রোযাদার ব্যক্তি যদি ভুলক্রমে পানাহার বা স্ত্রী সহবাস করে তবে এতে রোযা ভঙ্গ হয় না। এ ক্ষেত্রে ফরয ও নফল রোযার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কেউ যদি রোযাদার ব্যক্তিকে ভুলবশত পানাহার কররুদেখে এবং তাকে সবল ও রোযা রাখতে সক্ষম মনে করে সে ক্ষেত্রে তাকে রোযার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া ওয়াজিব। স্মরণ না করানো মাকরূহ তাহরিমী। আর যদি তাকে দুর্বল মনে হয় তবে তাকে রোযার কথা স্মরণ না করানোও জায়িয আছে (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
রোযার দিনে ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোযা ভঙ্গ হবে না। কোন মহিলার প্রতি কামভাবের দৃষ্টিতে তাকানোর ফলে বীর্যপাত ঘটলে রোযা ভঙ্গ হবে না। রোযা অবস্থায় সুরমা, তৈল এবং সুগন্ধি ব্যবহার করলেও রোযা ভঙ্গ হয় না (কুদূরী)।
দাঁতের ফাঁকে চনা বুটের চেয়েও ছোট কোন বস্তু আটকিয়ে থাকলে এবং তা গিলে ফেললে রোযা ভঙ্গ হবে না। দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা তিল গিলে ফেললে রোযা ভঙ্গ হবেনা। গমের দানা চিবালে এতে রোযা ভঙ্গ হবে না।
রোগ ব্যধির কারণে মুখ থেকে পানি নির্গত হয়ে থুথুর সাথে পুনরায় মুখের ভেতর ঢুকলে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। কুলি করার পর মুখের ভিতর যে পানি লেগে থাকে তা থুথুর সাথে গলাধঃকরণ করলে তাতে রোযা ভঙ্গ হবে না (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
মস্তক থেকে কফ নাকে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে টেনে তা যদি গলাধঃকরণ করা হয় তবে তাতে রোযা নষ্ট হবেনা। দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে থুথুর সাথে মিশে কণ্ঠনালীতে প্রবেশ করলে এবং থুথুর পরিমাণ বেশী হলে তাতে রোযা ভঙ্গ হবে না। মশা-মাছি রোয়াদারের পেটে ঢুকলে রোযা নষ্ট হবে না। ধুলা বালি, ধূয়া বা ঔষধের স্বাদ রোযাদারের কণ্ঠনালীতে প্রবেশ করতে তাতে রোযা ভঙ্গ হবেনা। দু'এক ফোটা চোখের পানি গলার ভেতর ঢুকলে তাতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। শরীরের ঘাম মুখে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবেনা। গোসলের পর দেহে ঠাণ্ডা অনুভূত হলে রোযা ভঙ্গ হবেনা। চোখে ঔষধ দেওয়ার পর গলার ভিতর স্বাদ অনুভূত হলেও রোযা ভঙ্গ হবে না। চোখে সুরমা ব্যবহার করার পর থুথুতে সুরমার রং প্রকাশ পেলে অধিকাংশ ফকীহ্ এর মতে রোযা ভঙ্গ হবে না। অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি হলে সামান্য হোক বা মুখ ভরে হোক এতে রোযা ভঙ্গ হবেনা। অনুরূপ ইচ্ছাকৃতভাবে সামান্য পরিমাণ বমি করলে তাতেও রোযা ভঙ্গ হবেনা (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
কানের ভিতর ফোটা ফোটা করে পানি ঢাললে রোযা ভঙ্গ হবেনা। পুরুষের প্রস্রাব নালীতে ফোটা ফোটা করে কোন কিছু ঢাললে ইমাম আবু হানীফা এবং ইমাম মুহাম্মদ (র.)-এর মতে রোযা ভঙ্গ হবে না। কোন যৌন কল্পনায় কামউত্তেজনার কারণে বীর্যপাত ঘটলে রোযা ভঙ্গ হবে না। মহিলা তার স্বামীকে স্পর্শ করার পর বীর্য নির্গত হলে তাতেও রোযা ভঙ্গ হবেনা (আলমগীরী, ১মখণ্ড)।
রোযা অবস্থায় কাঠি দ্বারা কান চুলকানোর পর কান থেকে ময়লা বের হলে রোযা ভঙ্গ হবে না (মারাকিল ফালাহ)।
কারো স্বামী বদ মেজাজ হলে এবং তরকারিতে লবণ কমবেশী হওয়ার ফলে তার প্রতি যুলুম করার আশংকা থাকলে জিহ্বায় অগ্রভাগ দ্বারা তরকারির লবণ দেখে নেওয়াতে রোযা নষ্ট হবে না (বেকায়া ১ম খণ্ড)।
অনন্যোপায় হলে খাদ্য চিবিয়ে শিশুর মুখে দেওয়া জায়িয আছে। এতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। পরে মুখ ভালভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে (শারহে বিকায়া, ১ম খণ্ড)।
রোযা অবস্থায় মিসওয়াক করা জায়িয। এতে রোযা নষ্ট হয় না (মারাকিল ফালাহ্, ১ম খণ্ড)
এমনকি যদি নিমের কাঁচা ডালের দ্বারা মিসওয়াক করা হয় এবং এতে এর তিক্ততার স্বাদ মুখে অনুভূত হয় তবেও রোযার কোন ক্ষতি হবে না।
রামাযানের রাতে গোসল ফরয হওয়ার পর দিনে গোসল করলে তাতে রোযার কোন ক্ষতি হবেনা। এমনকি সারা দিন গোসল না করলেও রোযার কোন ক্ষতি হবেনা। অবশ্য ফরয গোসল অকারণে দেরীতে করার গুনাহের কাজ (নূরুল ঈযাহ্)।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০২৫) রোযা ভঙ্গের কারণ এবং কাযা ও কাফ্ফারা | (০২৭) রোযা অবস্থায় যে সব কাজ মাকরূহ |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |