'আল্লাহর জিকির সর্বশ্রেষ্ঠ'। মহাবিশ্বের মহা প্রভুপালক একথাই বলেছেন। দ্বীন বা ধর্মের মূল বিষয় আল্লাহর জিকির। এই মূল ভিত্তির উপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে ইসলামের স্তম্ভ চতুষ্টয়- নামাজ, রোজা, হজ্জ ও জাকাত- যেমন রূহের উপর স্থাপিত রয়েছে শরীর। রূহ ছাড়া শরীর মূল্যহীন- তেমনি আল্লাহ্ জিকির ছাড়া মূল্যহীন আমাদের সকল সৎকর্ম।
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে, 'যে জিকির করে সে জীবিত, আর যে জিকির করে না সে মৃত।' জিকিরময় ইমান বা বিশ্বাসই প্রকৃত ইমান। তেমনি জিকিরযুক্ত আমলই প্রকৃত আমল।
জিকির করা মানে স্মরণ করা, মনে করা। সুতরাং মনে মনে অর্থাৎ কলবে কলবেই আমাদেরকে জিকির করতে হবে। শুরু এভাবেই শেষ অবস্থা হবে অন্যরকম। শেষে জিকির হবে। তখন কলবে জিকির হবে চিরপ্রতিষ্ঠিত। তখন কলব ফিরে পাবে তার আসল স্বভাব। জিকিরের নূরে হয়ে যাবে চিরদিনের জন্য বিলীন। হবে প্রশান্ত সলীম। উল্লেখ্য, পৃথিবীর শান্তি ও পরবর্তী পৃথিবীর পরিত্রাণ নির্ভর করে সলীম কলব এবং প্রশান্ত প্রবৃত্তির (নাফসুল মুত্যুাইন্নার) উপর।
যার কলবে আল্লাহ্ জিকির নেই, তার কথা শুনতে আল্লাহ্ নিষেধ করে দিয়েছেন। বলেছেন 'ওই ব্যক্তির কথা শুনো না, যার কলব আল্লাহর জিকির থেকে গাফেল'। আমরা এই নিষেধাজ্ঞাটি পালন করিনা বলেই প্রকৃত পথের দেখা পাইনা। প্রকৃত পথ (সিরাতুল মুসতাক্বীম) তো তাঁদের পথ, যাঁদের কলব সতত জিকিরময়। তাঁরাই হচ্ছেন বিভিন্ন তরিকার পীর ও মোর্শেদ। তাঁরা নিজেরা কামেল (পূর্ণ) অন্যকেও কামেল করতে সক্ষম। তাঁরা কামেলে মোকাম্মেল।
তাঁদের কাছে আত্মসমর্পণ (বায়াত) না করলে আমরা কিছুতেই সত্য পথের সন্ধান পাবো না। বুঝতে পারবো না 'জিকির' এর প্রকৃত অর্থ কী। তাঁদের সোহবত থেকে দূরে থাকি বলেই আমাদের অনেকেই কেবল উচ্চারণকে বলি জিকির। 'স্মরণ' ও 'উচ্চারণ' এর পার্থক্য তো আমাদেরকে বুঝতেই হবে। জিকির এর সুষ্ঠু ও প্রকৃত ধারণা উপস্থাপন করাই 'আল্লাহর জিকির' নামের এই পুস্ত কখানির উদ্দেশ্য। যার বোধ সুস্থ ও সুষ্ঠু নয়, তার কার্যাবলীও নয় শুদ্ধ ও সুষ্ঠু। হাদিস শরীফে বলা হয়েছে, আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে করেন সুষ্ঠু ধর্মবোদ্ধা (ফকীহ্)।
ধর্মের সুষ্ঠু ও সঠিক বোধসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের মহান সাহচর্যে তাই আমাদেরকে উপস্থিত হতেই হবে। নয় তো ধর্ম সর্ম্পকে সুষ্ঠু জ্ঞান আমরা পাবোই না। আল্লাহ্পাক তাই এরশাদ করেছেন- 'হে ইমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীগণের সঙ্গী হয়ে যাও'।
খাস মোজাদ্দেদিয়া তরিকার একনিষ্ঠ মুরিদগণ 'আল্লাহর জিকির' প্রতিষ্ঠার ব্রত নিয়ে প্রত্যক্ষভাবে- পরোক্ষভাবে, আর্থিকভাবে, শারীরিকভাবে, দেশে-বিদেশে সর্বত্র সাধনা করে চলেছেন। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ- রাষ্ট্র এভাবে সমগ্র বিশ্বে যেনো জিকির প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় শান্তি। মহাকালের, মহাজীবনের, মহাশান্তি। তাই এরশাদ হয়েছে, 'আলা বিজিব্রিল্লাহি তাত্মাইনুল কুলুব' (মনে রেখো, অন্তরসমূহ শান্তিপ্রাপ্ত হয় আল্লাহর জিকিরে)।
আমাদের প্রতিটি প্রকাশনার প্রাক্কালে আমরা সবাইকে সত্য পথের পথিক হবার আমন্ত্রণ জানাই। এবারও জানানো হলো।
প্রারম্ভে ও শেষে সকল সময় আমরা বর্ণনা করি মহাবিশ্বের মহাপ্রভুপালকের প্রশংসা-পবিত্রতা, মহিমা-মহত্ত্ব, স্তব-স্তুতি, উচ্চতা এবং গৌরব। সকল প্রকার দরূদ ও সালাম রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তাঁর প্রেমিক ও প্রেমাষ্পদগণের প্রতি। বিশেষভাবে তাঁদের শ্রেষ্ঠতমজন হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা আহমদ মুজতবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি। আমিন।
ওয়াস্ সালাম।
মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ
হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া
ভুঁইগড়, নারায়ণগঞ্জ।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০০২) সকল আমলের মূল বা ভিত্তি হচ্ছে আল্লাহ্র জিকির | |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |