যিন্দীক শব্দের বহুবচন হল যানাদিকা। আবূ হাতিম সিজিস্তানী (র.) বলেছেন, যিন্দীক শব্দটি মূলত ফারসী ভাষায় 'زنده کرد' থেকে আরবী করণ করা হয়েছে।
আর এ শব্দটি বৈষয়িক ব্যাপারে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। ব্যাপকভাবে মুলহিদ এবং দাহরীকে 'যিন্দীক' বলে হয়ে থাকে। কোন কোন বিশ্লেষণকারী উল্লেখ করেছেন যে, শরয়ী পরিভাষায় যিন্দীক হল, ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহ্ তা'আলার সাথে অন্য কাউকে 'ইলাহ' বলে দাবী করে। আর কেউ বলেছেন, সকল মুশরিক হচ্ছে যিন্দীক।
হাফিয ইব্ন হাজার আস্কালানী (র.) বলেছেন, সাসানীয়দের শাসনতন্ত্রে ব্যবহৃত ইরানী শব্দ তালিকা হতে 'যিন্দীক' শব্দটি ইরাকে এসেছে। একথা সত্য যে, মাযদিয়ানদের মধ্যে 'যিনদীক' ছিল এমন ধর্ম বিরোধী দল যারা আবেস্ত গ্রন্থের বিভিন্ন অংশে নতুন নতুন ব্যাখ্যা ও রূপক তাৎপর্য উদ্ভাবন করত। (ومحمد الله على بن محمد الشوكاني نيل الأوطار ৮ম খন্ড, পৃঃ ৩৪)
যিন্দীক' শব্দটি মুসলিম ফৌজদারী আইনে প্রয়োগ আছে। এর দ্বারা এমন ধর্ম- বিরোধী ব্যক্তিকে বুঝায়, যার প্রচারণা রাষ্ট্রের পক্ষে বিপজ্জনক। ইবন রাওয়ানদী, তাওহীদী এবং মা'আরবী এ তিন ব্যক্তি যিন্দীক নামে পরিচিত। খলীফা মাহদীর মতে সরকারী সংস্থায় যিন্দীক হল দ্বিত্ববাদী সংসারত্যাগী। খাশীশের মতানুযায়ী হাম্বালীগণ যিন্দীকদের পাঁচটি শ্রেণী স্বীকার করেন।
১. মুআত্তিলা: তারা সৃষ্টি ও সৃষ্টিকর্তা অস্বীকার করে। তারা পৃথিবীটাকে চারটি মৌলিক পদার্থের অস্থায়ী মিশ্র পদার্থে পরিণত করেছে। ২. মানাবীয়া ৩. মাযদাকীয়াঃ তারা দ্বি-ঈশ্বরবাদী, ৪. আরদাকীয়া: কফ্ফার নিরামিষভোজী ইমামী সংসারত্যাগী, ৫. রূহানিয়াঃ চারটি ভাবোন্মাদনাবাদী সম্প্রদায়। তারা ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপ ও আইন ও কানুনের শৃংখল মুক্ত হয়ে আল্লাহর সহিত আত্মার প্রেম নিবেদনের মাধ্যমে সন্মিলন কামনা করে।
পশ্চিমাঞ্চলের স্পেন ও মরক্কোর মালিকীগণ সম্বন্ধে কোন কোন গবেষক বলেছেন যে, তারা যিন্দীকের জন্য বিশেষ বিচার ব্যবস্থা প্রর্বতন করেছেন, বিশেষ করে নবীর (সা.)-এর প্রতি অসম্মান আচরণ ও বিবৃতির ক্ষেত্রে। (কাদিয়ানী সম্পর্কে বিশ্ব মুসলিম সর্ব সম্মত ফাতওয়া, ৩ পৃষ্ঠা ও সংগ্রহ ও গ্রন্থনায়ঃ মোহাম্মদ আবুল কাসেম ভূঞা)
বস্তুত যিন্দীক এমন একটি পরিভাষা, যা ঐ সকল ব্যক্তির প্রতি প্রযোজ্য যারা আল্লাহ্ তা'আলার সঙ্গে শরীক করে অন্য কাউকে ইলাহ্ বলে দাবী করে। এ ছাড়া মুসলিম সমাজে এমন আরও কিছু সম্প্রদায় রয়েছে যাদের আকীদা ও আমলে শিরক, কুফর ও বিদআত পরিলক্ষিত হয়। মুহাক্কিক উলামায়ে কিরাম এ সকল সম্প্রদায়কে শরী'আতের দৃষ্টিকোণ থেকে বিপথগামী বাতিল ফির্কা বলে অভিহিত করেন।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৪৬) আবদুল্লাহ্ চাকরালভী | (০৪৮) মাযহাবের উৎপত্তি ও বিকাশ |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |