হযরত ইমাম আবূ হানীফা (র.) ফিকহকে স্বকীয় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করার-সংকল্প করে সে জন্য মৌলিক বিধিবিধান বিন্যস্ত করেন। কিয়াস ও রায় (সাদৃশ্য বিধান এবং অভিমত) পরস্পর গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।
এ কারণেই ঐতিহাসিকগণও অন্যান্য গ্রন্থকারগণ তাঁকে إمام أهل الرأى (রায় পন্থীগণের ইমাম) নামে অভিহিত করেছেন। অবশ্য এ খ্যাতির পিছনে ছিল আরোও একটি কারণ বিদ্যমান। তাহলো, সাধারণত হাদীস বিশারদগণ হাদীস গ্রহনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রিওয়ায়াত (বর্ণনা) কে ভিত্তি বানিয়ে ছিলেন। দিরায়াত বা যুক্তির কষ্টিপাথরে ও বুদ্ধিমত্তার নিরীখে যাচাই করা তাঁরা যরূরী মনে করতেন না। এক শ্রেণীর জালিয়াতদের মনগড়া মিথ্যা ও বানোয়াট হাদীস প্রচারের কাজও ছিল অব্যাহত। ইমাম আবু হানীফা (র.) দিরায়াতের কারণে (যাচাই বাছাইয়ের নিরীখে) যোগ্য না হওয়ার জন্য অনেক হাদীসই গ্রহণ করেন নি। যেহেতু দিরায়াত ও রায় শব্দদ্বয় একে অপরের সমর্থক। এ কারণে ও কেউ কেউ তাঁকে রায় পন্থী বলে আখ্যায়িত করেছেন।
কেননা তাঁরা শব্দদ্বয়ের মর্মার্থ নিরূপণে সক্ষম হন নি। অবশ্য ইতিপূর্বে আর একজন মহান ইমাম ও এ বিশেষণে ভূষিত হয়েছিলেন। তিনি হলেন হযরত ইমাম মালিক (র.)-এর শায়খ ও উস্তাদ ইমাম রাবী'আহ (র.)। তিনি যেহেতু তাঁর সমকালীন মুহাদ্দিস ও ফকীহগণের মধ্যে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে রায় অবলম্বন করেছিলেন। তাই তাঁকে বলা হত্যে 'রাবী'আতুর রায়' অর্থাৎ রায় পন্থী রাবী'আহ্।
প্রসিদ্ধ ইতিহাসবেত্তা ইব্ন কুতাইবা (র.) তাঁর 'কিতাবুল মা'আরিফ' এ ২২৫ পৃষ্ঠায় মুহাদ্দিসগণের তালিকার পাশাপাশি সে যুগের আহ্লুর রায় মুহাদ্দিসগণের একটি তালিকা প্রকাশ করেছেন। সেখানে আহলুল-রায় শিরোনামে বর্ণিত নামগুলো নিম্নরূপঃ
১. হযরত ইমাম আবূ লায়লা (র.), ২. ইমাম আবূ হানীফা (র.), ৩. ইমাম রাবী'আতুর রায় (র.), ৪. ইমাম যুফার (র.), ৫. ইমাম আওযায়ী (র.), ৬. ইমাম সুফিয়ান সাওরী (র.). ৭. ইমাম মালিক ইব্ন আনাস (র.), ৮. ইমাম আবূ ইউসুফ (র.) ও ৯. ইমাম মাহাম্মদ ইব্ন হাসান (র.)।
তাঁদের মধ্যে ইমাম সাওরী (র.) ও ইমাম আওযাঈ (র.) ছিলেন হাদীস শাস্ত্রে অপেক্ষাকৃত অধিক খ্যাত। অপরদিকে ইমাম আবূ হানীফা (র.) ছিলেন ফিকহ শাস্ত্রে সর্বাধিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। এ ক্ষেত্রে ইমাম শাফিঈ (র.) এ মন্তব্যটি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য।
الناس في الفقه عيال على أبي حَنِيفَة
ফিকহ বিষয়ে মানব সমাজ ইমাম আবূ হানীফা (র.)-এর পরিজন তূল্য।
মোটকথা, ইমাম আবূ হানীফা (র.) তাঁর যুগের সেরা ফকীহ্। অল্প দিনের ব্যবধানে তাঁর সুনাম সুখাতি এতদূর ছড়িয়ে পড়ে যে, তাঁর শিক্ষা কেন্দ্রটি সমসাময়িক বৃহত্তম শিক্ষাকেন্দ্রে পরিণত হয়। দূর দূরান্ত থেকে ছাত্রদের আগমন ঘটতে থাকে। ইমাম সাহেব (র. ছাত্রদের প্রতি তাঁর স্বভাবজাত সহমর্মিতা, সদাচরণ ও আমায়িকতার ব্যাপারেও খ্যাতির শীর্ষে ছিলেন।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০১৬) প্রথম যুগে ইজতিহাদ এবং ফিকহ সংকলন ও সম্পাদনা | (০১৮) ফিকহ সংকলনের ধরন ও প্রকরন |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |