ছয় বৎসর চেষ্টা করেও কোরাইশরা যখন ইসলামের প্রসার বন্ধ করতে পারল না, তখন তারা নবীজীকে কতল করার জন্য মনস্থ করলো। এতদ্দর্শনে আবু তালেবসহ বনী হাশেম ও বনী আবদুল মোত্তালেব-এর লোকজন নিয়ে নবী করিম (দঃ) এবং মুসলমানগণ মক্কার অদূরে শিয়াবে আবি তালেব নামক গিরিকন্দরে আশ্রয় নেন। কিন্তু চাচা আবু লাহাব কোরাইশদের সাথেই রয়ে গেল। তারা এক চুক্তিনামা তৈরী করলো। তাতে লেখা ছিল- লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিবাহ-শাদীসহ যাবতীয় সামাজিক বিষয়ে বনী হাশেম ও বনী আবদুল মোত্তালেবকে বয়কট করা হলো। কোরাইশদের সব সর্দার এতে স্বাক্ষর করলো। উক্ত চুক্তিনামাটি বাক্সে তালাবদ্ধ ও সীলগালা করে খানায়ে কা'বায় সংরক্ষিত করলো। একাধারে তিন বৎসর নির্বাসন জীবনে খাদ্যের অভাবে মুসলমান ও বিবি খাদিজা (রাঃ) সহ নবী পরিবারের দুর্দশা চরম সীমায় পৌঁছলো। একদিন নবী করিম (দঃ) চাচা আবু তালেবকে বললেন- চাচাজান, কোরাইশদের চুক্তিনামার কার্য্যকারিতা আর নেই। "কেননা, ঐ চুক্তিনামায় আল্লাহর নাম ছাড়া বাকী সব কিছু উঁই পোকা খেয়ে ফেলেছে"।
আবু তালেব আবু জাহলের নিকট গিয়ে বললেন, আমার ভাতিজা একটি গায়েবী সংবাদ দিয়েছেন। তোমাদের চুক্তিনামার সব শর্তাবলী নাকি উঁই পোকায় খেয়ে ফেলেছে- কেবলমাত্র আল্লাহর নামটুকুই অক্ষত রয়েছে। যদি আমার ভাতিজার কথা সত্য না হয়-তাহলে আমি নিজে তাঁকে তোমাদের হাতে সোপর্দ করে দেবো। আর যদি সত্য হয়-তাহলে খামাখা তাঁকে কষ্ট দিয়ে লাভ কি? একথা শুনে আবু জাহল আনন্দে লাফিয়ে উঠলো- এইতো সুযোগ! সকল সর্দারকে ডেকে এনে আবু জাহল বাক্স খুলে ফেললো। একি! নবীজীর কথা যে অক্ষরে অক্ষরে সত্য! তখনই তাদের পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেলো। ফলে তিন বৎসর পর দশম সালে সামাজিক বয়কট প্রত্যাহার করতে কোরাইশরা বাধ্য হলো। নবুয়তের দশম বৎসরে নবী করিম (দঃ) নির্বাসন থেকে মুক্তি পেয়ে মক্কায় ফিরে আসলেন। চতুর্দিকে নবীজীর (দঃ) মো'জেযা ও ইলমে গায়েবের কথা বিদ্যুৎবেগে ছড়িয়ে পড়লো। দলে দলে লোকেরা ইসলাম কবুল করতে লাগলো। ইল্মে গায়েবের মাধ্যমেই ইসলামের সত্যতা প্রমাণিত হলো। কুরাইশরা নবীজীর ইলমে গায়েব স্বীকার করেছে- কিন্তু একশ্রেণীর মুসলমান তা স্বীকার করে না। এরা কাফেরের চেয়েও নিকৃষ্ট।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৩৩) দ্বীনের জন্য দেশ ত্যাগ-প্রথম হিজরত | (০৩৫) শোকের বছর |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |