যাকাত আদায় বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য নিয়্যত করা শর্ত। অর্থাৎ যাকাত আদায় করার সময় বা যাকাতের মাল অন্য মাল থেকে পৃথক করার সময় যাকাত আদায়ের নিয়্যত করতে হবে।
যাকাতদাতা যাকাতের মাল প্রদান করার সময় যদি যাকাতের নিয়্যত না করে থাকে পরে যাকে মাল দেওয়া হয়েছে তার মালিকানায় উক্ত মাল থাকা অবস্থায় যেন যাকাতের নিয়্যত করে নেয়, যদি কোন ব্যক্তি যাকাতের নিয়্যাতে নিজের যাকাতের মাল বন্টন করার জন্য অন্য কারো হাওয়ালা করে তবে বণ্টনকারী ব্যক্তি মাল বন্টনের সময় যাকাতের নিয়াত না করলেও যাকাত আদায় বিশুদ্ধ হয়ে যাবে (শামী, ২য় খণ্ড)।
নিয়্যতের ক্ষেত্রে অন্তরের ইচ্ছাই ধর্তব্য হবে। সুতরাং কেউ যদি অন্তরে যাকাতের নিয়্যত করে তা বন্টনের সময় মুখে অন্য কোন শব্দ যেমন, হেবা, ঋণ ইত্যাদি উচ্চারণ করে তবে এতেও যাকাত বিশুদ্ধ হবে। অথবা মালওয়ালা কোন অমুসলিমকে যাকাতের মাল সোপর্দ করেছে অথচ তা ফকীর মিসকীনকে দেওয়ার জন্য নিয়্যত ছিল তাহলেও যাকাত আদায় হবে। কেননা আদেশদাতার নিয়্যতই প্রযোজ্য।
কোন ব্যক্তি যদি উকিলের নিকট যাকাতের মাল সোপর্দ করার সময় নিয়্যত করে যে ইহা নফল সাদাকা বা কাফফারা। পরে উকিলের হাতে সে মাল থাকা অবস্থায় সে যাকাতের নিয়্যত করে নেয় অথচ উকিল তা জানল না বরং সে নফল বা কাফ্ফারার নিয়াতেই যাকাতের মাল গ্রহীতাকে দিয়ে দিল তাহলেও যাকাত আদায় বিশুদ্ধ হবে (শামী, ২য় খণ্ড)।
দুই ব্যক্তি কোন এক ব্যক্তিকে যাকাতের মাল বন্টন করার উকিল বানিয়েছে এবং তার কাছে উভয়েই যাকাতের মাল হস্তান্তর করে দিয়েছে। সে উভয়ের মাল একত্রিত করে ফেলে তাহলে এ দান তার নিজের পক্ষ হতে দান বলে গণ্য হবে। এবং তাদের যাকাত আদায় হবে না। কাজেই তাদের উভয়ের মালের জন্য দায়ী থাকবে। তবে যদি তারা উভয়ে পূর্ব হতেই একত্রিত করার অনুমতি দিয়ে থাকে অথবা একত্রিত করার পর ফকীর মিস্কীনকে দেওয়ার পূর্বে তারা অনুমতি প্রদান করে তাহলে যাকাত আদায় হবে। এ ক্ষেত্রে যদি স্পষ্ট অনুমতির পরিবর্তে অনুমতির ইঙ্গিতও পাওয়া যায় তাহলেও উভয়ের যাকাত আদায় সহীহ হবে (শামী, ২য় খণ্ড)।
কোন ব্যক্তি যদি ফকীর মিস্কীনের পক্ষ থেকে উকিল হয় আর সে যাকাতের মাল গ্রহণের পর মিলিয়ে ফেলে তাহলেও যাকাত আদায় হবে। একাধিক ফকীর ব্যক্তি যদি সম্মিলিতভাবে কোন এক ব্যক্তিকে যাকাত গ্রহণের উকিল বানায় এবং তার নিকট এ পরিমাণ মাল জমা হয় যে. তাদের মধ্যে এ মাল বন্টন করা হলে তারা প্রত্যেকেই নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হয়ে যায়, এর পরও উক্ত উকিল ব্যক্তির নিকট যাকাতের মাল প্রদান করা হলে যাকাত দাতাদের যাকাত আদায় সহীহ হবে না। কিন্তু প্রত্যেকের মাল নিসাব পরিমাণ না হলে যাকাত দাতাদের যাকাত সহীহ হবে। আর যদি একাধিক ব্যক্তি পৃথক পৃথকভাবে কোন এক ব্যক্তিকে উকিল নির্ধারণ করে তবে উকিলের নিকট জমাকৃত মাল প্রত্যেকের অংশে পূর্ণ নিসাব পরিমাণ হলে এ অবস্থায় উকিলের নিকট যাকাত প্রদান করলে যাকাত দাতাদের যাকাত আদায় সহীহ হবে না (শামী, ২য় খণ্ড)।
আর যদি যাকাত গ্রহণকারী ফকীরদের পক্ষ হতে উকিল না হয় বরং সে নিজেই স্বেচ্ছায় ফকীরদের জন্য যাকাত গ্রহণ করে তাহলে তার নিকট জমাকৃত মাল নিসাব পরিমাণ বা তার অধিক হয়ে গেলেও যাকাত দাতের যাকাত আদায় সহীহ্ হবে (শামী, ২য় খণ্ড)।
উকিল যদি তার নিজের অভাবগ্রস্ত বালিগ সন্তান বা স্ত্রীকে যাকাতের মাল দেয় তাতেও যাকাতদাতার যাকাত আদায় সহীহ্ হবে। উকিল যদি অভাবগ্রস্ত হয় তবে সে তার নাবালিগ সন্তানকেও যাকাতের মাল দিতে পারবে। তবে সে নিজে খেতে পারবে না (শামী, ২য় খণ্ড)।
কিন্তু যদি মালদার ব্যক্তি যাকাতের মাল উকিলকে সোপর্দ করার সময় বলে যে, তুমি এমাল যেখানে ইচ্ছা বণ্টন করতে পারবে। তবে সে নিজেও গ্রহণ করতে পারবে (শামী, ২য় খণ্ড)।
যাকাতদাতা যদি নির্ধারিত করে দেয় যে অমুককে যাকাত দিবে। তাহলে তাকেই দিতে হবে। অন্য কাউকে অথবা নিজের সন্তান বা স্ত্রীকে দিতে পারবেনা। তবে 'বাহরুর রাইক' কিতাবে উল্লেখ আছে যে, নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে না দিয়ে অন্য কোন ব্যক্তিকে দিলেও যাকাত আদায় সহীহ্ হবে (শামী, ২য় খণ্ড)।
যাকাতদাতা ব্যক্তি উকিলের নিকট যে টাকা পয়সা দিয়েছে উকিল যদি তা নিজে রেখে দিয়ে নিজের মাল দ্বারা যাকাত আদায় করে এই নিয়্যতে যে যাকাত দাতার টাকা থেকে সে তা পূরণ করে নিবে তবে যাকাত দাতার যাকাত আদায় সহীহ্ হবে। আর যদি উক্ত টাকা নিজের জন্য খরচ করে পরে নিজের মাল থেকে যাকাত আদায় করে তাহলে আদায় সহীহ হবে না। বরং তা তার নিজের পক্ষ থেকে দান হিসেবে গণ্য হবে (শামী, ২য় খণ্ড)।
যাকাতের নিয়্যতে অন্য মাল হতে যাকাতের মাল পৃথক করলেই তার দায়িত্ব পূর্ণ হবেনা বরং ফকীরকে দেওয়ার পর দায়িত্ব পূর্ণ হবে। যাকাতের নিয়্যতে অন্য মাল হতে যাকাতের মাল পৃথক করার পর সে মাল নষ্ট হয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে অথবা সে নিজে মারা গেলে যাকাত আদায় হবে না (শামী, ২য় খণ্ড)।
যে মালের মধ্যে যাকাত ওয়াজিব হয়ে ছিল সে মাল সম্পূর্ণ সাদাকা করে দিলে তার যিম্মা যাকাত রহিত হয়ে যাবে। অবশ্য যদি মানতের নিয়্যত করে বা অন্য কোন ওয়াজিব সাদাকার নিয়্যত করে সম্পূর্ণ মাল দান করে দেয় তাহলে যা নিয়্যত করেছে তাই আদায় হবে এবং যাকাত ভিন্নভাবে আদায় করতে হবে (শামী ২য় খণ্ড)।
যদি পূর্ণ মালের কিছু অংশ যাকাতের নিয়্যত করা ব্যতিত সাদাকা করে দেয় তাহলে উক্ত মালের যাকাত তার যিম্মা থেকে রহিত হয়ে যাবে। অবশিষ্ট মালের যাকাত আদায় করতে হবে (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
যদি কোন গরীব লোকের কাছে কারো ঋণ পাওনা থাকে আর সে তার ঋণ ক্ষমা করে দেয় তাহলে যে পরিমাণ ক্ষমা করেছে সেই পরিমাণ মালের যাকাত দিতে হবে না। অবশিষ্ট ঋণের যাকাত দিতে হবে (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
আর যদি কোন ঋণী লোকের নিকট কারো যখন পাওনা থাকে এবং বছর পূর্ণ হওয়ার পর সে উক্ত ঋণী ব্যক্তিকে ঋণের মাল দান করে দেয় সে ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ মত উক্ত মালের যাকাত দিতে হবে (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
কোন বিত্তশালী ব্যক্তি যদি কোন ফকীরকে হুকুম করে যে, অমুকের নিকট যে ঋণ পাওনা আছে তা উসূল করে নিয়ে যাও এর দ্বারা সে যদি ঐ মালের যাকাত প্রদানের নিয়্যত করে যা তার কাছে মজুদ রয়েছে তাহলে তার যাকাত আদায় হয়ে যাবে (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
যদি কোন বিত্তশালী ব্যক্তি কোন গরীব ব্যক্তির নিকট পাওনা ঋণ তাকেই হিবা করে দেয় এবং এর দ্বারা ঐ ঋণের যাকাত আদায় করার নিয়্যত করে যা সে অন্য লোকের কাছে পাওনা আছে তাহলে যাকাত আদায় হবে না (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
অনুরূপভাবে গরীব ব্যক্তির নিকট পাওনা ঋণ তাকেই হিবা করে দিয়ে যদি ঐমালের যাকাতের নিয়্যত করে যা তার নিকট মজুদ আছে তবেও যাকাত আদায় হবে না। কিন্তু যদি যাকাতদাতা ব্যক্তি ঋণ গ্রহীতাকে যাকাতের টাকা প্রদান করে এ টাকা হতে তার পাওনা উসূল করে নেয় তবে তার যাকাত সহীহ হবে (শামী, ২য় খণ্ড)।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৯১) যাকাত ফরয হওয়ার শর্তসমূহ | (০৯৩) যে সব সম্পদে যাকাত ফরয হয় না |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |