হিজরী চতুর্থ শতকে শুরু হয়ে এর সমাপ্তি ঘটে সপ্তম শতকে। এ সময়ে ব্যাপকভাবে ইজতিহাদ করা প্রায় শেষ হয়ে আসে। উলামায়ে কিরাম এবং সাধারণ মানুষ নির্বিশেষে সকলেই বিশিষ্ট ইমামগণের তাক্সীদ (অনুগমন) করতে থাকেন এবং তাঁদের ফিকহী মতাদর্শের ভিত্তিতে গ্রন্থাদি প্রণয়ন করেন। তাঁদের নির্ণীত মূলনীতির আলোকে নতুন মাসআলা সমূহের ফায়সালা দেন। সে সময় বিশিষ্ট মাযহাবের সপক্ষে উদ্ঘাটিত মাসআলা-সমূহের বিশ্লেষণ, পর্যালোচনা ও সমর্থনে পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন প্রকার বিতর্কের সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত প্রধান চার ইমাম হযরত ইমাম আবু হানীফা (র.), হযরত ইমাম শাফিঈ (র.), হযরত ইমাম মালিক (র.) ও হযরত ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল (র.)-এর তাক্লীদ করা উপর মুসলিম উম্মাহর ইজমা (ঐক্যমত) প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তাঁর যুগে চার মাযহাবের অনুগামী সেরা ফকীহগণের আবির্ভাব ঘটে।
তাল্লীদ শব্দের অর্থ হলো অনুগমন করা। শরী'আতের পরিভাষায়, কোন ইমাম মুজতাহিদের অভিমতকে সত্য বলে বিশ্বাস করে দলীলের খোঁজ না করে উক্ত ইমামব। মুজতাহিদের অনুসরণ করে চলাকে তাকলীদ বলা হয়।
একথা অনস্বীকার্য যে, তাবিঈগণের যুগ হতে ফিকহ্ সংকলনের যুগ পর্যন্ত মুজতাহিদ ও মুকাল্লিদ উভয় শ্রেণীর লোক বিদ্যমান ছিলেন। মুজতাহিদ ছিলেন সে সব লোক যাঁরা কিতাব ও সুন্নাহর নস্ ও ভাষ্য হতে মাসআলা-মাসাইল অর্জন করেছিলেন। মুকাল্লিদ হলেন, যাঁরা কিতাব ও সুন্নাহর নস্ ও ভাষ্য হতে মাসআলা-মাসাইল আহরণ করার মত যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন নি। এ কারণে, কোন মাসআলার সমাধানের প্রয়োজন দেখা দিলে তাঁরা তাঁদের এলাকায় অবস্থানকারী ফাকীহগণের কারো নিকট উপস্থিত হয়ে প্রয়োজনীয় বিধান নিতেন। মুজতাহিদ ও ফকীহগণ ক্ষেত্রে বিশেষে তাঁদের ইজতিহাদ ভিত্তিক ফাতওয়াও দিতেন। কিন্তু দ্বিতীয় যুগে সাধারণভাবেই মানুষের মাঝে তাল্লীদ ও অনুগমনের ধারা বিস্তার লাভ করে। অর্থাৎ জনসাধারণ ও আলিমগণ সকলেই তাকলীদ শুরু করনে। এ কারণে অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। আগের যুগে ফিকহ্ অর্জনে উৎসাহী ব্যক্তিগণ কুরআন ও সুন্নাহ্ অধ্যায়ন করে তা থেকে মাসআলা-মাসাইলের 'إستنباط وإستخراج এর মূলনীতি শিক্ষায় নিমগ্ন হতেন আর পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে এর ব্যতিক্রম ঘটতে থাকে। তখন লোকেরা বিশেষ ইমামগণ কর্তৃক কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে উদ্ভাবিত মাসাআলা-মাসাইল ও তাঁর নীতিমালা শিক্ষা করতে থাকেন।
এ অধ্যয়ন সমাপ্তির পর তাঁকে একজন ফকীহ্ আলিম হিসেবে গণ্য করা হত। তাঁদের মধ্যে অনেকে নিজ নিজ ইমামের ফিকহ্ ও মাযহাব ভিত্তিক কিতাব সংকলনও করতেন। এসব কিতাব হয়তো পূর্ববর্তী কোন কিতাবের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ হত। কিংবা বিক্ষিপ্ত মাসাইলের সংকলন-সমষ্টি হত। কিন্তু দু'একটি ব্যতিক্রম ব্যতীত তাঁদের মধ্যে কেউই নিজ ইমামের দেওয়া ফায়ার বিপরীতে ফাতওয়া প্রদান করা বৈধ মনে করতেন না।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০১৮) ফিকহ সংকলনের ধরন ও প্রকরন | (০২০) তাকলীদের কারণ সমূহ |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |