কিয়াম অর্থাৎ দণ্ডায়মান হওয়া অনেক রকমের হয়। যেমনঃ
ফরযঃ পাঁচ ওয়াক্তের ফরজ ওয়াজিব নামাজে দাঁড়ানো ফরজ।
সুন্নাতঃ তাবারুক(ধর্মীয় মর্যাদাশীল জিনিস) এর সম্মানার্থে দাঁড়ানো। এজন্য জমজমের পানি ও ওযুর অবশিষ্ট পানি দাঁড়িয়ে পান করা সুন্নত। এবং হুযুর আলাইহিস সালাম এর রওজা পাকে উপস্থিত হওয়া যদি আল্লাহ নসিব করেন, তখন নামাজের মতো হাত বেঁধে দাঁড়ানো সুন্নাত।
মুস্তাহাবঃ নফল নামাজে দাঁড়ানো মুস্তাহাব। অবশ্য বসেও পড়া যায়। তবে দাঁড়িয়ে পড়াতে সওয়াব বেশি।
জায়েজঃ পার্থিব প্রয়োজনে দাঁড়ানো জায়েজ। এর হাজার হাজার উদাহরণ রয়েছে, যেমন দাঁড়িয়ে ঘর বাড়ি তৈরি করা বা অন্যান্য দুনিয়াবী কাজকর্ম করা।
মাকরুহঃ কয়েক জায়গায় দাঁড়ানো মাকরুহ।
মহব্বত এর কারণে এবং সম্মানের কারণে কিয়াম করা বা দন্ডায়মান হওয়া উম্মুল মু'মিনীন হযরত সাইয়েদা আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত আছে যে, যখন হযরত সাইয়েদা ফাতিমা আলাইহাস সালাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লাম এর কাছে আসতেন তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে যেতেন। এবং হযরত ফাতিমা সালামুল্লাহে আলাইহার হাতে চুম্বন দিতেন এবং তাঁকে নিজের জায়গায় বসাতেন।আর যখন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহার ঘরে যেতেন তখন সাইয়েদা ফাতিমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন এবং তার হাতে চুম্বন দিতেন।
(ইমাম নাসাঈর সুনান উল কুবরা,সহি ইবনে হিব্বান,তাবারাণীর মুজাম উল আউসাত, মুসতাদরাকে হাকিম, ইমাম বুখারীর আল আদাবুল মুফরাদ, নাসাঈর ফাযায়েলুস সাহাবা, বাইহাকীর সুনান উল কুবরা,ইবনে হজর আসকলানীর ফাতহুল বারী,তিরমিযী)
সুতরাং নাবী মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লাম এর সম্মানার্থে কিয়াম করা জায়িয। তাঁর রওজা পাকে হাজিরী নসীব হলে সেখানে বেশিরভাগ মুসলমান দাঁড়িয়েই সালাম পড়েন। তাহলে আপনার এখানে দাঁড়িয়ে সালাম পড়তে অসুবিধা কোথায়....!! আমরা কাবা শরীফের দিকে মুখ করে নামাজ পড়ি, এজন্য কাবাকে দেখা শর্ত নয়। সেই ভাবে আমরা না দেখিয়ে রওজায়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দিকে মুখ করে যদি সালাম পড়ি তাহলে অসুবিধা কোথায়..?? আমাদের নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লাহ এ ক্ষমতা দিয়েছেন যে তিনি আমাদের সালাম শোনার ক্ষমতা রাখেন। এব্যাপারে আমরা আগেই আলোচনা করেছি। তাছাড়াও কেউ যদি শুধু মুস্তাফা কারিম আলাইহিস সালামের নামের তাযীমে কিয়াম করে তাহলেই বা অসুবিধা কোথায়..!!
এ ব্যাপারে দেওবান্দী আলেম দের গুরু, দেওবন্দী আলেমদের শিরোমণি মওলানা আশরাফ আলি থানবী সাহেব এর এবং তৎসহ বহু ওলামায়ে দেওবান্দ এর পীর হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজির মাক্কী সাহেব খুব সুন্দর বলেছেন, যদি নাবীর নাম আগমন কালে কেউ কিয়াম করে.. তাতে কি ত্রুটি রয়েছে?? যখন কেউ আসে তখন লোকেরা তার সম্মানের জন্য দাঁড়িয়ে যায়। যদি সে বিশ্বনেতা( আমার জীবন তার প্রতি উৎসর্গিত) এর পাক নামের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করা হয় তাহলে কি পাপের কাজ হল !! (ইমদাদুস সুলুক )
যে সমস্ত ব্যক্তি নাবী মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র নামের সম্মানে দাঁড়িয়ে যাওয়াকে অপরাধ মনে করেন তাদের কাছে আমার খুব সহজ একটা প্রশ্ন...... ভাই আপনি যখন কবরস্থানের পাশ দিয়ে হাঁটতে থাকেন তখন আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর বলার সময় কি বসে যান...!! না যে অবস্থায় থাকেন সেই অবস্থায় সালাম দেন।
দেখুন সালাম বসে দেওয়া বা দাঁড়িয়ে দেওয়া কোনোটাতেই আমাদের সমস্যা নেই। আপনি চাইলে বসেই দিন। কিন্তু যারা দাঁড়িয়ে সালাম দিচ্ছে তাদের বিরোধিতা করছেন কেন.....??
আপনি আমি নামাজে বসে যে আত্তাহিয়াতু পড়ি এবং "আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবী" পড়ি সেটাকেই একটু অন্যভাবে বললে বলা হয় "ইয়া নাবী সালাম আলাইকা"। এতে অর্থগত কোনো সমস্যা নেই। এতে কোনো মিনিং চেন্জ হয় না দুটোরই অর্থ হলো 'হে নাবী আপনাকে সালাম'।
এখন কেউ বলতে পারেন যেহেতু আমরা নামাযে বসেই দরুদ সালাম পড়ি, কাজে সবসময় বসেই সালাম পড়তে হবে।তাদের কাছে আমি খুব আদবের সঙ্গে জানতে চাই আপনি কি সব সময় দাঁড়িয়ে কোরআন মাজীদ পড়ার জন্য প্রস্তুত। তারা অকপট ভাবে উত্তর দেবেন না তারা প্রস্তুত নন। সবসময় দাঁড়িয়ে পড়তে তারা পারবেন না অথচ নামাজের মধ্যে সবাইকে দাঁড়িয়েই কোরআন মাজিদ পড়তে হয়। অতএব আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এর মত হলো কিয়াম করা মুস্তাহাব। আমাদের প্রেম আমাদের কে নাবী পাক আলাইহিস সালামের নামে দাঁড় করিয়ে সালাম পড়িয়ে নেয়।
এক কথায় নাবী মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে সালাম পড়া কিয়াম করা জায়েজ।এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী আলাইহির রাহমার কিতাব "জা-আল-হক পড়ুন।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৭৪) হুজুর (সঃ) এর বরকতময় নাম মুবারক | (০৭৬) হুযুরের জানাযার ধরণ |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |