এখন আলোচনায় আসা যাক হুজুর পাক (সঃ) এর পেশাব মুবারকের অবস্থা সম্পর্কে। তাঁর পবিত্র প্রস্রাব অনেক সাহাবীই অবলোকন করেছেন। হজরত উম্মে আয়মান (রাঃ) যিনি হুজুর পাক (সঃ) এর খেদমতে নিয়োজিত থাকতেন, তিনি তা পানও করেছিলেন। এমর্মে বর্ণিত আছে যে, হুজুর পাক (সঃ) রাত্রিবেলায় যে খাটে শয়ন করতেন, তার নীচে একখানা পেয়ালা রেখে দেয়া হতো। যেনো প্রয়োজনে তিনি তাতে পেশাব করতে পারেন। এক রাত্রিতে নবী করীম (সঃ) উক্ত পেয়ালার মধ্যে পেশাব করলেন। সকাল হলে তিনি হজরত উম্মে আয়মান (রাঃ) কে বললেন, খাটের নীচে একটি প্রস্রাবভর্তি, পেয়ালা আছে ওগুলো বাইরে ফেলে দিয়ে এসো ।
হজরত উম্মে আয়মান (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম, রাতে আমার পিপাসা পেয়েছিলো তাই আমি তা পান করে ফেলেছি। কথা শুনে হুজুর পাক (সঃ) মৃদু হাসলেন। তবে তাঁকে মুখ ধৌত করে নেয়ার কোনো হুকুমও করেন নি বা ভবিষ্যতে এরূপ কাজ করতে মানাও করেন নি। বরং বললেন, এখন থেকে তোমার আর কোনো পেটের অসুখ হবেনা । কতোইনা সৌভাগ্য! কতোইনা খোশ নসীব ।
এক মহিলা তাঁর নাম ছিলো বারাকাহ্ (রাঃ)। তিনি হুজুর পাক (সঃ) এর খেদমতে থাকতেন। তিনিও একদা হুজুর পাক (সঃ) এর পেশাব মুবারক পান করে ফেলেছিলেন। হুজুর তাঁকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, হে উম্মে ইউসুফ তুমি চিরসুস্থ হয়ে গেলে । তোমার কখনও কোনো অসুখ হবে না। এরপর দেখা গিয়েছিলো যে, উক্ত মহিলা মরণব্যাধি ছাড়া জীবনে আর কোনো রোগেই আক্রান্ত হননি। কোনো কোনো বর্ণনায় এরকম পাওয়া যায়, এক ব্যক্তি হুজুর (সঃ) এর পেশাব মুবারক পান করেছিলেন । এর ফলে তার সমস্ত শরীর থেকে সারা জীবন সুঘ্রাণ ছড়াতে থাকতো। এমন কি তার বংশধরদের ভিতরেও কয়েক পুরুষ পর্যন্ত উক্ত সুঘ্রাণ পাওয়া যেতো । তবে মাওয়াহেব ও শেফা গ্রন্থদ্বয়ে শেষোক্ত বর্ণনা দুটি পাওয়া যায় না ।
এক বর্ণনায় পাওয়া যায়, সাহাবায়ে কেরাম হুজুর আকরম (সঃ) এর পেশাব মুবারক ও রক্তকে বরকতময় মনে করতেন। রক্ত পান করার ঘটনা তো একাধিকবার সংঘটিত হয়েছে। ঐ হাজ্জাম, যে হুজুর পাক (সঃ) এর দেহে সিঙ্গা লাগাতেন। তিনিতো সিঙ্গা দিয়ে টানা রক্ত মুবারক বের করে এনে অবলীলাক্রমে তা গলাধঃকরণ করে নিতেন। হুজুর (সঃ) একবার তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি রক্ত কি করেছো? লোকটি বললেন, আমি রক্ত বের করে আমার পেটের মধ্যেই রেখে দিয়েছি। আমি এটা কামনা করি না যে হুজুরের দেহ মুবারকের রক্ত মাটিতে পড়ুক। একথা শুনে হুজুর (সঃ) বললেন, নিঃসন্দেহে তুমি আপন আশ্রয় খুঁজে নিয়েছো এবং নিজেকে সুরক্ষিত করে নিয়েছো। অর্থাৎ এ ওসীলায় তুমি রোগ ব্যাধি থেকে নিরাপদ হয়ে গেলে।
উহুদের যুদ্ধের দিন হুজুর আকরম (সঃ) আহত হয়ে গেলেন, তখন হজরত আবু সাঈদ (রাঃ) এর পিতা হজরত মালেক ইবন সিনান (রাঃ) নিজের জিহ্বা দিয়ে হুজুরের যখম থেকে রক্ত চুষে চেটে যখমকে পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন। লোকেরা বললো, মুখ থেকে রক্ত বাইরে ফেলে দাও । তিনি এতে অসম্মতি প্রকাশ করে বললেন, আল্লাহতায়ালার কসম, হুজুর পাক (সঃ) এর রক্ত মুবারক আমি যমীনে পড়তে দেবোনা। তিনি রক্ত গিলে ফেললেন। তখন হুজুর আকরম (সঃ) বললেন, কেউ যদি এ মুহূর্তে কোনো জান্নাতী লোককে দেখতে চায়, সে যেনো এই ব্যক্তিকে দেখে নেয় ।
হজরত আব্দুল্লাহ্ ইবন যুবায়ের (রাঃ) বলেন, হুজুর আকরম (সঃ) একদিন সিঙ্গা লাগালেন এবং তাঁর পবিত্র রক্ত আমাকে দিয়ে বললেন, এ রক্ত এমন একস্থানে মিশিয়ে দাও যেখানে মানুষের দৃষ্টি পড়েনা। আমি পবিত্র রক্ত গ্রহণ করলাম এবং পান করে নিলাম। কারণ আমি ভাবলাম, এর চেয়ে গোপন স্থান আর কিছু হতে পারে না। এতে নবী করিম (সঃ) খুশী হয়ে আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, ওহে! লোকেরা তোমা থেকে আর তুমি লোকদের থেকে (উপকৃত হবে)। হুজুর পাক (সঃ) এর পবিত্র মুখনিঃসৃত বাক্যখানিতে রূপক ভঙ্গিতে এটাই ব্যক্ত হচ্ছিলো যে, হজরত আব্দুল্লাহ্ ইবন যুবায়ের (রাঃ) ভবিষ্যতে একদিন বীরত্ব ও বাহাদুরীর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সমর্থ হবেন—যা তাঁর পবিত্র রক্ত পান করার বরকতে হাসিল হবে। তিনিই তো ঐ আব্দুল্লাহ্ ইবন যুবায়ের যিনি কুখ্যাত ইয়াযীদের বায়াতকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং মক্কা মুকাররমায় অবস্থান নিয়েছিলেন। তাঁর সমাবেশে হেযায, ইয়ামন, ইরাক ও খুরাসান থেকে দলে দলে লোকজন এসে সমবেত হয়েছিলো। অবশ্য পরে আব্দুল মালিক ইবন মারওয়ানের রাজত্বকালে হাজ্জায ইবন ইউসুফ তাঁকে শহীদ করে দিয়েছিলো। এক বর্ণনায় এরকম পাওয়া যায়, হজরত আব্দুল্লাহ্ ইবন যুবায়ের হুজুর পাক (সঃ) এর খুন মুবারক পান করার পর তিনি তাঁকে বলেছিলেন, দোযখের অগ্নি তোমাকে স্পর্শ করবে না, যদি কসম করা থেকে বেঁচে থাকো ।
এ সমস্ত হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয়, হুজুর আকরম (সঃ) এর পেশাব ও রক্ত পূতপবিত্র ছিলো। এর আলোকেই বিধান সূচিত হবে তাঁর অন্যান্য দেহবর্জ্য সম্পর্কেও। বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা আইনী (রঃ) বলেন, উপরোক্ত মাসআলা সম্পর্কে ইমাম আযম আবু হানীফা (রঃ) এর মযহাবও একমত। শায়খ ইবন হাজার মক্কী (রঃ) বলেন, হুজুর আকরম (সঃ) এর দেহবর্জ্য যে পবিত্র, এ সম্পর্কে বহু উজ্জ্বল দলীল প্রমাণ রয়েছে । আমাদের আয়েম্মায়ে কেরাম—এ সকলকে হুজুর আকরম (সঃ) এর বিশেষত্ব হিসাবে গণনা করেন ।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৩৫) প্রাকৃতিক প্রয়োজনের সময় মৃত্তিকা বিদীর্ণ হওয়া | (০৩৭) দাম্পত্য জীবন |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |