আরবী বারোটি মাসের অষ্টম মাস শাবান । এ শাবান মাসের চৌদ তারিখ দিবাগত রাতকে কুরআন মাজিদে লাইলাতুম মুবারাকাহ্ বা বরকতময় রাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে । আর হাদীস শরীফে শবে বরাতকে লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান বা শাবান মাসের মধ্য রাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে । বারাআত অর্থ যার সাথে অবস্থান অপছন্দনীয়, তাঁর সংগ থেকে দূরে থাকা । যেমন বলা হয়ে থাকে – “বারাআতু মিনাল মারাদি” - আমি রোগ থেকে মুক্ত হলাম ।
“বারাআতু মিন কারিম” - আমি করিমের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করলাম । <ref>মুফরাদে ইমাম রাগেব, পৃ ৪৫</ref> তাফসীরের ভাষায় লাইলাতুন নাজাত, লাইলাতুস্ সেক, লাইলাতুল বারা’আত তথা মুক্তি ও চেক প্রদানের রজনী । আর আমাদের উপমহাদেশে যাকে শবে বরাত বলে থাকি । তা ফারসী ভাষা থেকে উদ্ভূত । যা ‘শব’ বা রাত ও ‘বরাত’ বা পবিত্রতা, নাজাত, মুক্তি, ত্রাণ, ভাগ্য ইত্যাদি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত । শবে বারাআঁত অর্থ শবে জুদায়ী, শবে দূরী, ফেরাক বিচ্ছেদের রাত, দূরে চলে যাওয়ার রাত, পৃথক হবার রাত । (লোগাত লামে দেহ খোদা খ-৩০, পৃ ১৯৮)
অনেকেই বলে থাকেন, কুরআন মজিদ ও হাদীস শরীফে কোথাও শবে বরাত বলে কোন শব্দ নেই । শবে বরাত বিরোধীদের এরুপ জিহালতপূর্ন বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, শবে বরাত যেরুপ কুরআন মজীদ ও হাদীস শরীফে কোথাও নেই তদ্রুপ নামায, রোযা, খোদা, ফেরেশতা, পীর ইত্যাদি শব্দ কুরআন মজীদ ও হাদীস শরীফে কোথাও নেই । এখন শবে বরাত বিরোধী লোকেরা কি নামাজ, রোযা ইত্যাদি শব্দ কোরআন মজীদ ও হাদীস শরীফে না থাকার কারনে ছেড়ে দিবে ? খোদা, ফেরেশতা ইত্যাদি শব্দ কুরআন মাজীদ ও হাদীস শরীফে না থাকার কারনে আল্লাহ পাক ও ফেরেশতাদেরকে অস্বীকার করবে ? মূলত শবে বরাত, নামায, রোযা, খোদা, ফেরেশতা, পীর ইত্যাদি ফার্সী ভাষা থেকে এসেছে । ফার্সী শব অর্থ রাত, আর বরাত অর্থ ভাগ্য বা মুক্তি । সুতরাং শবে বরাত মানে হলো ভাগ্য রজনী বা মুক্তির রাত ।
লাইলাতুল বারাআত নামকরনের তাৎপর্য হল এ রাতে দুধরনের বারাআত বা সম্পর্কচ্ছেদ হয় । অপরাধীরা আল্লাহ্ তা’আলার রহমত থেকে বঞ্চিত থাকে । ( এ পবিত্র রাতেও তাঁদের সাথে দয়াবান আল্লাহর সাথে সম্পর্ক থাকে না), আর আল্লাহর ওলীগন পার্থিব অপমান লাঞ্ছনা থেকে মুক্ত হয়ে যান । যেহেতু এরাতে মানুষের জন্ম-মৃত্যু ও রিজিকের বার্ষিক বাজেট নির্ধারিত হয় এ অর্থে এ রাতকে ভাগ্য নির্ধারনী রাত বলা হয় ।
পারিভাষিক অর্থে শবে বারাআত বলতে বুঝায়- শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত যে রাতে ফেরেশতাগণ আল্লাহ্ তা’আলার নির্দেশে মানুষের বয়স ও রিযিক বণ্টন করে থাকেন ।
এ রজনীকে ১৩ টি নামে আখ্যায়িত করা হয় ।
১) লাইলাতুল মুবারাকা বা বরকতময় রাত
২) লাইলাতুল রহমাহ্ বা রহমত পাওয়ার রাত
৩) লাইলাতুল বারাআতে বা পাপের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের রাত
৪) লাইলাতুল ছেক বা ছাড়পত্রের রাত
৫) লাইলাতুল কিস্মত বা বণ্টনের রাত
৬) লাইলাতুল তাকফীর বা গুনাহের কাফ্ফারার রাত
৭) লাইলাতুল এজাবত বা দোয়া কবুলের রাত
৮) লাইলাতুল ঈদিল মালাইকা বা ফেরেশতাদের ঈদের রাত
৯) লাইলাতুল জায়েযা অর্থাৎ পুরস্কারের রাত
১০) লাইলাতুশ শাফা’আ বা সুপারিশের রাত
১১) লাইলাতুল গুফরান বা মার্জনার রাত
১২) লাইলাতুল তাযীম বা সম্মানিত করার রাত
১৩) লাইলাতুল ইতেকেলে মিনান নিরান বা দোযখ হইতে মুক্তির রাত । <ref>ফতোয়ায়ে দারুস সুন্নাত পৃ ১৪৭</ref>
ইরান ও আফগানিস্তানে নিম শাবান । আরবী ভাষাভাষীরা বলে নিসফ্ শাবান । মালয় ভাষাভাষীরা বলে নিসফু শাবান । তুর্কি ভাষাভাষীরা বলে বিরাত কান্দিলি । ভারতীয় উপমহাদেশে বলা হয় শবে বরাত । কুরআন শরীফে বলা হয়েছে লাইলাতুম মুবারাকা ।