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ দান করেছেন।
বান্দাহ যখন পাপরাশি নিয়ে নামাজে দাড়িয়ে নামাজের অনুশীলনের মাধ্যমে কাকুতি-মিনতি সহকারে পাপের জন্য অনুতাপ অনুশোচনা করে তখন আল্লাহ তাআ’লাও বান্দার প্রতি মোতাওয়াজ্জাহ হন এবং আপন রহমতের নুরের তাজাল্লী দিয়ে উক্ত পাপরাশি মুছে দেন আর তার মধ্যের লজ্জাহীন খারাপ ভাব ও মন্দ কাজ-কর্মের স্বভাব দূর করে দিয়ে নিজের গুনাবলীর সুগন্ধি মাখিয়ে নিজের (আল্লাহর) গুনাবলীর রংএ রঞ্জিত করে নেন। বান্দাহ এবং নিজের মধ্যকার পর্দা উঠিয়ে দিয়ে ক্কলবের দ্বারা ছুরা ফাতেহার মাধ্যমে কথা-বলতে থাকেন। রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম স্বশরীরে আল্লাহ তাআ’লার যে দীদার লাভ করেছিলেন, বান্দাহ নামাজের মাধ্যমে রুহানীভাবে সেই দীদার লাভ করে থাকে।
আল্লাহ তাআ’লা তাঁর হাবীবের উম্মতের মিরাজের জন্যে নামাজ দান করেছেন। সুতরাং বান্দাহ প্রথম দিকে নামাজের মাধ্যমে নিজের গোনাহ মাফ করিয়ে নিয়ে, লজ্জাহীন খারাপ স্বভাব থেকে বিরত থাকার গুন অর্জন করে। এরপর আল্লাহ তাআ’লার নৈকট্য,প্রেম, ও দীদার লাভের জন্যে মিরাজের যোগ্যতা অর্জনের নামাজ পড়ে থাকে। এ ব্যতীত নামাজের আরও বহু উপকারিতা আছে। এর বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০০৫) নামাজের শিক্ষাদাতা কে ? | (০০৭) নামাজ গোনাহ্ মাফকারী |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |