রোযার ফিদয়ার কথা তো কুরআন থেকেই প্রমাণিত আছে। যেমন আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান-
وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ
-রোযা রাখতে অক্ষম ব্যক্তির ফিদয়া হচ্ছে একজন মিসকীনকে খাদ্যদান করা।’’
¶ সূরা বাক্বারা, আয়াত নং-১৮৪।
এর থেকে বোঝা গেল অপারগ, বৃদ্ধ এবং মৃত্যু শয্যায় শায়িত রোগী যখন রোযা রাখতে অক্ষম হয়, তখন প্রত্যেক রোযার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাবার দেবে। নামায রোযার তুলনায় অগ্রগণ্য। এজন্য রোযার হুকুমটা নামাযের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হয়। যেমনঃ
তাফসীরাতে আহমদীয়া শরীফে আল্লামা মোল্লা আহমদ জিয়ুন (কুঃ) বলেছেন-
والصلوة نظير الصوم بل اهل منه فامرناه بالفدية احتياطا ورجونا القبول من الله تعالى فضلا
-নামায রোযার মত বরং রোযা থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং আমি এ ক্ষেত্রেও ফিদয়া দেয়ার জন্য সতর্কতা স্বরূপ নির্দেশ দিয়েছি এবং খোদার রহমতে কবুল হওয়ার আশা রাখি।’’
¶ আল্লামা মোল্লা জিওন, তাফসিরে আহমদিয়্যাহ, পৃষ্ঠা-৬১।
মেনার গ্রন্থে বর্ণিত আছে-
ووجوب الفدية فى الصلوة للاحتياط
-নামাযের জন্য ফিদায়া ওয়াজিব হওয়াটা হচ্ছে সতকর্তামূলক।’’
প্রসিদ্ধ ফিকহের কিতাব শরহে বেকায়ায় উল্লেখিত আছে-
وفدية كل صلوة كصوم يوم وهو الصحيح
-প্রত্যেক নামাযের ফিদয়া হচ্ছে এক রোযার ফিদয়ার মত এবং এটাই বিশুদ্ধ অভিমত।’’
¶ উবাইদুল্লা ইবনে মাসউদ, শরহে বেকায়া, কিতাবুস-সাওম, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৩১৫।
শরহে ইলিয়াসে বর্ণিত আছে-
ويعتبر فدية كل صلوة فائتة كصوم يوم اى كفدية يوم
-প্রত্যেক অনাদায়ী নামাযের ফিদয়ার হার এক দিনের রোযার মত অর্থাৎ এক রোযার ফিদয়ার মত।’’
ফতহুল কাদীর কিতাবে বর্ণিত আছে-
(وَمَنْ مَاتَ وَعَلَيْهِ قَضَاءُ رَمَضَانَ فَأَوْصَى بِهِ أَطْعَمَ عَنْهُ وَلِيُّهُ لِكُلِّ يَوْمٍ مِسْكِينًا نِصْفَ صَاعٍ مِنْ بُرٍّ أَوْ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ أَوْ شَعِيرٍ) لِأَنَّهُ عَجَزَ عَنْ الْأَدَاءِ ..... كَمَا إذَا أَوْصَى بِالْإِطْعَامِ عَنْ الصَّلَوَاتِ
-অর্থাৎ যেই ব্যক্তি রমযানের রোযা কাযা রেখে মারা গেল। যদি ওসীয়ত করে যায়, তাহলে তার পক্ষে তার ওলী (আপনজন) প্রতি দিনের রোযার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে আধা সায়া (প্রায় দুই কেজি) গম বা এক সায়া খোরমা অথবা বার্লি প্রদান করবে, কেননা এখন সেই মৃত ব্যক্তি আদায় করা থেকে অপারগ হয়ে গেছে। নামাযের বেলায়ও অনুরূপ করবে, যদি সে কাযা নামাযের পরিবর্তে খাবার প্রদানের ওসীয়ত করে যায়।’’
¶ কামালুদ্দীন ইবনুল হুমাম, ফতহুল কাদীর, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৩৫৭
তাহতাবী আলা মরাকিল ফালাহ গ্রন্থে বর্ণিত আছে
اعلم أنه قد ورد النص في الصوم بإسقاطه بالفدية واتفقت كلمه المشايخ على أن الصلاة كالصوم استحسانا ..... إذا علمت ذلك تعلم جهل من يقول ان إسقاط الصلاة لا أصل له إذ هذا إبطال للمتفق عليه بين أهل المذهب
উপরোক্ত ইবারতসমূহ থেকে বোঝা গেল যে, নামায ও রোযার ফিদয়া দেয়া জায়েয এবং কবুল হওয়ার আশা করা যায়।
বিভিন্ন হাদীছ শরীফেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। যেমন আল্লামা নাসায়ী (রঃ) স্বীয় সুনানে কুবরা ও আল্লামা আবদুর রাযযাক (রঃ) কিতাবুল ওসায়ায় সৈয়্যদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন-
عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: لَا يُصَلِّي أَحَدٌ عَنْ أَحَدٍ، وَلَا يَصُومُ أَحَدٌ عَنْ أَحَدٍ وَلَكِنْ يُطْعِمُ عَنْهُ مَكَانَ كُلِّ يَوْمٍ مُدًّا مِنْ حِنْطَةٍ
-কেউ কারো পক্ষে নামায পড়ো না, রোযা রেখো না। কিন্তু ওর পক্ষে প্রতি দিনের পরিবর্তে অর্ধ সায়া গম দান করে দেবে।’’
¶ ইমাম নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, ৩/২৫৭ পৃ: হা/২৯৩০, ইমাম বায়হাকী, আস-সুুনানুল কোবরা, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-২৫৪, হাদিস-৮০০৪, ইমাম আব্দুর রায্যাক, আল-মুসান্নাফ, হা/৭৬৩৬
মিশকাত শরীফের কিতাবুস সাওমের القضاء শীর্ষক অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে-
عَنْ نَافِعٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ مَاتَ وَعَلَيْهِ صِيَامُ شَهْرِ رَمَضَانَ فَلْيُطْعَمْ عَنْهُ مَكَانَ كُلِّ يَوْمٍ مِسْكِينٌ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: وَالصَّحِيحُ
-যে ব্যক্তি মারা গেল এবং তার জিম্মায় রমযান মাসের রোযা অনাদায়ী রয়ে গেল, তাহলে তারপক্ষ থেকে প্রতি দিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাবার প্রদান করা চাই।’’
¶ খতিব তিবরিযি, মিশকাত, কিতাবুুস সাওম, ১/৬৩২ পৃ: (ভারতীয় ১৭৮ পৃ:), হাদিস/২০৩৪
মোট কথা হলো নামায রোযার ফিদয়া জিনিসের দ্বারা আদায় করার কথা শরীয়তে বর্ণিত আছে। তাই একে অস্বীকার করা অজ্ঞতার পরিচায়ক।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৩৯) শরয়ী হীলা জায়েয প্রসঙ্গে | (০৪১) ইসকাতের প্রমাণ |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |