وَتَفْصِيلَ الْكِتَابِ لَا رَيْبَ فِيهِ
-‘‘এবং লওহে মাহফুজে যা কিছু লিখা আছে, কুরআনে তার বিস্তৃতি বিবরণ রয়েছে। এতে কোন সন্দেহ নেই।’’
{সূরাঃ ইউনূস, আয়াতঃ ৩৭, পারাঃ ১১}
তাফসীরে ‘জালালাইনে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে,
تَفْصِيْلَ الْكِتَابِ يُبُيَّنُ مَاكَتَبَ اللهُ تَعَالَى ِمَن اْلَاْحَكاِم َوَغْيِرهَا
-‘‘ইহা বিস্তারিত বিবরণ সম্বলিত গ্রন্থ। এতে আল্লাহ তা’আলার লিখিত বিধানাবলী ও অপরাপর বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।’’
{আল্লামা জালালুদ্ধীন সূয়তীঃ তাফসীরে জালালাইনঃ ২৭২ পৃ.}
‘জুমুলে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আছে,
اَىْ فِى اللَّوْحِ الْمَحْفُوْظِ.
-‘‘লওহে মাহফুজে সবকিছুই বিস্তারিতভাবে বর্ণিত আছে।
তাফসীরে ‘রূহুল বয়ানে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে,
اَىْ وَتَفْصِيْلَ مَا حُقِّقَ وَاُثْبِتَ مِنَ الْحَقَائِقِ وَالشَّرَائِعِ وَفِى التَّاوِيْلاَتِ النَّجْمِيَّةِ اَىْ تَقْصِيْلَ الْجُمْلَةِ الَّتِىْ هِىَ الْمُقَدَّرُ الْمَكْتُوْبُ فِى الْكِتَبِ الَّذِىء لاَ يَتَطَرَّقُ اِلَيْهِ الْمَحْوُ وَاْلاَثْبَاتُ لاِنَّهُ اَزَلِىُّ وَاَبَدِىٌُّ
-‘‘এ কুরআন হচ্ছে শরীয়ত ও হাকীকতের প্রমাণিত বিষয়সমূহের বিশেষণ। ‘তাবীলাতে নজ্মিয়া’তে উল্লেখিত আছে যে, কুরআনে সে সমস্ত বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে, যা’ অদৃষ্টে আছে, এবং যা’ সেই কিতাবে (লওহে মাহফুজ) লিপিবদ্ধ রয়েছে, যেখানে কোনরূপ রদবদলের অবকাশ নেই। কেননা এটা অনাদি ও অনন্ত।’’
{আল্লামা ইসমাঈল হাক্কীঃ তাফসীরে রুহুল বায়ানঃ ৪/৬৪ পৃ.}
উপরোক্ত আয়াত ও ব্যাখ্যাসমূহ থেকে প্রমাণিত হলো যে, কুরআন শরীফে শরীয়তের অনুশাসন সমূহ ও সমস্ত জ্ঞান মওজুদ আছে। এ আয়াত থেকে আরও বোঝা গেল যে, কুরআন শরীফে পুরা লওহে মাহফুজের বিস্তারিত বিবরণ আছে। আর লওহে মাহফুজ হচ্ছে সমস্ত জ্ঞানের আকর।
কুরআনেই উল্লেখিত আছে,
وَلاَ رَطَبٍ وَّلاَ يَابِسٍ اِلاَّفِىْ كِتَابٍ مُّبِيْنِ
এবং কুরআনে আরও এরশাদ করা হয়েছে,
اَلَرً حْمَنُ عَلَّمَ الْقُرْاَنَ
সুতরাং, লওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ সমস্ত কিছুর জ্ঞান হুযুর পুর-নুর (ﷺ)এর রয়েছে। কেননা, কুরআন হচ্ছে লওহে মাহফুজেরই বিবরণ সম্বলিত গ্রন্থ।
مَا كانَ حَدِيثاً يُفْتَرى وَلكِنْ تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ كُلِّ شَيْءٍ
-‘‘এ কোন বানোওয়াট কথা নয়, এতে রয়েছে আল্লাহর আগের উক্তি সমূহের সত্যায়ন ও প্রত্যেক বিষয়ের বিস্তারিত বর্ণনা।’’
{সূরাঃ ইউসূফ, আয়াতঃ ১১১, পারাঃ ১৩}
তাফসীরে ‘খাযেনে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যা এভাবে করা হয়েছে,
يَعْنِىْ فِىْ هَذَا الْقُرْآَنِ الْمُنَزَّلِ عَلَيْكَ يَامُحَمَّدُ تَفْصِيْلُ كُلِّ شَيْئٍى تَحْتَاجُ اِلَيْهِ مِنَ الْحَلاَلِ وَالْحَرَامِ وَالْحُدُوْدِ وَالْاَحَكَامِ وَالْقَصَصِ وَالْمَوَا عِظِ وَآلاَمَثَالِ وَغَيْرِ ذَلِكَ مِمَّا يَحْتَاجُ اِلَيْهِ الْعِبَادُ فِىْ اَمْرِ دِيْنِهِمْ وَدُنْيَاهُمْ
-‘‘(হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনার নিকট অবতীর্ণ এ কুরআনে রয়েছে সবকিছুর বিশদ বিবরণ, হালাল-হারাম, শাস্তি বিধান, আহকাম, কাহিনী সমূহ, উপাদেশাবলী ও উদাহরণসমূহ, মোট কথা, যা’ কিছু আপনার প্রয়োজন হয় আর এগুলো ছাড়াও ধর্মীয় ও পার্থিব কর্মকান্ডে বান্দাদের যে সমস্ত বিষয়াদি প্রয়োজন হয়, সবকিছুর বিবরণ ওই কুরআনেই পাওয়া যাবে।’’
{ইমাম খাযেনঃ লুবাবুত তাভীলঃ ২/৫৬২ পৃ.}
তাফসীরে ‘হুসাইনী’ তে আছে,
وَتَقْصِيْلُ كُلِّ شَيْئٍ، وبيان همه چيزهاكه محتاج بلشد دردين ودنيا
-‘‘দ্বীন-দুনিয়ার প্রয়োজনীয় সবকিছুর বর্ণনা এ কুরআনের মধ্যে আছে।’’
{ইমাম বগভীঃ মা’আলেমুত তানযীলঃ ৪/২৬৭ পৃ.}
ইবনে সুরাকা প্রণীত ‘কিতাবুল ই’জাযে আছে,
مَامِنْ شَيْئٍ فِى الْعَالَمِ اِلَّاهُوَ فِىْ كِتَابِ اللهِ تَعَالَى
-‘‘জগতে এমন কোন কিছু নেই, যা’ কুরআনের মধ্যে নেই।’’
اَلرَّحْمَنُ. عَلَّمَ الْقُرْاَنَ. خَلَقَ الْاِنْسَانَ. عَلَّمَهُ الْبَيَانَ
-‘‘দয়াবান আল্লাহ তা’আলা স্বীয় মাহবুবকে কুরআন শিখিয়েছেন, মানবতার প্রাণতুল্য হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে সৃষ্টির পূর্বাপর সব কিছুর তাৎপর্য বাতলে দিয়েছেন।
{সূরা রাহমান, আয়াতঃ ১-৪}
তাফসীরে ‘মাআলেমুত-তানযীল’ ও ‘হুসাইনী’তে এ আয়াতের ব্যাখ্যা করা হয়েছে নিম্নরূপ,
خَلَقَ الْاِنْسَانَ اَىْ مُحَمَّدً عَلَيْهِ السَّلاَمُ عَلَمَّهُ الْبَيَانَ. يَعْنِىْ بَيَانَ مَاكَانَ وَمَا يَكُوْنَ
-‘‘আল্লাহ তা’আলা মানবজাতি তথা মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত বিষয়ের বর্ণনা শিক্ষা দিয়েছেন।’’
{মোল্লা মুঈন কাশেফীঃ তাফসীরে হুসাইনীঃ সূরাঃ ইউসূফ, আয়াতঃ ১১১}
‘তাফসীরে খাযেনে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে,
قِيْلَ اَرَادَ بِالْاِنْسَانِ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ عَلَّمَهُ الْبَيَانَ يَعْنِىْ بَيَانَ مَاكَانَ وَمَايَكُوْنَ لِانَّهُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ نَبِّى عَنَ خَبْرِ الْاُوَّلِيَنَ وَالْاَخِرِيْنَ وَعَنْ يَوْمِ الدِّيْنِ
-‘‘বলা হয়েছে যে, (উক্ত আয়াতে) ‘ইনসান’ বলতে হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কে বোঝানো হয়েছে। তাঁকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সব বিষয়ের বিবরণ শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কেননা, তঁাকে পূর্ববতী ও পরবর্তীদের ও কিয়ামতের দিন সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।’’
{ইমাম খাযিনঃ তাফসীরে খাযিনঃ ৪/২০৮ পৃ.}
তাফসীরে ‘রূহুল বয়ানে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,
وَعَلَّمَ نَبِيَّنَا عَلَيْهِ السَّلاَم الْقُرْاَنَ وَاَسْرَارَ الْاُلُوْهِيَةِ كَمَا قَالَ وَعَلَّمْكَ مَالَمْ تَكُنَ تَعْلَمُ
-‘‘আল্লাহ তা’আলা আমাদের নবী (ﷺ)কে কুরআন ও স্বীয় প্রভুত্বের রহস্যাবলীর জ্ঞান দান করেছেন, যেমন স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা ফরমায়েছেন, وَعَلَّمَكَ مَاَلَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ সে সব বিষয় আপনাকে শিখিয়েছেন, যা আপনি জানতেন না।’’
{আল্লামা ঈসমাঈল হাক্কীঃ তাফসীরে রুহুল বায়ানঃ ৯/২৮৯পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।}
তাফসীরে ‘মাদারেকে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,
اَلْاِنْسَانُ اَىِ الْجِنْسَ اَوْاَدَمَ اَوْ مُحَمَّدًا عَلَيْهِ السَّلاَمُ
-‘‘ইনসান বলতে মানবজাতি বা আদম (عليه السلام) বা হুজুর (ﷺ)কে বোঝানো হয়েছে।’’
{ইমাম নাসাফীঃ তাফসীরে মাদারিকঃ ২/২৬৫ পৃ.}
তাফসীরে ‘মা’আলিমুত তানযীলে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,
وَقِيْلَ اَلْاِنْسَانُ هَهُنَا مُحَمَّدً عَلَيْهِ السَّلاَمُ وَبَيْانُهُ عَلَّمَكَ مَالَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ
-‘‘বলা হয়েছে যে, এ আয়াতে اِنْسَانُ ‘ইনসান’ বলতে হুজুর (ﷺ)কে বোঝানো হয়েছে এবং بَيَانُ ‘বয়ান’ বলতে এ কথাই বোঝানো হয়েছে যে, তাঁকে (প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) ঐ সমস্ত বিষয়ের জ্ঞান দান করা হয়েছে, যা তিনি জানতেন না।’’
{ইমাম বগভীঃ মা’আলিমুত তানযীলঃ ৪/২৬৭ পৃ.}
তাফসীরে হুসাইনী’তে আয়াতের তাফসীর বলা হয়েছে,
ياوجود محمد رابيا موزا نيددے
-‘‘অথবা একথা বোঝানো হয়েছে যে, মহান আল্লাহ হুজুর (ﷺ) এর সত্ত্বাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে যা কিছু হয়েছে বা হবে সে সমস্ত বিষয় সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছেন।’’
{মোল্লা মুঈন কাশেফীঃ তাফসীরে হুসাইনীঃ সূরাঃ রাহমানের ১-৪ আয়াতের ব্যাখ্যা দেখুন।}
উল্লেখিত আয়াত ও উহাদের তাফসীর সমূহ থেকে বোঝা গেল যে, কুরআনের মধ্যে সবকিছু আছে এবং এর পরিপূর্ণ জ্ঞান হুজুর (ﷺ)কে প্রদান করা হয়েছে।
مَااَنْتَ بِنِعْمَةِ رَبِّكَ بِمَجْنُوْنٍ
-‘‘আপনি আপনার প্রভুর মেহেরবাণীতে উম্মাদ নন।’’
{সূরাঃ কালাম, আয়াতঃ ২, পারাঃ ২৯}
তাফসীর ‘রূহুল বয়ানে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে,
بِمَسْتُوْرٍ عِلْمًا كَانَ فِى الْاَزَلِ وَمَا سَيَكُوْنُ اِلَى اْلَاَبِد لِاَنَّ الْجُنَّ هُوَ الشَّتَرُ بَلَّ اَنْتَ عَالِمٌُ بِمَا كَانَ وَخَبِيْرٌُ بِمَا سَيَكُوْنُ
-‘‘আপনার দৃষ্টি থেকে সে সমস্ত বিষয় লুকায়িত নয়, যা’ সৃষ্টির আদিকালে ছিল, ও যা কিছু অনন্তকাল পর্যন্ত হতে থাকবে। কেননা, جُن শব্দের অর্থ হলে লকুায়িত থাকা। সুতরাং, সারমর্ম হচ্ছে, যা কিছু হয়েছে সে সব কিছু সম্পর্কেতো আপনি জানেনই, যা কিছু অনাগত ভবিষ্যতে হবে সে ব্যাপারেও আপতি অবগত আছেন।’’
{আল্লামা ইসমাঈল হাক্কীঃ তাফসীরে রুহুল বায়ানঃ ৯/৩৪০-৩৪১}
এ আয়াত ও তাফসীর থেকে হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর সামগ্রিক ও অনন্তকাল পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত ইলমে গায়বের বিষয়টি প্রমাণিত হলো।
وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ
-‘‘এবং হে মাহবুব আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, তারা বলবে আমরাতো কৌতুক ও খেল-তামাশা করেছিলাম।’’
{সূরাঃ তাওবাহ, আয়াতঃ ৬৫, পারাঃ ১০}
তাফসীরে ‘দুররে মনসুর’ ও ‘তাবরী’তে এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উল্লেখিত আছে,
عَنْ اِبْنِ عَبَّاس اَنَّهُ قَالَ فِىْ قَوْلِهِ تَعَالَي وَلَئِنْ سَالْتَهُمْ. الخ قَالَ رَجُلٌُ مِنَ الْمُنَا فِقِيْنَ يُحَدِّثُنَا مُحَمَّدٌُ اَنَّ نَاقَةُ فُلاَنٍ بِوَادٍ فُلاَنٍ وَمَايُدْرِيْهِ بِالْغَيْبِ
-‘‘হযরত ইবনে আব্বাস (رضى الله تعالي عنه) থেকে এ আয়াত وَلَئِنْ سَالْتَهُمْ الخ অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপটে বর্ণিত আছে যে, জনৈক মুনাফিক বলে ছিল যে, হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) সংবাদ দিচ্ছেন অমুক ব্যক্তির উষ্ট্রী অমুক জঙ্গলে আটকা পড়েছে। অদৃশ্য বিষয় তাঁর কীই বা জানা আছে?
{ইমাম সূয়তীঃ তাফসীরে দুররে মানসূরঃ ৩/৪৫৬ পৃ.}
এ আয়াত ও তাফসীর থেকে একথাই জানা গেল যে, হুজুর (ﷺ) এর অদৃশ্য জ্ঞানকে অস্বীকার করা মুনাফিকদেরই কাজ। সেটাকে কুরআন ‘কুফর’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَدًا إِلَّا مَنِ ارْتَضَى مِنْ رَسُولٍ
-‘‘(আল্লাহ পাক) তাঁর মনোনীত রাসূলগণ ছাড়া কাউকেও তাঁর অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে অবহিত করেন না।’’
{সূরাঃ জ্বিন, আয়াতঃ ২৬, পারাঃ ২৯}
‘তাফসীরে কবীরে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে,
اَىْ وَقْتَ وَقُوْعِ الْقِيَمَةِ مِنَ الْغَيْبِ الَّذِىْ لَايُظْهِرُهُ اللهُ لِاَحَدٍ فَاِنْ قِيْلَ فَاِذَا اَحْمَلْتُمْ ذَلِكَ عَلَى الْقِيَمَةِ فَكَيْفَ قاَلَ اِلَّامَنِ ارْتَضَى مِنْ رَّسُوْلٍ مَعَ اَنَّهُ لَايُظْهِرُ هذَا الْغَيْبَ لِاَحَدٍ قُلْنَا يَّظْهِرَهُ عِنْدَ قَرِيْبِ الْقِيَمَةِ
-‘‘কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সুনির্দিষ্ট সময়ের প্রশ্নটি ঐ সমস্ত অদৃশ্য বিষয়ের অন্তভুর্ক্ত, যা’ আল্লাহ তা’আলা কারো কাছে প্রকাশ করেন নি। যদি কেউ প্রশ্ন করেন, আপনি এখানে ‘গায়বকে’ কিয়ামত’ অর্থে ব্যবহার করেছেন, যদি তাই হয়, তাহলে আল্লাহ তা’আলা কিভাবে ইরশাদ করলেন, اِلاَّمَنِ ارْتَضَى مِنْ رَّسُوْلٍ (কিন্তু মনোনীত রাসূলগণের নিকট ব্যক্ত করেন) অথচ (আপনার কথা মত) এ গায়বটি কারো কাছে প্রকাশ করা হয় না। এর উত্তরে আমি বলবো যে, আয়াতের মর্মকথা হচ্ছে কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে আল্লাহ পাক উক্ত অদৃশ্য বিষয়টি প্রকাশ করবেন।’’
{ইমাম ফখরুদ্দীন রাজীঃ তাফসীরে কবীরঃ ১০/৬৭৮ পৃ.}
‘তাফসীরে আযীযী’র ১৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে,
انچه به نسبت همه مخلوقات غائب است غائب مطلق است مثل وقت امدن قيامت واحكام تكونييه وشرعيه بارى تعالى ودرهر روز وهرشريعت ومثل خقائق ذات وصفات او تعالى على سبيل التفصيل ايں قسم راغيب خاص اوتعالى نيز مى نامند فلايظهر على غيبه احدا پس مطلع نمى كند برغيب خاص خود هيچكس رامگر كسى راكه پسند مى كند واں كس رسول باشد خواه ازجنس ملك وخواه ازجنس بشر مثل حضرت محمد مصطفے عليه السلام اورا اظهار بعضےز غيوب خاصه خود مي فرمائد
-‘‘যে বিষয় সৃষ্টিকূলের অজ্ঞাত বা দৃষ্টি বহির্ভূত, উহা ‘গায়ব মুতলাক’ নামে পরিচিত। যেমন কিয়ামতের সঠিক সময়, প্রত্যেক শরীয়তের বিধিসমূহ সৃষ্টিকূলের দৈনন্দিন শৃংখল বিধানের রহস্যময় বিষয়সমূহ, আল্লাহ তা’আলার ‘খাস গায়ব’ বলা হয়, তিনি তাঁর খাস গায়ব কারো কাছে প্রকাশ করেন না, তবে তিনি রাসূলগণের মধ্যে যাকে পছন্দ করেন, (তিনি ফিরিশতার রাসূল হোন বা মানবজাতির রাসূল হোন) তাঁকে অবহিত করে থাকেন। যেমন হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (ﷺ)র কাছে তার বিশেষ অদৃশ্য বিষয়াদির কিয়দংশ প্রকাশ করে থাকেন।’’
{শায়খ আব্দুল আজীজ মুহাদ্দিস দেহলভীঃ তাফসীরে আযীযীঃ ৫/১৭৩ পৃ.}
তাফসীরে ‘খাযেনে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় করা হয়েছে,
اِلاَّمَنْ يَّصْطَفِيْهِ لِرِسَالَتِهِ وَنُعَوَّّتِهِ فَيُظْهِرُ عَلَى مَنْ يَّشَاءُ مِنَ الْغَيْبِ حَتَّى يَسْتَدِلَّ عَلَى نُبَوَّتِهِ بِمَا يُخْبِرُ بِهِ مِنَ الْمُغِيْبَاتِ فَيَكُوْنُ ذَلِكَ مٌُعْجِزَةٌُلَهُ
-‘‘যাদেরকে (আল্লাহ পাক) নবুয়াত বা রিসালাতের জন্য মনোনীত করেন, তাঁদের মধ্যে হতে যাকে ইচ্ছা করেন, তার কাছে এ অদৃৃশ্য বিষয় ব্যক্ত করেন, যাতে তাঁর অদৃশ্য বিষয়াদির সংবাদ প্রদান তাঁর নবুয়তের সমর্থনে সর্ব সাধারণের নিকট প্রমাণ স্বরূপ গৃহীত হয়। এটাই তাঁর মুজিযারূপে পরিণত হয়।’’
{ইমাম খাযিনঃ লুবাবুত তা’ভীলঃ ৪/৩১৯ পৃ.}
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে রূহুল বয়ানে আছে,
قَالَ اِبْنُ الشَّيْخُ اِنَّّهُ تَعَالَى لاَيُطْلِعُ عَلَى الْغَيْبِ الَّذِىْ يَخْتَصُّ بِهِ تَعَالَى عِلْمُهُ اِلاَّلِمُرْ تَضَى الَّذِىْ يَكًوْنُ رَسُوْلًا وَمَالاَ يَخْتَصُّ بِهِ يُطْلِعُ عَلَيْهِ غَيْرَ الرًَّسُوْلِ
অর্থাৎ- ইবন শাইখ বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা তার পছন্দনীয় রাসূল ছাড়া কাউকে তাঁর খাস গায়ব সম্পর্কে অবহিত করেন না। তবে তার বিশেষ অদৃশ্য বিষয়াদি ছাড়া অন্যান্য অদৃশ্য বিষয়াদি রাসূল নন এমন ব্যক্তিদেরকেও অবহিত করেন।
{আল্লামা ইসমাঈল হাক্কীঃ তাফসীরে রুহুল বায়ানঃ ১০/২৩৬ পৃ.}
এ আয়াত ও এর তাফসীরসমূহ থেকে প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ তা’আলার খাস ইলমে গায়ব, এমন কি কিয়ামত কখন হবে সে জ্ঞানও হুযুর পুর-নুর (ﷺ) কে দান করা হয়েছে। এখন এমন কি জিনিষ আছে, যা’ হযরত মুস্তাফা (ﷺ)র জানার বাকী রইল?
(১৭)
فَاَوْحَى اِلَى عَبْدِهِ مَااَوْحَى
-‘‘তিনি (আল্লাহ) তাঁর প্রিয় বান্দার প্রতি যা কিছু ওহী করার ছিল, তা ওহী করলেন।’’
{সূরাঃ নজম, আয়াতঃ ১০, পারাঃ ২৭}
সুবিখ্যাত ‘মাদারিজন-নবুয়ত’ গ্রন্থের প্রথম খন্ডে ‘আল্লাহর দর্শন’ শীর্ষক পরিচ্ছেদ উল্লেখিত আছে,
فاوحى الآية : بتمام علوم ومعارف وحقائق وبشار ات وارشادات اخبار واثار وكرامات وكمالات دراحيطئه ايں ابهام داخل است وهمه راشامل وكثرت و عظمت اوست كه بهم اورد وبيان نه كرد اشارات بانكه جز علم علام الغيوب و رسول محبوب به اں محيط نتواند شد مگرآنچه آں حضرت بيان كرده
-‘‘মহা প্রভু আল্লাহ হুজুর (ﷺ) এর পবিত্র মিরাজের রজনীতে যে সমস্ত জ্ঞান, মারিফাত, শুভ সংবাদ ইঙ্গিত, বিবিধ তথ্য, বুযুর্গী, মান সম্মান, পূর্ণতা ইত্যাদি ওহী করেছিলেন, সবই এ অস্পষ্ট বর্ণনায় (যা আয়াতের ما اوحى বাক্যাংশে বর্ণিত হয়েছে) অন্তভুর্ক্ত আছে। ঐ সমস্ত বিষয়াদির অত্যধিক ও মাহাত্ম্যের কারণে সেগুলোকে অস্পষ্টরূপ উল্লেখ করেছেন; সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীনভাবে ব্যক্ত করেন নি। এতে একথার প্রতিও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে, ওই সমস্ত অদৃশ্য জ্ঞান সমূহ খোদা তা’আলা ও তার মাহবুব عليه السلام ব্যতীত অন্য কেউ পরিবেষ্টন করতে পারে না। তবে হ্যাঁ, যতটুকু হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রকাশ করেছেন, ততটুকু জানা গেছে।’’
{শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভীঃ মাদারেজুন নবুয়াতঃ ১/১৭০ (ফার্সী)}
এ আয়াত এর ব্যাখ্যা থেকে বোঝা গেল যে, মি‘রাজ হুজুর (ﷺ)কে সে সমস্ত জ্ঞান দান করা হয়েছিল, যা, যে কারো জন্যে বর্ণনাতীত ও কল্পনাতীত। ماكان ومايكون (যা কিছু হয়েছে ও হবে) এ কথটি শুধু বর্ণনার সুবিধার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ এর চেয়ে ঢের বেশী জ্ঞান তাঁকে দান করা হয়েছে।
¶ (১৮)
وَمَا هُوَعَلَى الْغَيْبِ بِضَنِيْنٍ
-‘‘এ নবী (ﷺ) গায়ব প্রকাশের ক্ষেত্রে কৃপণ নন।’’
{সূরাঃ তাকভীর, আয়াতঃ ২৪।}
এ কথা বলা তখনই সম্ভবপর, যখন হুজুর (ﷺ) গায়বী ইলমের অধিকারী হয়ে জনগণের কাছে তা ব্যক্ত করেন।
‘মা’আলিমুত তানযীল’ নামক তাফসীর গ্রন্থে এ আয়াতের ব্যাখ্যা এভাবে করা হয়েছে,
عَلَى الْغَيْبِ وَخَبْرِ السَّمَاءِ وَمَااُطَّلِعَ عَلَيْهِ مِنَ الْاَخْبَارِ وَاالْقَصَصِ بِضَنِيْنَ اَىْ بِبَخِيْلٍ يَقُوْلُ اِنَّهُ يَاتِيْهِ عِلْمُ الغَيْبِ فَلاَ يَبْخَلُ بِهِ عَلَيْكُمْ بَلْ يُعَلّضمَكُمْ وَيُخْبِرُ كُمْ وَلاَيِكْتُمُهُ كَمَا يَكْتُمُ الكَاهِنُ
-‘‘হুজুর (ﷺ) অদৃশ্য বিষয়, আসমানী খবর ও কাহিনী সমূহ প্রকাশ করার ব্যাপারে কৃপণ নন। অর্থাৎ হুজুর (ﷺ) অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন, তবে উহা তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার ক্ষেত্রে কোনরূপ কার্পণ্য করেন না, বরং তোমাদেরকে জানিয়ে দেন ও উহাদের সংবাদ দেন। গণক ও ভবিষ্যতবেত্তারা যে রূপ খবর গোপন করে রাখেন। সেরূপ তিনি গোপন করেন না।’’
{ইমাম বগভীঃ মা’আলিমুত তানযীলঃ ৪/৪২২ পৃ.}
‘তাফসীরে খাযেনে এ আয়াতের তাফসীরে উল্লেখিত আছে,
يَقُوْلُ اِنَّهُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ يَأتِيْهِ عِلْمُ الْغَيْبِ فَلاَ يَبْخَلُ بِهِ عَلَيْكُمْ بِلْ يُعَلِّمُكُمْ.
-‘‘এ আয়াতে একথাই বোঝানো হয়েছে যে হুজুর (ﷺ) এর কাছে অদৃশ্য বিষয়ের সংবাদ আসে। তিনি উহা তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার ক্ষেত্রে কার্পণ্য করেন না, বরং তোমাদেরকে জানিয়ে দেন।’’
{ইমাম খাযেনঃ লুবাবুত তা’ভীলঃ ৪/৩৫৭ পৃ.}
এ আয়াত ও এর তাফসীরের ভাষ্য থেকে বোঝা গেল যে, হুজুর (ﷺ) লোকদেরকে ইলমে গায়ব শিক্ষা দেন। বলা বাহুল্য যে, যিনি জানেন, তিনিই তো শিখিয়ে থাকেন।
وَعَلَّمْنَهُ مِنْ لَّدُنَّا عِلْمًا
-‘‘আমি (আল্লাহ) তাঁকে (হযরত খিযির عليه السلامকে) আমার ইলমে লাদুনী দান করেছি।’’
{সূরাঃ কাহাফ, আয়াতঃ ৬৫, পারাঃ ১৫}
‘তাফসীরে বায়যাবীতে’ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে,
اَىْ مِمَّا يَخْتَصًّ نَبَاءُهُ لاَيَعْلَمُ اِلاَّ بِتَوْفِيْقِنَا وَهُوَ عِلْمُ الْغَيْبِ.
-‘‘হযরত খিযির عليه السلامকে এমন বিষয়াদির জ্ঞান দান করেছি, যেগুলো সম্পর্কে শুধু আমিই অবগত, যা আমি না বললে কেউ জানতে পারে না। এটাইতো ইলমে গায়ব।
{ইমাম বায়যাভীঃ তাফসীরে বায়যাভীঃ ৩/৫১০ পৃ.}
‘তাফসীরে ইবনে জারীরে’ সায়্যেদুনা আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (رضى الله تعالي عنه) থেকে বর্ণিত আছে,
{قَالَ إِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا} [الكهف-٦٧] وَكَانَ رَجُلًا يعلم عِلْمَ الْغَيْبِ، قَدْ عُلِّمَ ذَلِك ..
-‘‘হযরত খিযির (عليه السلام) হযরত মুসা (عليه السلام) কে বলেছিলেন ‘আপনি আমার সঙ্গে অবস্থান করলে ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না।’
(সুরা কাহাফ-৬৭)
হযরত খিযির (عليه السلام) ইলমে গায়বের অধিকারী ছিলেন বলেই এ কথাটি পূর্বে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন।’’
{ইমাম ত্ববারীঃ জমিউল বায়ান তাফসীরুল কোরআনঃ ১৫/৩২৭ পৃ.}
তাফসীরে ‘রূহুল বয়ানে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,
هُوَ عِلْمُ الْغُيُوْبِ وَالْاِخْبَارُ غَنْهَا بِاِذْنِهِ تَعَالىَ كَمَا ذَهَبَ اِلَيْهِ اِبْنِ عَبَّاسٍ
-‘‘হযরত খিযির (عليه السلام) কে যে ইলমে লদুনী শিখানো হয়েছিল, উহাই ইলমে গায়ব। এবং গায়বের খবর পরিবেশন খোদার ইচ্ছানুযায়ী হয়ে থাকে। হযরত ইবনে আব্বাস (رضى الله تعالي عنه) এ মতই পোষণ করেছেন।’’
{আল্লামা ইসমাঈল হাক্কীঃ তাফসীরে রুহুল বায়ানঃ ৫/৩২১ পৃ.}
‘তাফসীরে মাদারেকে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যা এভাবে বলা হয়েছে,
يَعْنِى الْاِخْبَارُ بِالْغُيُوْبِ وَقِيْلَ الْعِلْمُ الَّدُنِىْ مَاحَصَلَهُ لِلْعَبْدِ بِطَرِيْقِ آلالْهَامِ
-‘‘হযরত খিযির (عليه السلام) কে অদৃশ্য বিষয়াদি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। কেউ বলেছেন, ইলমে লদুনী হলো এমন এক বিশেষ জ্ঞান, যা’ বান্দা ইলহামের মাধ্যমে অর্জন করেন।’’
{ইমাম নাসাফীঃ তাফসীরে মাদারিকঃ ২/২২ পৃ.}
ইমাম খাযেন (রহ.) {ওফাত.৭৪১হি.} তার ‘তাফসীরে খাযেনে’ লিখেছেন,
اَىْ عِلْمَ الْبَاطِنِ اِلْهَامًا
-‘‘হযরত খিযির عليه السلامকে আমি ইলহামের মাধ্যমে বাতেনী ইলম দান করেছি।’’
এ আয়াত ও তাফসীরের ইবারত সমূহ থেকে বোঝা গেল যে, আল্লাহ তা’আলা হযরত খিযির (عليه السلام) কে ইলমে গায়ব দান করেছিলেন। এ থেকে হুজুর (ﷺ)কে ইলম গায়ব দান করার বিষয়টি অপরিহার্যরূপে স্বীকৃত হয়। কেননা, খোদার সৃষ্টিকূলের মধ্যে তিনিই সর্বাধিক জ্ঞানী; আর হযরত খিযির (عليه السلام) ও সৃষ্টিকূরের অন্তভুর্ক্ত।
وَكَذَلِكَ نُرِي إِبْرَاهِيمَ مَلَكُوتَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ
-‘‘আমি এরূপেই হযরত ইব্রাহীম عليه السلامকে ভূ-মন্ডল ও নভোমন্ডলে পরিব্যাপ্ত আমার বাদশাহী অবলোকন করাই।’’
{সূরাঃ আনআম, আয়াতঃ ৭৫, পারাঃ ৭}
‘তাফসীরে খাযেনে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যা করা হয়েছে এ রূপ,
اُقِيْمَ عَلَى صَخْرَةٍ وَكُشِفَ لَهُ عَنِ السَّمَوَتِ حَتَّى رَاُى الْعَرْشَ وَالْكُرْسىِ َّومَاَفىِ السَّمَوَتِ وَكُشِفَ لَهُ عَنِ الْاَرْضِ حَتَّى نَظًَّرَ اِلَى اَسْفَلِ الْاَرْضِينَ وَرَائ مَافِيْهَا مِنَ الْعَجَائِبِ.
-‘হযরত ইব্রাহীম عليه السلامকে একটি প্রস্তর খন্ডের উপর দাঁড় করানো হয়েছিল এবং তাঁর জন্য আসমান খুলে দেয়া হয়েছিল। তখন তিনি আসমান সমূহে বিরাজমান সবকিছুই, এমনকি আরশ ও কুরসি পর্যন্ত অবলোকন করেছিলেন। অনুরুপভাবে যমীনকেও তাঁর দৃষ্টিসীমায় নিয়ে আসা হয়েছিল, তখন তিনি যমীনের সর্বনিম্নস্তর পর্যন্ত ও যমীনের স্তর সমূহে বিদ্যমান বিস্ময়কর সবকিছুই স্বচক্ষে দেখেছিলেন।’’
{ইমাম খাযেনঃ লুবাবুত তা’ভীলঃ ২/১২ পৃ.}
‘তাফসীরে মাদারেকে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছে,
قَالَ مُجَاهِدٌُ فُرِجَتْ لَهُ السَّمَوَتُ السَّبْعُ فَنَظَرَ اِلَى مَافِيْهِنَّ حَتَّى اَنْتَهَى نَظَرَ اِلَى الْعَرْشِ وَفُرِجَتْ لَهُ الْاَرْضُوْنَ السُّبْعُ حَتَّى نَّظَرُه اِلَى مَافِيْهِ
-‘‘হযরত মুজাহিদ (رضى الله تعالي عنه) বলেছেন, হযরত ইব্রাহীম عليه السلامর নিকট সপ্ত আসমান উন্মুক্ত করা হয়েছিল। তখন তিনি আসমান সমূহের মধ্যে যা কিছু আছে, সব কিছুই দেখতে পান, এমনকি আরশ পর্যন্ত তার দৃষ্টিগোচর হয়েছিল। অনুরূপভাবে তাঁর নিকট সপ্ত যমীন উন্মুক্ত করা হয়। তখন তিনি যমীনের স্তর সমূহের বিদ্যমান সবকিছুই দেখতে পান।’’
{ইমাম নাসাফীঃ তাফসীরে মাদারেকঃ ১/৩৭৩ পৃ.}
‘তাফসীরে হুসাইনীতে’ আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,
عجائب وبدائع آسمانها وزمين ها ازذروئه عرش تاتحت الثرى بروۓ منكشف ساخته.
-‘‘আমি হযরত ইব্রাহীম عليه السلامকে আসমান যমীনের অদ্ভুত ও বিস্ময়কর সবকিছুই দেখিয়ে দিয়েছি। তাঁর নিকট আরশের সুউচ্চ স্তর থেকে ‘তাখত-আছ-ছরা’ পর্যন্ত উন্মুক্ত করে দিয়েছি।’’
{ইমাম হাতেম, তাফসীরে ইবনে হাতেম, ৩/১৩২৭পৃ. হাদিসঃ ৭৫০২, ইমাম ত্ববারীঃ জামিউল বায়ানঃ ২/২৪৭ পৃ.}
‘তাফসীরে ইবন জারীর ইবন আবী হাতেমে’, এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখা হয়েছে হযরত ইবনে আব্বাস (رضى الله تعالي عنه) বলেছেন,
فَإِنَّهُ جُلِّيَ لَهُ الأَمْرُ سِرُّهُ وَعَلَانِيَتُهُ، فَلَمْ يخفف عَلَيْهِ شَيْءٌ مِنْ أَعْمَالِ الْخَلائِقِ،.
-‘‘হযরত ইব্রাহীম عليه السلامর কাছে প্রকাশ্য ও গোপনীয় সবকিছুই উদ্ভাসিত হয়েছিল। সুতরাং, সে সময় সৃষ্টিকূরের কোন আমলই তাঁর নিকট গোপন ছিল না।’’
‘তাফসীরে কাবীরে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছে,
اِنَّ اللهَ شَقَّ لَهُ السَّمَوَاتِ حَتَّى رَاُىَ الْعَرْشَ وَالْكُرْسِىَّ وَاِلَى حَيْثُ يَنْتَهَى اِلَيْهِ فَوْقِيَّةُ الْعَالَمِ الْجِسْمَانِىْ وَرَاىَ مَافِى السَّمَوَتِ مِنَ العَجَائِبِ وَالْبَدَائِعِ وَرَاَّىَ مَاَّفِىْ بَطْنِ اْلاَرْضِ مِنَ الْعَجَائِبِ وَالْغَرَائِبِ.
-‘‘আল্লাহ তা’আলা হযরত ইব্রাহীম عليه السلامের জন্য আসমান সমূহকে বিদীর্ণ করে দিয়েছিলেন। ফলে তিনি আরশ-কুরসী, এমনকি স্থূল জগতের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত দেখেছিলেন। আসমান সমূহে বিরাজমান সব কিছুই তার দৃষ্টিগোচর হয়েছিল, যমীনের তলদেশে বিদ্যমান উদ্ভুত ও বিস্ময় উদ্যেককর সবকিছুই সুস্পষ্টরূপে তাঁর নিকট প্রতিভাদ হয়েছিল।’’
{ইমাম ফখরুদ্দীন রাজীঃ তাফসীরে কাবীরঃ ৫/৩৫}
এ আয়াত ও উল্লেখিত তাফসীরের ইবারত সমূহ থেকে বোঝা গেল যে, আরশ থেকে ‘তাখত-অছ-ছরা’ পর্যন্ত সমস্ত কিছুই হযরত ইব্রাহীম عليه السلامকে দেখানো হয়েছিল এবং সৃষ্টিকূলের বিবিধ আমল সম্পর্কেও তাঁকে অবগত করানো হয়েছিল। হুজুর (ﷺ) এর জ্ঞান তাঁর তুলনায় অনেক বেশী বিধায় একথা বিনা দ্বিধায় স্বীকার করতে হয় যে, এ ব্যাপক জ্ঞান হুজুর (ﷺ)কেও দান করা হয়েছে।
স্মরণ রাখা দরকার যে, আরশের জ্ঞান বলতে লওহে মাহফুজও তাঁর আওতাভুক্ত হয়ে পড়ে। আর লওহে মাহফুজে কি কি লিখা আছে সে সম্পর্কে আমি আগে আলোচনা করেছি। সুতরাং, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবকিছুর জ্ঞান হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) এরও ছিল, আর হযরত ইব্রাহীম ও হযরত আদম (عليه السلام) এর জ্ঞান হচ্ছে হুজুর (ﷺ) এর জ্ঞান সমুদ্রের এক ফোঁটার সমতুল্য।
لَا يَأْتِيكُمَا طَعَامٌ تُرْزَقَانِهِ إِلَّا نَبَّأْتُكُمَا بِتَأْوِيلِهِ
হযরত ইউসুফ (عليه السلام) বলেছিলেন, ‘‘তোমাদের কাছে খাবার আসার আগে এর বিবরণ বলে দিতে পারবো।’’
{সূরাঃ ইউসূফ, আয়াতঃ ৩৭, পারাঃ ১২}
তাফসীরে ‘রূহুল বয়ান’ ‘কবীর’ ও ‘খাযেনে’ এর তাফসীরে উল্লেখিত আছে
‘আমি তোমাদেরকে বিগত ও অনাগত দিনের খাওয়া-দাওয়ার যাবতীয় অবস্থা বলে দিতে পারি। বলতে পারি খাদ্যশস্য কোথা হতে আসলো এবং এখন কোথায় যাবে।
‘তাফসীরে কাবীরে’ আরও উল্লেখ করেছে,
‘আমি বলতে পারি, এ খাবার গ্রহণের ফলে উপকার হবে, না ক্ষতি হবে। এ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে তিনিই বলতে পারেন, যিনি প্রতিটি অণু-পরমাণুর খবর রাখেন।
তিনি হযরত ইউসুফ(عليه السلام) আরও বলেন,
ذَلِكُمَا مِمَّا عَلَّمْنِىْ رَبِّىْ
অর্থাৎ- এটা আমার জ্ঞানের কিয়দাংশ মাত্র।
{সূরাঃ ইউসূফ, আয়াতঃ ৩৭, পারাঃ ১২}
তাহলে এখন বলুন, হুজুর (ﷺ) এর জ্ঞানের পরিধি কতটুকু বিস্তৃত। হযরত ইউসুফ عليه السلام এর জ্ঞান হচ্ছে হুজুর (ﷺ) এর জ্ঞান সমুদ্রের এক বিন্দু মাত্র।
হযরত ঈসা (عليه السلام) ফরমান,
وَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا تَأْكُلُونَ وَمَا تَدَّخِرُونَ فِي بُيُوتِكُمْ.
-‘‘তোমরা নিজ নিজ ঘরে যা কিছু খাও এবং যা কিছু সঞ্চিত রাখ, আমি তোমাদেরকে বলে দিতে পারি।’’
{সূরাঃ আলে ইমরান, আয়াতঃ ৪৯, পারাঃ ৩}
দেখুন, ঘরের মধ্যে আহার করা হল, ঘরের মধ্যে জমা করা হল, সেখানে হযরত ঈসা (عليه السلام) উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু বাহির থেকে তিনি এর সংবাদ দিচ্ছেন। একেই বলে ইলমে গায়ব।
বিরুদ্ধবাদীগণ এসব দলীল-প্রমাণাদির কোন উত্তর দিতে পারেন না। তারা কেবল প্রত্যুত্তরে এ কথাই বলেন যে যেই সব আয়াতে كُلاُّ شَيْئٍ উল্লেখিত আছে বা مَالَمْ تَعْلَمْবলা হয়েছে, সে সকল ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধি বিধানের প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে, অন্য কোন কিছুর জ্ঞান বোঝানো হয়নি। এর সমর্থনে তারা নিম্নলিখিত দলীলাদি উপস্থাপন করেন,
وَأُوتِيَتْ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ
‘‘বিলকিসকে সব কিছুই দেয়া হয়েছে।’’
{সূরাঃ আন-নামল, আয়াতঃ ২৩, পারাঃ ১৯}
বলা হয়েছে অথচ বিলকিসকে প্রদত্ত বস্তু বা বিষয়ের কিছু বা কিঞ্চিত পরিমাণই দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এগুলো কোন দলীলই নয়। নিছক ভুল ধারণা ও ধোকা মাত্র। এগুলোর উত্তর নিম্নে দেয়া গেল।
আরবী ভাষায় كُلٌُ ও مَا শব্দদ্বয় ব্যাপকতা বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। কুরআন শরীফের প্রত্যেকটি শব্দ অকাট্য। এতে মনগড়া কোন শর্ত জুড়ে দিয়ে শব্দকে সীমিত অর্থে প্রয়োগ করা জায়েয নয়। কুরআন শরীফের ব্যাপকতা নির্দেশক শব্দগুলোকে ‘হাদীছে আহাদ’ দ্বারাও সীমিত অর্থে গ্রহণ করা যায় না। এমতাবস্থায় নিজস্ব কোন যুক্তি বা রায়ের ভিত্তিতে সীমিত অর্থে প্রয়োগের প্রশ্নই উঠে না।
كُلاُّ شَيْئٍ বলতে সীমাহীন বোঝা যায় না বরং এ দ্বারা সীমাবদ্ধতাই বোঝা যায়।
তাফসীরে কবীরে وَاَحْصَى كُلَّ شَئٍ عَدَدًا এর ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে,
قَلْنَا لاَشَكَّ اِنْ اَحْصَاءَ الْعَدَدِ اِنَّمَا يَكُوْنُ فِى الْمُتَّنَاهِىْ فَاَمَّا لَفْظَةُ كُلٌُ شَيْئٍ فَاِنَّهَا لاَتَدُلُّ عَلَى كَوْنِه غَيْرَ مُتْنَا هِىْ لِاَنَّ الْشَئَ عِنْدَنَا هُوَالْمَوْ جُوْدَا وَالْمَوْ جُوْدَاتُ مُتَنَا هِيَةٌُ فِى الْعَدَدِ.
-‘‘এতে কোন সন্দেহ নেই যে সংখ্যা দ্বারা গণনার বিষয়টি সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রেই সম্ভবপর। কিন্তুكُلاُّ شَيْئٍ (প্রত্যেক জিনিস) শব্দ দ্বারা ঐ বস্তুর সীমাহীনতার অর্থ প্রকাশ পায় না। কেননা আমাদের মতে شَيْئٍ জিনিস) বলতে যা কিছুর অস্তিত্ব আছে, শুধু তা’ই বোঝায় এবং যাবতীয় অস্তিত্ববান বস্তু সীমাবদ্ধতার গন্ডীতে আবদ্ধ।’’
{ইমাম ফখরুদ্দীন রাজীঃ তাফসীরে ফকীরঃ সূরাঃ জ্বিন, আয়াতঃ ২৮ এর ব্যাখ্যা।}
তাফসীরে ‘রূহুল বয়ানে’ একই আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিপিবদ্ধ আছে,
وَهَذَهِ الْاَيَةُ مِمَّا يَسْتَدَلُّ بِهِ عَلَى اَنَّ الْمَعْدُوْمَ لَيْسَ بِشَيْئٍ لاَنَّهُ لَوْ كَانَ شَيْئًا لَكَانَتِ الْاَشَيُاء غَيْرَ مُتَنَاهِيَةٍ وَكَوْنُهُ اَحْصَى عَدَدًهَا يَقْتَضِىْ كَوْنَهَا مُتَنَاهِيَةً لِاَنُّ اِحْصَاءَ الْعَدَدِ اِنَّمَا يَكُوْنُ فِى آلْمُتَنَاهِىْ.
-‘‘এ আয়াত দ্বারা এ কথাটির বড় প্রমাণ মেলে যে, যা’ কিছু অস্তিত্বহীন উহা شَيْئٍ ‘বস্তু’ বলে গণ্য নয়। কেননা যদি এটা বস্তু (অস্তিত্ববান) বলে গণ্য হয়, তাহলে অস্তিত্ববান সবকিছুই সীমাহীন হয়ে যায়। অথচ বস্তুসমূহ গণনা বা শুমারীর আওতাভুক্ত এবং যা’ কিছু গণনার আওতায় আসে, উহা কেবল সীমাবদ্ধতার পর্যায়ভুক্ত হতে পারে।
{ইসমাঈল হাক্কী, তাফসীরে রুহুল বায়ান, ১০/২০৩পৃ.দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন}
তাফসীরকারকদের মধ্যে অনেকেই كُلاُّ شَيْئٍ বলতে কেবল শরীয়তের আহাকামকে ধরে নিয়েছেন বটে, কিন্তু আবার অনেকেই আহকামকে বা সামগ্রীক ইলমে গায়বের প্রতি নির্দেশ করেছেন। চিরাচরিত নিয়মানুযায়ী যখন কিছু প্রমাণ ইতিবাচক ও আর কিছু নেতিবাচক হয়, তখন ইতিবাচক প্রমাণগুলিই গৃহীত হয়।
সুবিখ্যাত ‘নুরুল আনোয়ার’ গ্রন্থে تَعَارُضْ (অসঙ্গতি বা বিরোধ) শীর্ষক আলোচনায় উল্লেখিত আছে-
وَالْمُثْبِتُ اَوْلَى مِنَ النَّافِىْ
অর্থাৎ- স্বীকৃতি জ্ঞাপক প্রমাণ অস্বীকৃতি নির্দেশক প্রমাণ হতে অপেক্ষাকৃত উত্তম।
যে সমস্ত তাফসীরের উদ্ধৃতি আমি ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি, সেগুলোতে যেহেতু বেশীরভাগ প্রমাণই স্বীকৃতি সূচক, কাজেই উহাই গ্রহণযোগ্য। অধিকন্তু স্বয়ং হাদীছ এ সুপ্রসিদ্ধ উলামায়ে উম্মতের উক্তিসমূহ দ্বারা এর তাফসীর করে আমি দেখাবো যে এমন কোন অণুপরমাণু নেই, যা’ হুযুর পুর-নুর (ﷺ) এর জ্ঞানানুভূতিতে আসেনি, এবং আমি এ গ্রন্থেরই ‘পেশ কালাম’ শীর্ষক অধ্যায়ে উল্লেখ করেছি যে, কুরআনের হাদীছে ভিত্তিক তাফসীর অন্যান্য তাফসীর সমূহ থেকে উন্নত। সুতরাং হাদীছের সমর্থনপুষ্ট তাফসীরই অধিকতর গ্রহণযোগ্য হবে।
এও উল্লেখ্য যে, যে সকল তাফসীরকারক كُلاُّ شَيْئٍ এর তাফসীরে ‘আহকামে দ্বীনকে’ বোঝাতে চেয়েছেন, তারাওতো অন্যান্য বিষয় বা বস্তুর সম্পকর্ীয় জ্ঞানের অস্বীকৃতির কথা বলেন নি। সুতরাং, আপনারা অস্বীকৃতির কথা কোথা থেকে আবিষ্কার করলেন? কোন বিষয়ের উল্লেখ না করলে যে সে বিষয়ের অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হয়, একথা বলেন কিভাবে?
কুরআন শরীফে আছে,
تَقِيْكَمُ الْحَرَّ
তোমাদের কাপড় তোমাদেরকে উত্তাপ থেকে রক্ষা করে।
এরূপ উক্তি থেকে কি একথা বোঝা যাবে যে, কাপড় আমাদেরকে শীত থেকে রক্ষা করে না? একথাতো কুরআনে উল্লেখ করা হয়নি। অধিকন্তু, ‘দ্বীন’ বললেও সবকিছুকেই বোঝায়। জগতে এমন কি বিষয় আছে, যার উপর দ্বীনের আহকাম হালাল হারাম ইত্যাদি প্রযোজ্য হয় না? ঐ সকল মুফাস্সিরতো এ অভিমতই ব্যক্ত করেছেন যে দ্বীনি ইলম পরিপূর্ণতা লাভ করেছে, একথা বললে সব কিছুর জ্ঞানকে বোঝানো হয়।
বিলকীস ও অন্যান্যাদের কাহিনীতে যে كُلاُّ شَيْئٍ বলা হয়েছে, সেখানে এমন আলামত বা লক্ষণ মওজুত আছে, যা’র ফলে একথা পরিষ্কারূপে প্রতীয়মান হয় যে, كُلاُّ شَيْئٍ দ্বারা রাজত্বের কাজ কারবার সম্পকর্ীয় প্রত্যেক কিছুই বোঝানো হয়েছে। সেখানে উক্ত শব্দ দ্বারা এর ব্যবহারিক অর্থের দিকে নির্দেশ করা হয়েছে। কিন্তু এখানে এমন কি লক্ষণ আছে, যে কারণে শব্দের আসল অর্থ বাদ দিয়ে তার ব্যবহারিক অর্থই গ্রহণ করা যাবে?
আরও লক্ষ্যণীয় যে, কুরআন করীম সেখানে ‘হুদহুদ’ পাখীর উক্তিকে নকল করেছে মাত্র। হুদহুদ বলেছিল,
وَأُوتِيَتْ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ
-‘বিলকিসকে প্রত্যেক কিছুই দেয়া হয়েছে।’
{সূরাঃ আন-নামল, আয়াতঃ ২৩, পারাঃ ১৯}
স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা এ খবর দেন নি। হুদহুদের ধারণা ছিল যে বিলকিস সারা দুনিয়ার সবকিছুই পেয়ে গেছেন। কিন্তু এখানে মুস্তাফা عليه السلامের ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা নিজেই বলেছেন, تِبْيَانًا لِكُلِّ شَيْئٍ (প্রত্যেক কিছুর সুস্পষ্ট বিবরণ সম্বলিত)। হুদহুদ ভুল বলতে পারে কিন্তু আল্লাহর কালামতো ভুল হতে পারে না। হুদহুদতো আরও বলেছিল وَلَهَا عَرْشً عَظِيْمٌُ (তাঁর এক বিরাট আরশ আছে) তাহলে বিলকিসের সিংহাসন কি আরশ আযীমই ছিল? বস্তুতঃ কুরআনের অন্যান্য আয়াত থেকেও প্রতীয়মান হয় যে, كُلاُّ شَيْئٍ দ্বারা এখানে জগতের সবকিছুকেই বোঝানো হয়েছে।
কুরআনেই ইরশাদ হয়েছে,
وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُبِينٍ.
-‘‘আর্দ্র শুষ্ক এমন কোন জিনিস নেই, যা’ লওহে মাহফুজে বা কুরআনে করীমে নেই।’’
{সূরাঃ আনআম, আয়াতঃ ৫৯, পারাঃ ৭}
এছাড়া সামনে উল্লেখিত বিভিন্ন হাদীছ, উলামা ও মুহাদ্দিছীনের উক্তি থেকেও এ কথার জোরালো সমর্থন পাওয়া যাবে যে জগতের প্রত্যেক কিছুর জ্ঞান হুযুর পুর-নুর (ﷺ) কে দান করা হয়েছিল।
আমি ইনশা আল্লাহ ‘হাযির-নাযির’ শিরোনামের আলোচনায় বর্ণনা করবো যে মৃত্যুর ফিরিশতা হযরত আযরাইল (عليه السلام) এর সামনে সারা জগৎটাই যেন একটা থালার মত। আর ইবলীস এক পলকে সারা পৃথিবী ঘুরে আসে। এ কথা দেওবন্দীগণও স্বীকার করেন যে আমাদের নবী (ﷺ) এর জ্ঞান সৃষ্টিকূলের সামগ্রিক জ্ঞান থেকে বেশী। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, হুজুর (ﷺ) এর সমগ্র সৃষ্টির জ্ঞান রয়েছে। আমি ‘পঞ্চ বিষয়ের জ্ঞান’ علوم خمسه শীর্ষক আলোচনায় হযরত আদম (عليه السلام) ও তাক্বলীদ লিখায় নিয়োজিত ফিরিশতার জ্ঞান সম্পর্কে আলোকপাত করবো, যা’ দ্বারা বোঝা যাবে যে গুরুত্বপূর্ণ ‘পঞ্চ বিষয়ের’ জ্ঞান তাদেরও রয়েছে। যেহেতু হুজুর (ﷺ) সমস্ত সৃষ্টিকূল থেকে বেশী জ্ঞানী, কাজেই, হুযুর আলাইহসি সালাম যে এসব বিষয়ের জ্ঞান বরং তার চেয়ে অধিক জ্ঞানের অধিকারী একথা মেনে নিতে হবে বৈ কি। আমাদের দাবী সর্বাবস্থায় প্রতিষ্ঠিত।
وَلِلَّهِ الْحَمْدُ (আল্লাহ যাবতীয় প্রশংসার অধিকারী)
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(১৮/১) আল-কুরআন থেকে ইলমে গায়বের প্রমাণ সম্বলিত বর্ণনা | (১৯) ইলমে গায়ব সম্পর্কিত হাদীছ সমূহের বর্ণনা |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |