হযরত মুছা (আঃ) লাঠির আঘাতে নীলনদ বিদীর্ণ করেছিলেন। লাঠির আঘাতে একটি পাথরে ১২টি পানির ফোয়ারা প্রবাহিত করার প্রমাণ কোরআনে পাওয়া যায়। কিন্তু নবী করিম (দঃ) আঙ্গুলের ইশারায় আকাশের চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করেছেন বলে কোরআন ও হাদীসে প্রমাণ রয়েছে। ইমাম শাফেয়ী (রাঃ) বলেনঃ "মুছা (আঃ)-এর মো'জেযা ছিল জমিনে, কিন্তু আমাদের প্রিয় নবীর (দঃ) মো'জেযা ছিল জমিনে, আসমানে এবং বেহেস্তে। মুছা (আঃ)-এর মো'জেযা ছিল অন্য বস্তুর সহায়তায়। কিন্তু নবী করিম (দঃ)-এর মো'জেযা ছিল বিনা সহায়তায়। মুছা (আঃ)-এর মো'জেযা ছিল বাইরের বস্তুর সাহায্যে। কিন্তু নবী করিম (দঃ)-এর মো'জেযা ছিল স্বয়ং তাঁর নিজের দ্বারা। মূলতঃ তিনি নিজেই ছিলেন আপাদমস্তক মো'জেযা"। অন্যান্য নবীগণকে বাহ্যিক মো'জেযা দান করা হয়েছিল। কিন্তু স্বয়ং নবী করিম (দঃ) ছিলেন আপাদমস্তক মো'জেযা। নবী করিম (দঃ)-এর ৬৫ হাজার মো'জেযা মোহাদ্দেসীন কেরাম লিপিবদ্ধ করেছেন- (পয়গামে মোহাম্মদী- সোলায়মান নদভী)।
আল্লামা শরফুদ্দিন বোছেরী (রঃ) একজন খ্যাতনামা মোহাদ্দেছ, ঐতিহাসিক ও সুফীসাধক ছিলেন। তাঁর রচিত কসিদায়ে বোরদা বা নবী প্রশস্তি কাব্যগ্রন্থখানী মুসলিম জাহানে এবং আলেম সমাজে উচ্চ প্রশংসিত কিতাব হিসেবে বিবেচিত ও পরিচিত। উক্ত গ্রন্থের বিভিন্ন ভাষ্য বা শরাহ লিখিত হয়েছে। উক্ত গ্রন্থে শাক্কুল কামার বা চন্দ্র বিদারনের ঘটনাটি অতি চমৎকারভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত তরজুমানুস্ সুন্নাহ গ্রন্থেও চন্দ্র বিদারনের মো'জেযা লিপিবদ্ধ আছে।
আবু জাহল কর্তৃক অনেক পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছিল নবী করিম (দঃ) কে। আল্লাহর অসীম কুদরতে নবী করিম (দঃ) আবু জাহলের হাতের মুঠায় লুকায়িত পাথর-কঙ্কর থেকে কলেমা শাহাদাত পাঠ করিয়েছিলেন এবং দূরের পাথরকে পানিতে সন্তরণ করিয়ে নিজের কাছে এনেছিলেন। আবু জাহল এত কিছু দেখেও এগুলোকে যাদু বলে উড়িয়ে দিত
অবশেষে সে ইয়েমেন দেশের শাসক হাবীব ইবনে মালেকের সাহায্য প্রার্থনা করলো। হাবীব দলবলসহ মক্কায় এসে উপস্থিত হলো। আবু জাহল নবী করিম (দঃ) কে তলব করলো। হযরত আবু বকর (রাঃ) সহ নবী করিম (দঃ) উপস্থিত হলেন।
আবু জাহলের ইঙ্গিতে হাবীব ইবনে মালেক বললো- যারা পূর্বে নবী বলে দাবী করেছিলেন, তাঁরা অনেক মো'জেযা দেখিয়েছেন। তাদের সবগুলো ছিল জমিনে। আপনি সত্য নবী হলে আকাশের চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করে দেখান। নবী করিম (দঃ) দু'রাকাত নামায আদায় করে আঙ্গুল দিয়ে চাঁদকে ইশারা করতেই। চাঁদ দু'টুকরো হয়ে আবু কোবায়েছ পর্বতের দু'দিকে অবস্থান করলো। সোবহানাল্লাহ! আমেরিকার চন্দ্রবিজয়ী নীল আর্ম স্ট্রং চাঁদে গিয়ে চাঁদ দ্বিখন্ডিত হওয়ার প্রমাণ পেয়ে পৃথিবিতে ফিরে এসে কোরআনের সত্যতা স্বীকার করে মুসলমান হয়ে যায়।
হাবীব ইবনে মালেক পুনরায় পরীক্ষা করলো। সে বললো- আমি দেশ থেকে আসার সময় মনে মনে একটি নিয়ত করে এসেছি। আপনি আমার মনের সে গোপন কথাটি বলতে পারলে বুঝে নেব- আপনি সত্য নবী। নবী করিম (দঃ) বললেন- "তোমার একমাত্র মেয়ে আজন্ম পঙ্গু। তুমি মনে মনে নিয়ত করেছিলে আমি সত্য নবী হলে তুমি আমার কাছে মেয়ের রোগমুক্তির জন্য দোয়া চাইবে। যাও! তোমার মেয়ে আরোগ্য লাভ করেছে এবং মুসলমানও হয়ে গেছে"।
একথা শুনেই হাবীব ইয়ামেনী কলেমা তাইয়্যেবা পাঠ করে মুসলমান হয়ে যায়। কিন্তু আবু জাহল আবু জাহলই রয়ে গেলো। আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান (রাঃ) বলেছেন:
سورج الٹے پاؤں پلٹے چاند اشارے سے ھو چاق اندھے نجدی دیکه لے قدرت رسول الله کی
কাব্যানুবাদ: যার ইশারায় চন্দ্র খন্ড-সূর্য উল্টোপথে, হয়নি একীন অন্ধ নজদী-নবীজীর কুদরতে?
অর্থ-"সূর্য্য উলটো পায়ে ফিরে এলো; চাঁদ আঙ্গুলের ইশারায় দু'টুকরো হলো। হে অন্ধ নজদীরা, তোমরা রাসূলুল্লাহর কুদরত ও কর্তৃত্ব দেখে যাও"।
(আ'লা হযরতের হাদায়েকে বখশিষ)
হাবীব ইবনে মালেক ইয়েমেনে ফিরে গিয়ে রাত্রি বেলায় ঘরে পৌঁছে দেখলো- মেয়ে সুস্থ হয়ে পিতার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে।
চন্দ্র বিদারনের ঘটনাটি সংক্ষিপ্ত আকারে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। জীবনী গ্রন্থসমূহে বিস্তারিত বিবরণ এসেছে (শানে হাবীব)। আহলে হাদীস এবং ওহাবীরা চন্দ্র বিদারনের হাদীসকে যয়ীফ ও দুর্বল বলে উড়িয়ে দেয়। (মোস্তফা চরিত কৃত আকরাম খাঁ-দেখুন)। অর্থ্যাৎ তারা চন্দ্র বিদারণে বিশ্বাসী নয়। আরবের অনেক বাণিজ্য কাফেলার লোকেরা চাঁদকে দু'টুকরো হতে দেখেছে। ভারতের জনৈক জ্যোতিষ রাজাও উক্ত চন্দ্র বিদারন প্রত্যক্ষ করেছে। (মাওয়াহিব ও বিশ্বনবী)।
ওহাবীরা নবীজীর শানমান দেখলেই তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে এবং তা অস্বীকার করার অপকৌশল অবলম্বন করে। দুশমনেরা সর্বস্বীকৃত নিম্নোক্ত নীতিমালা জেনেও মানে না- "ফাযায়েল বা মর্যাদার ক্ষেত্রে দুর্বল ও সবল সব হাদীসই গ্রহণযোগ্য"। একটি দুর্বল সনদে বর্ণিত যয়ীফ হাদিস যদি পরবর্তীতে বহু হাদীস বিশারদ গ্রহণ করেন- তখন আর যয়ীফ থাকে না। তখন এটি হাসান পর্যায়ে উন্নীত হয়ে যায়"।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৩১) কোরাইশদের অত্যাচারের মাত্রা বৃদ্ধি | (০৩৩) দ্বীনের জন্য দেশ ত্যাগ-প্রথম হিজরত |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |