নাত শরীফ বলতে বোঝায় হজরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লাম এর শানে লিখিত প্রশংসা সূচক কবিতা বা প্রশংসা গীতি। হজরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত আছে যে,
হুজুর রাহমাতে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লাম মসজিদে নববীতে একটি মিম্মর স্থাপন করেছিলেন যাতে হজরত হাসসান বিন সাবিত রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নাবীয়ে আখিরুজ্জামাঁ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লাম এর শানে প্রশংসা মূলক কবিতা (নাত) পড়তেন। এতে আকা আলাইহিস সালাম তাঁকে দোয়া করতেন....!!
মিশকাত শরীফ
তাবুকের যুদ্ধের পর মসজিদে নববীতে অনেক সাহাবার উপস্থিতিতে হুজুর আলাইহিস সালাতু সালাম এর নিজ চাচা হজরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আরজ করলেন
ইয়া রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি আপনি অনুমতি দেন তবে আমি আপনার প্রশংসা গীতি গাইব। এতে আকা কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লাম মুচকি হেসে অনুমতি প্রদান করলেন। হজরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কবিতার মাধ্যমে তাঁর প্রশংসা গীতি গাইতে শুরু করলেন। তিনি নাবী পাকের জন্ম ও তাঁর আগমন,মোজেজা,শ্রেষ্ঠত্ব,বিশেষত্ব ও গুণাবলি বর্ণনা করতে লাগলেন। তখন নাবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লাম হজরত আব্বাস এর জন্য তাঁর চেহরা ও জবান সালামত এর দোয়া করলেন আর বললেন আপনি আমার মর্যাদা বর্ণনা করতে থাকুন। আল্লাহ আপনার চেহরা ও জবান সালামত রাখবেন...!!
খাসায়েসে কুবরা, ১ম খন্ড, পৃঃ ৯৭ ; মাওয়াহিবুল লাদুন্নীয়া,১ম খন্ড,পৃঃ ৫৮৫
আরবে বহুদিন অনাবৃষ্টি হওয়ার পর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লাম এর দোয়ার বরকতে বৃষ্টি চালু হলে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর চাচা জান হজরত আবু তালিব লিখিত নাত শরীফ টি কারোর স্মরণ আছে কিনা জানতে চাইলেন...... তখন হজরত উমর ও হজরত আলি রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা দাঁড়িয়ে নাতটি পড়তে চাইলেন..! অতঃপর অনুমতি প্রাপ্ত হয়ে মওলা আলি কারামুল্লাহু ওয়াজহাহুল কারিম নাতটি পড়লেন
বুখারী শরীফ, ১ম খন্ড,কিতাবুল ইসতিসকা, পৃঃ ১৩৭
বহু সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম একে অপরকে নাত শরীফ শোনাতেন এমনটিও আমরা কিতাবে পাই..( মিশকাত শরীফ)
সুতরাং উপরিউক্ত হাদিসে পাক ও ওয়াকিয়া গুলো থেকে বোঝা গেল যে... হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাত পড়ার হুকুম করেছেন, নাত শরীফ পাঠ করাকে পছন্দ করেছেন এবং নাত পাঠ কারীদের দোয়াও করেছেন। অতএব এটি সুন্নাত। যেহেতু এটি সুন্নাত তাই সুন্নাত আদায় করলে সওয়াব হয়।
এছাড়াও একটি হাদিসে পাক আছে,
উম্মুল মুমিনিন সাইয়েদা আয়েশা সিদ্দীকা সালামুল্লাহে আলাইহা হতে বর্ণিত, রাসুলে কায়েনাত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ফরমিয়েছেন যে
''মওলা আলির জিকির করাও ইবাদাত"
ইমাম দাইলামির আল ফিরদাউস, ২য় খন্ড, পৃঃ ৩৬৭ হাঃ ২৯৭৪ ; কানজুল উম্মাল, ১১ তম খন্ড,পৃঃ ৬০১, হাঃ ৩২৮৯৪
যদি মওলা আলি আলাইহিস সালামের জিকর ইবাদাত হয় তাহলে যে মহান নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামের কাছে এসে হজরত আলি রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু মওলা হলেন,ঈমানের পেহচান হলেন তাঁর জিকর কেন ইবাদাত হবেনা !!!!
আমরা জানি দরুদ শরীফ পাঠ করলে সওয়াব মিলতে থাকে, পাপ কমতে থাকে। স্বয়ং রাব্বুল আলামিন তাঁর হাবীব এর উপর দরুদ প্রেরণ করছেন ! আর আমাদের কে দরুদ পাঠ করতে হুকুম দিয়েছেন সুরা আহযাবের ৫৬ নং আয়াতে। ইমাম বোখারী,হাফিজ ইবনে কাসির, ইমাম আবুল আলিয়া, ইমাম রাগেব,ইমাম ইবনে হাকিম,ইমাম তাবারানী রহমাতুল্লাহ তায়ালা আলাইহিম আজমাইন তৎসহ আরও অনেকেই অত্র আয়াতের তাফসীরে বলেছেনঃ
আল্লাহর দরুদ পাঠানোর অর্থ হলো আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লাহ ফ্যারিশ্তাদের সামনে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শান ও আজমাত বর্ননা করেন
এ থেকে বোঝা গেল নাত শরীফ পাঠ হুকমে খোদা,হুকমে রাসুল, সুন্নাতে সাহাবা,সুন্নাতে আহলে বাইত নাত শরীফ পাঠের মাধ্যমে ইসকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাড়ে । এটাই ইমামে আহলে সুন্নাত ইমাম আহমাদ রেজা খান ফাযিলে বেরেলবি আলাইহির রহমাহর শিক্ষা। আর ক্বাদেরীয়া তরিকার পীর সাহেব বারা গদ্দির বর্তমান সাজ্জাদানশিন হজরত সাইয়েদ শাহ মুহাম্মাদ আলি আল ক্বাদেরী দাস্তেগীর মাদ্দাজিল্লাহুল আলি কে বলতে শুনেছি
নাত ইয়া কালাম লিখনা ভি ইবাদাত,নাত ইয়া কালাম পাড়হনা ভি ইবাদাত,নাত ইয়া কালাম শুননা ভি ইবাদাত...।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৭৬) হুযুরের জানাযার ধরণ | (০৭৮) সালাম এর ছন্দ |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |