দুধপানের সময় সীমা পার হওয়ার পর হালীমা শিশু নবীকে তাঁর মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য মক্কায় নিয়ে যান এবং তাঁর আম্মা হযরত আমেনাকে বলেন:
আমার ইচ্ছা যে, আপনি ‘মুহাম্মদ’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আরেকটু বড় হওয়া পর্যন্ত আমার কাছে থাকতে দিন। আমার আশংকা যে, মক্কার বর্তমান আবহাওয়া তাঁর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
হযরত আমেনা প্রথমে রাজী না হলেও হালীমার বারবার অনুরোধ ও পীড়াপীড়িতে অবশেষে রাজী হন। হালীমা মহাখুশী হয়ে শিশু নবী (স.)-কে নিয়ে নিজ এলাকায় ফিরে যান।
এ সময় শিশু নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অন্যান্য শিশুদের সাথে মাঠে বকরী চরাচ্ছিলেন, তখন হযরত জিব্রাইল (আ.) আসেন এবং তাঁকে চিত করে শোয়ায়ে তাঁর বুক ফেঁড়ে কলিজা বের করেন এবং তা পরিষ্কার করে ধুয়ে যথাস্থানে রেখে, সব ঠিকঠাক করে দিয়ে চলে যান। এ দৃশ্য দেখে অন্যান্য শিশুরা হালীমাকে গিয়ে এ খবর দেয়। হালীমা ও তার স্বামী ছুটে গিয়ে দেখেন, শিশু নবী (স.) শংকিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন। কী ঘটেছিল তা তারা শুনতে চাইলে তিনি বলেন :
আমার কাছে দু’জন লোক আসে এবং আমাকে চিত করে শুইয়ে দেয়। তারপর আমার বুক ফেঁড়ে কী যেন বের করে। এরপর তা বুকে ঢুকিয়ে ঠিকঠাক করে দিয়ে চলে যায়।
উপরোক্ত ঘটনায় হালীমা-দম্পতি খুবই ভয় পায় এবং শিশু নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মক্কায় নিয়ে তাঁর মায়ের হাতে সোপর্দ করে ফিরে যায়। (ইবনে হিশাম, ইবনে সাআদ, ইবনে খালদুন, ইবনে কাছীর, আল্ বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
যখন শিশু নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বয়স ৬ বছর হয়, তখন আমেনা তাঁকে নিয়ে মদীনায় যান। এ সময় তাঁর সাথে তাঁর দাসী উম্মে আয়মানও ছিল।
কিছুদিন মদীনায় থাকার পর আমেনা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে মক্কায় ফেরার পথে মদীনার সন্নিকটে ‘আবওয়া’ নামক স্থানে ইন্তিকাল করেন। উম্মে আয়মান তাঁকে আবওয়াতে দাফন করে চির ইয়াতিম শিশু নবী (স.)-কে সান্তনা দিতে দিতে মক্কায় পৌঁছে যায়।
মাতার ইন্তিকালের পর তিনি দাদা আব্দুল মুত্তালিবের তত্ত্বাবধানে লালিত-পালিন হন। দাদা তাঁকে খুবই ভালবাসতেন। তিনি সব সময় তাঁকে সাথে সাথে রাখতেন এবং নিজ সন্তানের চেয়ে বেশী আদর করতেন। তবে মাত্র দু’বছর পার হতেই দাদা আব্দুল মুত্তালিব ইন্তিকাল করেন। এ সময় শিশু নবী (স.)-এর বয়স মাত্র ৮ (আট) বছর। (তাবাকাতে ইবনে সা‘আদ ও ইবনে হিশাম)
দাদা আব্দুল মুত্তালিব ইনতিকালের সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর পুত্র আবু তালেবের তত্ত্বাবধানে সোপর্দ করে যান। তিনি ইয়াতিম ভাতিজাকে নিজের সন্তানদের থেকে বেশী ভালবাসতেন ও আদর করতেন।
আবু তালেব তাঁর ভাইদের মধ্যে গরীব ও বিত্তহীন ছিলেন। অথচ হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁর ঘরে আসেন, তখন তাঁর সব অভাব অনটন দূর হয়ে যায়। তিনি সব সময় তাঁকে সাথে রাখতেন, এমনকি শোবার সময়ও তাঁকে সাথে নিয়ে ঘুমাতেন।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০১) ৫৭০ খৃষ্টাব্দের ১২ রবিউল আওয়াল | (০৩) ৫৮২ - ৫৮৪ খৃষ্টাব্দ, বয়স - ১২ - ১৪ বছর |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |