শা'বান মাস অত্যন্ত বরকত ও ফযীলতের মাস। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) রজবের চাঁদ উঠতেই আল্লাহর দরবারে এ মর্মে দু'আ করেছেন যে, হে আল্লাহ্! আপনি রজব ও শা'বান মাসকে আমাদের জন্য বরকত দ্বারা ভরপুর করে দিন এবং আমাদেরকে রামাযান পর্যন্ত পৌছিয়ে দিন। প্রকৃতপক্ষে শা'বান হল রামাযানের প্রস্তুতির মাস। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ্ (সা.) রামাযান ছাড়া বাকী এগার মাসের তুলনায় এ মাসে বেশী সাওম পালন করেছেন। বুখারী শরীফের এক হাদীসে বর্ণিত আছে, হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা) বলেন, নবী করীম (সা.) শা'বান মাসের চেয়ে অধিক নফল রোযা আর কোন মাসে রাখতেন না। তিনি (প্রায়) পুরা শা'বান মাসই সাওম পালন করতেন।
এ মাসের রোযা সমূহের মধ্যে ১৫ই শা'বানের রোযা বিশেষভাবে উল্লেখ যোগ্য। ইবন মাজা শরীফের এক হাদীসে উল্লেখ রয়েছে:
عَن عَلى رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فإن الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس إلى السماء الدنيا فيقول الآمن مستغفر فاغفر له الا مسترزق فارزقه الأمبتلى فاعافيه الأكذا الا كذا حتى يطلع الفجر
হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেন: শা'বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে তোমরা ইবাদত করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেনা সূর্যাস্তের পর আল্লাহ্ তা'আলা দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে এ মর্মে আহবান করতে থাকেন যে, (তোমাদের মধ্যে) কেউ ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কোন রিযকপ্রার্থী আছে কি? আমি তার রিযকের ব্যবস্থা করে দিব এবং কোন বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি আছে কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দিব। এভাবে সুবহি সাদিক পর্যন্ত তিনি আহবান করতে থাকেন।
অপর এক হাদীসে আছে, এ রাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বনূ কালাব গোত্রের বকরী পালের শরীরে যে পরিমাণ পশম আছে এ পরিমাণ মানুষের পাপ ক্ষমা করে থাকেন
(মিশকাত)
এক হাদীসে এ কথাও উল্লেখ আছে এ রাতে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) জান্নাতুল বাকীর কবরস্থানে গিয়ে কবরবাসীদের মাগফিরাতের জন্য দু'আ করেছেন। উপরোক্ত হাদীসে সমূহের আলোকে আল্লামা শামী, আল্লামা ইব্ন নুজাইম, মাওলানা আবদুল হাই লক্ষ্ণৌবী (র.) প্রমুখ ফকীহগণ এ রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত বন্দেগী করাকে মুস্তাহাব বলে অভিমত ব্যক্তি করেছেন। মুক্তী শফী (র.)-এর মতে শা'বানের ১৪ তাং দিবাগত রাতের আমল হল:
শবে বরাতের এ পূণ্যময় রজনী পাওয়ার পরও যারা এ কদর করে না, তাদের চেয়ে হতভাগা আর কে? এ রাতে বাড়ী ঘর এবং মসজিদের আলোক সজ্জার ব্যবস্থা করা, পটকা ফুটানো, আতশবাজী এবং খেল তামাশার উদ্দেশ্যে রাস্তায় রাস্তাঘুরাফিরা না জায়িয কাজ। মিষ্টি বিতরণকে কেন্দ্র করে মসজিদে হৈ-হুল্লোড় করা নিন্দনীয় কাজ। এতে ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় এবং ইবাদতের পরিবেশ নষ্ট হয়। এহেন বদ রুসূম থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০১৭) আশুরার রোযা | (০১৯) আরফা দিনের রোযা |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |