কবর আজাব সত্য। আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কবরআজাব বিশ্বাস করা জরুরী । কবর মানে আলমে বরজখ (দুনিয়া ও আখেরাতের মধ্যবর্তী জগত) । কবর আজাব হবে কাফেরদের জন্য এবং গোনাহ্গার মুমিনদেও জন্য । নেককার মুমিনদের জন্য নয় ।
মুনকির ও নকীর দুজন ফেরেশতা । তাঁরা ভয়ংকর, কালো রঙের এবং নীল চক্ষুবিশিষ্ট। তাঁরা সদ্যমৃত ব্যক্তিকে আল্লাহ্, আল্লাহ্র রসুল এবং দ্বীন-ধর্ম সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। প্রশ্নের জবাব সঠিকভাবে দিতে পারেন যাঁরা, তাঁদের কবরকে বেহেশতী বাগিচা বানিয়ে দেওয়া হয়। আর জবাব সঠিক না হলে কবর হয় দোজখের গর্তের মতো আজাবে পরিপূর্ণ ।
শায়েখ আব্দুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী র. বলেন, এ বিষয়ে কোরআনের আয়াত এবং হাদিসসমূহ সোচ্চার। সুতরাং এর উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে। কবর আজাবের প্রকৃত অবস্থাসমূহকে আল্লাহ্র জ্ঞানের উপর ন্যস্ত করে ক্ষান্ত থাকা উচিত। ওই অবস্থা আলমে বরজখ সম্পর্কীয় হোক কিংবা আধ্যাত্মিক জগত সম্পর্কীয়। ওই সকল অবস্থাকে মহাশক্তিমান আল্লাহ্তায়ালা যেভাবে চান, সেভাবে স্বীকার করে নেওয়াই ইমান। আসল কথা হলো, মেনে নেয়ার নামই ইমান। অনুধাবন করবার চেষ্টাতো ভিন্ন ব্যাপার। আহলে সুন্নতের রীতি এটাই।
নবী রসুলগণ কবরের প্রশ্নোত্তর পর্বের বাইরে। এটা নবী রসুলগণের সম্মান ও মর্যাদা। তাঁদেরকে যদি প্রশ্ন করা হয়, তবে তা হবে তওহীদের নিগুঢ়তত্ত এবং তাঁদের উম্মতদের অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন। জ্বিনদেরকেও কবরে প্রশ্ন করা হবে। জবাবদানে অক্ষম জ্বিনকে কবর আজাব ভোগ করতে হবে।
কাফেরদেরকে বিনা প্রশ্নেই শাস্তি দেয়া হবে। কিন্তু মুনাফিকদেরকে প্রশ্ন করা হবে।
শায়েখ আব্দুল হক মোহাদ্দেছে দেহলবী র. বলেন কতিপয় হাদিসের ভাষ্যকার এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, আল্লাহ্পাকের রাস্তায় জীবনপাতকারী শহীদ, জুমআর রাতে মৃত্যুবরণকারী, প্রতিরাতে সুরা মূলক তেলাওয়াতকারী এবং কলেরায় মৃত্যুবরণকারীদেরকে কবর আজাব থেকে রেহাই দেওয়া হবে’।
হজরত মোজাদ্দেদে আলফে সানি র. বলেন ঐ ব্যক্তি ভাগ্যবান, যাঁর ভুলত্রূটিসমূহ আল্লাহ্তায়ালা তাঁর পূর্ণ অনুগ্রহে ক্ষমা করে দেন এবং মোটেই শাসন না করেন। যদিও শাসন করেন, তবে পূর্ণ দয়ায় পার্থিব কষ্ট-যন্ত্রণা দিয়ে তার ক্ষতিপূরণ করে দেন। তারপরও গোনাহ্ থাকলে কবরের সংকীর্ণতা ও আজাব দ্বারা ক্ষতিপূরণ করে দিয়ে পাক-পবিত্র অবস্থায় হাশরের ময়দানে উত্থিত করাবেন। এরকম না করে তার শাসন যদি আখেরাতের জন্য স্থগিত রেখে দেন, তবুও তা আল্লাহ্তায়ালার জন্য একান্ত সুবিচার হবে। কিন্তু ওই ধরনের পাপীদের জন্য নিতান্ত আক্ষেপ ও সর্বনাশ। অবশ্য উক্ত ব্যক্তি যদি মুসলমান হয়, তবে একসময় আল্লাহ্তায়ালার ক্ষমা ও রহমতপ্রাপ্ত হবে এবং চিরস্থায়ী আজাব থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। এটাও অতি উচ্চ নেয়ামত। হে আমাদের প্রভুপালক! রসুলগণের নেতা স. এর অসিলায় আমাদের জন্য নির্ধারিত নূর পূর্ণ করে দাও এবং আমাদেরকে ক্ষমা করো। নিশ্চয় তুমি সর্বশক্তিমান’।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(১৫) নবী ও রসুল প্রসঙ্গ | (১৭) বিচারের দিবস |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |