রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর হায়াতে তায়ি্যবায় অর্থাৎ নবুওয়াত প্রাপ্তি থেকে দশম: হিজরী সন পর্যন্ত। সে সময়ে যাবতীয় ব্যাপার রাসূলে পাকের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। আইন প্রণয়ন, উদ্ভূত পরিস্থিতির মুকাবিলায় প্রয়োজনীয় ও যথোপযুক্ত ফাতওয়া-ফারাইয, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ইত্যাদি সবই ওহীর মাধ্যমে তিনি নিজেই সম্পাদন করতেন। সে সময়ে স্বতন্ত্রভাবে ফিকহ শাস্ত্র প্রণয়নের কোন প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় নি। সে সময়ে ইসলামী ফিরে দু'টি উৎস ছিল: ক. কুরআন-হাকীম ও খ. রাসূলে পাকের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। উদ্ভূত পরিস্থিতি ও প্রয়োজন মুতাবিক কুরআন হাকীমের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ রাসূলূল্লাহ্ (সা.) এমন সহজ সরলভাবে বর্ণনা করতেন যে, সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে কুরআনিক বিধান ও রাসূলে পাকের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ নিয়ে কোন দ্বিমতের অবতারণা হতো না। এবং তাঁদের মধ্যে কোন প্রকার ভুল বুঝাবুঝি ও বিরোধের সামান্যতম সম্ভাবনাও দেখা দিত না। রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর কর্মপন্থা ছিল কয়েক ভাগে বিভক্তঃ
১. মহান আল্লাহর কিতাব কুরআন মজীদের শিক্ষা দান।
২. কুরআনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ প্রদান।
৩. তাযকিয়ায়ে নক্স তথা চরিত্র সংশোধন। মূলত তাঁর মুবারক সংশোধনই সাহাবায়ে কিরামের চারিত্র সংশোধনের সর্বোত্তম পন্থা বলে পরিগণিত হয়। এর মাধ্যমে ইসলামের মূল ভিত্তি স্থাপন করে এবং আগত দিনের কঠিন ভবিষ্যত কর্মপন্থার সঠিক নির্দেশনা প্রদান করে আমাদের প্রিয় নবী (সা.) প্রশান্ত চিত্তে এ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন।
খুলাফয়ে রাশিদীন ও সাহাবায়ে কিরামের যুগ। বিভিন্ন দেশ জয় ও নানা প্রকার সামাজিকতার সংস্পর্শে আসার কারণে মুসলিম বিশ্বে নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এ সমস্যার সমাধানকল্পে আরও দু'টি উপায় অবলম্বিত হয়।
এ সময়ে উদ্ভুত যে সমস্যার সমাধান সরাসরি পবিত্র কুরআন ও হাদীসে পাওয়া যেত না তাঁর সমাধানের লক্ষ্যে সাহাবায়ে কিরাম পরামর্শের ভিত্তিতে ঐক্যমতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন ইহাকে 'ইজমায়ে সাহাবা' বলা হয়। ইহাই ইজমার মূলভিত্তি। পরবর্তীকালে ইজমা ইসলামী আইনের তৃতীয় উৎস হিসাবে স্বীকৃত লাভ করে।
দ্বিতীয় যুগে উদ্ভাবিত যে সকল সমস্যার সমাধান কুরআন ও হাদীসে সরাসরী পাওয়া যেত না এবং যার সমাধানে সাহাবায়ে কেরাম সম্মিলিতভাবেও কোনো সিদ্ধান্ত নেন নি। বিশিষ্ট সাহাবায়ে কিরাম এমন কিছু সমস্যার সমাধানে কুরআন ও হাদীসের আলোকে ইজতিহাদের মাধ্যমে ব্যক্তিগত অভিমত দিয়েছেন। একে কিয়াসের ভিত্তি বলা হয়। পরবর্তীকে ইহাই ইসলামী আইনের চতুর্থ উৎস হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে।
হযরত মুয়াবিয়া (রা.) -এর শাসন কালে একচল্লিশ হিজরী থেকে হিজরী দ্বিতীয় শতকের প্রারম্ভ কাল পর্যন্ত তৃতীয় যুগের বিস্তৃতি। এ সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলামের ব্যাপক বিস্তৃতির ফলে শরী'আতের হুকুম-আহকাম সুস্পষ্ট ও সুবিন্যস্ত করার তথা ফিকহ শাস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন কারণে তীব্রভাবে দেখা দেয়। যথাঃ
১. এসময়ে যে সকল সাহাবায়ে কিরাম জীবিত ছিলেন তাঁরা বিশাল ইসলামী খিলাফতের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েন। অপর দিকে এককভাবে কোন সাহাবীর পক্ষে রসূলুল্লাহ্ (সা.) -এর সকল হাদীস জানা সম্ভব ছিল না। তাই নব উদ্ভূত সমস্যার সমাধান তাঁরা নিজ নিজ রায় মোতাবেক দিতে বাধ্য হলেন। এভাবে সঙ্গত কারণেই বিভিন্ন অঞ্চল অবস্থিত তাঁদের রায় ও বিভিন্ন হতে থাকল।
২. রাজনৈতিক কারণে এ সময়ে যে সব চরম পন্থী ও বিপথগামী যথা- শি'আ, খারেজী ইত্যাদি ফিরকায় উদ্ভব ঘটে, ঐ সকল ফিরকার লোকেরা নিজ নিজ আকীদা অনুযায়ী সমস্যার সমাধান দিতে থাকার ফলেও মাসআলা-মাসাইলের ক্ষেত্রে বিভিন্নতা দেখা দেয়।
৩. এ সময়ে ইসলাম বিদ্বেষী ও স্বার্থান্বেষী লোকদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্য জাল হাদীসও মুসলিম জাহানে জড়িয়ে পড়ে। এসব বানোয়াট হাদীসের কারণে মাসআলা -মাসাইলের ক্ষেত্রেও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। উল্লেখিত কারণ সমূহের প্রেক্ষিতে ইসলামের হিফাযতের লক্ষ্যে শরী'আতের হুকুম-আহকাম সুস্পষ্ট ও সুবিন্যস্ত করা এবং তাঁর নীতি নির্ধারণ করা তথা ফিকহ্ ও উসূলে ফিকহ্ প্রণয়ন ও সংকলন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এই তৃতীয় যুগে মুসলিম জাহানের বিভিন্ন শহরে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ফাওয়া দানের জন্য কতিপয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। যার মধ্যে নিম্নবর্ণিত কেন্দ্র সমূহ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য: ১. মদীনা মুনাওওয়ারা, ২. মক্কা মু'আয্যমা, ৩. কূফা, ৪. বাসরা ৫. শাম (সিরিয়া), ৬. মিসর, ৭. ইয়ামান।
রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর যুগ হতে হযরত উসমান গণী (রা.)-এর খিলাফত কাল পর্যন্ত মদীনা তায়্যিবাই ছিল মুসলিম জাহানের ফাতওয়া প্রদানের বিশিষ্ট কেন্দ্র। এ সময় খলীফাতুল মুসলিমীন ও-আমীরুল মু'মিনীনগণ সহ সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে ফাওয়া প্রদানের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন, আয়শা (রা.), যায়িদ ইবন সাবিত (রা.), আবদুল্লাহ্ ইবন উমর (রা.), আবদুল্লাহ্ ইবন আব্বাস (রা.) এবং আবূ হুরায়রা (রা.) প্রমুখ।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (র.) তাঁর জগদ্বিখ্যাত গ্রন্থ 'ইলমূল মুওকিঈন'-এ উল্লেখ করেছেন যে, দীন, ফিকহ এবং ইল্ম-এর বিস্তৃতি ঘটেছে ইবন মাসউদ, যায়িদ ইব্ন সাবিত, ইব্ন উমর ও ইব্ন আব্বাস (রা.) এবং তাঁদের শাগরিদগণের মাধ্যমে।
মদীনা তাইয়্যেবায় ফাওয়া প্রদানের ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত তাবিঈগণ বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেছেন।
১. সায়ীদ ইব্ন মুসায়্যিব মাখযুমী (র.)। তাবিঈনের মধ্যে আলিম ও ফকীহ্। খিলাফতের ২য় বর্ষে জন্ম। (ওফাত: ৯৫ হিজরী)।
৩. আবূ বকর ইব্ন আবদুর রহমান ইবন হারিস ইবন হিশাম মাখযুমী কুরাইশী (র.)। বহু হাদীস বর্ণনাকারী ও শ্রেষ্ঠ ফকীহ্। (ওফাত: ৯৪ হিজরী)
৪. ইমাম আলী ইব্ন হুসাইন যয়নুল আবেদীন (র.)। অধিক ইবাদতগুযার ছিলেন বিধায় 'যয়নুল আবেদীন 'ইবাদতকারীগণের শোভা' উপাধিতে ভূষিত হন। ইমাম যুহরী (র.) বলেন, আমি আলী ইব্ন হুসাইন যয়নুল আবেদীন-এর তুলনায় অধিক জ্ঞানী ফকীহ্ কাউকে দেখি নি। (ওফাত: ৯৪ হিজরী)।
৬. মুসলিম ইব্ন আবদুল্লাহ্ ইবন উমর (র.)। তিনি ছিলেন আয়িশা (রা.), আবূ হুরায়রা (রা.) এবং আবদুল্লাহ্ ইবন উমর (রা.)-এর বিশিষ্ট শাগরিদ। (ওফাত: ১০৬ হিজরী)।
৭. সুলাইমান ইব্ন ইয়াসার (রা.)। তিনি ছিলেন মাইমূনাহ্ (রা), আয়েশা (রা.), আবু হুরায়রা (রা.), আবদুল্লাহ্ ইবন উমর (রা.), যায়িদ ইবন সাবিত (রা.) প্রমূখ সাহাবায়ে কিরামের শাগরিদ ও উচুস্তরের ফকীহ্। (ওফাত: ১০৭ হিজরী)।
৮. কাসিম ইন মুহাম্মদ ইব্ন আবূ বকর (র.)। তিনি ছিলেন আবদুল্লাহ্ ইবন আব্বাস (রা.) আবদুল্লাহ্ ইবন উমর (রা.)-এর শাগরিদ। (ওফাত: ১০৬ হিজরী)।
৯. নাফি' (র.) তিনি ছিলেন আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা.)-এর আযাদকৃত গোলাম। মিসরের মু'আল্লিম ছিলেন। আবদুল্লাহ্ ইবন উমর (রা.), আয়েশা (রা.) এবং আবূ হুরায়রা (রা.) প্রমুখের শাগরিদ। (ওফাত: ১১৭ হিজরী)।
১০. মুহাম্মদ ইব্ন্ন মুসলিম ইবন শিহাব যুহরী (র.)। তিনি ছিলেন মুকাস্স্সিরীন হাদীস অর্থাৎ অধিক হাদীস বর্ণনাকারীদের মধ্যে অন্যতম। খুবই উদার ও অমায়িক। সত্য প্রকাশে অকুতোভয়। আবদুল্লাহ্ ইবন উমর (রা.), আনাস (রা.) এবং সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব (রা.)-এর শাগরিদ। (ওফাত: ১২৪ হিজরী)।
১১. ইমাম বাকির মুহাম্মদ ইব্ন আলী (র.)। আহলে বাইতে রাসূলের অন্যমত ইমাম। জাবির (রা.), আবদুল্লাহ্ ইবন উমর (রা.) এবং ইমাম যয়নুল আবেদীন (রা.)-এর শাগরিদ।' (ওফাত: ১১৪ হিজরী)।
মক্কা মু'আয্যমা বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ্ (সা.) কিছু দিনের জন্য মু'আয (রা.)-কে সেখানকার মু'আল্লিম ও মুক্তী নিয়োগ করেছিলেন। ইব্ন আব্বাস (রা.) তাঁর জীবনের শেষভাগ মক্কা মু'আয্যমাতে অতিবাহিত করেন। ফলে সেখানকার সবাই তাঁর ইলুম দ্বারা উপকৃত হন। সেখানে তখন চার জন বিখ্যাত তাবিঈ মুক্তী ছিলেন। তাঁরা হলেনঃ
১. মুজাহিদ ইব্ন জুবাইর (র.)। তিনি ছিলেন বিখ্যাত তাফষীরবিদ এবং সা'দ (রা) এর শাগরিদ (ওফাত: ১০৭ হিজরী)।
২. ইকরামা (র.)। আবদুল্লাহ্ ইব্ন আব্বাস (রা.)-এর আযাদকৃত গোলাম এবং শাগরিদ। বিখ্যাত তাফসীরবিদ। (ওফাত: ১০৭ হিজরী)।
দ্বিতীয় খলীফা উমর ফারুক (রা.)-এর আদেশে ইরাক এলাকায় পত্তন হয়েছিল নতুন শহর কৃষ্ণা ও বসরা। সাহাবায়ে কিরামের এক জমা'আত এ নতুন শহর কূফাতে বসবাস করতে শুরু করেন। আমীরুল মু'মিনীন উমর ইবন খাত্তাব (রা.) 'ফকীহুল্-উম্মাত' আবদুল্লাহ্ ইবন মাসউদ (রা.)-কে কুফার মু'আল্লিম, মুক্তী ও প্রশাসক নিয়োগ করেন। সেখানে তাঁর দশ বছর অবস্থান কালে স্থানীয় জ্ঞানপিপাসু সবাই তাঁর সান্নিধ্যে এসে জ্ঞানপিপাসা নিবারনের মহা সুযোগ লাভ করেন।
চতুর্থ খলীফা আসাদুল্লাহিল্ গালিব আলী (রা.)-এর শাসনামলে (৩৫-৪০ হিজরী সন পর্যন্ত) ইসলামী রাষ্ট্রের রাজধানী ছিল কৃষ্ণা। হযরত আলী (রা) ছিলেন নবী করীম (সা.)-এর যুগ থেকে ফকীহ্ সাহাবীগণের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। তিনি এবং আবদুল্লাহ্ ইব্ মাসউদ (রা.) এ দুই বরেণ্য ব্যক্তিত্ব এবং তাঁদের শিক্ষা ধারার মাধ্যমে এখানে ইলমে দীনের চর্চা ব্যাপক প্রসার লাভ করে ও কৃষ্ণা অন্যতম দীনী কেন্দ্রে পরিণত হয়। ফলে এখানকার অনেক মুজতাহিদ, তাবিঈ খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করেন। নিম্নে তাঁদের কয়েক জনের নাম উল্লেখ করা হলঃ
১. আলাকামা ইব্ন কায়স নাখঈ (র.)। তিনি ছিলেন ইরাকের বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফকীহ্। তিনি হযরত উমর, উসমান এবং আলী (রা.) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবদুল্লাহ্ ইবন মাসউদ (রা.)-এর বিশিষ্ট ও প্রধান শাগরিদ এবং আচার আচারণে তাঁর প্রতিচ্ছবি। জন্ম নবুওয়াত যুগে। ওফাতঃ৬২১ হিজরী সনে।
২. মাসরূক ইন আযদা (র.)। শ্রেষ্ঠ আলিম ও মুফতী। হযরত উমর, আলী ও আবদুল্লাহ্ ইবন মাসউদ (রা.) প্রমুখের শাগরিদ। (ওফাত: ৬৩ হিজরী)।
৩. উবায়দা ইব্ন 'আমর সালমানী (র.)। সাহাবী যুগে ইসলাম গ্রহণ করেন। তবে রাসূলে পাকের দর্শন লাভে ধন্য হতে পারেন নি। আলী (রা.) ও আবদুল্লাহ্ ইবন মাসউদ (রা.)-এর শাগরিদ। (ওফাত: ৯২ হিজরী)।
৫. শুরাইহ্ ইব্ন হারিস কিন্ন্দী (র.)। কৃষ্ণার কাযী। নবী যুগে জন্ম। হযরত উমর, আলী ও আবদুল্লাহ্ ইবন মাসউদ (রা.)-এর শাগরিদ। দ্বিতীয় খলীফার যুগে কুফায় কাষী পদে নিযুক্ত হন। অব্যাহতভাবে ষাট বছর কাযীর পদ বহাল থেকে গুরুদায়িত্ব পালন করেন। (ওফাতঃ ৭৮ হিজরী)।
৬. ইব্রাহীম ইন্ন ইয়াযীদ নাঈ (র.)। ইরাকের বিশিষ্ট ফকীহ। আলকামাহ্, মাসরূক, আস্তয়াদ ও আবদুল্লাহ্ ইবন মাসউদ (রা.) এর শাগরিদ। ফকীহ্ হাম্মাদ ইব্ন আবূ সুলাইমান (র.)-এর উস্তাদ। (ওফাত: ৯৫ হিজরী)।
বসরাতে অবস্থানকারী সাহাবীগণের মধ্যে হযরত আবু মূসা আশ্রী ও হযরত আনাস (রা.) এবং ফকীহ্ তাবিঈগণের মধ্যে নিম্নে বর্ণিত পাঁচ জন ছিলেন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব।
১. হযরত আবুল আলিয়াহ ইব্ন মিহরান (র.)। তিনি ছিলেন হযরত উমর, আলী, আবদুল্লাহ্ ইবন মাসউদ, আয়েশা ও আবদুল্লাহ্ ইব্ন আব্বাস (রা.) প্রমুখের শাগরিদ (ওফাতঃ ৯০ হিজরী)।
২. হযরত হাসান ইব্ন আবুল হাসান বাসরী (র.)। তিনি ছিলেন তাবিঈগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আলিম। সূফীকূল শিরোমণি। প্রধান প্রধান সাহাবীগণের শাগরিদ। (ওফাত: ১১০ হিজরী)।
৩. হযরত আবূ শা'শা জাবির ইবন ইয়াযীদ (র.)। তিনি ছিলেন বসরার বিশিষ্ট ফকীহ্। হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্ন আব্বাস (রা.)-এর শাগরিদ। (ওফাত: ৯৩ হিজরী)।
৪. মুহাম্মদ ইব্ন সীরীন (র.)। ব্যাপক জ্ঞানের ভাণ্ডার। হযরত আনাস (রা.) -এর আযাদকৃত গোলাম ও শাগরিদ। (ওফাত: ১৩১ হিজরী)।
দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর (রা.) তাঁর খিলাফতকালে হযরত মু'আয, উবাদাহ ইবন সামিত এবং আবূ দারদা (র.)-কে সিরিয়ায় মু'আল্লিম ও মুক্তী হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। পরবর্তীতে সেখানে যে সকল তাবিঈ এ দায়িত্ব পালন করেন তাঁদের মধ্যে খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ হলেন:
১. হযরত আবদুর রহমান ইব্ন গনম (র.)। তিনি ছিলেন হযরত উমর ও মু'আয (রা.) এর শাগরিদ। দ্বিতীয় খলীফা তাঁকে সেখানে মুয়াল্লিম হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। (ওফাত: ৭৮ হিজরী)।
২. হযরত আবূ ইদ্রীস খাওলানী (র.)। তিনি ছিলেন হযরত মু'আয (রা.)-এর শাগরিদ এবং সুবক্তা ও সিরিয়ার একজন কাযী। (ওফাত: ৮০ হিজরী)।
৩. হযরত কাবীসাহ ইব্ন যুওয়াইব (র.)। তিনি হযরত আবূ বকর, উমর (রা.) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি ছিলেন হযরত যায়িদ ইব্ন সাবিত (রা.)-এর বিচার সম্বন্ধীয় সিদ্ধান্ত সমূহের সংরক্ষক। (ওফাত: ৮১ হিজরী)।
৪. হযরত মাকহুল ইব্ন আবূ মুসলিম (র.)। মূলত তিনি ছিলেন কাবুলের বাসিন্দা এবং সিরিয়ার একজন প্রসিদ্ধ ফকীহ্। (ওফাত: ১১৩ হিজরী)।
৫. হযরত রাজা ইন্ন হাইওয়া (র.)। তিনি হযরত আবদুল্লাহ্ ইবন উমর, জাবির ও মু'আবিয়া (রা.) থেকে হদীস বর্ণনা করেছেন। (ওফাত: ১১২ হিজরী)।
৬. হযরত উমর ইব্ন আবদুল আযীয (র.)।' অষ্টম উমাইয়া খলীফা। অন্যতম খলীফায়ে রাশীদ হিসেবে ইতিহাসে স্বীকৃত। ইমাম ও মুজতাহিদ। হযরত আনাস (রা.)-এর শাগরিদ। তিনিই সর্বপ্রথম হাদীস সংকলনের ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। (ওফাত: ১০১ হিজরী)।
হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) কিছু দিনের জন্য ইয়ামানে হযরত আলী (র.)-কে প্রশাসক হিসেবে পাঠিয়ে ছিলেন। এর পরে সেখানে আবূ মূসা আশআরী (র.) কে আমীর ও মু'আল্লিম রূপে প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে তাবিঈগণের মধ্যে নিম্নোক্ত ৩ জন সেখানে ফকীহ্ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
১. হযরত তাউস ইব্ন কাইসান (র.)। ইয়ামানের বিখ্যাত মুক্তী। তিনি ছিলেন হযরত যায়িদ ইব্ন সাবিত, আয়েশা ও আবূ হুরায়রা (রা.)-এর শাগরিদ। (ওফাত: ১০৬ হিজরী)।
২. হযরত ওয়াহব ইন্ন মুনাবিবহ্ (র.)। ইয়ামানের বিখ্যাত আলিম ও কাযী। তিনি ছিলেন হযরত আবদুল্লাহ্ ইবন উমর ও আবদুল্লাহ্ ইব্ন আব্বাস (রা.)-এর শাগরিদ। (ওফাতঃ ১১৪ হিজরী)।
এ যুগের শেষভাগে ফিকহ শাস্ত্রের অনুশীলনের ক্ষেত্রে ইসলামী বিশ্বের দু'টি কেন্দ্র সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠে। তার একটি মদীনায়ে তাইয়্যেবা এবং অপরটি কৃষ্ণা।
১. হযরত ইমাম মালিক (র.)-এর তত্বাবধানে মদীনায় তায়্যিবাতে কেন্দ্রটি গড়ে উঠে। এ সময় থেকেই ফিকহ্ এর বিধিবদ্ধ সংকলন ও সম্পাদনার কাজ আরম্ভ হয়।
২. হযরত ইমাম আ'যম আবু হানীফা (র.)-এর তত্ত্বাবধানে ও পরিচালনায় ইরাক অঞ্চলে ফিকহ্ চর্চার কেন্দ্র রূপে কৃষ্ণা গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে।