খতেমুল আম্বিয়া আহমদ মুজতবা মোহাম্মদ মোস্তফা (সঃ) এর পবিত্র বাক্যাবলীর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তিনি স্বয়ং এরশাদ ফরমান, আমাকে জামে কালামের বৈশিষ্ট্য প্রদান করা হয়েছে এবং আমার জন্য কালামকে সংক্ষিপ্ত করে দেয়া হয়েছে। জামে কালাম এর অর্থ হচ্ছে, এমন শব্দসম্বলিত বাক্য যা সর্বাধিক সংক্ষিপ্ত অথচ অধিক অর্থবাহী। উলামায়ে কেরাম আপন আপন শক্তি ও ক্ষমতা অনুসারে হুজুর পাক (সঃ) এর এ জাতীয়. কিছু বাণী সংগ্রহ করেছেন। বিশেষ করে তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বাদশাহ্, শাসক বা বড়ো বড়ো আমীরগণের নিকট যে সব চিঠিপত্র প্রদান করেছেন—উলামায়ে কেরাম এগুলিকে সংকলন করে তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন। তন্মধ্যে কতিপয় জামে কালাম হুজুর পাক (সঃ) এর অবয়বিক পূর্ণতা ও সৌন্দর্য রূপায়ণের অন্তর্ভূত। মনে করা হয়, এসমস্ত বাণী হুজুর পাক (সঃ) এর যবান মোবারক থেকেই নিঃসৃত ।
১. নিশ্চয়ই আমল নির্ভর করে নিয়তের উপর।
— এই হাদীছখানা দ্বীনের ভিত্তিসমূহের ভিতর এক সুমহান ভিত্তি। হাদীছ সমূহের মধ্যে সবচেয়ে জামে বা পূর্ণাঙ্গ ও সর্বাধিক ফলদায়ক। কোনো কোনো মহৎ ব্যক্তিতো এ হাদীছকে দ্বীনী এলেমের এক তৃতীয়াংশ বলে থাকেন। যেহেতু দ্বীনের মূল অংশ হচ্ছে তিনটি—কথা, কাজ ও নিয়ত। আবার কেউ কেউ একে এলেমে দ্বীনের অর্ধেক বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেহেতু আমল দু' প্রকার । প্রথম কলব বা অন্তর্জগতের আমল । দ্বিতীয় অঙ্গ প্রত্যঙ্গের আমল । কলবী আমলের ক্ষেত্রে নিয়ত হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম। এর ভিত্তিতেই এ আমলকে অর্থাৎ নিয়তকে এলমে দ্বীনের অর্ধাংশ বলা হয়েছে। এমনকি দু অংশের মধ্যে এই অর্ধাংশটিই হচ্ছে অধিকতর ব্যাপক। মূলতঃ নিয়তই কলবী আমল ও শারীরিক আমল এবং সমস্ত ইবাদতের মূল ভিত্তি। এ পরিপ্রেক্ষিতে নিয়তকে যদি সম্পূর্ণ এলেম বলা হয় তবুও অত্যুক্তি হবে না ।
২. সুন্দর ইসলাম হচ্ছে বেহুদা কথা ও কাজ পরিত্যাগ করা। অর্থাৎ যে ব্যক্তিই উত্তম রূপে ইসলাম গ্রহণ করবে, সে যাবতীয় অতিরিক্ত কাজকর্ম ও কথাবার্তা থেকে দূরে সরে থাকবে ।
৩. পরিপূর্ণ মুসলমান ঐ ব্যক্তি যার হাত ও মুখ থেকে অন্যান্য মুসলমানেরা নিরাপদ ।
৪. কোনো ব্যক্তি ঐ পর্যন্ত মুমেন হতে পারবেনা, যতক্ষণ না সে তার নিজের জন্য যা পছন্দ করে, তার অপর ভাইদের জন্য তাই পছন্দ করবে ।
৫. দ্বীন মানে পরিপূর্ণ কল্যাণকামনা ।
৬. অপবাক্যের সাথে মুছিবত জড়িত ।
৭. মজলিশ বা সংস্থাসমূহ আমানতদারীর উপরে নির্ভরশীল।
৮. যার কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করা হয়, সে উক্ত কথার আমানতদার।
৯. মন্দ পরিহার করা একপ্রকারের সদ্কা।
১০. লজ্জাশীলতা পরিপূর্ণ কল্যাণ ।
১১. এলেমের মর্যাদা ইবাদতের মর্যাদার চেয়ে শ্রেয় ।
১২. সুস্থতা ও শ্রমবিমুখতা দু'টি ক্ষতিকর নেয়ামত। অধিকাংশ লোক এই দুই অবস্থায় অবস্থিত ।
১৩. যে ব্যক্তি মালে ভেজাল মিশ্রিত করে সে আমাদের দলভুক্ত নয় ।
১৪. কল্যাণের দিকে পথপ্রদর্শনকারী কল্যাণকারীর ন্যায় ।
১৫. কোনো বস্তুর মহব্বত তাকে অন্ধ ও বধির বানিয়ে দেয় ।
১৬. যে যাকে মহব্বত করে সে তার সঙ্গে।
১৭. তোমার পরিবার পরিজনের উপর থেকে শাসনের দন্ড উঠিয়ে নিওনা ৷
১৮. তোমাদের নিকট ঐ ব্যক্তিই উত্তম, যে তার পরিবার পরিজনের জন্য উত্তম ।
১৯. আমলের ক্ষেত্রে যে অলস, বংশ মর্যাদার মাধ্যমে সে ব্যক্তিগত সম্পন্ন হতে পারে না ।
২০. সাক্ষাৎ করো বিরতির সাথে, (আখেরাতের) পণ্য সংগ্রহ করো মহব্বতের সাথে ।
২১. নিশ্চিন্ততার প্রশস্ততা থেকে দূরে থাকো ।
২২. মনে প্রাণে না চাইলে কারও উপর দ্বীন প্রবল হয় না।
২৩. ঐ ব্যক্তিই বুদ্ধিমান যে নিজকে দ্বীনদার বানায় এবং মৃত্যুপরবর্তী জীবনের জন্য আমল করে।
২৪. অনাচারী ঐ ব্যক্তি, যে নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, আবার আল্লাহ্তায়ালার রহমতও কামনা করে ।
২৫. ঐ ব্যক্তি শক্তিমান নয় যে মানুষের উপর প্রাবল্য লাভ করে, বরং যে স্বীয় প্রবৃত্তির উপর প্রাবল্য লাভ করে সেই প্রকৃত শক্তিমান ।
২৬. প্রশংসা করা মুমেন ব্যক্তির বসন্ত সদৃশ ।
২৭. অল্পে তুষ্ট থাকা এমন এক ধনভান্ডার যা কখনও বিলুপ্ত হয় না ।
২৮. খরচে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা অর্ধেক জীবন ।
২৯. মানুষের প্রতি ভালোবাসা রাখা বুদ্ধিমত্তার অর্ধেক ।
৩০. সুন্দর প্রশ্ন করা এলেমের অর্ধেক ।
৩১. তদবীরের ন্যায় কোনো এলেম নেই ।
৩২. জিহবাকে সংযত রাখার মতো কোনো পরহেজগারী নেই ।
৩৩. সৎ চরিত্রের ন্যায় কোনো মহব্বত নেই ।
৩৪. রেজাআত (দুগ্ধপান) স্বভাববহির্ভূত কাজ ।
৩৫. ইমানই নিরাপত্তা ।
৩৬. যে ব্যক্তি আমানতদার নয় সে ইমানদার নয় ।
৩৭. যে অঙ্গীকার রক্ষা করেনা সে দ্বীনদার নয় ।
৩৮. মানুষের সৌন্দর্য তার ভাষার অলংকারে।
৩৯. মূর্খতার চেয়ে কঠিন কোনো অভাব নেই ।
৪০. বুদ্ধিমত্তার চেয়ে প্রিয় কোনো ধন নেই ।
৪১. এলেমকে এলেমের প্রতি সম্মিলন করার চেয়ে সুন্দর কোনো সম্মিলন নেই ৷
৪২. দুনিয়াতে সঙ্গীহীন বা মোসাফিরের মতো থাকো এবং নিজকে কবরের বাসিন্দা মনে করো ।
৪৩. ক্ষমাগুণ বান্দার মর্যাদাকে বৃদ্ধি করে থাকে।
৪৪. বিনয় বান্দার সম্মানকে বৃদ্ধি করে ।
৪৫. দান করলে মালের ঘাটতি হয় না ।
৪৬. নেকীর ভাণ্ডার মুসিবত গোপন করার মধ্যে ।
৪৭. আপন ভাইয়ের নিন্দনীয় কাজকে প্রকাশ করোনা। এরূপ করলে আল্লাহ্তায়ালা তোমাকে শাস্তি দিবেন অথবা ঐকাজে লিপ্ত করিয়ে দিবেন।
উপরোক্ত হাদীছসমূহ প্রত্যেকটিই বিস্ময়কর ও সূক্ষ্ম এবং দ্বীন দুনিয়ার কল্যাণে পরিপূর্ণ। এসমস্ত কথামালা দুনিয়া ও আখেরাতের সৌভাগ্যের চাবিকাঠি। এ ধরনের বাক্য আরও অসংখ্য ও অগণিত রয়েছে। কার্যত এ সময় যা দৃষ্টিগোচর হয়েছে তা কিঞ্চিৎ লিপিবদ্ধ করা হলো। এসকল বাক্যের প্রত্যেকটি যদি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয় তবে দফতরকে দফতর পূর্ণ হয়ে যাবে কিন্তু লেখা শেষ হবেনা ।
الدين النصيحة كله ‘আদ্দীনুন্নাসিহাতু কুলুহু’ ‘দ্বীন মানে পরিপূর্ণ কল্যাণ কামনা' হাদীছখানা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মানুষের সকল এলেমের আধার। দুনিয়ার আলেম সম্প্রদায় সকলে যদি এই হাদীছের ব্যাখ্যা করার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালান তবুও এর একাংশ প্রকাশ করা সম্ভব হবে না। কেননা তাঁরা যা কিছুই আলোচনা করবেন তা তাঁদের জ্ঞান ও ধারণার পরিমন্ডল অনুপাতে করবেন। কিন্তু এ বাণীর স্থান আরও উর্দ্ধে ।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০১১) পবিত্র অলংকারপূর্ণ বাণী | (০১৩) মস্তক মোবারক |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |