আগাখান শি'আদের একটি উপদলের ধর্মীয় নেতার উপাধি। এ উপাধি সর্বপ্রথম লাভ করেন আগা হাসান আলী শাহ। তিনি মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের পক্ষ হয়ে কাজ করার প্রতিদান স্বরূপ এ উপাধি লাভ করেন। শি'আ সম্প্রদায়ের পঞ্চম ইমাম জাফর সাদিকের জেষ্ঠ্যপুত্রের নাম ছিল ইসমাঈল। পিতার জীবদ্দশায় ইসমাঈলের মৃত্যু হয়। ইমাম জাফর সাদিকের মৃত্যুর পর তাঁর অনুসারীগণের একটি দল ইসমাঈলের পুত্র মুহাম্মদকে নিজেদের ইমাম বলে ঘোষণা করে। এ ভাবেই ইসমাঈলী নামের একটি ফিরকা সৃষ্টি হয়।
এ ইসমাঈলী সম্প্রদায়ের মধ্য থেকেই ইসলামী খিলাফতের চরম শত্রু বাতেনী সন্ত্রাসবাদী দলের আবির্ভাব ঘটে। এদের একটি দল ইরান ও উপমহাদেশের সিন্ধু প্রদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে। ইসমাঈলী সম্প্রদায়েরই হাসান আলী শাহ্ নামক একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে কাজ করে বিপুল ধন সম্পদের অধিকারী হন। তার জন্ম ইরানে ১৮০০ খৃস্টাব্দে। তিনি ইরানের জনৈক শাহজাদীকে বিয়ে করে কেরমান প্রদেশের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৃটিশের সাথে অতিরিক্ত মাখামাখির কারণে সেও ইরান থেকে বহিষ্কৃত হয়ে উপমহাদেশের সিন্ধু প্রদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এ ব্যক্তি বৃটিশ সরকারের বৃত্তিভোগী চর ছিলেন। আফগানিস্তান ও সিন্ধু অঞ্চলে বৃটিশ প্রভৃত্ব কায়েমের উদ্দেশ্যে তাকে ব্যবহার করা হয়। ইনিই আগাখান উপাধিতে ভূষিত হন। তারপর থেকেই ইসমাঈলী সম্প্রদায় 'আগাখানী সম্প্রদায়' নামে অবিহিত হতে থাকে। ১৮৮১ খৃস্টাব্দে প্রথম আগাখানের মৃত্যুর পর তার পুত্র আগা আলী শাহ্ দ্বিতীয় আগাখান নিযুক্ত হন। ১৮৮৫ খৃস্টাব্দে তার মৃত্যু হয় এবং তাঁর পুত্র স্যার মুহাম্মদ আগা সুলতান শাহ্ তৃতীয় আগা খান নিযুক্ত হন। তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের উচ্চ শিক্ষা লাভ করেছিলেন।
স্যার আগা খান ভারতীয় রাজনৈতিক ব্যাপারে খুবই আগ্রহী ছিলেন। ১৯০৩ খৃস্টাব্দে তিনি ভারতে ইম্পিরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য মনোনীত হন। ১৯০৭ খৃস্টাব্দে হতে ১৯১৪ খৃস্টাব্দে পর্যন্ত আগা খান নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯১০ খৃস্টাব্দে তিনি ত্রিশ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করে আলীগড় মুসলিম কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার সুযোগ করে দেন। আগাখান সব সময় ধর্মপ্রচারে তৎপর ছিলেন। তার প্রচেষ্টায় অসংখ্য লোক তার ধর্ম গ্রহণ করে। আগাখানের মুরীদগণকে 'ইসমাঈলিয়া' বলা হয়। ১৯৫৭ খৃস্টাব্দে তৃতীয় আগা খানের মৃত্যুর পর শাহ্ করীম আল্-হুসাইনী চতুর্থ আগাখান নিযুক্ত হন। বর্তমান আগাখান চতুর্থ আগা খানের পুত্র। আগাখানী সম্প্রদায় বৃটিশের সহায়তায় বড় বড় ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়। এদের নিজস্ব ব্যাংক ব্যবসা রয়েছে। সম্প্রদায়ের লোকদের কল্যাণে এরা খুবই তৎপর। এদের স্বতন্ত্র উপাসনালয় আছে। মুসলমান এমন কি ইস্স্না আশারীয় শী'আদেরকে ও এরা মুসলমান বলে গন্য করে না। এরা নিজেদের ধর্ম বিশ্বাস এবং উপাসনা পদ্ধতি সম্পর্কে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করে থাকে। ইসলামী কোন ইবাদত পদ্ধতিই, এরা অনুসরণ করে না। তবে নিজেদেরকে মুসলমানদেরই একটি অংশরূপে অভিহিত করে মুসলিম উম্মার চরম সর্বনাশ করে চলছে। আগাখানী সম্প্রদায় বিপথগামী ফিরক্কার অন্তর্ভুক্ত। (ইসলামী বিশ্বকোষ, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৭ ও الموسوعة الميسرة في الأديان والمذاهب المعاصرة ৪৯ পৃঃ)
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৪৪) ইসমাঈলীদের মতবাদ | (০৪৬) আবদুল্লাহ্ চাকরালভী |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |