إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَ الْمُسْلِمْتِ وَالْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَتِ وَالْقَنِتِينَ وَالْقُنِتْتِ وَالصَّدِقِينَ وَالصَّدِقْتِ وَالصَّبِرِينَ وَالصُّبِرَاتِ وَالْخَشِعِينَ وَالْخَشِعْتِ وَالْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقْتِ وَالصَّابِمِينَ وَالطَّرِيمَتِ وَالْحَفِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَفِظَتِ وَ الذَّكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرًا عَظِيمًا -
(অবশ্য আত্মসমর্পণকারী পুরুষ ও আত্মসমর্পণকারী নারী, মু'মিন পুরুষ ও মু'মিন নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, সওম পালনকারী পুরুষ ও সওম পালনকারী নারী, যৌন অঙ্গ হিফাযতকারী পুরুষ এবং যৌন অঙ্গ হিফাযতকারী নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী- ইহাদের জন্য আল্লাহ্ রাখিয়াছেন ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান)।
সুরা আহযাব, আয়াত ৩৫
আল্লাহ্ সুবহানাহু তায়ালা যাদেরকে তার ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান প্রদানের অঙ্গীকার করেছেন, এখানে তাঁদের কথা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। শেষে উল্লেখ করা হয়েছে আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ এবং অধিক স্মরণকারী নারীদের কথা।
হজরত মুয়াজ রা. বর্ণনা করেছেন, একবার এক লোক রসুলে করীম স. এর মহান সান্নিধ্যে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, হে রসুলগণের মুকুটমণি! সর্বাধিক পুণ্যের অধিকারী কোন মুজাহিদ? তিনি স. বললেন, যে আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে। লোকটি পুনরায় প্রশ্ন করলো, সর্বাধিক পুণ্যবান রোজাদার কে? তিনি স. বললেন, যে আল্লাহর সর্বাধিক জিকিরকারী। এভাবে সে একে একে প্রশ্ন করলো সর্বাধিক পুণ্যবান নামাজ, হজ্ব, জাকাত ও দান খয়রাতকারী সম্পর্কে। রসুল স. তার প্রতিটি প্রশ্নের জবাবে বললেন, যে আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে। এরকম প্রশ্নোত্তর শুনে হজরত আবু বকর হজরত ওমরকে বললেন, সর্বাধিক জিকিরকারীরাই যে অধিকারী হলো সর্বাধিক পুণ্যের। রসুল স. বললেন, অবশ্যই।
বাগবী লিখেছেন, মুজাহিদ বলেছেন, যে ব্যক্তি মোটেও আল্লাহর স্মরণবিচ্যুত হয় না, বরং দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে- সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে, সেই ব্যক্তিই প্রকৃত জিকিরকারী। আমি বলি, কলবের ফানা না হওয়া পর্যন্ত প্রকৃত জিকিরকারী হওয়া যায় না। যখন কলব আল্লাহর জিকিরে পূর্ণরূপে নিমজ্জিত হয়, তখনই কেবল হৃদয়ে জাগ্রত থাকে আল্লাহ্ সতত স্মরণ।
রসুল স. বলেছেন, ইফরাদকারীরাই অগ্রগামী। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসুল! ইফরাদকারী কারা? তিনি স. বললেন, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী নারী ও পুরুষ। তিনি স. আরো বললেন, আল্লাহর আযাব থেকে পরিত্রাণ দিতে পারে কেবল আল্লাহর জিকির। সাহাবীগণ বললেন, আল্লাহর পথে জেহাদও কি আল্লাহর জিকিরের সমতুল্য নয়? তিনি স. বললেন, না। জেহাদও জিকিরের তুল্য নয়। তবে যুদ্ধ করতে করতে যদি কোনো মুজাহিদের তলোয়ার ভেঙে যায়, তবে তার মর্যাদা হবে অধিক। বায়হাকী তাঁর দাওয়াতুল কবীর গ্রন্থে হজরত ইবনে ওমর সূত্রে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
হজরত আবু সাইদ খুদরী রা. বর্ণনা করেছেন, একবার রসুল স. সকাশে নিবেদন করা হলো, হে আল্লাহর বার্তাবাহক! মহাবিচারের দিবসে আল্লাহ্ সকাশে কে হবে অন্যাপেক্ষা অধিক মর্যাদাবান? তিনি স. বললেন, অধিক জিকিরকারী রমণী ও পুরুষ। পুনঃ নিবেদন করা হলো, হে আল্লাহ্ বাণীবাহক! আল্লাহর পথে যারা যুদ্ধ করে, তাদের চেয়েও কি? তিনি স. বললেন, হ্যাঁ, যদিও সে যোদ্ধা আল্লাহর দুশমন নিধন করতে গিয়ে ভেঙে ফেলে তার তরবারী।
আহমদ, তিরমিজি
ইমাম মালেক বলেছেন, আমার নিকট পৌঁছেছে এই হাদিসটি- রসুল স. বলেছেন, আল্লাহর স্মরণবিচ্যুতদের মধ্যে জিকিরকারীর অবস্থান এরকম- যেমন যুদ্ধক্ষেত্রে পলায়নপর যোদ্ধাদের মধ্যে স্বস্থানে অটল কোনো মুজাহিদ, যেনো বিশুষ্ক বৃক্ষের একটি সতেজ শাখা, যেনো অন্ধকার গৃহমধ্যে প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ। জিকিরবিস্মৃতদের মধ্যে অবস্থানকারী জিকিরকারীকে দেখানো হয় তার জান্নাতের আবাস। আল্লাহ্ তাদেরকে মার্জনা করেন পৃথিবীর সবাক ও নির্বাক প্রাণীকুলের সমতুল পাপকর্ম করলেও।
ইবনে রযীন
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০১৬) যাহারা আল্লাহ্ ও আখিরাতকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে | (০১৮) আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |