প্রয়োজনবোধে শরয়ী হীলা জায়েয। কুরআন করীম, সহীহ হাদীছ ও ফকীহগণের বিভিন্ন উক্তিতে এর প্রমাণ রয়েছে। হযরত আয়ুব (عليه السلام) শপথ করেছিলেন যে তাঁর বিবিকে একশ দুর্রা মারবেন। তখন আল্লাহ তাআলা তাঁকে শিখিয়ে দিয়েছিলেন-একটি ঝাড়– নিয়ে ওকে মার এবং নিজের শপথ ভঙ্গ করো না।
কুরআন শরীফ এ কাহিনীটা সুন্দর ভাবে বর্ণনা করেছেন।
وَخُذْ بِيَدِكَ ضِغْثًا فَاضْرِبْ بِهِ وَلَا تَحْنَثْ
-তুমি নিজ হাতে ঝাড়– নিয়ে ওকে মার এবং শপথ ভঙ্গ করো না।’’
¶ সূূরা ছোয়াদ, আয়াত নং-৪৪।
দেখুন, এটা সুদ থেকে রেহাই পাবার একটি হীলা (পন্থা)।
كُلَّ حِيلَةٍ يَحْتَالُ بِهَا الرَّجُلُ لِإِبْطَالِ حَقِّ الْغَيْرِ أَوْ لِإِدْخَالِ شُبْهَةٍ فِيهِ أَوْ لِتَمْوِيهِ بَاطِلٍ فَهِيَ مَكْرُوهَةٌ وَكُلُّ حِيلَةٍ يَحْتَالُ بِهَا الرَّجُلُ لِيَتَخَلَّصَ بِهَا عَنْ حَرَامٍ أَوْ لِيَتَوَصَّلَ بِهَا إلَى حَلَالٍ فَهِيَ حَسَنَةٌ، وَالْأَصْلُ فِي جَوَازِ هَذَا النَّوْعِ مِنْ الْحِيَلِ قَوْلُ اللَّهِ تَعَالَى {وَخُذْ بِيَدِكَ ضِغْثًا فَاضْرِبْ بِهِ وَلا تَحْنَثْ} وَهَذَا تَعْلِيمُ الْمَخْرَجِ لِأَيُّوبَ النَّبِيِّ - عَلَيْهِ وَعَلَى نَبِيِّنَا الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ - ..... وَعَامَّةُ الْمَشَايِخِ عَلَى أَنَّ حُكْمَهَا لَيْسَ بِمَنْسُوخٍ وَهُوَ الصَّحِيحُ مِنْ الْمَذْهَبِ كَذَا فِي الذَّخِيرَةِ.
-যদি কারো হক আত্মসাৎ বা এ ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে বা অবৈধভাবে ধোঁকা দেয়ার জন্য হীলা করা হয়, তা মাকরূহ হবে। আর যে হীলা হারাম থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য বা হালালের উপর অটল থাকার জন্য করা হয়, তা ভাল। এ ধরনের হীলা জায়েয হওয়ার দলীল হচ্ছে আল্লাহর সেই বাণী وَخُذْ بِيَدِكَ ضِغْثًا (নিজের হাতে একটি ঝাড়– নিয়ে ওকে মার) হযরত আয়ুব (عليه السلام) কে শপথ রক্ষার জন্য এ পরামর্শটা দেয়া হয়েছিল। অধিকাংশ মাশায়েখের অভিমত হচ্ছে এ আয়াতের হুকুম রহিত হয়নি এবং এটাই সঠিক অভিমত।’’
¶ নিযামুদ্দীন বলখী, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৩৯০।
فخلفت سارة ان ظفرت بها قطعت عضوا منها فارسل الله جبريل الى ابراهيم عليه السلام ان يصلح بين هما فقالت سارت ما حيلة يمينى فاوحى الله الى ابراهيم عليه السلام ان يامر سارة ان تثقب اذنى هاجرة فمن ثم تثقب الاذن
-হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, একবার হযরত সারা (رضي الله عنه) ও হযরত হাজেরা (رضي الله عنه) এর মধ্যে কিছু একটা নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল। তখন হযরত সারা (رضي الله عنه) কসম খেয়েছিল- “যদি আমার সুযোগ মিলে, তাহলে হাজেরার কোন অঙ্গ কেটে দেব।” আল্লাহ তা’আলা হযরত জিব্রাইল (عليه السلام) এর মারফৎ হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) কে নির্দেশ দিলেন যেন ওদের পরস্পরের মধ্যে আপোষ করে দেন। হযরত সারা (رضي الله عنه) আরয করলেন, তাহলে আমার কসমের কি সূরহা হবে? তখন হযরত ইব্রাহীমের উপর ওহী নাযিল হলো-হযরত সারা (رضي الله عنه)কে নির্দেশ দাও যেন সে হযরত হাজেরার (رضي الله عنه) কর্ণ ছেদন করে।’ এ সময় থেকে মহিলাদের কান ছেদন শুরু হয়।
¶ ফানু হিইলু হামভী আ’লা আশবাহ ওয়ান নাযায়ের, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৯১-২৯২, ইদারাতুল কোরআন ওয়াল উলূমুল ইসলামিয়্যাহ, করাচী, পাকিস্তান।
উপরোক্ত কুরআনী আয়াত, সহীহ হাদীছ ও ফকীহ ইবারত সমূহ থেকে শরয়ী হীলা জায়েয বোঝা গেল।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৩৮) ইসকাত (নামায রোজার কাফফারা) এর আলোচনা | (০৪০) রোযা নামাযের ফিদয়ার বর্ণনা |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |