পবিত্র মি'রাজ প্রসঙ্গে নবী করিম (দঃ)-এর দেহতত্ব সম্পর্কে সামান্য আলোচনা করা দরকার। হুযুর পাক (দঃ) নিজেকে 'খোদার নূর হতে সৃষ্ট নূর' বলে হাদীসে এরশাদ করেছেন। মানুষের প্রয়োজনেই তাঁকে মানবাকৃতি দান করা হয়েছে। আকৃতিতে বশর হলেও গুণাবলী এবং প্রকৃতিতে তিনি ছিলেন ফেরেস্তাদের চেয়েও অনেক উর্দ্ধে। তাঁর চালচলন, খাওয়া-দাওয়া, উঠা-বসা, স্বভাব ও চরিত্র ছিল অনুকরণীয়। আমরা হলাম অনুসরণকারী মাত্র। তাঁর হুবহু অনুকরণকারী হওয়া সম্ভব নয়। কেননা অনুকরণ বলা হয় সর্ববিষয়ে হুবহু সামঞ্জস্য রক্ষা করে অনুসরণ করা। এটা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। হুযুর (দঃ)-এর নামায, রোযা ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগী এবং দুনিয়াবী কাজ-কর্মের গুণাগুণ এবং আমাদের নামায-রোযার গুণাগুণ এক হতে পারে না।
আমাদের শরীরে মশা-মাছি বসে- কিন্তু হুযুর (দঃ)-এর পবিত্র বদনে কোনদিন নাপাক মশা-মাছি বসেনি। আমাদের শরীরের ছায়া আছে- কিন্তু হুযুর (দঃ)-এর ছায়া ছিলনা। কেননা তিনি ছিলেন আপাদমস্তক নূর (কাজী আয়ায-শেফা শরীফ)। এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত-এর আকিদা- যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।
আম্বিয়াগণের দেহ মোবারক সম্পর্কে নবী করিম (দঃ) এরশাদ করেছেনঃ
نحن معا شر الأَنْبِيَاءَ أَجْسَادَنَا كَاجْسَادِ الْمَلَائِكَةِ
অর্থ-"আমরা আম্বিয়ায়ে কেরামের দেহ মোবারক ফেরেস্তাদের দেহের ন্যায় সূক্ষ্ম"।
অর্থাৎ নূরানী ও সুক্ষ্মতায় আমরা ফেরেস্তাদের ন্যায়। এরপরও কেহ হুযুর (দঃ)-এর দেহ মাটি বা সাদা মাটি দ্বারা গঠিত বলে অপপ্রচার চালালে এটাকে হাদীসের অপব্যাখ্যা ছাড়া আর কিছুই বলা যাবে না।
হুযুর (দঃ)-এর সুরত বা হাল তিনটি। সুরতে বশরী, সুরতে মালাকী ও সুরতে হাক্কী। মি'রাজের রাত্রে তাঁর সুরতে মালাকী ও সুরতে হাক্কীর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। এটা বিশ্বাসের বিষয়, দেখার বিষয় নয়। ওহাবী মৌলভী ফজলুল করিম তার 'নূরে মোহাম্মদীর হাকিকত' বইয়ে একটি মৌযু হাদীস দ্বারা নবী করিম (দঃ)-এর দেহ মোবারক মাটির তৈরী বলে প্রমাণ করতে চেয়েছে। ইবনে জওযীর মতে উক্ত হাদিসটি বানোয়াট ও জাল বলে বাংলা মাআরিফুল কোরআন ৮৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে- যা পূর্বেই উল্লেখ করেছি। শুধু বশরী ছুরত স্বীকার করলে বাকী ২টি সুরতকে অস্বীকার করা হয়।
বিঃ দ্রঃ নবী করিম (দঃ)-এর তিন সুরতের অর্থ: মানুষের কাছে মানুষের মত, ফেরেস্তাদের কাছে ফেরেস্তার মত এবং আল্লাহর কাছে আল্লাহর গুনে গুণান্বিত অবস্থা।
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ
"আমি শুধু সুরতে বা আকৃতিতে তোমাদের মত মানুষ"।
لي مع الله وقت لا يَسَعُنِي فِيهِ نَبِيٌّ مُرْسَلٌ وَلَا مَلَكَ مَقَرَّبٌ
"আল্লাহর সাথে আমার এমন ঘনিষ্ট সময় আসে-যেখানে কোন প্রেরিত নবী অথবা নিকটবর্তী কোন ফেরেস্তাও আমার সমকক্ষ হতে পারে না"।
مَنْ رَانِي فَقَدْ رَأَى الْحَقِّ -
"যে ব্যক্তি আমাকে দেখেছে, সে হক্ক-কেই দেখেছে"।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৪৬) আল্লাহর দীদার সম্ভব কিনা? | (০৪৮) বিভিন্ন মো'জেযা প্রদর্শনঃ পাহাড়, জমিন ও বেহেস্তের উপর নবীজীর কর্তৃত্ব |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |