হজরত ইমাম শরফুদ্দিন বুসিরী ( রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) যিনি হজরত হাসসান বিন সাবিত রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর পরে কাসীদা খানীতে জগৎ জোড়া খ্যাতি লাভ করেছিলেন। তিনি ৬০৮ গ্রী ৮ই মার্চ ১২১৩ খ্রীঃ মিশরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৬৯৬ হীঃ বেসাল লাভ করেন। 'কাসিদা - এ- বুরদা' তার বিশ্ববিখ্যাত রচনা আর এরই কারণে তিনি বিখ্যাত হন । ঘটনা হল একদিন তিনি পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন এবং শরীরের নিম্নভাগ একেবারে অবস ও অসাড় হয়ে যায় ৷ বহু হাকিম - ডাক্তার দেখিয়েও তিনি আরোগ্য লাভ করলেন না। বরং দিনদিন শরীর আরও খারাপ হয়ে যেতে লাগল এবং রোগা ও দুর্বল হয়ে যেতে লাগলেন । যার ফলে তিনি সর্বদা চিন্তিত ও মনমরা হয়ে থাকতেন।
এমনি এক দিনে মনের আবেগ ও ভক্তি ভরা চোখের পানি তে নবীপাকের শানে আরবী কবিতা রচনা আরম্ভ করে দিলেন আর এই অবস্থায় নিদ্রা চলে আসলে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। এরপর স্বপ্নে দেখলেন যে, তিনি ওই কবিতাওলি দরবারে রিসালাতে পাঠ করছেন এবং স্বয়ং দয়ার নবীপাক আলাইহিস সালাম তা শ্রবণ করছেন এবং খুশী আনন্দিতঅনুভব করছেন। পড়তে পড়তে যখন তিনি এইস্থানে “কাম আবরায়াত আসিবান্ বিলাসে হাতুহু"। অর্থাৎ “কত বিমার মানুষ তার পবিত্র ছোঁয়ার পরশে ভাল হয়ে গিয়েছে” যখন পড়লেন তখন সাথে সাথে শাফীউল মুজনেবীন রহমাতুল্লীল আলামীন নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লাম একখানা ধারী দার ইয়ামনী চাদর তার শরীরের উপর রেখে দিলেন । যাকে আরবীতে “ বুরদা ” বলা হয় ।
ইমাম জেগে গেলেন এবং নিজেকে এমন ভাবে সুস্থ মনে করলেন যে তার কখনও কোন রোগ আদৌও হয়নি এবং শরীরের উপর সেই আতায়ে নবীর পবিত্র চাদর বা বুরদাকে অক্ষত অবস্থায় পেলেন । এরপর তিনি সুস্থ হয়ে বাজারে গেলেন তখন একজন দরবেশ তার সামনে এসে সালাম করে কসিদার অনুলিখন চাইলেন। তিনি তাকে বললেন বহু কসিদা আছে কোনটি দেব তখন দরবেশ বললেন সেই কসিদা যার প্রথম লাইন "আমি তাজারি জিরানি বিশ সালামি ” তখন ইমাম বুসিরী অবাক হয়ে বললেন এখনও পর্যন্ত তো এই কসিদা, কেউ শোনেনি আপনি সত্যি করে বলুন কোথা হতে পেয়েছেন? তখন দরবেশ বললেন খোদার কসম আপনি গত রাতে যখন বারগাহে নাবীতে পাঠ করে শুনাচ্ছিলেন তখন আমি ও ওখানে ছিলাম এবং স্বয়ং আপনার কাছ থেকে শুনেছি । এরপর তিনি তাকে তার অনুলিপি দান করলেন এবং ধীরে ধীরে চারিদিকে তার প্রচার হয়ে গেল ।
যখন এ খবর রাজ্যের বাদশার কানে পৌছালো তখন তিনি অতি মোহাব্বত ও ভালবাসায় খালি পায়ে ইমাম সাহেবের কাছে এলেন এবং কসিদা পাক শ্রবণ করলেন এবং চোখে মুখে লাগালেন । কসিদাতে মোট ১৬২টি শের । আছে যা বুর্জগানে দ্বীনগণ খুবই ইজ্জতের সাথে মুখস্থ করেন এবং পাঠ করেন ও মুরিদানদের আদেশ ও দান করেন। তুরস্কের শাসনকালে দয়ার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লাম এর মসজিদে নববী ও মাজার পাকের সবুজ গম্বুজের মধ্যে চারিদিকে সোনা দিয়ে পাথরে লিখানো হয়ে ছিল । সম্পূর্ণ কসিদাটি আজ ও তার মাজার শরীফের মধ্যে চারিদিকে সোনা দ্বারা লিখিত আছে। ( সিরাতুন নবী ) । কিন্তু পরবর্তীকালে ওয়াহাবী শাসন আমলে এখন তা মুছে ফেলা হয়েছে। ( আফসোস )
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৫১) দুরুদ শরীফের বরকতে মৃত ব্যক্তির চেহেরা সুন্দর হয়ে গেল | (০৫৩) কাসিদা বুরদা শরীফ সংক্ষিপ্ত |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |