এ বিষয়ে লিখার আমার পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু রমযান মাসের এক রাত্রে আমি স্বপ্নে দেখলাম, কোন এক বুযুর্গ আমাকে বলেছেন-আপনার কিতাবে বৃদ্ধাঙ্গুলদ্বয় চুম্বনের মাসআলাটিও লিখুন যাতে কিতাবটি পরিপূর্ণতা লাভ করে। সুতরাং এ বিষয়টাকেও কিতাবের অর্ন্তভূক্ত করলাম। আল্লাহ কবুল করুন। আমীন।
দু’অধ্যায়ে বিভক্ত করে এ বিষয়টা আলোচনা করা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে আঙ্গুলী চুম্বনের প্রমাণ দেয়া হয়েছে এবং দ্বিতীয় অধ্যায়ে এ প্রসঙ্গে উত্থাপিত আপত্তি সমূহের জবাব দেয়া হয়েছে।
মুয়াযযিন আযান দেয়ার সময় যখন ‘আশহাদুআন্না মুহাম্মদার রাসুলুল্লাহ’ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ উচ্চারণ করে, তখন নিজের বৃদ্ধাঙ্গলীদ্বয় বা শাহাদাতের আঙ্গুল চুম্বন করে চক্ষুদ্বয়ে লাগানো মুস্তাহাব এবং এতে দীন-দুনিয়া উভয় জাহানের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে অনেক হাদীছ বর্ণিত আছে। সাহাবায়ে কিরাম থেকে এটা প্রমাণিত আছে এবং অধিকাংশ মুসলমান একে মুস্তাহাব মনে করে পালন করেন।
‘প্রসিদ্ধ সালাতে মাসউদী’ কিতাবের দ্বিতীয় খণ্ড نماز শীর্ষক অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে-
رُوِىَ عَنِ النَّبِىَّ ﷺ اَنَّهُ قَالَ مَنْ سَمِعَ اِسْمِىْ فِىْ الْاَذَانِ وَ وَوَضَعَ اِبْهَامَيْهِ عَلٰى عَيْنَيْهِ فَانَا طَالِبِهُ فِى صُفُوْفِ الْقِيَامَةِ وَ قَائِدُهُ اِلَى الْجَنَّةِ-
‘নবি কারিম (ﷺ) থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি আযানে আমার নাম শুনে স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চোখের উপরে রাখবে আমি তাকে কিয়ামতের দিন কাতারসমূহের মধ্যে খোঁজ করবো এবং নিজের পেছন পেছনে টেনে বেহেশতে নিয়ে যাবো।’
¶ সালাতে মাসউদী, ফাতওয়ায়ে শামী, পৃষ্ঠা-৩৫০, নূূরানী কুতুবখানা, পেশওয়ার, পাকিস্তান।
✧ তাফসীরে রুহুল বয়ানে ষষ্ঠ পারার সুরা মায়েদার আয়াত, وَإِذَا نَادَيْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ (সূরা মায়েদা, আয়াত নং-৫৮) এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উল্লেখিত আছে-
وَضَعْفَ تَقْبِيْلُ ظفرى ابهاميه مع مسبحتيه والمسح على عينيه عند قوله محمد رسول الله لانه لم يثبت فى الحديث المرفوع لكن المحدثين اتفقوا على ان الحديث الضعيف يجوز العمل به فى الترغيب والترهيب
-মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ বলার সময় নিজের শাহাদতের আঙ্গুল সহ বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখে চুমু দেয়ার বিধানটা জঈফ রেওয়ায়েত সম্মত। কেননা এ বিধানটা মরফু হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। কিন্তু মুহাদ্দিছীনে কিরাম এ ব্যাপারে একমত যে আকর্ষণ সৃষ্টি ও ভীতি সঞ্চারের বেলায় জঈফ হাদীছ অনুযায়ী আমল করা জায়েয।
¶ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪১০।
✧ ফাতওয়ায়ে শামীর প্রথম খণ্ড الاذان শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-
يُسْتَحَبُّ أَنْ يُقَالَ عِنْدَ سَمَاعِ الْأُولَى مِنْ الشَّهَادَةِ: صَلَّى اللَّهُ عَلَيْك يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَعِنْدَ الثَّانِيَةِ مِنْهَا: قَرَّتْ عَيْنِي بِك يَا رَسُولَ اللَّهِ، ثُمَّ يَقُولُ: اللَّهُمَّ مَتِّعْنِي بِالسَّمْعِ وَالْبَصَرِ بَعْدَ وَضْعِ ظُفْرَيْ الْإِبْهَامَيْنِ عَلَى الْعَيْنَيْنِ فَإِنَّهُ - عَلَيْهِ السَّلَامُ - يَكُونُ قَائِدًا لَهُ إلَى الْجَنَّةِ، كَذَا فِي كَنْزِ الْعِبَادِ. اهـ. قُهُسْتَانِيٌّ، وَنَحْوُهُ فِي الْفَتَاوَى الصُّوفِيَّةِ. وَفِي كِتَابِ الْفِرْدَوْسِ ্রمَنْ قَبَّلَ ظُفْرَيْ إبْهَامِهِ عِنْدَ سَمَاعِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ فِي الْأَذَانِ أَنَا قَائِدُهُ وَمُدْخِلُهُ فِي صُفُوفِ الْجَنَّةِগ্ধ وَتَمَامُهُ فِي حَوَاشِي الْبَحْرِ لِلرَّمْلِيِّ عَنْ الْمَقَاصِدِ الْحَسَنَةِ لِلسَّخَاوِيّ-
‘মুস্তাহাব হলো, আযানের সময় মুয়াজ্জিন প্রথমবার শাহাদাত বলার সময় ‘সাল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ’ বলা। আর দ্বিতীয়বারে শাহাদাত বলার সময় ‘কুররাতু আইনি বিকা ইয়া রাসুলাল্লাহ’ বলে দু বৃদ্ধাঙ্গুলিতে চুম্বন করে চোখদ্বয়ের উপর রেখে দোয়াটি পাঠ করা- ‘আল্লাহুম্মা মাত্তেনি বিস-সাময়ি ওয়াল বাসরি’ আমলটি যে ব্যক্তি করবে হুযুর কারিম (ﷺ) তাকে ধরে জান্নাতে নিয়ে যাবেন। অনুরূপ বর্ণনা কানযুল ইবাদ, কুহস্তানি ও ফাতওয়ায়ে সুফিয়াতেও রয়েছে। কিতাবুল ফিরদাউসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি আযানে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’ শুনে স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলিদ্বয়ের নখে চুম্বন করে, আমি তাকে ধরে আমার পেছন পেছনে বেহেশতে নিয়ে যাবো এবং তাকে জান্নাতিদের কাতারে অন্তভর্‚ক্ত করবো। উক্ত বিষয়ের পরিপূর্ণ আলোচনা বাহারুর রায়েকের টীকাসহ ফতোয়ায়ে রামলিতেও আছে।’
¶ ইমাম ইবনে আবেদীন শামি : ফতোয়ায়ে শামি- ১/৩৯৮ পৃষ্ঠা- কিতাবুল আযান অধ্যায়। মুফতী আমিমুল ইহসান মুজাদ্দেদী : কাওয়াইদুল ফিক্হ : ১/২৩৩। ইমাম আহমদ রেযা খাঁন : আহকামে শরিয়ত : ১/১৭২। ইমাম আহমদ রেযা : ফতোয়ায়ে আফ্রিকা : ৭৮। মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জা‘আল হক্ব : ২/২৪৬। আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসিরে রুহুল বায়ান : ৭/২২৯ পৃ:
✧ উপরোক্ত ইবারতে ছয়টি কিতাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন-শামী, কনযুল ইবাদ, ফাতওয়ায়ে সূফিয়া, কিতাবুল ফিরদাউস, কুহস্থানী এবং ‘বাহারুর রায়েক’ এর টীকা। ওই সব কিতাবে একে মুস্তাহাব বলা হয়েছে।
المقاصد الحسنة في بيان كثير من الأحاديث المشتهرة على الألسنة
নামক গ্রন্থে ইমাম সাখাবী (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন-
ذَكَرَهُ الدَّيْلَمِيُّ فِي الْفِرْدَوْسِ مِنْ حَدِيثِ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ أَنَّهُ لَمَّا سَمِعَ قول المؤذن أشهد أن محمد رَسُولُ اللَّه قَالَ هَذَا، وَقَبَّلَ بَاطِنَ الأُنْمُلَتَيْنِ السَّبَّابَتَيْنِ وَمَسَحَ عَيْنَيْهِ، فَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ فَعَلَ مِثْلَ مَا فَعَلَ خَلِيلِي فَقَدْ حَلَّتْ عَلَيْهِ شَفَاعَتِي، ولا يصح.
-ইমাম দায়লমী (رحمة الله) ‘ফিরদাউস’ কিতাবে ‘হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি মুয়ায্যিন যখন ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’ বলতে শোনলেন, তখন তিনিও তা বললেন এবং বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ে চুম্বন করে চোখে মালিশ করলেন। তা দেখে রাসুল (ﷺ) ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি আমার বন্ধু (আবু বকর)’র ন্যায় আমল করবে, তার জন্য আমার সুপারিশ অবধারিত হয়ে গেলো। এ হাদীছটি অবশ্য বিশুদ্ধ হাদীছের পর্যায়ভুক্ত নয়।’
¶ ইমাম আবদুর রহমান সাখাভী: মাকাসিদুল হাসানা- ৩৮৩ হাদিস- ১০২১। আল্লামা আযলুনি: কাশফুল খাফা- ২/২৫৯ হাদিস- ২২৯৬। আল্লামা মোল্লা আলি ক্বারী: আসরারুল মারফু- ৩১২ পৃষ্ঠা হাদিস- ৪৫৩। আল্লামা ইমাম তাহতাভী: মারাকিল ফালাহ- ১৬৫। আল্লামা শাওকানি: ফাওয়াহিদুল মাওদু’আত- ১/৩৯। আল্লামা ইসমাইল হাক্কী: তাফসিরে রুহুল বায়ান- ৭/২২৯। আল্লামা তাহের পাটনী: তাযকিরাতুল মাওদু’আত- ৩৪, আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতি: লা’আলিল মাসনু’আ- ১৬৮-১৭০। আল্লামা আব্দুল হাই লাখনৌভী: আসাররুল মারফু’আ- ১৮২, নাসিরুদ্দিন আলবানি: সিলসিলাতদ দাঈফা- ১/১০২ পৃ: হাদিস/৭৩। এ হাদিসটির গ্রহণযোগ্যতা জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ১ম খন্ড (প্রথম প্রকাশ) .....পৃষ্ঠায় দেখুন।
উক্ত ‘আল-মাকাসিদুল হাসানা’ গ্রন্থে আবুল আব্বাসের (رحمة الله) রচিত মুজেযা গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে-
عن الخضر عليه السلام أنه: من قال حين يسمع المؤذن يقول أشهد أن محمد رسول اللَّه: مرحبا بحبيبي وقرة عيني محمد بن عبد اللَّه صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثم يقبل إبهاميه ويجعلهما على عينيه لم يرمد أبدا
-‘হযরত খিযির (عليه السلام) থেকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রাসুলুল্লাহ শুনে বলবে ‘মারহাবা বি হাবিবি ওয়া কুররাতো আইনি মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ (ﷺ)’ অত:পর স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে লাগাবে, তাহলে ওর চোখ কখনও পীড়িত হবে না।’
¶ আল্লামা ইমাম সাখাভী: মাকাসিদুল হাসানা- ১/৩৮৩ হাদিস- ১০২১। আল্লামা আযলুনি: কাশফুল খাফা- ২/২৭০ হাদিস- ২২৯৬। আল্লামা মোল্লা আলি ক্বারী: মাওদু’আতুল কাবির- ১০৮। আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী- জা’আল হক- ২/২৪৬ পৃ:। এ হাদিসটির গ্রহণযোগ্যতা জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ১ম খন্ড (প্রথম প্রকাশ) .....পৃষ্ঠায় দেখুন।
উক্ত গ্রন্থে আরোও বর্ণনা করা হয়েছে-হযরত মুহাম্মদ ইবনে বাবা নিজের একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন যে এক সময় জোরে বাতাস প্রবাহিত হয়েছিল। তখন তাঁর চোখে একটি পাথরের কণা পড়েছিল যা বের করতে পারে নি এবং খুবই ব্যথা অনুভব হচ্ছিল।
وأنه لما سمع المؤذن يقول أشهد أن محمدا رسول اللَّه قال ذلك، فخرجت الحصاة من فوره
যখন তিনি মুয়াযযিনের কণ্ঠে আশহাদু আন্না মুহাম্মুদার রসুলুল্লাহ শুনলেন, তখন তিনি উপরোক্ত দুআটি পাঠ করলেন এবং অনায়াসে চোখ থেকে পাথর বের হয়ে গেল।
¶ ইমাম সামসুদ্দীন সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, পৃষ্ঠা-৬০৫, হাদিস-১০২০, দারুল কিতাব আরাবী, বয়রুত, লেবানন, আজলূূনী, কাশফুল খাফা, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৬৯, হাদিস-২২৯৬
একই ‘আল-মাকাসিদুল হাসানা’ গ্রন্থে হযরত শামস মুহাম্মদ ইবনে সালেহ মদনী থেকে বর্ণিত আছে যে তিনি ইমাম আমজাদ (মিসরের অধিবাসী পূর্ববর্তী উলামায়ে কিরামের অর্ন্তভূক্ত)কে বলতে শুনেছেন-যে ব্যক্তি আযানে হুযুর (ﷺ) এর নাম মুবারক শোনে স্বীয় শাহাদাত ও বৃদ্ধাঙ্গুলী একত্রিত করে-
وقبلهما ومسح بهما عينيه لم يرمد أبدا
উভয় আঙ্গুলকে চুম্বন করে চোখে লাগাবে, কখনও তার চক্ষু পীড়িত হবে না।
¶ ইমাম সামসুদ্দীন সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, পৃষ্ঠা-৬০৫, হাদিস-১০২০, দারুল কিতাব আরাবী, বয়রুত, লেবানন, আজলূূনী, কাশফুল খাফা, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৬৯, হাদিস-২২৯৬
ইরাক-আযমের কতেক মাশায়েখ বলেছেন যে, যিনি এ আমল করবেন, তাঁর চোখ রোগাক্রান্ত হবে না।
وقال لي كل منهما: منذ فعله لم ترمد عيني
কিতাব রচয়িতা বলেছেন-যখন থেকে আমি এ আমল করেছি আমার চক্ষু পীড়িত হয়নি।
¶ ইমাম সামসুদ্দীন সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, পৃষ্ঠা-৬০৫, হাদিস-১০২০, দারুল কিতাব আরাবী, বয়রুত, লেবানন, আজলূূনী, কাশফুল খাফা, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৬৯, হাদিস-২২৯৬
কিছু অগ্রসর হয়ে উক্ত মকাসেদে হাসনা গ্রন্থে আরও বর্ণিত হয়েছে-
قال ابن صالح: وأنا وللَّه الحمد والشكر منذ سمعته منهما استعملته فلم ترمد عيني، وأرجو أن عافيتهما تدوم، وأني أسلم من العمى إن شاء اللَّه
হযরত ইবনে সালেহ বলেছেন: যখন আমি এ ব্যাপারে জানলাম, তখন এর উপর আমল করলাম। এরপর থেকে আমার চোখ পীড়িত হয়নি। আমি আশা করি, ইনশা আল্লাহ এ আরাম সব সময় থাকবে এবং অন্ধত্ব থেকে মুক্ত থাকবো।
¶ ইমাম সামসুদ্দীন সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, পৃষ্ঠা-৬০৬, হাদিস-১০২০, দারুল কিতাব আরাবী, বয়রুত, লেবানন।
উক্ত কিতাবে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে ইমাম হাসন (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি আশহাদতু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ” শোনে যদি বলে:
مرحبا بحبيبي وقرة عيني محمد بن عبد اللَّه صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ويقبل إبهاميه ويجعلهما على عينيه لم يعم ولم يرمد
এবং নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলি চুম্বন করে চোখে লাগাবে এবং বলবে لم يعم ولم يرمد তাহলে কখনও সে অন্ধ হবে না। এবং কখনও তার চক্ষু পীড়িত হবে না।
¶ ইমাম সামসুদ্দীন সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, পৃষ্ঠা-৬০৬, হাদিস-১০২০, দারুল কিতাব আরাবী, বয়রুত, লেবানন।
মোট কথা হলো মকাসেদে হাসনা গ্রন্থে অনেক ইমাম থেকে এ আমল প্রমাণিত করা হয়েছে।
শরহে নেকায়ায় বর্ণিত আছে:
وَاَعْلَمْ اَنَّهُ يُسْتَحَبُّ اَنْ يُقَالَ عِنْدَ سَمَاعِ الْاَوْلٰى مِنَ الشَّهَادَة الثَّانِيَّةَ صَلَّى اللهُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ الله وَ عِنْدَ الثَّانِيَّةَ مِنْهَا قُرَّةُ عَيْنِىْ بِكَ يَا رَسُوْلَ اللهَ بَعْدَ وَضَعِ ظُفْرَى اِبْهَامَيْنِ عَلٰى الْعَيْنَيْنِ فَاِنَّهُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ يَكُوْنَ لَهُ قَائِدَا اِلَى الْجَنَّةَ كَذَا فِى كَنْزُ الْعُبَّاد
-‘‘জানা দরকার যে মুস্তাহাব হচ্ছে যিনি দ্বিতীয় শাহাদতের প্রথম শব্দ শোনে বলবেন: صَلَّى اللهُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ الله (সাল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া রাসুলুল্লাহ) এবং দ্বিতীয় শব্দ শোনে বলবেন قُرَّةُ عَيْنِىْ بِكَ يَا رَسُوْلَ اللهَ (কুররাতু আইনী বেকা ইয়া রাসুলাল্লাহ) এবং নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বযের নখ চক্ষুদ্বয় রাখবেন, ওকে হুযুর (ﷺ) নিজের পিছনে পিছনে বেহেশতে নিয়ে যাবেন। অনুরূপ কনযুল ইবাদেও বর্ণিত আছে।’’
¶ ইমাম আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে নেকায়া, জামেউর রমুয, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১২৫।
মাওলানা জামার ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উমর মক্কী (কুঃ) স্বীয় ফাতওয়ার কিতাবে উল্লেখ করেছেন:
تقبيل الابهامين ووضع هما على العينين عند ذكر اسمه عليه السلام فى الاذان جائز بل مستتحب صرح به مشائخنا
-‘‘আযানে হুযুর (ﷺ) এর পবিত্র নাম শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু দেয়া এবং চোখে লাগানো জায়েয বরং মুস্তাহাব। আমাদের মাশায়েখে কিরাম এ ব্যাপারে বিশদ বর্ণনা করেছেন।’’
¶ আলা’ হযরত, ফাতওয়ায়ে রযভিয়্যাহ, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-৪৩৬।
আল্লামা মুহাম্মদ তাহির (رضي الله عنه) تكملة مجمع بحار الانوار গ্রন্থে উপরোক্ত হাদীছকে “বিশুদ্ধ নয়” মন্তব্য করে বলেন:
وروى تجربة ذالك عن كثيرين
কিন্তু এ হাদীছ অনুযায়ী আমলের বর্ণনা অনেক পাওয়া যায়।
আরও অনেক ইবারত উদ্ধৃত করা যায়। কিন্তু সংক্ষেপে করার উদ্দেশ্য এটুকুই যথেষ্ট মনে করলাম।
হযরত সদরুল আফাযেল আমার মুর্শিদ ও উস্তাদ আলহাজ্ব মাওলানা সৈয়দ নঈম উদ্দীন সাহেব কিবলা মুরাদাবাদী বলেছেন, লন্ডন থেকে প্রকাশিত ইনজিল গ্রন্থের একটি অনেক পুরানো কপি পাওয়া গেছে, যেটার নাম ইনজিল বারনাবাস। ইদানিং এটা ব্যাপকভাবে প্রকাশিত এবং প্রত্যোক ভাষায় অনুদিত হয়েছে। এর অধিকাংশ বিধানাবলীর সাথে ইসলামের বিধানাবলীর মিল রয়েছে। এ গ্রন্থের এক জায়গায় লিখা হয়েছে যে হযরত আদম (عليه السلام) যখন রুহুল কুদ্দুস (নুরে মুস্তাফা) কে দেখার জন্য আরজু করলেন, তখন সেই নুর তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলের নখে চমকানো হলো। তিনি মহব্বতের জোশে উক্ত নখদ্বয়ে চুমু দিলেন এবং চোখে লাগালেন।
(রুহুল কুদ্দুসের অর্থ নুরে মোস্তফা কেন করা হল; এর ব্যাখ্যা আমার কিতাব শানে হাবিবুর রহমানে দেখুন। ওখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে ঈসা (عليه السلام) এর যুগে রুহুল কুদ্দুস নামেই হুযুর (ﷺ) মশহুর ছিলেন।) হানাফী আলিমগণ ছাড়াও শাফেঈ ও মালেকী মযহাবের আলিমগণও বৃদ্ধাঙ্গুলিদ্বয় চুম্বন মুস্তাহাব হওয়া সম্পর্কে একমত। যেমনঃ
শাফেঈ মযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব إعانة الطالبين على حل ألفاظ فتح المعين এর ২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে:
ثُمَّ يُقَبِّلَ إِبْهَامَيْهِ وَيَجْعَلُهُمَا عَلٰى عَيْنَيْهِ لَمْ يُعْمِ وَلَمْ يَرْمَدْ أَبَدًا.
-অতঃপর নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলির চুমু দিয়ে চোখে লাগালে, কখনও অন্ধ হবে না এবং কখনও চক্ষু পীড়া হবে না।
¶ দিমিয়াতী, এনাতুত-তালেবীন, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-২৩৩, দারু ইহ্ইয়াউত-তুরাশুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন।
মালেকী মযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব كفاية الطالب الربانى لرسالة ابن ابى زيد القيردانى এর প্রথম খন্ডের ১৬৯ পৃষ্ঠায় এ প্রসঙ্গে অনেক কিছু বলার পর লিখেছেন:
ثُمَّ يُقَبِّلَ إِبْهَامَيْهِ وَيَجْعَلُهُمَا عَلٰى عَيْنَيْهِ لَمْ يُعْمِ وَلَمْ يَرْمَدْ أَبَدًا.
অতঃপর বৃদ্ধাঙ্গুলিদ্বয় চুমু দেবে এবং চোখে লাগাবে, তাহলে কখনও অন্ধ হবে না। এবং কখনও চক্ষু পীড়া হবে না।
এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আল্লামা শেখ আলী সাঈদী عدوى নামক কিতাবের ১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন:
لم يبين موضع التقبيل من ابهامين الا انه نقل عن الشيخ العالم المفسر نور الدين الخراسانى قال بعضهم لقيته وقت الاذان فلما سمع المؤذن يقول اشهد ان..............قبل ابهامى نفسه ومسح بالظفرين اجفان عينيه من المال الى ناحية الصدع ثم فعل ذالك عند كل تشهد مرة فسالته عن ذالك فقال كنت افعله ثم تركته فمرضت عينى فرءيته ﷺ مناما فقال لما تركت مسح عينيك عند الاذان ان اردت ان تبرأ عينك فعل فى المسح فاستيقظت ومسحت فبرءت ولم يعاودنى فى مرضها الى الان
-গ্রন্থাহার বৃদ্ধাঙ্গুলি চুম্বনের সময়ের কথা উল্লেখ করেন নি। অবশ্য শেখ আল্লামা মুফাসসির নুরুদ্দীন খুরাসানী থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি কতেক লোককে আযানের সময় লক্ষ্য করেছেন যে যখন তারা মুয়াযযিনের মুখে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ শুনলেন, তখন নিজেদের বৃদ্ধাঙ্গুলে চুমু দিলেন এবং নখদ্বয়কে চোখের পলকে এবং চোখের কোণার লাগালেন এবং কান পর্যন্ত বুলিয়ে নিলেন। প্রত্যেক শাহাদতের সময় এ রকম একবার করলেন। আমি ওদের একজনকে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন আমি বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু দিতাম কিন্তু মাঝখানে ছেড়ে দিয়েছিলাম। তখন আমার চক্ষু রোগ হয়। এর মধ্যে এক রাত আমি হুযুর (ﷺ) কে স্বপ্নে দেখলাম। তিনি (ﷺ) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন: আযানের সময় বৃদ্ধাঙ্গুলিদ্বয় চোখে লাগানো কেন ছেড়ে দিয়েছ? যদি তুমি চাও, তোমার চোখ পুনরায় ভাল হোক, তাহলে তুমি পুনরায় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চোখে লাগানো আরম্ভ কর। ঘুম ভাঙ্গার পর আমি পুনরায় এ আমল শুরু করে দিলাম এবং আরোগ্য লাভ করলাম। আজ পর্যন্ত সেই রোগে আর আক্রান্ত হইনি।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতিভাত হলো যে, আযান ইত্যাদিতে বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন ও চোখে লাগানো মুস্তাহাব, হযরত আদম (عليه السلام) সিদ্দীকে আকবর (رضي الله عنه) ও ইমাম হাসান (رضي الله عنه) এর সুন্নাত। ফকীহ, মুহাদ্দিস ও মুফাসসিরগণ এটা মুস্তাহাব হওয়া সম্পর্কে একমত। শাফেঈী ও মালেকী মাযহাবের ইমামগণ এটা মুস্তাহাব হওয়া সম্পর্কে রায় দিয়েছেন। প্রত্যেক যুগে এবং প্রত্যেক মুসলমান একে মুস্তাহাব মনে করেছেন এবং করেছেন। এ আমলে নিম্নবর্ণিত ফায়দাগুলো রয়েছে?
আমলকারীর চোখ রোগ থেকে মুক্ত থাকবে এবং ইনশাআল্লাহ কখনও অন্ধ হবে না, যে কোন চক্ষু রোগীর জন্য বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বনের আমলটি হচ্ছে উৎকৃষ্ট চিকিৎসা। এটা অনেকবার পরীক্ষিত হয়েছে। এর আমলকারী হুযুর (ﷺ) এর শাফায়াত লাভ করবে এবং ওকে কিয়ামতের কাতার থেকে খুঁজে বের করে তাঁর (ﷺ) পিছনে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন।
একে হারাম বলা মুর্খতার পরিচায়ক। যতক্ষণ পযর্ন্ত নিষেধাজ্ঞার সুস্পষ্ট দলীল পাওয়া যাবে না, ততক্ষণ একে নিষেধ করা যাবে না। মুস্তাহাব প্রমাণের জন্য মুসলমানগণ মুস্তাহাব মনে করাটা যথেষ্ট। কিন্তু হারাম বা মাকরূহ প্রমাণের জন্য নির্দিষ্ট দলীলের প্রয়োজন যেমন আমি বিদআতের আলোচনায় উল্লেখ করেছি।
বিঃদ্রঃ আযান সম্পর্কে তো সুস্পষ্ট এবং বিস্তারিত রিওয়ায়েত ও হাদীছ সমূহ মওজুদ আছে, যা ইতিপূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে। তকবীরও আযানের মত। হাদীছসমূহে তকবীরকে আযান বলা হয়েছে-দু’আযানের মাঝখানে নামায আছে অর্থাৎ আযান ও তকবীরের মধ্যবর্তী। সুতরাং তকবীরে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রাসুলুল্লাহ’ বলার সময়ও বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করা ফলপ্রসূ ও বরকতময়। আযান ও তকবীর ব্যতীতও যদি কেউ হুযুর (ﷺ) এর পবিত্র নাম শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু দেয়, তাতে কোন ক্ষতি নেই বরং সদুদ্দেশ্যে হলে তাতে ছওয়াব রয়েছে। বিনা দলীলে কোন কিছু নিষেধ করা যায় না। যেভাবেই হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের তাযীম করা হবে, ছওয়াব রয়েছে।