আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের তৃতীয় ফিকহী মাসলাক হল 'শাফিয়ী মাযহাব'। ইমাম মুহাম্মদ ইব্ন ইদ্রিস শাফি'য়ী (র.) হলেন এ মাযহাবের প্রবর্তক। মিসরে এ মাযহাব উৎপত্তি হয়। ইমাম শাফি'য়ী (র.)-এর অধিকাংশ ছাত্রই ছিলেন মিসরীয়। এরপর ইরাকেও এ মাযহাবের বিকাশ ঘটে। তৃতীয় শতাব্দিতে হিজায, বাগদাদ, খুরাসান, তুরান, সিরিয়া, ইয়ামন, মা-ওয়ারাউ ন্নাহার, পারস্য, ভারত, আফ্রিকা ও স্পেন পর্যন্ত তা অনুপ্রবেশ করে। এ সকল জায়গায় কোথাও কোথাও শাফি'য়ী মাযহাব প্রাধান্য লাভ করে। আর কোথাও কোথাও অন্যান্য মাযহাব। মিসরে প্রথমে হানাফী ও মালিকী মাযহাব প্রচলিত ছিল। কিন্তু ইমাম শাফি'য়ী (র.) যখন সেখানে গমন করেন তখন থেকে সেখানে শাফি'য়ী মাযহাব বিস্তৃতি লাভ করে। ইরাক ও খুরাসান মা-ওয়ারাউন্নাহার এলাকায় দারস ও ফাওয়া প্রদানের হানাফী মাযহাবের সঙ্গে শাফি'য়ী মাযহাবের আলোচনা হত। সিরিয়ায় প্রথম ইমাম আওযায়ীর মাযহাব চালু ছিল। কিন্তু আবূ যুরআহ মুহাম্মদ ইবন উসমান দামেস্কী যখন দামেস্কের কাযী হন তখন তিনি সেখানে শাফি'য়ী মাযহাব চালু করেন। তারপর অন্যান্য কাযীগণও মাযহাব গ্রহন করেন। আবূ যুরাআহ দামেস্কীর কৌশল ছিল কোন আলিম শাফি'য়ী মাযহাবের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ 'আল-মুখতাসার লিল মুযানী )المختصر للمزني( মুখস্থ করলে তাকে এক দিনার পুরস্কার দিতেন। আল্লামা মান্দাসী লিখেন যে, চতুর্থ শাতাব্দিতে সিরিয়ায় শাফি'য়ী মাযহাব ব্যতীত অন্য কোন মাযহাবই প্রচলন ছিল না।
ইমাম সুবকী (র.) 'তাবাকাতুশ্ শাফিইয়্যা' নামক গ্রন্থে লিখেন যে, মাওয়ারাউন্নাহার এলাকায় মুহাম্মদ ইব্ন ইসমাঈল মারওয়া (র.), শেখ শাদী (র.)-এর সহযোগিতায় শাফি'য়ী মাযহাব প্রচার করেন। আল্লামা মুকাদ্দাসী (র.) বলেন যে, প্রাচ্যের দেশ তথা কাওর, শাশ, আবলাক, তুস, আবী ওয়ারদ ও কাসা ইত্যাদি স্থানে শাফি'য়ী মাযহাবের প্রাধান্য ছিল। সারখাস, নিশাপুর ও মারু এলাকায়ও শাফি'য়ী মাযহাবের প্রচলন ছিল। ইসফারাইন )إسفرائن( এ আবূ বার'যা ইয়াকুব ইবন ইসহাক নিশাপুরী শাফি'য়ী মাযহাব এবং এ মাযহাবের কিতাবাদি প্রচলন করেন।
বাগাদদে হানাফী মাযহাবের ছিল প্রাধান্য। ইমাম শাফি'য়ী সেখানে গিয়ে স্বীয় মাযহাব প্রচলিত করেন। ইমাম সুবকীর বর্ণনা করেন যে, আরবের তেহামা এলাকায় শাফি'য়ী মাযহাব প্রচলিত ছিল। স্পেনে এককভাবে মালিকী মাযহাব প্রচলিত ছিল। যদি সেখানে কোন হানাফী বা শাফি'য়ী লোক পাওয়া গেলে তৎক্ষণাৎ তাকে বের করে দেওয়া হতো। আল্লামা, ইবুন আসীর (র.) বলেন, আফ্রিকায় ইয়াকুব ইবন ইউসূফ ইব্ন আবদুল মু'মিন তাঁর শাসন আমলের শেষভাগে শাফি'য়ী মাযহাবের প্রতি অনুরুক্ত হয়ে যান এবং শাফি'য়ী মাযহাবের অনুসারীগণকে কাযী পদে নিয়োগ করেন। (আইম্মা-ই- আরবাহ্ঃ কার্যী আতহার হুসাইন, ২৭ পৃষ্ঠা)
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৪৯) হানাফী মাযহাবের বিকাশ | (০৫১) মালিকী মাযহাবের বিকাশ |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |