নবী ও রসুল প্রেরণ পৃথিবীবাসীদের জন্য রহমত বা দয়া। তাঁদের মধ্যস্থতাব্যতিরেকে অবশ্যম্ভাবী আল্লাহ্তায়ালার জাত সিফাতের জ্ঞানলাভ ছিলো অসম্ভব। আল্লাহ্তায়ালার সন্তুষ্টির অনুকূল ও প্রতিকূল বিষয়াবলীতো তাঁদের মাধ্যমেই পার্থক্য লাভ করেছে। তাঁদের দাওয়াতী নূরের সাহায্য ছাড়া আমাদের প্রজ্ঞা ও মনীষা অপূর্ণ ও অপদস্থ। জ্ঞান দলিল বটে, কিন্তু পূর্ণ দলিল নয়। পয়গম্বর প্রেরণই পূর্ণ দলিল, যার প্রতি আখেরাতের সওয়াব ও আজাব নির্ভর করে।
তাঁদের প্রতি অবতীর্ণ ওহী (প্রত্যাদেশ) সত্য। ওহীর মাধ্যমে শরিয়ত প্রতিপালনের যে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে, তাও আল্লাহ্তায়ালার রহমত। শরিয়ত অস্বীকারকারী বেদ্বীন কাফেরেরা বলে, এ কেমন ধরনের রহমত যে, মানুষকে নামাজ রোজা ইত্যাকার কষ্টকর কাজের আদেশ দিয়ে বলা হয়, এটি তোমাদের জন্য রহমত। শরিয়তের আদেশ-নিষেধসমূহ পালন করলে বেহেশত, আর না করলে দোজখ। এসব তো বন্দীত্ব। স্বাধীনতা নয়। এ ধরনের কথা যারা বলে, তারা প্রকৃতই নির্বোধ ও অকৃতজ্ঞ। তারা একথা জানে না যে, যিনি আমাদেরকে অস্তিত্ব দিয়েছেন এবং অস্তিত্ব রক্ষার জন্য অসংখ্য নেয়ামত দানে ধন্য করেছেন, সেই নেয়ামতদাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ আমাদের উপরে ওয়াজিব (অবশ্যকর্তব্য)। আর শরিয়তের দায়িত্বাবলী তো সেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উপকরণ মাত্র। অতএব, জ্ঞানতঃ শরিয়তের দায়িত্ব সম্পাদন করা অপরিহার্য। আবার পৃথিবীর শৃক্সখলা রক্ষাও এই দায়িত্বপালনের উপর নির্ভরশীল। শরিয়তের শাসন না থাকলে দুষ্টামী, নষ্টামী ও বিশৃঙ্খলায় পৃথিবী পূর্ণ হয়ে যেতো । প্রত্যেক স্বেচ্ছাচারী ব্যক্তি অপরের সম্পদের প্রতি অন্যায় হস্তক্ষেপ করতো। এভাবে সূত্রপাত হতো শত সহস্র বিপর্যয়ের। এভাবে অত্যাচারীরা অপরকে ধ্বংস করতো। নিজেরাও ধ্বংস হতো। পৃথিবীর শৃঙ্খলা ও শান্তি শরিয়তের প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ প্রয়োগের ফলেই সম্ভব হয়ছে। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেছেন
এবং প্রতিশোধ বাস্তবায়নের মধ্যেই তোমাদের জীবন রয়েছে, ওহে বিবেচক ব্যক্তিগণ।
— সূরা বাকারা , ১৭৯ আয়াত
আল্লাহ্পাক সকল কিছুর মালিক। বান্দাগণ তাঁর পূর্ণ দাস। তিনি আপন দাসদের প্রতি যে আচরণই করেন, অথবা যে আদেশই প্রদান করেন তা অবশ্যই বান্দাদের জন্য কল্যাণকর ও সংশোধনসূচক বলে বিবেচিত হবে। আল্লাহ্তায়ালা এরশাদ করেন
তিনি যা করেন, সে সম্পর্কে প্রশ্ন করবার কেউ নেই।
— সূরা রা’দ , ৪১ আয়াত
তাঁর পরাক্রম দেখে সাধ্য আছে কার সমর্পণ ছাড়া কথা বলবে আবার।
আল্লাহ্তায়ালা সমগ্র সৃষ্টিকে চিরদিনের জন্য দোজখে স্থাপন করলেও প্রতিবাদের অবকাশ নেই। এতে অত্যাচারের সন্দেহও অবান্তর। আমাদেও অধিকার এর বিপরীত। বরং আমাদেরকে অধিকার তো দিয়েছেন আল্লাহ্তায়ালাই। অতএব, চিন্তা-চেতনায়, বক্তব্যে, আচরণে ও কর্মে ওই পর্যন্ত— অগ্রসর হওয়াই আমাদের জন্য সঙ্গত, যে পর্যন্ত প্রকৃত মালিক আমাদের জন্য বৈধ বা মোবাহ সাব্যস্ত করেছেন।
নবী-রসুলগণ মাসুম (নিষ্পাপ)। তাঁদের দ্বারা ভুল সংঘটিত হতে পারে। কিন্তু ভুলের উপরে স্থায়ী থাকা তাঁদের পক্ষে সঙ্গত নয়। আর ভুল কিন্তু গোনাহ্ নয়। গোনাহ্ তাদের দ্বারা সংঘটিত হতেই পারে না । আবুল আলা মওদুদীর মতো মোরতাদ ব্যক্তিরা ভুলকে গোনাহ্ মনে করে সম্মানিত, পবিত্র ও নিস্পাপ নবী রসুলগণকে দোষী সাব্যস্ত করে। আল্লাহ্পাক ওই সকল বেদ্বীন ব্যক্তিদের অপবিত্র বিশ্বাস থেকে সকল ইমানদারকে নিরাপদ রাখুন। আমিন।
অল্লাহ্তায়ালা নবী-রসুলগণকে মোজেজা বা অলৌকিক ঘটনা দ্বারা সাহায্য করেছেন। মোজেজা সত্যা। মোজেজা দ্বারা ইমান লাভ হয়। মোজেজা নবুয়তের সত্যতার অটল প্রমাণ।
নবী ব্যতীত অন্য কেউ মোজেজা প্রকাশ করতে পারে না। আল্লাহ্পাকের নিয়ম এই যে, তিনি কারণ ছাড়া সাধারণত কোনোকিছু সৃষ্টি করেন না। এটা তাঁর কানুন (বিধান)। কিন্তু কোনো কোনো সময় তিনি তাঁর কানুনকে ভেঙে তাঁর অপার কুদরতের প্রকাশ ঘটান। কোনো প্রকাশ্য কারণ ছাড়াই নবী-রসুলের মাধ্যমে অলৌকিক ঘটনা সৃষ্টি করে দেন। মোজেজা আসলে আল্লাহ্তায়ালারই কাজ, যদিও তা নবী-রসুলগণের মাধ্যমে দৃষ্টিগোচর হয়। কারণ, আল্লাহ্তায়ালার কানুন ভেঙে ফেলার ক্ষমতা রয়েছে কেবল আল্লাহরই। নবুয়তের দাবী একটি অসাধারণ দাবী। তাই অসাধারণ ঘটনা (মোজেজা) তার প্রমাণ হিসাবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। মোজেজা আল্লাহতায়ালার কুদরত। মোজেজা প্রকাশিত হওয়া মানে ইমানের সম্পূর্ণ কানন উন্মোচিত হওয়া। ইমানের অক্ষয় কাননের চিরসুবাসিত আশ্রয় থেকে এর পরেও যারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারা সত্যিই সত্তাগতভাবে দুর্ভাগ্যশীল ।
হজরত মোহাম্মদুর রসুলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সালাম নবী ও রসুলগণের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনিই শেষ নবী। তাঁর পরে আর কোনো নবী আসবেন না। একথা যারা বিশ্বাস করে না, তারা নিঃসন্দেহে কাফের। যেমন কাদিয়ানি সম্প্রদায় ।
রসুলে আকরম মোহাম্মদ মোস্তফা আহমদ মুজতবা স. আল্লাহ্তায়ালার মাহবুব (প্রেমাস্পদ)। তিনি জ্বিন, ইনসান, ফেরেশতা সকলের নবী। নবীগণেরও নবী। আল্লাহ্তায়ালা সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন নূরে মোহাম্মদী স.। প্রথম নবী হজরত আদম আ. যখন সৃষ্ট হননি, তখনও তিনি নবী ছিলেন। প্রকৃত ইমানদার ওই ব্যক্তি, যিনি তাঁর সকল প্রিয় বস্তু, এমনকি নিজের জীবন অপেক্ষা রসুলেপাক স. কে বেশী ভালোবাসেন। কিন্তু বাতিল ও বেআদব ওহাবী সম্প্রদায় ভালোবাসার বদলে রসুলে করিম স. এর প্রতি পোষণ করে শত্রুতা। এদের জঘন্য ও ঘৃণ্য আকিদা বিশ্বাস সম্পর্কে শামী, আশ শিহাবুছ ছক্বিব, বাহারে শরিয়ত ইত্যাদি পুস্তকে পরিষ্কার বর্ণনা করা আছে। ‘আমার হাতের লাঠি মোহাম্মদ অপেক্ষা অধিক উপকারী’-এরকম কথা কেবল ওহাবী শয়তানদের অপবিত্র মুখেই উচ্চারিত হওয়া সম্ভব ।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(১৪) আল্লাহ্তায়ালার দর্শন | (১৬) কবরের শাস্তি |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |