রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এরশাদ করেন
الصَّلَوةُ مِعْراجُ الْمُؤْمِنِيْنَ .
নামাজ মু’মিনদের জন্যে মে’রাজ
রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম স্বশরীরে আল্লাহর সঙ্গে মে’রাজ বা দীদার লাভ করেছেন একবার। আর স্বপ্নে এবং নামাজে অসংখ্য অগনিতবার আল্লাহর দীদার লাভ করেছেন।
হযরত আনাছ রাদিআল্লাহু আনহু বলেন-
রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম মছজিদের কেবলার দিকে কিছুটা নাক ঝাড়া শ্লেষ্মা দেখলেন। এ দেখে তিনি ভয়ানক কষ্ট বোধ করলেন। এমনকি এ কষ্ট তাঁর চেহারায় ও প্রকাশ পেল। রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম উঠে নিজের হাতে উহা খুচড়ে ফেললেন। এরপর বললেন- তোমাদের কেহ যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন সে তার রবের সাথে কথা বার্তায় লিপ্ত থাকে আর তখন তার রব তার ও তার কেবলার মাঝখানে থাকেন। অতএব, কেউ যেন তার কেবলার দিকে থুথু না ফেলে। বরং তার বাম দিকে অথবা পায়ের তলায় ফেলে।
এরপর রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম নিজের চাদরের এক কোনা ধরে তাতে থুথু ফেললেন এবং তার একপাশ দিয়ে আর একপাশকে মলে দিলেন এবং বললেন অথবা সে যেন এমন করে।
— বুখারী, মেশকাত, হাদীছ নং - ৬৯০
আল্লাহ তাআ’লা কোরআন মাজীদে এরশাদ করেন
তুমি ছেজদা করো ও তার নৈকট্য লাভ করো।
— ছুরা আলাক- ১৯
আল্লাহ তাআ’লা কোরআন মাজীদে এরশাদ করেছেন -
وَقَالَ اللهُ إِنِّمَعَكُمْ لَئِنْ أَقَمْتُمُ الصَّلوةَ وَآتَيْتُمُ الزَّكَوةَ وَآمَنْتُمْ بِرُ سُلِى .
...আর আল্লাহ বলে দিলেন- আমি তোমাদের সাথে আছি যদি তোমরা নামাজ কায়েম কর, যাকাত দিতে থাক, আর আমার রাছুলদের প্রতি ঈমান রাখ ..........
— ছুরা মায়িদাহ, আয়াত ১২
রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বলেন-
أَقْرَبُ مَا يَكُوْنُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَهُوَ سَاجِدٌ فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ-
হযরত আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু আনহু বলেন-রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এরশাদ করেন- বান্দাহ আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্ত্তী হয় ছেজদার সময়। অতএব, তোমরা বেশী বেশী দোয়া কর।
— মুছলিম, আততারগীব -১ম ২৪৯
রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম ছাহাবাগণের সামনে নামাজের মধ্যে মে’রাজ লাভের ঘটনা বর্ণনা করে মে’রাজ লাভের পদ্ধতি শিখে তা শিক্ষা দিতে হুকুম করেছেন।
وعن معاذ بن جبل قال : احتبس عنا رسول الله صلى الله عليه وسلم ذات غداة عن صلاة الصبح حتى كدنا نتراءى عين الشمس فخرج سريعا فثوب بالصلاة فصلى رسول الله صلى الله عليه وسلم وتجوز في صلاته فلما سلم دعا بصوته فقال لنا على مصافكم كما أنتم ثم انفتل إلينا ثم قال أما إني سأحدثكم ما حبسني عنكم الغداة أني قمت من الليل فتوضأت وصليت ما قدر لي فنعست في صلاتي حتى استثقلت فإذا بربي تبارك وتعالى في أحسن صورة فقال يا محمد قلت لبيك رب قال فيم
يختصم الملأ الأعلى قلت لا أدري رب قالها ثلاثا قال فرأيته وضع كفه بين كتفي حتى وجدت برد أنامله بين ثديي فتجلى لي كل شيء وعرفت فقال يا محمد قلت لبيك رب قال فيم يختصم
الملأ الأعلى قلت في الكفارات قال ما هن قلت مشي الأقدام إلى الجماعات والجلوس في المساجد بعد الصلوات وإسباغ الوضوء حين الكريهات قال ثم فيم ؟ قلت : في الدرجات . قال : وما هن ؟ إطعام الطعام ولين الكلام والصلاة والناس نيام . ثم قال : سل قل اللهم إني أسألك فعل الخيرات وترك المنكرات المساكين وأن تغفر لي وترحمني وإذا أردت فتنة قوم فتوفني غير مفتون أسألك حبك وحب من يحبك وحب عمل يقربني إلى حبك " . فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : " إنها حق فادرسوها ثم تعلموها رواه أحمد والترمذي وقال : هذا حديث حسن صحيح وسألت محمد ابن إسماعيل عن الحديث فقال : هذا حديث صحيح
হযরত মুআ’জ বিন জাবাল রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, একদিন রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম ফজরের নামাজে আসতে দেরী করলেন। এমনকি সূর্য উঠার কাছাকাছি হলো। এ সময়ে তিনি তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন। মসজিদে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে নামাজের একামত বলা হলো আর রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম ছোট কেরাতে নামাজ পড়লেন। ছালাম ফিরানোর পর মুছল্লীদের ডেকে বললেন- তোমরা যেভাবে কাতারে বসে আছ সেভাবে থাক।
এরপর তিনি আমাদের দিকে ফিরে বললেন- আজ তোমাদের নিকট আসতে কেন দেরী হলো তা বলছি শোন। আমি রাতে উঠলাম, অজু করলাম, এরপর নামাজ শুরু করলাম। নামাজে আমার তন্দ্রাভাব এলো এবং আমি অসাড় হয়ে গেলাম। এ সময়ে আমি দেখলাম - আমি আল্লাহর নিকট হাজির এবং তিনি অতি উত্তম অবস্থায় আছেন। এরপর আল্লাহ তাআ’লা আমাকে ডাকলেন- হে মুহাম্মাদ ! আমি বললাম- হে রব আমি হাজির। আল্লাহ বললেন মালায়ে আলা (উচ্চ পর্যায়ের ফেরেশতা মন্ডলী) কি নিয়ে আলাপ আলোচনা করছে ? আমি বললাম- আমি তা জানিনা। এরূপ তিনি তিন বার জিজ্ঞেস করলেন। এরপর আ মি দেখলাম আল্লাহ আমার দু’কাধের মাঝখানে তাঁর হাত রাখলেন। এমনকি আমার বুকের মধ্যে তার আঙ্গুলগুলির ঠান্ডা অনুভব করলাম। তখন সকল জিনিষ আমার নিকট স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেল আর আমি সকল বিষয় জেনে নিলাম।
এরপর আল্লাহ তাআ’লা আমাকে ডাকলেন- হে মুহাম্মাদ ! আমি উত্তর দিলাম হে রব ! আমি হাজির। তিনি বললেন- এখন বলো মালায়ে আলা কি নিয়ে আলাপ আলোচনা করছে? আমি বললাম কাফফারা সমূহ নিয়ে। তিনি বললেন- সে সকল কি? আমি বললাম (ক) পায়ে হেটে জামাতে যাওয়া (খ) নামাজের পর মসজিদে বসে থাকা (গ) কষ্টের সময় পরিপূর্ণভাবে অজু করা। আল্লাহ তাআ’লা পূনরায় বললেন- এরপর কি নিয়ে আলাপ আলোচনা করছে? আমি বললাম মর্যাদার বিষয় সকল নিয়ে। তিনি বললেন- সে সকল কি? ক) আমি বললাম মানুষকে খাদ্য খাওয়ানো, খ) নিজের কথা বার্তা মধুর করা, গ) রাতে যখন মানুষ ঘু মায় তখন উঠে নামাজ পড়া।
এরপর আল্লাহ আমাকে বললেন- আমার কাছে কিছু চাও । রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বললেন- আমি তোমার কাছে চাই ভাল কাজ করতে, খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকতে, গরীব লোকদের ভালবাসতে, তুমি আমাকে ক্ষমা করতে, আমার প্রতি রহমত করতে, আর যখন তুমি কোন জাতিকে ফেতনায় ফেলতে চাইবে তখন আমাকে ফেতনামুক্ত অবস্থায় উঠায়ে লইতে। আর আমি চাই তোমাকে ভালবাসতে, তোমাকে যে ভালবাসে তাকে ভালবাসতে, যে কাজ তোমার ভালবাসার দিকে নিয়ে যায় সে কাজকে ভালবাসতে। এরপর রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বললেন নামাজের মধ্যে মে’রাজের এ ঘটনা সত্য। তোমরা এ বিষয় হাতে কলমে শেখো এরপর তা অন্যকে শেখাও।
— আহমাদ ও তিরমিজী আরো বলেছেন এ হাদীছ হাছান ও ছহীহ। ইমাম বোখারীও এ হাদীছকে ছহীহ বলেছেন। , মেশকাত- ৬৯২
উক্ত হাদীছে রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম নামাজের মধ্যে আল্লাহর দীদার ও কথা-বার্তার বর্ণনা দিয়ে শেষে বলেছেন-‘ইন্নাহা হাক্বকুন ফাদরুছুহা ছুম্মা তুআল্লিমুহা এ ঘটনা সত্য, এ নামাজ হাতে কলমে শিক্ষা করো এরপর লোকদিগকে শিখাও। হাতে কলমে শিক্ষা করতে সময়ের প্রয়োজন এজন্য ছুম্মা শব্দ ব্যবহার করে বলেছেন দীর্ঘ সময়ে শিক্ষার পরে তা লোকদের শিখাও।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০০৯) নামাজ বেহেশতের চাবি | (০১১) নামাজ মু’মিন ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্যকারী |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |