আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শুকরিয়া আদায় করছি যে, 'হানাফীদের কয়েকটি জরুরী মাসায়েল' পুস্তকটি মুসলিম জনগণের নিকট পেশ করতে পেরেছি।
আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেনঃ
وَمَا أَتْكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا
অর্থাৎ রাসূল (সাঃ) তোমাদেরকে যা প্রদান করেছেন, বা যা আদেশ করেছেন, তা গ্রহণ কর বা মান্য কর এবং যা নিষেধ করেছেন, তা হতে বিরত থাক। (সূরা হাশর)
নবী করীম (সাঃ) যে সমস্ত কাজ করেছেন, যে সকল কথা বলেছেন, তা উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য অবশ্য পালনীয়। উল্লেখ্য যে, সে সমস্ত বিধান কোনটি ফরয, কোনটি ওয়াজিব, কোনটি সুন্নাত এবং কোনটি মুস্তাহাব। এছাড়া নবী করীম (সাঃ) যে সকল কাজ করতে নিষেধ করেছেন, তা কোনটি কুফরী পর্যায়ের গুনাহ, কোনটি কবীরা গুনাহ, কোনটি মাকরূহে তাহরীমী এবং কোনটি মাকরূহে তানযীহী বা ছোট গুনাহ।
হাদীসের কিতাবসমূহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, কোন কোন বিষয় সম্পর্কে হযরত নবী করীম (সাঃ)-এর কথা ও কাজের মধ্যে বাহ্যিক বৈপরীত্য পরিলক্ষিত হয়। এটা ব্যতীত নবীজীর (সাঃ) জীবনের প্রথম দিকের আমল ও মতামত এক রকম ছিল এবং শেষের দিকে অন্যরকম ছিল। সাধারণ মানুষের পক্ষে এই বৈপরীত্যের সমাধান করা খুবই কঠিন। তখন এই সকল বিষয়ের সঠিক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিজ্ঞ আলিম ও মুজতাহিদের প্রয়োজন। তাবিয়ী, তাবে-তাবিয়ী ও পরবর্তী যুগে ইমাম আযম আবু হানীফা, ইমাম মালিক, ইমাম শাফিয়ী ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এই দূরূহ কাজ সম্পাদন করে গোটা মুসলিম জাতিকে সীরাতুল-মুস্তাকিমের পথে চলার সঠিক নির্দেশনা দিয়েছেন। এই ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা (রহ.) ছিলেন শীর্ষস্থানীয়। তিনি কোরআন, হাদীস এবং ইজমায়ে সাহাবা অনুসরণ করে ৮৩ হাজার মাসায়েল ইজতিহাদ প্রকাশ করেছেন। তন্মধ্যে নামাযে রফে' ইয়াদাইন না করা, ইমামের পশ্চাতে মুকতাদীর কোরআন না পড়া, নামাযে আমীন চুপে চুপে বলা, নাভীর নিচে হাত বাঁধা, বিতির নামায তিন রাকআত, তারাবীহ এর নামায বিশ রাকআত প্রভৃতি সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। হানাফীগণ ইমাম আযমের সকল সিদ্ধান্ত বা রায় অনুসরণ করে যাচ্ছেন।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে তথাকথিত 'আহলে হাদীস' নামে একটি সম্প্রদায় যাদেরকে সর্বসাধারণ হানাফীগণ লা-মাযহাবী বলে থাকেন, তারা উল্লিখিত মাসআলাসমূহের প্রতি কটাক্ষ ও বিরূপ সমালোচনা করে হানাফীদেরকে না হক ও বিদআতী বলে সাব্যস্ত করে থাকেন। ফলে আমাদের অনভিজ্ঞ ও সাধারণ শিক্ষিত-অশিক্ষিত হানাফীগণ বিভ্রান্তির বেড়াজালে পড়ে যান।
আমি এই সকল অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ঈমানী দায়িত্ব হিসাবে সর্বসাধারণ হানাফীদেরকে সচেতন ও অবহিত করার জন্য 'হানাফীদের কয়েকটি জরুরী মাসায়েল' পুস্তকটি সম্পাদনা করেছি।
পুস্তকটির মধ্যে অতিরিক্ত 'ইমাম আযম আবু হানীফা (রহঃ) সম্পর্কে কিছু কথা' নিবন্ধটি যোগ করেছি। ইমাম আযম সম্পর্কে আহলে হাদীস সম্প্রদায় কটুক্তি ও বিষোদগার করে থাকেন। সুতরাং এই মুহূর্তে আমাদের প্রাণপ্রিয় ইমাম সম্বন্ধে সঠিক ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়। সর্বশেষ পুস্তকটির মধ্যে আহলে হাদীস সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরোধ জ্ঞাপনপূর্বক পত্র সংযোজন করেছি।
পুস্তকটির ত্রুটি মোচন এবং গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে যে কজন ইসলামী শাস্ত্রে পণ্ডিত পাণ্ডুলিপিটি নিরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ করেছেন, তাঁদের নিকট আমি চিরঋণী। এ ছাড়া যে সকল শ্রদ্ধাস্পদ ওলামায়ে কিরাম পুস্তকটিতে সংকলিত মাসায়েলসমূহ সমর্থন জ্ঞাপনপূর্বক দস্তখত করেছেন, তাঁদের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ।
পুস্তকটি প্রকাশের ব্যাপারে আমাকে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন, শ্যামনগর থানার বিশিষ্ট সমাজকর্মী জনাব সরদার লিয়াকত আলী, আমি তাঁকেও কৃতজ্ঞতা জানাই।
ব্যস্ততার মধ্যে পুস্তকটি সম্পাদনা করেছি বিধায় ত্রুটি থাকা স্বাভাবিক। পরবর্তী সংস্করণে আল্লাহ চাহেন তো সংশোধনের আশা রাখি। আল্লাহপাকের নিকট দোআ করি, তিনি যেন আমাদের সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে এবং মাযহাব ও তাকলীদবিরোধীদেরকে মাযহাবের রীতিনীতি যথাযথভাবে সম্পাদনের তৌফিক দিন। আমীন!
মা-আস্সালাম
সম্পাদক
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০০২) নামাজে রফে' ইয়াদাইন বা হস্ত উত্তোলন না করা প্রসঙ্গে | |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |